বহুল প্রচলিত সাপ্লিমেন্ট মাছের তেল এড়িয়ে চলুন



প্রবল কুমার মন্ডল
প্রবল কুমার মন্ডল

প্রবল কুমার মন্ডল

  • Font increase
  • Font Decrease

Fish oil বা মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি থাকে। ওমেগা–৩ হলো অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। মানবদেহে খাবারের বিপাকক্রিয়া ও শরীর সুস্থ রাখতে ওমেগা–৩ চর্বির অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, মুড ডিসর্ডার, কয়েক প্রকার ক্যান্সার ও দেহের প্রদাহ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যে কারণে চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ সকলেই ফিশ ওয়েলের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। গুগলে সার্চ দিলেও ওমেগা থ্রি’র গুণ কীর্তন চোখে পড়ে। এর উপকারিতা নিয়ে আছে হাজারো রকমের গবেষণাপত্র।

কিন্তু দেখা যায় ওমেগা থ্রির উপকারিতা বিষয়ে গবেষণার অধিকাংশ তথ্য উপাত্ত গ্রহণ করা হয়েছে যারা ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ মাছ খেয়েছে তাদের নিকট থেকে। ওমেগা থ্রি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের থেকে নয়।

আবার অনেক রিসার্চ ফিশ ওয়েল কোম্পানির ফান্ডিংয়ে পরিচালিত হওয়ার কারণে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। অনেক মানুষই মনে করে সরাসরি মাছ খাওয়ার চেয়ে ফিশ ওয়েল সাপ্লিমেন্ট নেওয়া বুঝি ভালো।

দেখা গেছে, অনেক ফিশ ওয়েল সাপ্লিমেন্টে নিম্নমানের বিশোধন প্রক্রিয়ার কারণে হেভি মেটাল থেকে যায়। এছাড়াও প্রক্রিয়া জাতকরণের সময় তা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়। আলো, অক্সিজেন ও তাপ এই জারণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এই জারিত তেল দেহের জন্য ক্ষতিকর।

২০১৬ সালে আমেরিকার বিখ্যাত তিনটি ফিশ ওয়েল সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা করে দেখা যায় এগুলোর oxidation level নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে চার গুণ বেশি। দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার এক রিপোর্টে দেখা যায় এই মাত্রা ১১ গুণ বেশি।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এসব সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের কারণে ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের হার বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে মেলানোমা, প্রোস্টেট ক্যান্সারের পরিমাণ বেড়েছে।

অনেকে মনে করে এসব সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এসবের ঝুঁকি হ্রাস পায়। কিন্তু বাস্তবে হৃদরোগ, স্ট্রোক কমাতে কোনো ভূমিকা পাওয়া যায় না।

২০১৮ সালে নিউজ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক স্টাডিতে দেখা যায়, মধ্য বয়সী মানুষদের হৃদরোগ, স্ট্রোক কমাতে এই সাপ্লিমেন্ট কোনো ভূমিকাই রাখে না।

২০১০ সালে জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ফিশ ওয়েল সাপ্লিমেন্ট প্রসবোত্তর বিষণ্নতা (Postpartam Depression) কমাতে কোনো ভূমিকা রাখে না। আবার শিশুর মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশেও তেমন কোনো ভূমিকা নেই এর।

১৯৯২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় (Wainwright et al.) দেখা যায়, ফিশ ওয়েলে বিদ্যমান অধিক মাত্রার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে সকলের প্রতি পরামর্শ থাকবে ওমেগা থ্রির প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য সাপ্লিমেন্ট নির্ভর না হয়ে ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- মাছ, তিসি, চিয়া সিড ইত্যাদি গ্রহণ করুন।

প্রবল কুমার মন্ডল, পুষ্টিবিদ ও লেখক 

Email: [email protected]
01827664306

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যে ৫ খাবারে লাগাম টানতে হবে



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন নিয়ম করে ওষুধ খেতে হয়। রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে রক্তচাপেও হেরফের হয়। তাই রোজের রান্নায় হাত টেনেই লবণ দেন। কিন্তু এত কিছু করার পরেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকছে না কোনও মতেই। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কাঁচা লবণ না খেলেও নিজেদের অজান্তেই এমন কিছু খাবার খেয়ে ফেলছেন, যা অজান্তেই রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে।

বিশেষ কিছু শাক

শরীর, স্বাস্থ্য ভাল রাখতে টাটকা সতেজ শাক সবজি খেতে বলা হয়। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সেলেরি, পালং, গাজর এবং বিটের মতো এমন কিছু সবজি রয়েছে, যেগুলির মধ্যে লবণের পরিমাণ বেশি। তাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এই শাক-সবজি এড়িয়ে চলতে বলছেন পুষ্টিবিদেরা।

চিজ

ক্যালশিয়াম এবং প্রোটিনের উৎস হল চিজ। চিজে থাকা লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে চিজ খাওয়া হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভাল নয়।

প্যাকেটজাত খাবার

চিপ্‌স, বিস্কুট, বাদাম থেকে শুরু করে চটজলদি তৈরি করা যায় এমন যে কোনও প্যাকেটজাত খাবারেই লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই নিয়মিত এই সব খাবার খেলে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

আচার

গরমকালে যখন অন্য কোনও খাবার খেতে বিশেষ ভাল লাগে না, তখন ডাল-ভাতের সঙ্গে আচারের স্বাদ অমৃত মনে হয়। বাড়ির তৈরি আচারের চেয়েও কেনা আচারে লবণের মাত্রা বেশি থাকে। তাই এই খাবার খেলেও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

পাউরুটি

সকালের খাবারে পাউরুটি খেয়ে থাকেন অনেকেই। তবে জানেন না যে, রোজের এই খাবারের মধ্যেও সোডিয়ামের থাকে। তাই নিয়মিত খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতেই পারে।

;

ব্রণের দাগ দূর করতে হলে মানতে হবে যেসব নিয়ম



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুখে ব্রণ হয়ে সেরেও য়ায়। কিন্তু তার দাগ থেকে যায় দিনের পর দিন। ব্রণের দাগ সহজে যেতে চায় না। এই দাগ পুরোপুরি মুছতেও সময় লাগে। চেষ্টা করেও চলে যায়নি, এমন উদাহরণও রয়েছে অনেক।

আজকাল অনেকেই মুখের দাগ মেটাতে সার্জারির সাহায্য নেন। ব্যবহার করেন দামি ব্র্যান্ডের মেকআপ। কিন্তু এতসব না করে কিছু নিয়ম মেনে চললেই মুখের দাগ কমানো যায়। জেনে নিন সেসব উপায়-

যে কয়েকটি নিয়ম অবশ্যই মেনে চলবেন

০১. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

০২. ত্বক পরিষ্কার রাখুন।

০৩. প্রতিদিন ভালো করে মুখের মেকআপ তুলুন।

০৪. অপরিষ্কার হাতে ব্রণের জায়গাটি ধরবেন না।

০৫. ব্রণ অযথা নখ দিয়ে খুঁটবেন না।

০৬. বিজ্ঞাপনে ভুলে যে কোনও ক্রিম বা লোশন মুখে মাখবেন না।

০৭. তেল মশলাযুক্ত খাবার পারলে বন্ধ করে দিন।

বাড়াবাড়ি হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ব্রণ কমে গিয়েছে মানেই, ত্বকের পরিচর্যায় ইতি টানলে চলবে না। ব্রণ কমে যাওয়ার পর ত্বকের যত্ন নিয়ে যেতে হবে নিয়ম করে। বিশেষ করে স্ক্রাবিং করা বন্ধ করলে চলবে না। স্ক্রাব করার ফলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়। লোমকূপে জমে থাকা ময়লা বাইরে বেরিয়ে যায়। এর ফলে দাগছোপ তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা কম থাকে।

;

ভেষজ চায়ের উপকারিতা



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সকালে উঠে আলসেমি কাটানোর একমাত্র উপায় চা ছাড়া কিছু হতেই পারে না। ছুটির দিনে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে ক্যাফের নিভৃত কোণে, চা জনপ্রিয় সব পরিস্থিতিতেই। দুধ কিংবা লিকার চায়ের পাশাপাশি ইদানিং অবশ্য ভেষজ চায়ের প্রতিও আসক্তি বাড়ছে। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। আবার স্বাদ বদলও হয়। সেই সঙ্গে সুস্থ থাকে শরীরও। কারণ ভেষজ চায়ের রয়েছে একাধিক গুণ।

তুলসী চা

ঠান্ডা-গরমের মৌসুমে সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। তবে যদি রোজ এক কাপ করে তুলসী চা খেতে পারেন, তা হলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কিন্তু অনেকটাই কমবে। একটি পাত্রে পানি গরম করে তাতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিন। তার পর মধু ও লেবু মিশিয়ে নিলেই তৈরি তুলসী চা। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে নিয়মিত তুলসী চা খান, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

দারচিনি চা

শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে চান? তা হলে এই পানীয়টি আপনাকে খেতেই হবে। একটি পাত্রে পানি গরম করে দারচিনি গুঁড়ো, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন। তার পর এই চা ছেঁকে খান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে বাঁচাতে সহায়তা করে। ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্যথা হলে, তা থেকেও আরাম মিলবে এই চা খেলে।

পুদিনা চা

বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন? পুদিনা পাতার চা খান। পানি গরম করে তাতে কুচি কুচি করে কয়েকটা পুদিনা পাতা কেটে মিনিট ১৫ ঢাকা দিয়ে রাখুন। পাতা কেটে দিলে পুদিনার গন্ধটা পুরোটাই পাবেন। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এড়াতেও খেতে পারেন পুদিনা চা। এই চা খেলে নিমেষেই দূর হয়ে যাবে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, একটানা কাজ করার জন্য মনোসংযোগ বাড়াতেও সহায়তা করে এই চা।

;

বয়স বাড়লে দুধ হজমের ক্ষমতা হ্রাস, দুধের বিকল্প হিসেবে কী খাবেন?



প্রবল কুমার মন্ডল
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ল্যাকটোজ একটি ডাইস্যাকারাইড, অর্থাৎ এটি দুটি সরল শর্করা (গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজ) দিয়ে গঠিত। গ্লুকোজ আমাদের দেহে শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। গ্যালাকটোজের রাসায়নিক গঠন গ্লুকোজের মতই, শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটা গ্লুকোজেও পরিবর্তিত হতে পারে।

এছাড়াও এটি কোষ ঝিল্লির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রকৃতিতে স্তন্যপায়ীদের দুধ ছাড়া অন্য কোথাও ল্যাকটোজ বিরল।শিশুরা এই গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎসকে জীবনের প্রথম বছরে ব্যবহার করে (Silanikove et al, 2015)। শিশুদদের পরিপাকতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক) উৎপাদনে সহায়তা করে যা শিশুদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে (Fassio et al., 2018)।

দুধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারের ল্যাকটোজ নামক ভাঙ্গতে ল্যাকটেজ নামক এনজাইমের প্রয়োজন। অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এই এনজাইমের উৎপাদন বন্ধ হয়, যখন তারা দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। তবে পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ মানুষ এই এনজাইমের উৎপাদন প্রায় সারাজীবনই করে থাকে।

যদি যথেষ্ট পরিমাণ ল্যাকটেজ উৎপন্ন না হয়,তবে ল্যাকটোজ থাকে এমন খাদ্য গ্রহণের ফলে পরিপাক সংক্রান্ত জটিলতা যেমন- পেট ব্যাথা, ডায়রিয়াতে ভোগে। এই অবস্থাকে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বলা হয়ে থাকে। অনেকে একে ল্যাকটোজ ডেফিসেন্সিও বলে।

ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে-

• প্রাইমারি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স:

যখন শিশু অবস্থায় থাকে তখন দুধ হজমের জন্য যথেষ্ট ল্যাকটেজ এনজাইম থাকে। আস্তে আস্তে শিশুরা যখন পারিবারিকক খাবারের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে থাকে তখন এনজাইমের উৎপাদন হ্রাস পেতে আরম্ভ করে এবং দুধ হজমে সমস্যা আরম্ভ হয়।

• সেকেন্ডারি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স:

যদি ক্ষুদ্রান্ত্রে কোন অপারেশন বা সার্জারির কারণে ল্যাকটোজ উৎপাদন হ্রাস পায় তবে তা এই ধারণের অন্তর্ভূক্ত হবে সাধারণত সিলিয়াক ডিজিস, intestinal Infection, Crohn's disease এর কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রে এনজাইম উৎপাদন হ্রাস পায়।

• জন্মগত ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স:

এটা সম্ভব কিন্তু বিরল। এই ডিসর্ডার বংশগত। মা ও বাবার থেকে একটি করে মিউটেটেড জিন যখন সন্তানের মধ্যে আসে তখন এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পূর্বেই জাত (premature) শিশুদের ল্যাকটেজ উৎপাদন ক্ষমতা কম থাকলে এই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়।

ককেশীয় অঞ্চলে বসবাসকারীদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম কিন্তু এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কিছু দেশে পাঁচ বছর বয়স অতিক্রম করার পর ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের সম্ভবনা অনেক বেশি। বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষের ল্যাকটোজ প্রোডাকশন ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে, বিশেষ করে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে ল্যাকটেজ হ্রাসের মাত্রা দুগ্ধপোষ্য অবস্থার চেয়ে ১০% কমে যায়। (Ugidos-Rodriguez et al, 2018).

পরিণত বয়সে বিশ্বের মাত্র এক চতুর্থাংশ মানুষের ল্যাকটোজ হজম করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ল্যাকটেজ এনজাইম থাকে। (Szilagyi & Ishayek, 2018)

দক্ষিণ এশীয় প্রাপ্তবয়স্কদের ৯৫% এর ল্যাকটেজ স্বল্পতা, অন্যদিকে স্ক্যান্ডিনিভিয়ান অঞ্চলের মাত্র ১০% প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ল্যাকটেজ এনজাইম স্বল্পতায় ভোগে। (Forsgård, 2019)

ল্যাকটটেজ এনজাইম ক্ষুদ্রান্ত্রের পাওয়া যায়। ক্ষুদ্রান্ত্রে ল্যাকটেজ এনজাইম ল্যাকটোজকে ভেঙ্গে গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজ নামক সরল শর্করায় রূপান্তরিত করে।

যখন প্রয়োজনীয় এনজাইম উৎপন্ন হয় না তখন তা ক্ষুদ্রান্ত্রে ল্যাকটোজ সম্পূর্ণ না ভেঙ্গে বৃহদান্ত্রে যায়।

বৃহদান্ত্রে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেগুলো অহজমকৃত ল্যাকটোজের সঙ্গে ফার্মেন্টেশন বিক্রিয়া করে ল্যাকটেট,ফ্যাটি এসিড ও বিভিন্ন গ্যাস (হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন) উৎপন্ন করে। যার ফলে পেট ফেপে যায়, ব্যাথা হয়।

ল্যাকটোজ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ত্রিশ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে এইসব লক্ষণ দেখা যায়। (Costanzo & Canani, 2018)

অনেক মানুষের ল্যাকটেজ স্বল্পতা থাকলেও নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে। যদি কেউ ল্যাকটেজ স্বল্পতায় ভোগে তবে সে যদি ১২ গ্রামের কম ল্যাকটোজ গ্রহণ করে তবে তার ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। (Dekker et al, 2019) যেসব খাবারে ল্যাকটোজের মাত্রা বেশি সেগুলো কম, আবার যেসব খাবারে ল্যাকটোজের মাত্রা কম সেসব একটু বেশি খাওয়া যেতে পারে,তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ল্যাকটোজ ১২ গ্রাম অতিক্রম না করে।

Low fat Milk অপেক্ষা উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুধ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের ক্ষেত্রে ভালো।কারণ ফ্যাটের সঙ্গে ল্যাকটোজ গ্রহণ করা হলে ল্যাকটোজ পাকস্থলী থেকে আস্তে আস্তে ক্ষুদান্ত্রে যায়।ফলে অল্প ল্যাকটেজ দিয়ে হজমে তত বেশি বেগ পেতে হয় না, যার ফলে লক্ষণ কম প্রকাশ পায়, যদিও দুধে ফ্যাটের পরিমাণ মাত্র ৪-৫%। (Ugidos-Rodriguez et al, 2018)

কিছু তরল দুধ ও দধি(yogurt) উৎপাদনের সময় এগুলোতে ল্যাকটেজ এনজাইম যুক্ত করে দেওয়া হয়, ফলে এসব খাদ্য খাদকের মুখে যাওয়ার আগেই ল্যাকটোজকে ভেঙ্গে ফেলে।যদিও এর ফলে খাবারের স্বাদের পরিবর্তন হয়,কিন্তু কোন সমস্যা দেখা দেয় না।

দই,দধি সহ ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন দুগ্ধজাতীয় খাবারে যেসব উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে সেগুলো ল্যাকটেজ এনজাইম উৎপন্ন করে। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ল্যাকটেজ স্বল্পতায় ভোগা মানুষেরা তরল দুধের ১৮গ্রাম ল্যাকটোজ গ্রহণ করার ফলে যেসব লক্ষণ দেখা দিয়েছে, ঠিক সম পরিমাণ দধির ল্যাকটোজ গ্রহণের ফলে একই বৈশিষ্ট সম্পন্ন ব্যক্তিদের তার চেয়ে কম লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দেখা যায় যে দধির ল্যাককটোজের ৯০% ই ক্ষুদ্রান্ত্রে হজম হয়েছে। (Savaiano, 2014)

দুধ থেকে পনির তৈরির সময় অনেকদিন রেখে দেওয়া হয় যাতে ব্যাকটেরিয়ার সহায়তায় আকাঙ্ক্ষিত গন্ধ ও গঠন পাওয়া যায়। ফলে এতে থাকা ল্যাকটোজ, ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ভেঙ্গে যায়। এ কারণে পনিরে খুবই অল্প পরিমাণ ল্যাকটোজ থাকে।

অনেকে ল্যাকটেজ এর অভাব পূরণের জন্য ল্যাকটেজ এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন। এটাও কার্যকরী তবে এক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ল্যাকটোজ জাতীয় কিছু গ্রহণের পাঁচ থেকে ত্রিশ মিনিট পূর্বে এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। (Fassio et al, 2018)


লেখক: প্রবল কুমার মন্ডল, পুষ্টিবিদ ও লেখক

Email: [email protected]
01827664306

;