শ্রীলঙ্কায় মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে ৬৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি হলেও দেশটির খাবার বাবদ মাথাপিছু ব্যয় বাংলাদেশের মাত্র ৬৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মাথাপিছু প্রায় ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ আয় করা ভারতের মানুষের খাবার বাবদ গড় ব্যয় বাংলাদেশের মাত্র ৫৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, বাজারে প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি, ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফালোভী প্রবণতার কারণে তুলনামূলক কম আয় সত্ত্বেও বাংলাদেশে খাদ্য বাবদ অস্বাভাবিক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডাযালগ (সিপিডি)।
রোববার (২ জুন) সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্ববাজারে ১০৫ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল দেশে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইউরোপের বাজারে ৩৯ টাকা কেজি দরের চিনি দেশে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। গরুর মাংসসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম দেশের বাজারে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে তিনি মনে করেন।
দেশের অর্থনীতির হালনাগাদ চালচিত্র তুলে ধরতে ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সিপিডি। সংস্থাটির নিজস্ব অফিসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণা পরিচালক ছাড়াও গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামালসহ অন্য গবেষকরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অনেক কম আয় করেও বাংলাদেশের জনগণকে বেশি দামে নিত্যপণ্য কিনে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির প্রবণতার কারণে দৈনন্দিন ব্যবহার্য অনেক নিত্যপণ্য এক ধরনের বিলাসী পণ্যে পরিণত হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যথেষ্ট উদ্যোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে সমস্ত উদ্যোগের কথা বিভিন্ন সময়ে ঘোষণা দেওয়া হয়ে থাকে, সেগুলোও বাস্তবায়ন হয় না।
তিনি বলেন, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। কম্পিটিশন কমিশনের দুর্বলতা আছে। কম্পিটিশন এক্টেরও কিছু ধারা পরিবর্তন করতে হবে।মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের ট্যারিফ কমানোর পরামর্শ দেন মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, অনেক সময় কিছু পণ্যের ট্যারিফ কমানো হলেও এর সুবিধা ভোক্তারা পায় না। আমদানিকারকদের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় পণ্যের দাম কমানোর বিষয়টি তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করে।
তিনি আরও বলেন, এক সময় ৫-৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির একটা কাঠামো থাকলেও দেশ এখন ৯-১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কাঠামোতে চলে গেছে।
এত দিন পর্যন্ত যে দেশগুলোর দিকে আঙুল তুলে দেখাতাম, সেই শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেশি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে ১৬টি দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় খাদ্য বাবদ এক বছরে জনপ্রতি ব্যয়ের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন মোয়াজ্জেম।
তালিকায় দেখা গেছে, জর্ডান, মরক্কো, বলিভিয়া, উজবেকিস্তান, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, তিউনিশিয়া, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কাসহ ১৬টি দেশের মধ্যে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশে সর্বনিম্ন। তবে এক বছরে ব্যয় বাবদ একজন নাগরিককে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়।