শহর কিংবা গ্রামে ডেঙ্গু এখন আতঙ্কের নাম। এমন পরিস্থিতিতে বার বারই চিকিৎসকেরা অতি সতর্ক থাকার কথা বলছেন।
ডেঙ্গু মূলত ভাইরাসঘটিত রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী এডিস ইজিপ্টাই মশা। এই মশার কামড়েই প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। বর্ষা মৌসুমে এই মশার দাপট বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবল জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি, ডায়েরিয়া— ডেঙ্গুর এই লক্ষণগুলি দেখলেই সকলের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো উচিত। তবে এর আগেও চাই সতর্কতা।
বিজ্ঞাপন
অনেকেই বলেন ডেঙ্গু মশা কেবল দিনের বেলাতেই কামড়ায়। দিনের বেলা এই মশার দাপট বাড়ে ঠিকই, তবে রাতেও কিন্তু এই মশা কামড়াতে পারে। যে মশারা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়ায়, তারা দিনের বেলাতেই বেশি কামড়ায়, তবে রাতেও এই সব মশাদের হাত থেকে একইভাবে সুরক্ষিত থাকা জরুরি।
এক বার কোনও এডিস মশা যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে কামড়ায়, তখন সেই মশার শরীরে প্রবেশ করে ভাইরাস। এ বার সেই মশা আবার কোনও সুস্থ মানুষকে কামড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগ ছড়িয়ে যায় সুস্থ মানুষের মধ্যে। এ ভাবে এক জন থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে রোগ। তাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করতে হবে আপনাকে। তাই রাত-দিনের বিচার না করে সব সময়েই মশা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। অভ্যাস না থাকলেও মশারির ব্যবহার, মশা তাড়ানোর ক্রিম গায়ে মাখা, ফুলহাতা জামা আর ফুল ট্রাউজার পরা, বাড়িতে মশার ধূপ ব্যবহার, জানলায় নেটের ব্যবহার— এই সব বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলতে হবে।
বর্তমানে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজলভ্য উপায়। আগে আমাদের দেশে মাটির চুলা, বন্ধুচুলা, স্টোভ, কাঠের ভুসির চুলা ইত্যাদি ব্যবহার করে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে নিত্যদিনের খাবার রান্না হতো। সময়ের সাথে সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন গ্রামের চুলা ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায়। তবে এই গ্যাসের চুলাই হতে পারে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ!
দিন দিন বায়ু দূষণের সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। সাধারণত ধারণা করা হয় কল-কারখানা আর যানবাহনের কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের কারণ। তবে রান্নার সময়ও বায়ুদূষণ হয় এই কথাটি অনেকের কাছেই নতুন লাগতে পারে। তবে রান্নার মাধ্যমে আমাদের ঘরের মধ্যেও বায়ুদূষণ হয়ে তা আমাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের হাঁপানিজনিত রোগ হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।
হাঁপানি এমন একটি রোগ যা সরাসরি শ্বাসনালীতে প্রভাব ফেলে। এতে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায়। তার ফলে শ্বাসক্রিয়ার সময় বায়ু প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে সাময়িক সময়ের জন্য হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। যদিও ইনহেলার ব্যবহার করে এবং অ্যাজমা প্রতিরোধ পরিকল্পনা করে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার একটি জরিপে দেখা যায়, দূষিত বায়ুর কারণে প্রায় শতকরা ১২ ভাগ শিশুরা হাঁপানিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখানে শতকরা ৩৮ ভাগ মানুষই রান্নার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। সেসব অঞ্চলে রান্নায় গ্যাসের চুলা ব্যবহারকারীদের ঘরের বাতাসে কার্বন মনো অক্সাইড পাওয়া গেছ, যা অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। এছাড়া পিএম২.৫, বেনজিন ফরমালডিহাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড পাওয়া গেছে। এই উপাদান সবগুলোই মানবদেহ এবং শ্বসনালীর জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সূত্রপাত হয়।
বর্তমানে রান্নার জন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস অনেক জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক চুলার চেয়ে গ্যাসের চুলায় রান্নার সময় ৩ গুণ বেশি নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। তাই এইসব কুকার রান্না করা শিশু এবং পরিবারের জন্য তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। তবে আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষের পক্ষে বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের কারণে ইলেকট্রিক চুলা এবং কুকারের খরচ বহন করা কষ্ট সাপেক্ষ। অথচ তুলনামূলক সুবিধাবঞ্চিত এলাকাতেই বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট রোগের আধিক্য দেখা যায়।
রান্নার সময় সৃষ্টি হওয়া ক্ষতিকর নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস স্বাদহীন, বর্ণহীন, অদৃশ্য। তাই এর উপস্থিতি এবং পরিমাণ নির্ণয় করা কঠিন। তাই পরিবারের সকলকে সুরক্ষিত রাখতে কী কী করতে পারেন, জেনে নিন:
১. গ্যাসের চুলা ব্যবহার সীমিত করা সবচেয়ে প্রভাবশালী পদক্ষেপ হতে পারে।
২. রান্নাঘরে চিমনি অথবা এক্সহস্ট ফ্যান লাগাতে পারেন।
৩. প্রাকৃতিকভাবে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারেন। এইজন্য রান্নাঘরে জানালা বা ছোট দরজা থাকলে তা খোলা রাখতে পারেন। সম্ভব হলে একটু খোলামেলা রান্নাঘর তৈরি করা ভালো।
৪. হিটার ও ইলেকট্রনিক কুকারে রান্না করলে বায়ু দূষণের সম্ভাবনা অনেকাংশই কমে যায়।
সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে শরীরের সঠিক ওজন ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে চর্বি জমা ভালো লক্ষণ নয়। বিশেষ করে পেটের চর্বি নানারকম অসুবিধা ও রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। পেটে যখন চর্বি জমে তখন লিভার ও অন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে ঘিরে ফেলে। এতে এসব অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে নানারকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
রিজিওনাল অ্যানেস্থেসিয়া এবং পেইন মেডিসিনে পেটের চর্বির ক্ষতিকর দিক নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেটের চর্বি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জীবনধারাকে সুন্দর করে তুলতে পারে। কারণ পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে নারীরা এই ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায় তাদের দীর্ঘমেয়াদী পেশি এবং জয়েন্ট ব্যথা হয়। এই সমস্যা পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত শারীরিক গঠন, হরমোনের প্রভাব এসব কারণে এই তারমতম্য দেখা যায়। পেটের চর্বি শুধু লিভার আর অন্ত্রকে ঘিরে রাখে তাই নয়! সাইটোকাইন নামের এক রাসায়নিক পদার্থও তৈরি করে। এই প্রদাহ বিভিন্ন হাড়ের জয়েন্ট এবং পেশিতে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ। এই গবেষণায় ৩২ হাজার ব্যক্তির উপর পরীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন গড়ে ৫৫ বছর বয়সের নারীরা। সেই গবেষণায় পেটের চরি্ব কমানোর কিছু উপায়ও প্রকাশ করা হয়েছিল:
জীবনধারা: সুস্থ থাকতে শরীর সক্রিয় রাখার বিকল্প হয় না। ঘন ঘন শারীরিক কার্যক্রম করার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি দূর করা সম্ভব। এরজন্য আলঅদা করে ব্যায়াম করতে হবে, তেমনও নয়। হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানোর মতো দৈনন্দিন জীবনের কাজের মাধ্যমেও শরীর সক্রিয় রাখা সম্ভব।
খাবার: শরীরে তথা পেটে চর্বি জমার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হলো খাদ্যাভ্যাস। সাধারণত শরীরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় পেটে আগে চর্বি জমতে শুরু করে। এই সমস্যা এড়াতে যথাসম্ভব আস্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন আস্ত ফল, সবজি, শস্যজাত খাবার ইত্যাদি। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাংস, চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার, প্যাকেটজাত খাবার এসব খাবার খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে।
মানসিক স্থিতি: পেটে চর্বি জমার পেছনের হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। কর্টিসল নামক হরমোন এরজন্য দায়ী। মূলত মানসিক চাপে থাকলে এই হরমোনের প্রবাহ বেড়ে যায়। সেইজন্য মনস্থিতি শান্ত করার চর্চা করা প্রয়োজন। যোগাসন বা ধ্যানের মা্যেমে মনকে শান্ত করার চর্চা করতে হবে।
ঘুম: প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার শান্তির ঘুমের মাধ্যমে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় পেটে বেশি চর্বি জমতে শুরু করে।
পানি: শরীর ভালো রাখতে, যেকোনো ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকার পূর্বশর্ত হলো পানি। আমাদের শরীরের শতকরা ৭০ ভাগ পানি, তাই পানি আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। হজম থেকে শুর করে চর্বি কমানো সব ক্ষেত্রেই পানি পান করার অভ্যাস প্রভাবশীল।
মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এসব আমাদের নিত্যসঙ্গী। বিনোদন হোক বা প্রয়োজন, এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়া একদিনও কাটানো প্রায় অসম্ভব। ছোট থেকে বড় সব মানুষই দিনের বেশ কয়েক ঘণ্টা এসব ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটায়।
মূলত যখন পরিবারের বড়রা কাজে বা অলস সময় কাটাতে মোবাইল ও টিভি ব্যবহার করে, তখন ছোট শিশুরাও তাদের দেখাদেখি এই অভ্যাস গড়ে তোলে। তবে শিশুদের জন্য বেশিক্ষণ স্ক্রিনের এই নীল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শিশুরা বেশিক্ষণ ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকলে তাদের চোখের ক্ষতি হয়। এছাড়াও শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রেও এই অভ্যাস অনেক বেশি ক্ষতি সাধন করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অতিরিক্ত সময় কাটানোর অভ্যাস শিশুদের ভাষাগত বৃদ্ধিতে কঠোরভাবে বাধা প্রদান করতে পারে।
শিশুদের মস্তিষ্কের কগনিটিক অর্থাৎ, জ্ঞানীয় কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান করে। এই কারণে শিশুরা যখন প্রাথমিকভাবে ভাষা শেখা শুরু করে তখন সেই শিক্ষাক্রমে বাঁধা তৈরি হয়। এস্তোনিয়ার বিশেষজ্ঞদের একটি দলের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করার এই অভ্যাস শিশুরা তাদের পিতা-মাতার অনুসরণেই পেয়ে থাকে।
তারতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক ডাক্তার টিয়া তুলভিস্তে নবজাতকদের ভাষার দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলায় যখন শিশুদের বিকাশ ঘটতে শুরু করে, তখন বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যরা শিশুর সাথে খেলার ছলে নানান কথোপকথন করে। সেই অনুযায়ী প্রতিদিন বড়দের মাধ্যমে শিশুদের ভাষাগত বিকাশ হতে থাকে।
বয়সের সঙ্গে তাদের উচ্চারণ এবং ব্যাকরণগত শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হতে থাকে চর্চার মাধ্যমে। সেই বয়সে এর বদলে যদি তাদের মোবাইল বা ল্যাপটপের প্রতি ঝোঁক বাড়ে তাহলে তাদের স্বাভাবিক বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। শিশুদের এই অভ্যাস তৈরির পেছনে অবশ্য প্রতিপালকদের দায় থাকে। শিশুদের সাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে কথোপকথন করতে হবে।
গবেষকেরা কিছু শিশুদের উপর পরীক্ষাজনক ভাবে নজর রাখেন। এই শিশু এবং এদের বাবা মায়েরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সময় কাটান। সময়ের দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে শিশুদের তিনটি ভাগে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
প্রথমভাগে সেসব শিশুরা অনেক বেশি ডিভাইসে সময় কাটায় তাদের ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করা হয়। এই শিশুদের কথায় পরিপক্কতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয়ভাগে একই বয়সের তুলনামূলক কম ডিভাইসে আসক্ত শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা প্রথম ভাগের তুলনায় উন্নত ছিল। সবশেষে যেসব শিশুদের একদম ডিভাইস থেকে দূরে রাখা হয় তারা ব্যাকরণ এবং উচ্চারণে সবচেয়ে বেশি দক্ষতার পরিচয় দেয়।
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সমগ্র জীবনের ভিত্তি শৈশবেই তৈরি হয়। শিশুদের প্রথম ৫ বছর চঞ্চলতা অনেক বেশি থাকে। এইসময়কালে বই পড়া আর শিক্ষামূলক খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। তাই এইসময়ে শিশুদের অনেক বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন। খেলা, বই পড়া, শিশুদের সাথে কথোপকথনের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের থেকে তাদের দূরত্ব রক্ষা করাও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ হবে এবং সুন্দর শৈশব উপহার পাবে।
শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প হয় না। ছোট থেকেই তাই শিশুদের পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খেলাধুলা ও ব্যায়ামে উৎসাহী করে তোলা হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর সাথে জীবনযাত্রার ধরনেও পরিবর্তন আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ থাকার জন্য জিম করেন। কারো কারো মধ্যে কঠোর ব্যায়ামের প্রতি ঝোঁকও দেখা যায়।
তবে কথায় বলে, ‘অতি ভালো, ভালো নয়।’ যার মানে, কোনো ভালো জিনিসও অতিরিক্ত ভালো নয়। কঠোর ব্যায়ামও সুস্থতার বদলে নিয়ে আসতে পারে কোনো ভয়াবহ পরিণতি। বর্তমানে কঠোর ব্যায়ামকারীদের মধ্যে অল্পবয়সেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিভুধ প্রতাপ সিংহের একটি প্রতিবেদনে এই নিয়ে বিস্তর বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কঠোর ব্যায়াম এবং জীবনযাপনের নানা অসঙ্গতিপূর্ণ অভ্যাসের কারণে যুব সমাজে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।’ ডা. বিভুধের মতে এর কারণসমূহ হলো:
১. অনেকেই উপকার হবে ভেবে শুধু একটানা ব্যায়াম করে যান। তবে ব্যায়ামের আগে করণীয়, খাদ্যতালিকার পরিবর্তন, কতটা ব্যায়াম শরীরের জন্য সহনীয় হবে –এইসব ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। এছাড়া, উচ্চমাত্রায় মানসিক চাপে যারা ভুগছেন বা শরীরের প্রতি যথাযথ যত্ন নেন না, নানারকম বদ অভ্যাসে ডুবে থাকেন তাদের জন্যও হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. স্টেরয়েডের ব্যবহারও হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ানোর একটি বিশেষ কারণ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যুব ব্যক্তিদের মধ্যে এইসব কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তি থাকে।
৩. শরীরচর্চার সময় হৃদপিণ্ডের উপর চাপ পরে। ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপায়ী বা যাদের বংশানুক্রমে জীন স্থানান্তরের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে এমন ব্যক্তিদের জন্য হৃদপিণ্ডের প্রতি বেশি চাপ পড়া ভালো নয়। তাই ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে এইসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কঠোর ব্যায়ামের কারণে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪. শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার জন্য যেমন ব্যায়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একই্ ভাবে কোষক্ষয় এড়াতে বিশ্রামও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৪৫ বছরের উপরে যাদের বয়সের ঊর্ধ্বে যারা তাদের জন্য বিশ্রামহীন কঠোর ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এর ফলে তাদের মাথা ঘোরা, চরম ক্লান্তি, বুকে ব্যথা এমনকি হৃদস্পন্দন ওঠা-নামা করার মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৫. যেকোনো বয়সেই স্বাস্থ্যের উপর জীবনযাপনের ধরনের একটি বিশেষ প্রভাব থাকেই। সঠিক সময়ে ঘুম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অশান্তিতে ভোগা যুব সমাজের মধ্যেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ এসব অভ্যাসের কারণে হাইপার টেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরল, প্রদাহের মতো সমস্যা বেড়ে যায়। এসবের পরে কঠোর পরিশ্রম হৃদপিণ্ডের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়, ফলস্বরূপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।