ফসলি জমির মাঝখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটায় জ্বলছে আগুন। তা থেকে নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া এবং তাপ। সেই ধোঁয়া এবং তাপ ভাটার চারপাশে থাকা ফসলি জমিতে সদ্য গজানো সয়াবিন, গম, বাদামের কচি গাছসহ বিভিন্ন রবি শস্যের জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে। ইট ভাটার প্রভাবে শস্য চাষাবাদে যেন ভাটা পড়েছে।
এমন চিত্র দেখা গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নটিতে একটি বা দুটি ইটভাটা নয়- রয়েছে ২৮ টি ভাটা। যেগুলো গড়ে উঠছে অবৈধভাবে। নেই কোন কাগজপত্র। বেশিরভাগ ভাটার আগুনের ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে টিনের তৈরী চিমনি দিয়ে। আর পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ।
স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা জানায়, একটি ইটভাটা থেকে অন্যটির দূরত্ব খুব কাছাকাছি। সবগুলো ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ফসলি জমির মাঠে। ভাটার পাশেই বসতবাড়ি, হাটবাজার ও গাছপালার বাগান। ফসলি জমিতে ফসল ফলানো হলেও ভাটার দাপটে ফসল উৎপাদনে শঙ্কিত কৃষকরা।
তারা আরও জানায়, এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়া এবং অতিরিক্ত তাপ একদিকে ফসলি জমির ক্ষতি করছে, অন্যদিকে গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ভাটার মাঝেই বসানো হয়েছে করাত কল। ইট তৈরীর মাটি আনা হচ্ছে ফসলি জমি থেকে।
প্রশাসন মাঝেমধ্যে কয়েকটি ভাটায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েও বন্ধ করতে পারেনি ভাটাগুলো। বেশ কয়েকবার এসব ভাটার চিমনি ভেঙে ভাটার চুলো ও কাঁচা ইট বিনষ্টসহ পুরো ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানের কয়েকদিনের মাথায় বেপরোয়া ভাটার মালিকরা পুনরায় ভাটার কার্যক্রম শুরু করেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর চর রমিজ ইউনিয়নের চর আফজল গ্রামের চৌধুরী বাজার এলাকায় পাশাপাশি থাকা মেসার্স আমরী ব্রিক্স, মেসার্স আল্লার দান ব্রিক্স ও মেসার্স তিশা ব্রিক্স এ অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদফতর। তিনটি ইটভাটায় এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে পুরোপুরি বিনষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নষ্ট করে দেওয়া হয় ভাটার কাঁচা ইট। তারপরও থেমে নেই ভাটার কার্যক্রম। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সেগুলো কার্যক্রম শুরু হয়ে এখন চলছে পুরোদমে।
এর আগেও একই মাসের ১৬ নভেম্বর তিশা ব্রিক্স ও আমরী ব্রিক্সের উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক লাখ করে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে। ভেঙে দেওয়া হয় চিমনীগুলো। চুলোতে পানি নিক্ষেপ করে আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার শুরু তাদের কার্যক্রম।
গেল বছরও প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে ভাটাগুলোতে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চালানো অভিযানে আমরী ব্রিক্সে এক লাখ, ২৮ ফেব্রুয়ারি তিশা ব্রিক্সে ৫০ হাজার টাকা এবং ৩০ মার্চ আল্লার দান ব্রিক্সসহ চারটি ভাটায় ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আরও বেশ কয়েকটি ইটভাটায় জরিমানা এবং চিমনী বিনষ্ট করা হলেও থেমে থাকেনি তাদের কার্যক্রম। এক বা দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভাটাগুলো প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করে।
গত ২০ নভেম্বর উপজেলার চর সেকান্তর এলাকার মেঘনা ব্রিক্সের ব্যবস্থাপক মো. মেহেরাজকে এক মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। অর্থদন্ড এবং কারাদণ্ড দিয়েও এখানকার ইটভাটার মালিকদের কোনভাবে রোখানো যাচ্ছে না।
বার বার অভিযান চালিয়ে ভাটা বন্ধ করে দেওয়ার পরেও পুনরায় ভাটা চালুর বিষয়ে কথা হয় মেসার্স আমরী বিক্সের মালিক আমির হোসেন মাসুদের সাথে। তিনি বলেন, দুই কোটি টাকা খরচ করে ভাটা দিয়েছি। শ্রমিক বাবদ মাঝিদের হাতে টাকা দিয়ে দিয়েছি। ভাটা বন্ধ রাখলে পুরোপুরি লোকসানে পড়বো। শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাব না। তাই প্রশাসন ভাটা বন্ধ করে দিলেও পুনরায় চালু করি। এতে কিছুটা লোকসানে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, অবৈধ ইটভাটাতে অভিযান চানালো হয়েছে। জেল-জরিমানাসহ ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরেও যদি ভাটার কার্যক্রম চলে, তাহলে আবারও অভিযান চালানো হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।