বিলি রেজর: সামাজিক ট্যাবুকে ভেঙ্গে ব্যতিক্রমী অ্যাড নির্মাণ



ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল
বিলি রেজর।

বিলি রেজর।

  • Font increase
  • Font Decrease

 

একজন সুস্থ ও সাধারণ মানুষের শরীরে লোম (Body hair) থাকবে, যেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বর্তমান সময়ের সমাজ ব্যবস্থায় এটা স্বাভাবিক ব্যাপার শুধু পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয়। নারীদের শরীর হবে লোমবিহীন, মসৃণ ও কোমল।

প্রচলিত এই ধারণা ও ট্যাবুকে ভেঙে দিয়ে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত বার্তা নিয়ে একটি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তৈরি করেছে রেজর ব্র্যান্ড ‘বিলি রেজর’। গেলো মাসের শেষে প্রকাশিত হওয়া এই অ্যাড ইতিমধ্যেই দারুণ জনপ্রিয়তা ও সুনাম কুড়িয়েছে নারীকুলের কাছ থেকে।

কী এমন দেখিয়েছে সেই অ্যাডে এবং কী ছিল সেই অ্যাডের বার্তায়? সাধারণত অন্যান্য সকল অ্যাডেই নারীদের একদম ‘প্লাস্টিক পারফেক্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অ্যাডে উপস্থিত থাকা নারীদের হাত-পা থাকে একদম লোমবিহীন, মসৃণ। যেন সেটাই স্বাভাবিক বিষয়। আসলেও কি সেটা স্বাভাবিক বিষয়? অবশ্যই নয়।

নারীদের শরীরেও লোম থাকে। সেই বিষয়টাকেই খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে বিলি রেজর তার অ্যাডে। বলা হচ্ছে, বিগত ১০০ বছরের মধ্যে এটাই প্রথম লোমযুক্ত নারীদের নিয়ে তৈরি করা অ্যাড! 

এই অ্যাডভার্টাইজমেন্টে কয়েকজন নারীকে দেখা যায়। তাদের হাত, পা, পায়ের আঙ্গুল, আন্ডারআর্ম, জোড়া আইভ্রু ও তলপেটের লোম দেখানো হয়েছে এতে। সোশ্যাল মিডিয়া ইন্সটাগ্রামে কমেন্টকারী নারীরা যে ব্যাপারটা ‘সুন্দর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

/uploads/files/7thuL1MNnK0RJHGRCbTGz3iB92kNmRAwjROOvn13.jpeg

খুব সাধারণভাবে প্রশ্ন আসতে পারে, একটি রেজর কোম্পানি কেন এমন ধরণের অ্যাড বানালো? এই অ্যাডে তো তাদের পণ্যের উপযোগিতার একেবারেই বিপরীত বার্তা উপস্থাপন করা হয়েছে। গ্ল্যামার ম্যাগাজিনের এমন প্রশ্নের মুখে চমৎকার উত্তর দিয়েছেন বিলি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জর্জিনা গোলি, ‘অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান যখন নারীদের লোমহীন শরীরকে উপস্থাপন করে, তখন ব্যাপারটা বডি শেমিং এর মতো হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা আপনাকে বার্তা দিচ্ছে যে, নিজের শরীরের লোম নিয়ে আপনার লজ্জিত হওয়া উচিৎ। যদি আপনার কখনো মনে হয় যে আপনার শেভ করা প্রয়োজন, শুধু এবং শুধুমাত্র তখনই আমরা আপনাদের পাশে থাকব।’

আরো পড়ুন: ‘প্লাস্টিক পারফেক্ট’ নয়, আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন

জর্জিনা আরো বলেন, ‘শেভ করা একান্তই ব্যক্তিগত একটি ব্যাপার। কারোরই নারীদের বলা উচিৎ নয়, তার শরীরের লোম নিয়ে কী করবে বা করবে না। কেউ হয়তো লোম রাখতে চান না, কেউ লোমকে আনন্দের সাথে রাখতে চান। পছন্দ যেমনই হোক না কেন, তার জন্য দুঃখিত হবার কিছু নেই।’

বিলি রেজরের এই অ্যাড দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা র‍্যাচেল হ্যাম্পটন জানান তার প্রতিক্রিয়া। ‘এটা সত্য যে জীবনের একটা পর্যায়ে এসে এখন আমিও অন্যান্যদের মতো লোমবিহীন মসৃণ পা কে উপভোগ করি। তবে নারীদের শরীরে লোম থাকা ঠিক নয়, এই মূল ভাবনাটা আমার ভেতর প্রবেশ না করলে আমি ১১ বছর বয়সে শেভ করা শুরু করতাম না।’

লেখিকার খুব সহজ ও সরল বক্তব্য থেকে পরিষ্কার ফুটে ওঠে, সমাজে নারীদের শরীরের লোমকে ‘ভুল’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অল্প বয়সী মেয়েদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, শরীরে লোম থাকা যাবে না। যার ফলে খুব সূক্ষ্মভাবে তাদের বাধ্য করা হয় শেভ করার জন্য, লোমবিহীন শরীর গড়ে তোলার জন্য। অথচ শারীরিক লোম খুবই ব্যক্তিগত একটি বিষয়।

মানসিক চাপ প্রয়োগ করে নারীদের শেভ করার দিকে ঠেলে দেওয়ার বিরোধিতা করেই বিলি রেজর তাদের অ্যাডটি নির্মান করেছে। প্রচলিত প্রথাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এবং সামাজিক ট্যাবুকে ভেঙ্গে নারীদের ব্যাক্তি স্বাধীনতা প্রকাশ করার বার্তায় নির্মিত অ্যাডটি যে কারণে সফল হয়েছে খুব সহজেই।

   

ঘূর্ণিঝড়ের বন্দি সময় কাটাবেন যেভাবে



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবন্দি / ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবন্দি / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদিন ধরে অনবরত ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। দমকা হাওয়ার তোড়ে বাইরে বের হওয়ার জো নেই। এইদিকে বিদ্যুৎবিভ্রাটও সীমাহীন। এই মুহূর্তে মোবাইল, ল্যাপটপ সহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করাও ঠিক নয়। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য চার্জ বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের মতে আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি হবে। এমন অবস্থায় সারাদিন ঘরে বসে থাকা বিরক্তিকর হতে পারে। তবে পরিবারের সবার সঙে্গ এই অবসর সময়কে আনন্দঘন করে তুলতে পারেন।

১. সাধারণত যেসব পরিবারের অধিকাংশ সদস্য কর্মজীবী তারা একে অপরের সঙ্গে কথোপকথনের বিশেষ সুযোগ হয় না। এই বৃষ্টির সময়ে ঘরবন্দি থেকে সকলে মিলে বসে গল্প করতে পারেন।

২. পরিবারের সবাই বসে একসঙ্গে কোনো খেলা খেলতে পারেন। ক্যারাম, সাপ-লুডু, দাবা, উনো এরকম খেলাগুলো উপভোগ করতে পারেন।

৩. ঘরে থেকে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বিশেষ কিছু রান্না করতে পারেন। এছাড়া নাস্তাজাতীয় খাবার নিয়ে ঘরের মধ্যেই ছোটখাটো ঘরোয়া পিকনিকের আয়োজন করতে পারেন।

বৃষ্টি উপভোগ

৪. একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য কোনো পারিবারিক সিনেমা দেখতে পারেন। গল্পের বই পড়া, গান শোনা অথবা একত্রে মজার ধাঁধাঁ সমাধান করার মতো বিভিন্ন কাজ করেও আনন্দ উপভোগ করে সময় কাটাতে পারেন।

৫. পরিবারের শিশু এবং ছোট সদস্যদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে পারেন। এছাড়া, ঘুর্ণিঝড়ে করণীয় এবং সতর্কতাগুলো মজার ছলে বলতে পারেন। এতে শিশুরাও গল্প করতে করতে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে এবং সতর্কতা সম্পর্কে অবগত হতে পারবে।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে প্রবল হাওয়া বইতে থাকে। এই সময় বাইরে যাওয়ায় নানারকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং ঘরেই অবস্থান করুন। বাতাস উপভোগ করতে বা বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বাইরে যাওয়া উচিত হবে না।    

তথ্যসূত্র: প্যারেন্টস  

;

ঘূণিঝড়ের সময়ে সতর্কতা



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঘূণিঝড়ের সময় করণীয়

ঘূণিঝড়ের সময় করণীয়

  • Font increase
  • Font Decrease

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। উপকূল অঞ্চলগুলোতে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি আর উত্তাল ঢেউয়ের প্রকোপ। কিছু অঞ্চলে পানি ও বাড়তে শুরু করেছে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করার পরও অনেকে নির্বিকার। ঘূর্ণিঝড়ের এমন সংকটময় মুহূর্তে সাবধান হতে হবে সকলকে। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে কি করতে হবে জেনে নিন-

১. মোবাইল, টিভি সহ অন্যান্য গণমাধ্যম থেকে নিজ এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন। বিদ্যুৎ সংকট হলে রেডিও থেকে খবর নিন। অথবা এলাকায় প্রচার করা সতর্ক বাণী মনেযোগ দিয়ে শুনুন।  

২. নিজের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সতর্কতা সম্পর্কিত তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকুন। ঘূর্ণিঝড়ের জরুরি অবস্থার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকুন। বৈদ্যুতিক জিনিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখুন। 

৩. বিপদে বিচলিত হওয়া যাবে না। অন্যদের কাছে নিজ অবস্থানের তথ্য পাঠান। গুজব উপেক্ষা করুন এবং এধরনের খবর রটানো এড়িয়ে চলুন। এতে বিপদের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত আতঙ্ক সৃষ্টি এড়ানো যাবে।

৪. শুধুমাত্র অফিসিয়াল তথ্য বিশ্বাস করুন। আপনার এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা চালু থাকলে স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যান। পাশাপাশি রেডিওসহ অন্যান্য মাধ্যমে সতর্কবাণী প্রচারে খেয়াল রাখুন। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আনুমানিক বিপদ পরিস্থিতি জেনে নিন।

৫. উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মহাবিপদ সংকেত দিয়ে সতর্কতা দেওয়ায় নিচু সৈকত বা উপকূল থেকে দূরে সরে যান। উঁচু জমিতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করুন।

৬. উপকূল এবয় বন্দর অঞ্চলে যাদের বাড়ি নিরাপদে উঁচু জমিতে তারা বাড়িতেই অবস্থান করুন। যদি বাড়ি খালি করতে বলা হয় তবে অতিসত্তর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে দ্বিধা করবেন না।

৭. সেসব অঞ্চলে যাদের বাড়িতে কাঁচের জানালা ও দরজা আছে তারা বোর্ড দিয়ে আগলে বা শাটার লাগিয়ে রাখুন। বাইরে থেকে আড়াল করার শক্তিশালী বিকল্প মাধ্যম থাকলে তাও ব্যবহার করতে পারেন। নয়তো ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে কাচের জানালা ভেঙে আরও বড় বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

মহাবিপদ সংকেতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করুন

৮. ঢেকে রাখা যায় এমন পাত্রে যথাসম্ভব অতিরিক্ত খাবার এবং পানীয় জল সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজনে যেন বহন করা যায় সে ব্যবস্থা করে রাখুন।

৯. হারিকেন, লণ্ঠন, টর্চ মোম বা অন্যান্য জরুরী বাতি ধরনের জিনিস হাতের কাছে রাখুন। প্রয়োজনীয় জিনিস বহনযোগ্য শক্তিশালী পানিপ্রতিরোধক ব্যাগে প্যাক করুন। ওষুধ, শিশু বা বয়স্কদের জন্য বিশেষ খাবার, শুকনো খাবার, ব্যাটারি, চার্জার সহ অন্যান্য জিনিস সংগ্রহ করে রাখুন।

১০. বন্যা বাড়ি ছাড়তে হলে মূল্যবান জিনিস বাড়ির উপরের তলায় নিয়ে যান। ছোট এবং আলগা জিনিস, যা প্রবল বাতাসে উড়তে পারে, ঘরে নিরাপদে সংরক্ষণ করা উচিত।

১১. ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে না যাওয়া অবধি বাতাস শান্ত হয়ে গেলেও বাইরে বেরোবেন না। বিরূপ পরিস্থিতিতে আগে জীবন বাঁচানোর চিন্তা করুন। সহায়-সম্পত্তি নিয়ে হাহাকার করা বোকামি। আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা  যতক্ষণ না আপনাকে চলে যাওয়ার জন্য জানানো হয় ততক্ষণ আশ্রয়কেন্দ্রেই অবস্থান করুন।

 তথ্যসূত্র: এনডিএমএ

;

পারিবারিক যত্নে কমবে ‘হ্যালুসিনেশন’



লাইফস্টাইল ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আড়াল থেকে কেউ যেন অনবরত ভয় দেখাচ্ছে। চোখের সামনে যেন বিচিত্র সব দৃশ্য ভাসছে। কাছের মানুষগুলোকেও আর বিশ্বাস হয় না। কল্পনায় ভেসে আসে উত্যক্ত করা কোনো কণ্ঠস্বর। অবচেতন মনেও দেখা যায় কেউ আড়ালে আবডালে ষড়যন্ত্র করছে। মনের এই জটিল অবস্থার নাম স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা হ্যালুসিনেশন। এটি এমন এক অসুখ যার প্রকৃত কারণ আজও ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেননি মনোবিদেরা।

‘হ্যালুসিনেশন’ মনের এমন এক অবস্থা যেখানে রোগী সবসময়েই নিজের মনগড়া এক কাল্পনিক জগতে বাস করে। মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যের তারতম্যের কারণেই এমন অসুখ হতে পারে। ভ্রান্ত ধারণা ও দৃষ্টিবিভ্রম স্কিৎজোফ্রেনিয়ার দুই লক্ষণ।

মনের যেসব জটিল ও বিচিত্র অসুখবিসুখ নিয়ে গবেষণা চলছে স্কিৎজোফ্রেনিয়া তার মধ্যে একটি। এই অসুখ নিয়ে যেমন স্বচ্ছ ধারণা নেই, তেমনই আর পাঁচজন মনোরোগীর সঙ্গে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগীকে আলাদা করাও অনেকক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে যায়। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’-এর রিপোর্ট বলছে, প্রতি হাজার জন ভারতীয়ের মধ্যে তিন জন স্কিৎজোফ্রেনিয়ার শিকার।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক মনোবিদ শর্মিলা সরকার বলছেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়াকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘মেজর মেন্টাল ডিসঅর্ডার’। মনের এমন এক অবস্থা যেখানে, রোগী সবসময়েই নিজের মনগড়া এক কাল্পনিক জগতে বাস করে। মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যের তারতম্যের কারণেই এমন অসুখ হতে পারে।

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগী কেমন আচরণ করে?

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগীরা অশান্ত ও উত্তেজিত মেজাজে থাকে। অথবা এমনভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেয় যে তার মনোজগতে কী চলছে, তা বোঝা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রোগী কখন কী করবে, কেমন আচরণ করবে তার আঁচটুকুও পাওয়া যায় না। 

মনোবিদ শর্মিলা বলছেন, ‘ক্লিনিকে এমন অনেক রোগী আসেন, যারা বলেন যে তার মা-ই নাকি তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। অথবা নিজের মনেই বিড়বিড় করতে থাকেন সবসময়। এমন রোগীও আছেন যারা সবসময়েই অজানা, অচেনা কারও কণ্ঠস্বর শুনতে পান। চোখের সামনে ভুল জিনিস দেখেন, অযথা আতঙ্কে ভোগেন।’

এই প্রসঙ্গে ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট চিকিৎসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ভ্রান্ত ধারণা ও দৃষ্টিবিভ্রম এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। একটি বধ্যমূল ধারণা রোগীর মাথায় গেঁথে যায়। তখন সে চোখের সামনেও ভুল দেখে এবং কানেও ভুল শুনতে শুরু করে। এই ভ্রান্ত ধারণাকে চিকিৎসার ভাষায় বলে ‘ডিলিউশন’ ও দৃষ্টিবিভ্রমকে বলে ‘হ্যালুসিনেশন’। 

হ্যালুসিনেশন হল কাল্পনিক কিছু দেখা বা শোনা। অডিটরি হ্যালুসিনেশন হলে, রোগীর মনে হবে বাইরে থেকে কোনও শব্দ বা কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে, যেগুলির কোনও বাহ্যিক উৎস নেই। এরও নানা রকম প্রকাশ হতে পারে। মনে হতে পারে, এক বা একাধিক মানুষ তাকে নিয়ে সারাক্ষণ কথা বলছে বা সমালোচনা করে চলেছে। অথবা সারাক্ষণ কেউ তার সঙ্গে কথা বলে চলেছে। এই রোগীর কথাবার্তাও অসংলগ্ন হয়।

কেন হয় এই রোগ?

মনোবিদেদের মতে, কোনও ওষুধ বা নেশার কারণে এই রোগ হয় না। তবে মানসিক চাপ বাড়লে, তার থেকে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এই রোগের কারণ জিনগত। পরিবারে কারও থাকলে তার থেকে রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আক্রান্তের বেড়ে ওঠা, শৈশব বা জীবনের কোনও এক পর্যায়ে ঘটে যাওয়া কোনও বিশেষ ঘটনাও এর জন্য দায়ী হতে পারে।

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার প্রতিকার কি সম্ভব?

মনোবিদ শর্মিলার কথায়, স্কিৎজোফ্রেনিয়া পুরোপুরি সারানো সম্ভব হয় না অনেকক্ষেত্রে। তবে সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু হলে এবং রোগী ঠিকমতো ওষুধপত্র খেলে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এর জন্য রোগীর পরিবার ও আশপাশের লোকজনদের সচেতন থাকা জরুরি। রোগী বিকৃত আচরণ শুরু করলে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা, মনোবিদদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। 

তবে আধুনিক যুগের ব্যস্ততা, বদলে যাওয়া সম্পর্কের সমীকরণ, অনিচ্ছার জীবনযাপন বিভিন্ন মানসিক রোগ ডেকে আনে। পরিবার পরিজনের অবহেলা, কটুক্তি এই রোগকে তার চরম সীমায় নিয়ে যায়। তাই মনোবিদ অনিন্দিতা ও শর্মিলা জানাচ্ছেন, কোনও সময়েই রোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা চলবে না। ঠান্ডা মাথায় তাকে বোঝাতে হবে। সমাজের সঙ্গে মেলামেশা করতে দিতে হবে। বাড়িতে লোকজন এলে তাকে লুকিয়ে রাখবেন না, সকলের সামনে নিয়ে আসুন, কথাবার্তা বলতে দিন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, মনের ভয় দূর হবে। গ্রামের দিকে এমন রোগীকে ‘ভূতে পেয়েছে’ মনে করে ওঝা, তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তার অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই শুধু ওষুধ নয়, শিক্ষা ও সচেতনতাও এই রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।

স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগী অনেকক্ষেত্রেই প্রতিহিংসায় ভোগে। অন্যকে আঘাত করা বা খুন করার ইচ্ছা জন্মায়। একে বলা হয় ‘প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়া’। এমন রোগী নিজেরও ক্ষতি করতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে, রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সঠিক ওষুধ ও সাইকোথেরাপিতে রোগীর মানসিক স্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

;

তরমুজ এবং খরমুজ খেয়ে হচ্ছে ফুড পয়জনিং



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
তরমুজ এবং খরমুজ / ছবি: সংগৃহীত

তরমুজ এবং খরমুজ / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তপ্ত গরমে প্রশান্তি দিতে পারে রসালো তরমুজ। গরমের সময়ে জন্মানো এই ফল যেমন সুস্বাদু তেমনই পানিসমৃদ্ধ। তবে এই ফল আসলে কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।  

ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়াচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে তরমুজ এবং খরমুজ জাতীয় ফল খেয়ে বিষক্রিয়া হচ্ছে। অনেকেরই নাকি এই ধরনের ফল খাওয়ার পর ফুড পয়জনিংয়ের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এই ব্যাপারে কথা বলেছেন ভারতীয় চিকিৎসক কোমল কুলকার্নি। তিনি বলেছেন, অবশ্যই সব জায়গার ফলে এরকম বিষক্রিয়া হওয়ার লক্ষণ নেই। তবে কিছু স্থানে আসলেও সমস্যাযুক্ত ফল মিলছে। এই ফলগুলোতে বিষক্রিয়ার পিছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে।

প্রথমটি হলো ফলে ব্যবহৃত কৃত্রিম রঙ এবং স্বাদ বাড়াতে রঞ্জক পদার্থ।  তার সাথে মিষ্টি স্বাদ বাড়াতে চিনির শরবত ব্যবহার করা। অন্যদিকে দ্বিতীয়টি কারণ হল, মাটির ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত স্থানে ফলের জন্মানো।

আরেকটি ইনস্টাগ্রাম রিলে, ভারতীয় এক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক মিরুনা বাশকার তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন। তিনি জানান, একটি তরমুজ খাওয়ার পর তার ফুড পয়জনিং হয়। এর পেছনে যে কারণ থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন- তরমুজ বিক্রেতারা লাভ করার লোভ থেকে ফলে ইরিথ্রোসিনের মতো বিষাক্ত ফুড কালার ব্যবহার করে। সাধারণত উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন থেকে তরমুজ তাদের প্রাকৃতিক লাল রঙ পায়। তবে আকর্ষণীয় করার জন্য লাল-গোলাপী রঙ তরমুজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলগুলোতে তাজা এবং রসালো দেখিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। এসব রঙে সীসা বা মিথানলের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। এর ফলে জ্বর, ডায়রিয়া, বমি এবং ক্র্যাম্প বা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়াও ফুড পয়জনিং, হজমের সমস্যা এবং এমনকিক্যান্সারও হতে পারে। 

এছাড়া যদি মাটিতে ব্যাকটেরিয়ার কারণে তরমুজে সমস্যা আসে সেটা আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। গর্ভবর্তী মা, ছোট শিশুদের উপর সেই ধরনের ফল অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অন্যান্য সাধারণ সমস্যা ছাড়াও গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে এইরকম ফল খেলে। এইজন্য ফল বাইরে থেকে এনেই সরাসরি খাওয়া যাবে না। নিজের এবং পরিবারের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ফলগুলোকে দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে।  

সুরক্ষার জন্য ভিনেগার দ্রবণ ব্যবহার করতে পারেন। বাটিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ  ভিনেগার নিয়ে তার ৩ গুণ পানি ব্যবহার করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই পানি ব্যবহার করে ফল ধুয়ে নিন। যদিও ফলের ভেতরের অংশের সব জীবাণু এর মাধ্যমে ধ্বংম করা সম্ভব নয়।

এছাড়া ফল কাটার আগে এবং পরে পাত্র, কাটিং বোর্ড, ছুড়ি জীবাণু মুক্ত করতে স্যানিটাইজ করে নিন। ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ধীর করার জন্য কাটা তরমুজ ফ্রিজে রাখতে পারেন। বাসি এবং ক্ষতি সম্পন্ন তরমুজ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

;