সচেতনতাই ‘সিলিকোসিস’ প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার



মো. আকতারুল ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘সিলিকোসিস’ শব্দটি বাংলাদেশে খুব পরিচিত নয়। তবে এটি একটি মরণব্যাধি, যা ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, সর্দি-কাশি, জ্বর সবসময় লেগে থাকে, শরীর দিনদিন দুর্বল হয়ে পরে ও ওজন কমে যায়। এক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন। সাধারণত পাথর ভাঙা শ্রমিকরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন।

পাথরের উপাদান সিলিকা (স্ফটিকের ধুলো) থেকে এ রোগ হয় বলে একে ‘সিলিকোসিস’ বলা হয়। সিলিকা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহের ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফুসফুসের সূক্ষ ছিদ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়। এমনকি পাথরের ধুলিকণা নাক, মুখ এমনকি চোখের মধ্যদিয়ে শরীরে প্রবেশ করায় ফসফুস ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

প্রকৃতপক্ষে সিলিকোসিস রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তাই সচেতনতাই এ রোগ প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার। সিলিকোসিস তিন ধরনের হতে পারে:

১. সাধারণ সিলিকোসিস/হালকা সিলিকোসিস: ধুলোর মধ্যে কাজ করলে ১০-৩০ বছরের মধ্যে এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ রোগ শনাক্ত করা কঠিন। তবে এক্ষেত্রে, অব্যাহত খুসখুসে কাশি এবং শ্বাসকষ্টজনিত চিনচিনে ব্যাথা হতে পারে।

২. বর্ধমান সিলিকোসিস সিলিকার: ধুলোর মধ্যে কাজ করলে ৫-১০ বছরের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটিও সাধারণ সিলিকোসিসের মতোই। তবে এর সংক্রমণ দ্রুততার সাথে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

৩. জটিল সিলিকোসিস: এটি জটিল আকার ধারণ করে যখন ফুসফুসের বায়ু কুঠুরিগুলো যুক্ত/স্ফিত হয়ে এক সেন্টিমিটার বা তারও বেশি বড় হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসে খুব সমস্যা হয়। এ সময় যক্ষা ও ছত্রাক সংক্রমণের মতো রোগগুলো একে আরো জটিল করে তুলতে পারে। এ সমস্যা ধীরে ধীরে ফুসফুসের ক্যান্সারেও রূপ নিতে পারে।

এগুলোর বাইরে যেটি মারাত্মক এবং প্রাণঘাতি তা চরম সিলিকোসিস। পাথরগুড়া বা পাথরের ধুলা শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করার কারণে কয়েক সপ্তাহ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে একিউট বা চরম সিলিকোসিস বলে।

চরম সিলিকোসিসে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কাশি ও দুর্বলতা বাড়ায় এবং ওজন কমে যায়। এ অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়। এ রোগে বেসরকারি হিসাব মতে, এখনও পর্যন্ত ৬৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, সিপাইপাড়া, ভোজনপুর, জগদল, ময়নাকুড়ি এলাকা,  জয়পুরহাটের আক্কেলপুর বিভিন্ন এলাকায় শিলপাটা তৈরির কারখানায় কয়েক

হাজার শ্রমিক সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত। পাথরভাঙা শ্রমিকদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ২০১২ সালে। সে সময় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিলিকোসিসে আক্রান্ত ৫৩ জন শ্রমিকের সন্ধান পায় জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা।

বক্ষব্যাধি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতপক্ষে সিলিকোসিসের কোনো চিকিৎসা নেই। এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা প্রতিরাধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে সিলিকা ধোঁয়া বেরিয়ে যেতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত একজন শ্রমিকের শ্বাস-প্রশ্বাসে সংস্পর্শে না আসা, শ্রমিকের ব্যক্তিগত সচেতনতা ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করাও এ রোগ প্রতিরোধের অংশ হতে পারে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা পাথরভাঙা কারখানাগুলোয় সিলিকোসিস রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথর, লাইমমেটালসহ বিভিন্ন ধরনের পাথরভাঙার সময় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা কণা তৈরি হয়। এগুলো শ্রকিকের সারাদেহ ঢেকে দেয়। মাঝে মাঝে ধোঁয়ার পরিবেশ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পানি ব্যবহার করা হয়। তবে পানি ব্যবহারে উৎপাদিত পাথরের গুণগতমান নষ্ট হওয়ার অজুহাতে মলিকপক্ষ তা করতে দেন না। এতে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে শিলপাটা তৈরির কারখানায় কাজ করতে গিয়েও সিলিকোসিসে প্রায় অর্ধশত লোকের মৃত্যু হয়েছে।

পাথরভাঙা শ্রমিকদের সিলিকোসিস সম্পর্কে সচেতন করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ লেবার স্ট্যাডিজ (বিলস) কাজ করছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, লালমনিরহাটের স্থানীয় প্রশাসন, সিভিল সার্জন অফিস, একসাথে কাজ করছে। সিলিকোসিস রোগের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিলস এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল যৌথভাবে গবেষণা করছে। বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি বুড়িমারীর পাথর শ্রমিকদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালনা করছে।

পাথরভাঙা শ্রমিকদের সিলিকোসিস থেকে বাঁচাতে মালিক-শ্রমিকের ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাস্ক ছাড়া কোনোক্রমেই কাজ করা উচিত নয়। সেইসাথে কারখানা মালিককেও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি পাথরভাঙার মেশিনগুলো জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কোনো মতেই খোলাস্থানে কোনো পাথরভাঙা যাবে না এবং পাথর ভাঙার সময় পাথরে পর্যাপ্ত পানি ঢালতে হবে। কারণ পাথরের ধুলায় শুধু শ্রমিকই নয়, এলাকার লোকজনেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে।

এ রোগ প্রতিরোধে পরিবেশ অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। শ্রমিকের বিশেষ পোশাক ও মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত প্রতিষেধক ওষুধ ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। পদক্ষেপগুলো শুধু বুড়িমারীতে কিংবা তেঁতুলিয়াতেই নয়, যেখানে পাথর ভাঙা হয় সেখানেই নিতে হবে।

সিলিকোসিস প্রতিরোধের বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ডা. আনিসুল আওয়াল বলেন, ‘পাথর ভাঙার কাজ কোনোভাবেই খোলা পরিবেশে করা যাবে না। এমনকি পাথর ভাঙার সময় পর্যাপ্ত পানি ঢালতে হবে। যেখানে পাথর ভাঙা হবে সেখানেই ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। কারখানার ভেন্টিলেশনের মাথায় এক্সজাস্ট ফ্যানের সাথে এই ঝর্ণা লাগাতে হবে, যাতে বাতাসে ডাস্ট বা ধূলিকণা মিশতে না পারে। শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পরিস্কার না করে কোনো মাস্ক ব্যবহার করা যাবে না।’

   

আপেল জুস শরীরে যে প্রভাব ফেলে



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আপেল জুস

আপেল জুস

  • Font increase
  • Font Decrease

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে ‘অ্যান অ্যাপেল অ্যা ডে, কিপস দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে।’ যার সোজা বাংলায় অর্থ হলো, প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। মূলত, আপেলের গুণাগুণ প্রকাশ করে এই প্রবাদ।

তবে এত উপকারী আপেল দিয়ে যখন জুস তৈরি হয় তখন তার গুণাগুণ কি একইরকম থাকে- এটা বেশ বড় একটা প্রশ্ন। অনেকেই ফ্রেশ আপেল জুস পান করতে পছন্দ করে। তবে তারা হয়তো জানেই না এটা শরীরে ক্ষতিকর প্রভাবও ফেলতে পারে।

ডায়েটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ শুভা রমেশ এল. বলেছেন, ‘আপেলের জুস অ্যালকোহলের মতো ক্ষতিকারক হতে পারে। এই বিষয়টি শুনে চমকে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে একেবারে ভিত্তিহীন নয়। এক্ষেত্রে কিছুটা বিচার বিবেচনা করা প্রয়োজন। উভয় পানীয়ই আমাদের শরীরে অনেকগুলো প্রভাব ফেলে যা পারক পক্ষে একইরকম। সেগুলো কে চিহ্নিত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। ’

আপেলের রস এবং অ্যালকোহলের গ্রহণে এতে থাকা শর্করা আমাদের শরীরে ভিন্নরকম প্রক্রিয়া শুরু করে। যেমন রক্তে শর্করা ও চিনির পরিমাণ, লিভারের কার্যকারিতা তারতম্যে ব্যাঘাত এবং ওজন বৃদ্ধির মতো প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

;

ঘূর্ণিঝড়ের বন্দি সময় কাটাবেন যেভাবে



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবন্দি / ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবন্দি / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদিন ধরে অনবরত ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। দমকা হাওয়ার তোড়ে বাইরে বের হওয়ার জো নেই। এইদিকে বিদ্যুৎবিভ্রাটও সীমাহীন। এই মুহূর্তে মোবাইল, ল্যাপটপ সহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করাও ঠিক নয়। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য চার্জ বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের মতে আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি হবে। এমন অবস্থায় সারাদিন ঘরে বসে থাকা বিরক্তিকর হতে পারে। তবে পরিবারের সবার সঙে্গ এই অবসর সময়কে আনন্দঘন করে তুলতে পারেন।

১. সাধারণত যেসব পরিবারের অধিকাংশ সদস্য কর্মজীবী তারা একে অপরের সঙ্গে কথোপকথনের বিশেষ সুযোগ হয় না। এই বৃষ্টির সময়ে ঘরবন্দি থেকে সকলে মিলে বসে গল্প করতে পারেন।

২. পরিবারের সবাই বসে একসঙ্গে কোনো খেলা খেলতে পারেন। ক্যারাম, সাপ-লুডু, দাবা, উনো এরকম খেলাগুলো উপভোগ করতে পারেন।

৩. ঘরে থেকে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বিশেষ কিছু রান্না করতে পারেন। এছাড়া নাস্তাজাতীয় খাবার নিয়ে ঘরের মধ্যেই ছোটখাটো ঘরোয়া পিকনিকের আয়োজন করতে পারেন।

বৃষ্টি উপভোগ

৪. একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য কোনো পারিবারিক সিনেমা দেখতে পারেন। গল্পের বই পড়া, গান শোনা অথবা একত্রে মজার ধাঁধাঁ সমাধান করার মতো বিভিন্ন কাজ করেও আনন্দ উপভোগ করে সময় কাটাতে পারেন।

৫. পরিবারের শিশু এবং ছোট সদস্যদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে পারেন। এছাড়া, ঘুর্ণিঝড়ে করণীয় এবং সতর্কতাগুলো মজার ছলে বলতে পারেন। এতে শিশুরাও গল্প করতে করতে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে এবং সতর্কতা সম্পর্কে অবগত হতে পারবে।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে প্রবল হাওয়া বইতে থাকে। এই সময় বাইরে যাওয়ায় নানারকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং ঘরেই অবস্থান করুন। বাতাস উপভোগ করতে বা বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বাইরে যাওয়া উচিত হবে না।    

তথ্যসূত্র: প্যারেন্টস  

;

ঘূণিঝড়ের সময়ে সতর্কতা



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঘূণিঝড়ের সময় করণীয়

ঘূণিঝড়ের সময় করণীয়

  • Font increase
  • Font Decrease

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। উপকূল অঞ্চলগুলোতে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি আর উত্তাল ঢেউয়ের প্রকোপ। কিছু অঞ্চলে পানি ও বাড়তে শুরু করেছে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করার পরও অনেকে নির্বিকার। ঘূর্ণিঝড়ের এমন সংকটময় মুহূর্তে সাবধান হতে হবে সকলকে। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে কি করতে হবে জেনে নিন-

১. মোবাইল, টিভি সহ অন্যান্য গণমাধ্যম থেকে নিজ এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন। বিদ্যুৎ সংকট হলে রেডিও থেকে খবর নিন। অথবা এলাকায় প্রচার করা সতর্ক বাণী মনেযোগ দিয়ে শুনুন।  

২. নিজের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সতর্কতা সম্পর্কিত তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকুন। ঘূর্ণিঝড়ের জরুরি অবস্থার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকুন। বৈদ্যুতিক জিনিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখুন। 

৩. বিপদে বিচলিত হওয়া যাবে না। অন্যদের কাছে নিজ অবস্থানের তথ্য পাঠান। গুজব উপেক্ষা করুন এবং এধরনের খবর রটানো এড়িয়ে চলুন। এতে বিপদের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত আতঙ্ক সৃষ্টি এড়ানো যাবে।

৪. শুধুমাত্র অফিসিয়াল তথ্য বিশ্বাস করুন। আপনার এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা চালু থাকলে স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যান। পাশাপাশি রেডিওসহ অন্যান্য মাধ্যমে সতর্কবাণী প্রচারে খেয়াল রাখুন। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আনুমানিক বিপদ পরিস্থিতি জেনে নিন।

৫. উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মহাবিপদ সংকেত দিয়ে সতর্কতা দেওয়ায় নিচু সৈকত বা উপকূল থেকে দূরে সরে যান। উঁচু জমিতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করুন।

৬. উপকূল এবয় বন্দর অঞ্চলে যাদের বাড়ি নিরাপদে উঁচু জমিতে তারা বাড়িতেই অবস্থান করুন। যদি বাড়ি খালি করতে বলা হয় তবে অতিসত্তর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে দ্বিধা করবেন না।

৭. সেসব অঞ্চলে যাদের বাড়িতে কাঁচের জানালা ও দরজা আছে তারা বোর্ড দিয়ে আগলে বা শাটার লাগিয়ে রাখুন। বাইরে থেকে আড়াল করার শক্তিশালী বিকল্প মাধ্যম থাকলে তাও ব্যবহার করতে পারেন। নয়তো ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে কাচের জানালা ভেঙে আরও বড় বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

মহাবিপদ সংকেতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করুন

৮. ঢেকে রাখা যায় এমন পাত্রে যথাসম্ভব অতিরিক্ত খাবার এবং পানীয় জল সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজনে যেন বহন করা যায় সে ব্যবস্থা করে রাখুন।

৯. হারিকেন, লণ্ঠন, টর্চ মোম বা অন্যান্য জরুরী বাতি ধরনের জিনিস হাতের কাছে রাখুন। প্রয়োজনীয় জিনিস বহনযোগ্য শক্তিশালী পানিপ্রতিরোধক ব্যাগে প্যাক করুন। ওষুধ, শিশু বা বয়স্কদের জন্য বিশেষ খাবার, শুকনো খাবার, ব্যাটারি, চার্জার সহ অন্যান্য জিনিস সংগ্রহ করে রাখুন।

১০. বন্যা বাড়ি ছাড়তে হলে মূল্যবান জিনিস বাড়ির উপরের তলায় নিয়ে যান। ছোট এবং আলগা জিনিস, যা প্রবল বাতাসে উড়তে পারে, ঘরে নিরাপদে সংরক্ষণ করা উচিত।

১১. ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে না যাওয়া অবধি বাতাস শান্ত হয়ে গেলেও বাইরে বেরোবেন না। বিরূপ পরিস্থিতিতে আগে জীবন বাঁচানোর চিন্তা করুন। সহায়-সম্পত্তি নিয়ে হাহাকার করা বোকামি। আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা  যতক্ষণ না আপনাকে চলে যাওয়ার জন্য জানানো হয় ততক্ষণ আশ্রয়কেন্দ্রেই অবস্থান করুন।

 তথ্যসূত্র: এনডিএমএ

;

পারিবারিক যত্নে কমবে ‘হ্যালুসিনেশন’



লাইফস্টাইল ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আড়াল থেকে কেউ যেন অনবরত ভয় দেখাচ্ছে। চোখের সামনে যেন বিচিত্র সব দৃশ্য ভাসছে। কাছের মানুষগুলোকেও আর বিশ্বাস হয় না। কল্পনায় ভেসে আসে উত্যক্ত করা কোনো কণ্ঠস্বর। অবচেতন মনেও দেখা যায় কেউ আড়ালে আবডালে ষড়যন্ত্র করছে। মনের এই জটিল অবস্থার নাম স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা হ্যালুসিনেশন। এটি এমন এক অসুখ যার প্রকৃত কারণ আজও ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেননি মনোবিদেরা।

‘হ্যালুসিনেশন’ মনের এমন এক অবস্থা যেখানে রোগী সবসময়েই নিজের মনগড়া এক কাল্পনিক জগতে বাস করে। মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যের তারতম্যের কারণেই এমন অসুখ হতে পারে। ভ্রান্ত ধারণা ও দৃষ্টিবিভ্রম স্কিৎজোফ্রেনিয়ার দুই লক্ষণ।

মনের যেসব জটিল ও বিচিত্র অসুখবিসুখ নিয়ে গবেষণা চলছে স্কিৎজোফ্রেনিয়া তার মধ্যে একটি। এই অসুখ নিয়ে যেমন স্বচ্ছ ধারণা নেই, তেমনই আর পাঁচজন মনোরোগীর সঙ্গে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগীকে আলাদা করাও অনেকক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে যায়। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’-এর রিপোর্ট বলছে, প্রতি হাজার জন ভারতীয়ের মধ্যে তিন জন স্কিৎজোফ্রেনিয়ার শিকার।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক মনোবিদ শর্মিলা সরকার বলছেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়াকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘মেজর মেন্টাল ডিসঅর্ডার’। মনের এমন এক অবস্থা যেখানে, রোগী সবসময়েই নিজের মনগড়া এক কাল্পনিক জগতে বাস করে। মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যের তারতম্যের কারণেই এমন অসুখ হতে পারে।

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগী কেমন আচরণ করে?

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগীরা অশান্ত ও উত্তেজিত মেজাজে থাকে। অথবা এমনভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেয় যে তার মনোজগতে কী চলছে, তা বোঝা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রোগী কখন কী করবে, কেমন আচরণ করবে তার আঁচটুকুও পাওয়া যায় না। 

মনোবিদ শর্মিলা বলছেন, ‘ক্লিনিকে এমন অনেক রোগী আসেন, যারা বলেন যে তার মা-ই নাকি তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। অথবা নিজের মনেই বিড়বিড় করতে থাকেন সবসময়। এমন রোগীও আছেন যারা সবসময়েই অজানা, অচেনা কারও কণ্ঠস্বর শুনতে পান। চোখের সামনে ভুল জিনিস দেখেন, অযথা আতঙ্কে ভোগেন।’

এই প্রসঙ্গে ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট চিকিৎসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ভ্রান্ত ধারণা ও দৃষ্টিবিভ্রম এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। একটি বধ্যমূল ধারণা রোগীর মাথায় গেঁথে যায়। তখন সে চোখের সামনেও ভুল দেখে এবং কানেও ভুল শুনতে শুরু করে। এই ভ্রান্ত ধারণাকে চিকিৎসার ভাষায় বলে ‘ডিলিউশন’ ও দৃষ্টিবিভ্রমকে বলে ‘হ্যালুসিনেশন’। 

হ্যালুসিনেশন হল কাল্পনিক কিছু দেখা বা শোনা। অডিটরি হ্যালুসিনেশন হলে, রোগীর মনে হবে বাইরে থেকে কোনও শব্দ বা কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে, যেগুলির কোনও বাহ্যিক উৎস নেই। এরও নানা রকম প্রকাশ হতে পারে। মনে হতে পারে, এক বা একাধিক মানুষ তাকে নিয়ে সারাক্ষণ কথা বলছে বা সমালোচনা করে চলেছে। অথবা সারাক্ষণ কেউ তার সঙ্গে কথা বলে চলেছে। এই রোগীর কথাবার্তাও অসংলগ্ন হয়।

কেন হয় এই রোগ?

মনোবিদেদের মতে, কোনও ওষুধ বা নেশার কারণে এই রোগ হয় না। তবে মানসিক চাপ বাড়লে, তার থেকে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এই রোগের কারণ জিনগত। পরিবারে কারও থাকলে তার থেকে রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আক্রান্তের বেড়ে ওঠা, শৈশব বা জীবনের কোনও এক পর্যায়ে ঘটে যাওয়া কোনও বিশেষ ঘটনাও এর জন্য দায়ী হতে পারে।

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার প্রতিকার কি সম্ভব?

মনোবিদ শর্মিলার কথায়, স্কিৎজোফ্রেনিয়া পুরোপুরি সারানো সম্ভব হয় না অনেকক্ষেত্রে। তবে সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু হলে এবং রোগী ঠিকমতো ওষুধপত্র খেলে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এর জন্য রোগীর পরিবার ও আশপাশের লোকজনদের সচেতন থাকা জরুরি। রোগী বিকৃত আচরণ শুরু করলে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা, মনোবিদদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। 

তবে আধুনিক যুগের ব্যস্ততা, বদলে যাওয়া সম্পর্কের সমীকরণ, অনিচ্ছার জীবনযাপন বিভিন্ন মানসিক রোগ ডেকে আনে। পরিবার পরিজনের অবহেলা, কটুক্তি এই রোগকে তার চরম সীমায় নিয়ে যায়। তাই মনোবিদ অনিন্দিতা ও শর্মিলা জানাচ্ছেন, কোনও সময়েই রোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা চলবে না। ঠান্ডা মাথায় তাকে বোঝাতে হবে। সমাজের সঙ্গে মেলামেশা করতে দিতে হবে। বাড়িতে লোকজন এলে তাকে লুকিয়ে রাখবেন না, সকলের সামনে নিয়ে আসুন, কথাবার্তা বলতে দিন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, মনের ভয় দূর হবে। গ্রামের দিকে এমন রোগীকে ‘ভূতে পেয়েছে’ মনে করে ওঝা, তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তার অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই শুধু ওষুধ নয়, শিক্ষা ও সচেতনতাও এই রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগী অনেকক্ষেত্রেই প্রতিহিংসায় ভোগে। অন্যকে আঘাত করা বা খুন করার ইচ্ছা জন্মায়। একে বলা হয় ‘প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়া’। এমন রোগী নিজেরও ক্ষতি করতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে, রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সঠিক ওষুধ ও সাইকোথেরাপিতে রোগীর মানসিক স্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

;