‘সাংবাদিকদের মারলে খুশি হয় প্রশাসন’
![ছবি: বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2023/Sep/26/1695734282676.jpg)
ছবি: বার্তা২৪.কম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রশাসনের মদদেই সাংবাদিকদের ওপর বারবার হামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সাংবাদিক নেতা ও শিক্ষকেরা। তারা বলেন, ‘প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বরং খুশি হয়েছে সাংবাদিকদের মারধর করায়। কারণ সাংবাদিকরা প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম তুলে ধরছে। সেজন্যই হয়তো হামলাকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করার বদলে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হয়।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস) ও চিটাগং ইউনিভার্সিটি এক্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের (সিইউজিএন) উদ্যোগে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনের বক্তরা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমুর সঞ্চালনা ও সভাপতি মাহবুব এ রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিমুল নজরুল, সিইউজেএন সভাপতি হামিদ উল্লাহ প্রমুখ।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন সিরাজ উদ দৌল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী, খন্দকার আলী আর রাজি ও শাহাব উদ্দিন।
সিইউজেএনের সভাপতি হামিদ উল্লাহ বলেন, ‘শিবির থেকে ছাত্রলীগ কারেও চরিত্র পরিবর্তন হয়নি। আজকে যারা ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন নৈরাজ্য চালাচ্ছে, এদের খবর নিয়ে দেখা যাবে এরা আগে অন্য কোনো দলের অনুসারী ছিল। অন্যায় অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিকেরা লিখছে বলেই তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। আমরা এরকম প্রতিবাদে আর দাঁড়াতে চাই না। আগামীতে আমরা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বাড়ির সামনে দাঁড়াবো।’
সিইউজেএনের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, ‘হামলাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মানবিক আচরণ পেয়েছে। মনে রাখবেন, আমরা লিখতে যেমন জানি, প্রতিবাদ জানাতেও জানি।’
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘মোশাররফের ওপর হামলা একেবারেই পরিকল্পিত। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নামকাওয়াস্তে শাস্তি হয়েছে। আপনি যদি শাস্তি দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা বুঝে নেব আপনি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এমনকি আমরা দেখেছি সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা বহিষ্কার হয়েও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এটা প্রশাসনের মদদ ছাড়া সম্ভব না।’
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে দাঁড়াতে হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাষ্ট্র সবার জন্য বিব্রতকর। মোশাররফ শাহ’র ওপর যে হামলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি মানববন্ধন থেকে সাংবাদিকদের যে দাবি, এর সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা পোষণ করছি। শুধুমাত্র মুখে না বলে, কাজে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি প্রশাসনের প্রতি।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামছুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে আমাদের সহকর্মী মোশাররফ ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। যা কখনোই আমরা আশা করিনি। আজকে বহিষ্কৃত, অছাত্ররা হলে অবস্থান করছে। এতে করে আপনাদের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়েছে। মোশাররফের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের ক্যাম্পাসে বহিষ্কার করুন। যদি না পারেন, তাহলে প্রশাসনের চেয়ার ছেড়ে দিন।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ছাত্রলীগের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালান, এরপর আপনারা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালান। আমি উপাচার্য মহোদয়ের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি কেন তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন? আমরা জানতে পেরেছি আপনার ছত্রছায়ায় এখানে নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানান অনিয়ম হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারেন, আমরা প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব।’
সমাপনী বক্তব্যে চবিসাসের সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, ‘যারা মোশাররফ শাহ এর রক্ত ঝরিয়েছে, তারা দেশের সকল সাংবাদিকদের রক্ত ঝরিয়েছে। সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। আজকে সাংবাদিকরাই যদি নিরাপদ না হন, তাহলে এখানে শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদ।’