সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা বলতে কী বোঝায়?



অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

ইদানিং বাচ্চারা কথা শুনে না এটা সার্বজনীন সমস্যায় রূপ নিয়েছে। কেন বাচ্চা কথা শুনে না? সেখানে আমাদের ভূমিকা কী ছিল? আসুন ধাপে ধাপে আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেটা খুঁজি। সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে গ্রহণ মানে কী? আপনি ভাবছেন, আপনি সন্তানের জন্য যা করছেন সব নিঃস্বার্থ ভাবে। কিন্তু সন্তানও কী তাই অনুভব করছে? আপনার আচরণে বাচ্চা কী মনে করছে যে সে- আপনার ভালোবাসার যোগ্য? পরীক্ষায় ভালো না করলেও আপনি তাকে ভালোবাসবেন? বাচ্চাটা কি তার রাগ দুঃখ ভয় আনন্দ অকপটে আপনাকে বলে? যদি বলতে না পারে, এখানে অবশ্যই অবচেতনভাবে আপনার ভূমিকা আছে একজন অভিভাবক হিসেবে।

সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা বিষয়টিকে আমি চারটা ভাগে ভাগ করতে চাই। * প্রথমত: মানসিক * দ্বিতীয়ত: সামাজিক * তৃতীয়ত: শারীরিক এবং * চতুর্থ স্পিরিচুয়াল বা আধ্যাত্মিক।

প্রথমেই আসি সন্তানকে নিঃশর্ত গ্রহণ প্রয়োজন কেন? সন্তানকে গ্রহণ করার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর মানসিক দিক। কারণ প্যারেন্টিং বা সন্তান লালন হলো একটি লার্নিং প্রসেস বা জ্ঞান আহরণের পদ্ধতি। আমরা যেদিন গর্ভধারণ করি, সেদিন থেকেই আমরা মানসিকভাবে সন্তানকে গ্রহণ করি। নারীটি সেদিনই মা হন, পুরুষটি সেদিনই পিতা। কিন্তু আমাদের ডিএনএ গঠন, অনাগত সন্তানের থেকে ভিন্ন হওয়ায়, সন্তান পিতা মাতার থেকে ভিন্ন মানবসত্ত্বা। আমি পিতা বা মাতা হয়ে যত সহজ ভাবে নিজের সন্তানকে তার ভিন্নতা সহ গ্রহণ করতে পারব, সহজে আমি বলব, যে আমি আমার মতন ঠিক আছি, তুমি তোমার মতন ঠিক আছো তত সহজে সন্তানের ভিন্নতাকে বুঝবে। সন্তান তো আমাদের ফটোকপি না। ওর ভিন্নতাকে সম্মান করলে আমার সন্তান যেমন নিজেকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পার্মিশন পাবে তেমনি অন্যর ভিন্নতাকেও গ্রহণ করতে শিখবে।

সাইকেল অফ ডেভলপমেন্টে গর্ভধারণ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়টিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। একে বলে becoming বা গড়ে ওঠার সময়। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, চিকিৎসাশাস্ত্রেই হোক, কিংবা প্রত্যেকটা ধর্মেই হোক গর্ভবতী নারীকে বিশেষ যত্নের কথা বলা হয়েছে। কেন? একটা ছোট্ট এক্সাম্পল দেই। গতকাল আমি একজনের কাউন্সিলিং সেশন নিলাম। ভদ্রমহিলার বয়স ৪০, উচ্চশিক্ষিত, খুব ভালো চাকরি করেন। উনার মা কিন্তু গর্ভকালীন সময় অ্যাবরশনের চেষ্টা করেছিলেন। ভদ্রমহিলা আজকে সূপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সেই অ্যাবরশনের স্মৃতি তার মনোজগতে না থাকলেও, তার ডিএনএ লেভেলে জমা আছে। তিনি প্রচণ্ড ভয় পান, অস্থির হয়ে ওঠেন, দুশ্চিন্তা বোধ করেন, কেন এমন হচ্ছে কারণ আইডেন্টিফাই করতেই আমার কাছে তার আসা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত শিশু। আর সাইকেল অফ ডেভলপমেন্ট বলে, একটা মানুষ ১৯ বছর পর্যন্ত মানসিক ভাবে বৃদ্ধি লাভ করে। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ বছর কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সিলিং টেবিলের গল্পগুলোর মধ্যে কমন প্রবলেম আমি পাই, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, সেল্ফ কেয়ারের অভাব, আত্মসম্মান নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই ঘটনাগুলো বীজ কিন্তু শৈশবেই শিশুমনের গহীনে রোপণ হয়ে যায়। পাঠক একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, মা গর্ভধারণ করলে আপনি, আমি কিন্তু প্রথমে জানিনা যে গর্ভস্থ শিশুটি ছেলে, মেয়ে নাকি তৃতীয় লিঙ্গ হবে? ঠিক সেরকমই সন্তান হচ্ছে বীজের মতন। আপনি বীজ বপন করবেন ঠিকই কিন্তু কি ফল হবে সেটার আশা করবেন না। কারণ প্রত্যেকটা মানুষ স্বতন্ত্র। আমি গাছ লাগাবো কিন্তু কি ফল হবে সেটা পরবর্তী সময় বলে দেবে। সেটা নির্ভর করবে আমি কিভাবে যত্ন নেব সেই ছোট্ট চারা গাছের তার উপর। যেভাবে গাছের পরিচর্যা করব, গাছটি সেভাবেই বেড়ে উঠবে। সন্তান এই গাছটার মতন।

এবার আসি নিঃস্বার্থভাবে কেন করব? সন্তান রেখে যদি নিঃস্বার্থভাবে বড় করি, তাহলে সন্তানের মনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। তখন সন্তান অকপটে আপনাকে, তার আনন্দ, দুঃখ, ভয় আজ রাগের কথা বলতে পারে। ফলে সেই সন্তান দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকে প্রাপ্তবয়স্ক হলে। অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে গ্রহণ করলে বাচ্চা আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হবে। অন্যকেও তার ভিন্নতাকে নিয়ে সম্মান করতে পারবে। পরিণতিতে আমার সাথেও আমার বাচ্চার সম্পর্কসহ অন্যান্য পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো ভালো থাকবে। আপনি কিন্তু এখন প্রশ্ন করবেন তাহলে কি আমার বাচ্চা কে আমি ওর ভালোর জন্য শাসন করতে পারবো না? অবশ্যই পারবেন। কথায় আছে, "শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।" যেটাতে আমরা বলি পজেটিভ বা ইতিবাচক প্যারেন্টিং। এটা কিন্তু শিখতে হবে। প্যারেন্টিং এর ওয়ার্কশপ করাতে গেলে অনেক অভিভাবক আমাকে বলেন বাচ্চা পালা শেখার জিনিস নাকি? আমার নানী দাদী পালছে না? আমার বাপ মা পালছে না? কিন্তু অভিভাবকদের প্রতি সম্মান রেখে একটা কথা বলতে চাই, বাচ্চা পালা প্যারেন্টিং কিন্তু একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। আপনি যদি পঞ্চাশ বছর আগের মুরগি পালার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনেন, হাল চাষের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনেন, তাহলে সন্তান লালন-পালনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন কেন আসবেনা? তাই প্যারেন্টিং শেখার জিনিস। নতুন নতুন গবেষণা লব্ধ তথ্য দিয়ে কাজে লাগানোর জিনিস। সন্তানকে নিঃস্বার্থ ভাবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সবথেকে জরুরি হলো বাচ্চাকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন। আজকে যারা এই লেখাটি পড়ছেন, তমুকের বাচ্চা এই করেছে, আর তুমি পারলে না এই তুলনাটি করবেন না। মনে রাখবেন তুলনা সন্তানের আত্মবিশ্বাসটা দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দেবে।

এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কি তুলনা করব না? অবশ্যই করবো। কিন্তু তুলনা করব এখানে বাচ্চার নিজের সাথে নিজের। যেমন গত পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে এই পরীক্ষায় তার থেকে কতটুকু বেশি পেলো সেটার সাথে। অন্যের সাথে নিজের বাচ্চার কম্পেয়ার করা মানে আম গাছের সাথে কাঁঠাল গাছের তুলনা করার মতোই। আমরা বাচ্চার অতীতের সাথে বর্তমানের তুলনা করে বাচ্চার সীমাবদ্ধতা বা লিমিটেশনের জায়গাগুলা চিহ্নিত করব।

এবার যদি সামাজিক দিক থেকে দেখি, তবে আমাদের সমাজে একটা ট্যাবু আছে বাচ্চার প্রশংসা মুখের সামনে করতে হয় না। এটা মোটেও ঠিক না। কারণ আপনার ছোট্ট একটু প্রশংসা বাচ্চাকে অনেকখানি উৎসাহিত করবে। তার ভালো কাজের স্পেসিফিক্যালি প্রশংসা করুন। প্রশংসা কিন্তু আমরা প্রার্থনায় বসলে স্রষ্টারও করি। প্রশংসা সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণকে উৎসাহিত করে । আপনি জানেন যে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা মানে বাচ্চার অস্তিত্বকে গ্রহণ করা। যেটাকে আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে being stage বলি। আর এটা করলে, সেটা দিবো, এটা কিন্তু শর্তসাপেক্ষে আচরণ। একে আমরা doing stage বলি। আমাদের একটা চালু কথা আছে, বাচ্চাকে আমরা বলি অংকতে ১০০ তে ১০০ পেলে তোমাকে সাইকেল কিনে দিবো, অর্থাৎ এটা করলে সেটা কিনে দিবো। এটা কখনো আর বলবেন না। আমাদেরকে কি বাচ্চার সাথে দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক? এই শর্ত সাপেক্ষে দেয়া-নেয়া বাচ্চাদের অবচেতনভাবে কিন্তু তাই শিক্ষা দেয়। এখন যখন পিছনে ফিরে তাকাই, প্যারেন্টিং এর জিনিসগুলো যখন আমি প্রতিদিন পড়ি এখন আমি উপলব্ধি করি, আমরা তো প্রতিদিন ফার্স্ট হই না। জীবনের ফার্স্ট হওয়াটা যেমন জরুরি তেমন কখনো কখনো ফেল করে কিভাবে ব্যর্থতাটা হজম করতে হয় সেটা শেখাও জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় বাবা-মা নিজেদের অতৃপ্ত ইচ্ছাগুলো বাচ্চাদের উপর চাপিয়ে দেন। আমি এটা হইনি তাই আমার বাচ্চাকে এটা হতে হবে। এবং এটা করতে যেয়ে আমরা এতই স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাই যে বাচ্চার কি ভালো লাগে সেটাও খেয়াল করার প্রয়োজন দেখিনা। আমার এক ছাত্রী ছিল এত চমৎকার ছবি আঁকতো চারুকলা ওর জন্য সব থেকে ভালো জায়গা ছিল। কিন্তু বাবা-মা জোর করে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল মেডিকেল কলেজে। ফলশ্রুতিতে মেয়েটা প্রচণ্ড মানসিক যাতনা ভেতর দিয়ে তার ছাত্র জীবনটা পার করে। ঠিক সেরকম কয়েকদিন আগে, আমার কাছে একটা পেশেন্ট এসছে বাচ্চাটার ছোটবেলাতেই সেক্স চেঞ্জ সার্জারি হয়ে গেছে। এখন বাচ্চাটা দৈহিকভাবে পুরুষ হলেও, মানসিকভাবে নারী। বাবা-মা বিয়ে করার জন্যে প্রচন্ড চাপাচাপি করছেন। এই বাবা-মাকে নিঃশর্তভাবে তার সন্তানকে গ্রহণ করতে পেরেছেন? অনেক বাচ্চা হোস্টেলে থাকতে চায় না, সেটা মাদ্রাসা হোক, নাম করা দামি ইংলিশ মিডিয়াম কনভেন্ট হোক। আপনি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে যেয়ে দেখেন, প্রতিদিন কতগুলো ছেলে শিশু সেখানে রেপড হয়ে আসছে হোস্টেল থেকে। কাজেই বাচ্চারা যদি না বলে, কেন না বলছে সেটা শুনুন। কিছু না শুনেই তার ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না।

সুপ্রিয় পাঠক সন্তানের আচণনগত সমস্যাসহ তার অস্তিত্বকে সর্বপেক্ষা গুরুত্ব দিন। তার আচরণগত যদি সমস্যা থাকে তবে সন্তানকে সেই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করুন, সংশোধনে সহায়তা করুন । কিন্তু কোনভাবেই সন্তানের হাত ছেড়ে দেবেন না। এবার আসি সন্তানকে শারীরিকভাবে গ্রহণ করা, অর্থাৎ আমার বাচ্চা যদি হ্যান্ডিক্যাপ হয়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু হয়, তৃতীয় লিঙ্গ হয় তবুও তার চিকিৎসা এবং মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করবো। তাকে স্পর্শ করে বলবো, "তুমি যেভাবেই আছো যেমন আছো, তুমি বেঁচে আছো তার জন্য আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি যেমন আছো দেখে সেভাবেই ভালোবাসি।" রবীন্দ্রনাথ কর্ণ কুন্তী সংবাদে খুব চমৎকার একটা কথা বলেছিলেন, " সন্তান সে নহে মাত সম্পত্তি তোমার।" সন্তান আমার অধিকৃত সম্পত্তি নয়। আমি জন্ম দিয়েছি বলে, যা খুশি তাই আমি সন্তানের সাথে করতে পারব এই চিন্তাটা সঠিক নয়। সন্তান সম্পূর্ণ আলাদা একটি মানুষ। ভালোলাগা মন্দলাগা আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সন্তান আমার আমানত। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমার দায়িত্ব তাকে বড় করা। আমার মতামত তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়।

আধ্যাত্মিক ভাবে বা স্পিরিচুয়ালি যদি বলি, তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো বিগত ২৫ জানুয়ারি ২০২১, পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম একটা হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন অধ্যাপক বাবা পুরুষোত্তম নাইডু এবং অংকের স্কুল শিক্ষিকা মা পদ্যজায়া মিলে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের মাদেনাপল্লী শহরে আলেখ্য এবং ডিব্বা নামের দুই যমজ কন্যাকে পাশবিকভাবে হত্যা করে। কারণ তারা ভেবেছিল, তারা মেয়েগুলোকে পুনর্জন্ম দিতে পারবে। বাবা-মা বিশ্বাস করছে, মা শীবের অংশ এবং করোনা মায়ের শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছে। আমি যদি সত্যিই নিঃশর্তভাবে আমার সন্তানকে ধারণ করতাম তাহলে কি তাকে বলি দিতে পারতাম? তাহলে কি এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমার পারলৌকিক মুক্তির জন্য পাঠাতাম যেখানে তার ধর্ষিত হবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্রাকটিশনার। ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি। (01675380646, 01323148404)

   

গরমে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করে নিজের যে ক্ষতি করছেন



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অনেকেই বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেই ফ্রিজের দরজা খুলে হাতে তুলে নেন ঠান্ডা পানির বোতল। তারপর ঢকঢক করে গলাধঃকরণ করেন। তারপর তার মনে হয়, আহ শান্তি। তবে এই শান্তির সঙ্গে সঙ্গে আপনি কিন্তু কিছু ঝুঁকিকেও আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।

পুষ্টিবিদের মতে, হিমশীতল পানি শরীরের বহু ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিপানের অভ্যাস হজমে বিঘ্ন ঘটায়। এর থেকে পেট ব্যথা হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গলার রক্তনালিকাও। পরবর্তীতে যার থেকে দেখা দিতে পারে জটিল সংক্রমণ।

টনসিল–ঠান্ডা–কাশি–জ্বর

গরমের মধ্যে বাইরে থেকে ফিরেই সরাসরি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি খেলে গলা খুসখুস থেকে শুরু করে ঠান্ডা লাগা পর্যন্ত অনেক আশঙ্কাই আছে। শরীরের তাপমাত্রা সাধারণভাবে ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করার কারণে দেহের কিছু অংশের তাপমাত্রা হুট করে কমে যায়। বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে শরীর।

ফলে নিয়মিত এ রকম ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে মিউকাস বা শ্লেষ্মা বেড়ে টনসিলের সমস্যা, মাইগ্রেনের সমস্যা, দাঁতে ব্যথা, খাদ্যনালির সমস্যা, সর্দি, কাশি বা জ্বরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তৈরি হওয়া মিউকাস বা শ্লেষ্মা শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা তৈরি করে। তখন নানা প্রদাহযুক্ত সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের গলায় শ্বাসনালির ওপরের অংশে কিছু ‘সুবিধাবাদী জীবাণু’ বাস করে। সুবিধাজনক অবস্থা পেলেই এরা আক্রমণ করে। যখন চারপাশে গরম, তখন হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি গলায় গেলে গলার তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। ঠান্ডা পানিতে এই জীবাণুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।

হৃৎস্পন্দন ‘ড্রপ’ করতে পারে

ঠান্ডা পানি সাময়িক সময়ের জন্য স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনে বাধা দেয়। দশম ক্র্যানিয়াল নার্ভ বা ভেগাস নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে হৃৎস্পন্দনের পতন ঘটে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। যাঁদের সাইনাস বা মাইগ্রেনের সমস্যা আছে, তাদের ঠান্ডা পানি খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

হজমে বাধা

হজমের সময় যে পুষ্টি শোষিত হয়, সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় ঠান্ডা পানি। শরীর তখন হজমপ্রক্রিয়ার চেয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শরীরে বেশি পানিশূন্যতা দেখা যায়।

চর্বিজাতীয় পদার্থ জমে যাওয়া

শরীরের চর্বিজাতীয় পদার্থ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এসে জমে যায়। ফলে সেগুলো শোষণ করা বা পুড়িয়ে ফেলা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনিতেই চর্বিজাতীয় পদার্থ হজম করতে শরীরে সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। তাই কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে শরীর তো ঠান্ডা হবেই না, আরও গরম হবে। আর ওজন কমানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

দাঁতের শিরশিরানি

ঠান্ডা পানি দাঁতের এনামেল অংশটাকে দুর্বল করে তোলে। তখন দাঁতে যেকোনো সংক্রমণের সুযোগ তৈরি হয়। আর ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে দাঁতে শিরশিরেভাব হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

 

তথ্যসূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া

;

অত্যধিক গরমে শুধু শরীর নয়, ফোনও খারাপ হয়ে যেতে পারে! সুরক্ষায় যা করবেন



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রীষ্মের দাপট ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম। গ্রীষ্মকাল যাদের পছন্দের ঋতু নয়, এই গরমে তাদের অনেকেরই মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে। অত্যধিক গরমে শুধু মন নয়, খারাপ হতে পারে ফোনও। তাই গরমে ফোনের যত্ন নিতেও ভুলবেন না। গরমে অল্প ব্যবহার করলেই ফোন গরম হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ফোন গরম হয়ে গেলে, কিভাবে সামাল দেবেন জেনে নিন এর সমাধান- 

১) বাইরে বের হলে ফোন হাতে নয়, ব্যাগের মধ্যে রাখুন। সূর্যের আলোয় ফোন অত্যধিক গরম হয়ে যায়। এখন রোদের যা তেজ, তা ফোন গরম হতে বেশিক্ষণ সময় নেবে না। এতে ফোনের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

২) ফোন ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে। ফোনে একাধিক অ্যাপ একসঙ্গে খুলে রাখবেন না। এতে ফোনের ব্যাটারি বেশি খরচ হয়। ফোন ক্রমশ গরম হতে থাকে। তাই যখন যে অ্যাপ প্রয়োজন, সেটাই খুলে রাখুন। বাকিগুলো বন্ধ করে দিন।

৩) একটানা বেশিক্ষণ ফোন ব্যবহার করবেন না। দীর্ঘক্ষণ ফোন ঘাঁটলে গরম হয়ে যায়। ব্যাটারির উপরেও এর প্রভাব পড়ে। সে ক্ষেত্রে অল্প দিনেই ব্যাটারি খারাপ হয়ে যেতে পারে।

৪) ফোন গরম হয়ে গেলে ঠান্ডা করার একটি উপায় হল কুলিং ফ্যান। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কুলিং ফ্যান পাওয়া যায়। শুধু ফোন ঠান্ডা করতেই নানা ধরনের কুলিং ফ্যান পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

তথ্যসূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা

;

তাপ ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোক এক নয়, জেনে নিন-লক্ষণ এবং করণীয়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
তাপ ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোক এক নয়, জেনে নিন-লক্ষণ এবং করণীয়

তাপ ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোক এক নয়, জেনে নিন-লক্ষণ এবং করণীয়

  • Font increase
  • Font Decrease

শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, মধ্যবয়সী-যুবক প্রচন্ড গরমের সকলের নাজেহাল অবস্থা। তার উপর নেই বৃষ্টির ছিটেফোঁটা সম্ভাবনাও। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও কয়েক ডিগ্রি তাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হবে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷

সরকারপক্ষ থেকে রাজধানীতে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে৷ কৃত্রিম ভাবে পানি দিয়ে শহর ভিজিয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রশান্তি দেওয়া বা ছাউনি তৈরি করা৷ এছাড়া গাছ লাগানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ চলছে জোরদমে৷ তবুও গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া লোকের সংখ্যা কমছে না। সাধারণ কিছু গরম জনিত সমস্যা ছাড়াও হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ৷

গরমে সাধারণত দুইটা সমস্যার বেশি আধিপত্য দেখা যাচ্ছে৷ হিট এক্সহসশন বা তাপক্লান্তি এবং হিটস্ট্রোক৷ হিটস্ট্রোক খুবই গুরুতর একটি সমস্যা, যা মৃত্যু ঘটাতেও সক্ষম৷ হিট এক্সহসশনকে বলা যায় হিটস্ট্রোকের আগের অবস্থা। তবে অনেকেই এই সমস্যা দু'টোকে একই মনে করেন৷ তবে এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে৷  জেনে নেওয়া যাক সেসব পার্থক্য-

হিট এক্সহসশন বা ক্লান্তি: সাধারণত শরীর দুর্বল হয়ে পড়ার কারণেই হয়। গরমের মধ্যে বাইরে গেলে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হতে থাকে৷ 

তাপমাত্রা এখন দিন দিন আরও বাড়ার কারণে ঘামও তুলনামূলক বেশি হয়৷ এই কারণে শরীর থেকে পানি আর লবণ বের হয়ে যায়৷ ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। একেই হিট এক্সহসশন বলে৷

হিট এক্সহসশনের উপসর্গ হলো হিট ক্র‍্যাম্পস বা পেশিতে ব্যথা হওয়া।

পানিশূন্যতাও এর একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত ১০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩৮.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলেই হিটএক্সহসশনের সমস্যা দেখা যায়৷

এছাড়া অনেকের বমি হয়৷ বা বমি বমি ভাব হয়৷ হিট এক্সহসশনের সময় হৃদকার্য দুর্বল হয়ে যায়। তবে হার্টবিট দ্রুত হতে থাকে৷

তাপক্লান্তি হলে করণীয়: তাপক্লান্তিতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে৷ অথবা ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে৷ যেন শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়৷

দ্রুত হালকা ঠান্ডা পানি খাওয়াতে হবে৷। বা জলদি শক্তি আনার জন্য এনার্জি ড্রিংক (খেলোয়াড়দের জন্য ব্যবহৃত) খাওয়াতে হবে।

রোগীকে ঠান্ডা স্থানে স্থানান্তরিত করতে হবে। তাকে রিলাক্স করতে টান করে শুয়িয়ে রাখতে হবে৷

বমির সমস্যা গুরুতর প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। বমিরোধী ঔষধ সেবন করাতে হবে।

হিটস্ট্রোক: যখন অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকে তখন শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে৷ সংকুচিত হওয়ার কারণে লোমকূপ ঘাম বের হতে পারেনা৷ এতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ব্যর্থ হয়৷

সে কারণে তাপ শরীরের ভেতরেই থেকে যায় আর শরীর শীতল হতে না পেরে স্ট্রোক হয়৷

সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি বেড়ে যায়৷ হৃদপিণ্ড খুব দ্রুত এবং শক্তিশালীভাবে কম্পিত হতে থাকে৷

হিটস্ট্রোক হলে মানুষ সাধারণত অজ্ঞান হয়ে যায়৷ অথবা সজ্ঞান হারিয়ে অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে। তাদের চোখ, ত্বক পরিবর্তন হয়ে যায়।

ত্বকে লালচে এবং শুষ্ক হয়ে যায়৷ অনেকের ক্ষেত্রে খিচুনি উঠতে দেখা যায়। শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে যায়। রোগীর প্রশ্বাস গ্রহণে অসুবিধা হতে দেখা যায়৷

হিটস্ট্রোক হলে করণীয়: রোগীকে দ্রুত ঠান্ডা এবং ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে যেতে হবে৷

রোগীর গায়ের অতিরিক্ত কাপড় এবং জুতা খুলে দিতে হবে৷ যেন বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে।

শরীর এবং মাথায় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ঢালতে হবে। রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাওয়াতেও হবে। কোনোভাবেই ঠান্ডা পানি খাওয়াবেন না। এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ আরও বেগতিক হবে৷

শরীরে ঠান্ডা বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷ অতি দ্রুত জরুরি চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ জরুরি প্রয়োজন ৯৯৯ নম্বরে কল করতে হবে।

;

কাঠফাটা রোদে ত্বক পুড়ে যাচ্ছে? ঠান্ডা দুধ লাগিয়ে পাবেন সমাধান



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র গরমে ওষ্ঠাগত জনজীবন। প্রচণ্ড রোদে ত্বক পুড়ে গেলে ত্বকের লাবণ্য কমে যায়। এর প্রধান কারণ হলো সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। এদিকে রোদে পোড়া দাগ বা সানবার্ন নিয়ে অনেকের চিন্তার শেষ নেই। সানবার্ন নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার। এখান থেকে স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় সানবার্নের জেরে চামড়া উঠতে শুরু করে। ত্বকের ওই অংশ লাল হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে সানবার্নের সমস্যায় ভুগলে এখান থেকে বার্ধক্যের লক্ষণও জোরালও হয়। সানবার্ন থেকে মুক্তি পেতে গেলে সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে বেরোনো যাবে না। আর যদি সানবার্নের মুখোমুখি হন, সেক্ষেত্রে ঠান্ডা দুধকে কাজে লাগান।

ঠান্ডা দুধ সানবার্নের সমস্যা দূর করে

১) প্রখর রোদ সানবার্নের জন্য দায়ী। ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি ত্বকের উপর প্রদাহ তৈরি করে। সানবার্নের উপর ঠান্ডা দুধ লাগালে নিমেষের মধ্যে কমে যায় ত্বকের জ্বালাভাব ও লালচে ভাব।

২) দুধের মধ্যে প্রোটিন ও লিপিড রয়েছে, যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। সানবার্নের উপর ঠান্ডা দুধ লাগালে ত্বকের শুষ্কভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

৩) দুধের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড রয়েছে, যা মাইল্ড এক্সফোলিয়েটর। এটি ত্বক থেকে মৃত কোষ পরিষ্কার করে এবং ক্ষত দ্রুত নিরাময় করে। সানবার্ন দূর করে ঠান্ডা দুধই সেরা।

সানবার্নের উপর যেভাবে ঠান্ডা দুধ প্রয়োগ করবেন -

১) ফ্রিজারে দুধ রেখে বরফ বানিয়ে নিন। রোদে বেরিয়ে ত্বক পুড়ে গেলে, বাড়ি ফিরেই সানবার্নের উপর ওই দুধের বরফ ঘষে নিন।

২) এছাড়া ফ্রিজে থাকা ঠান্ডা দুধে তুলার বল ডুবিয়ে নিন। এবার ওই তুলার বল সানবার্নের উপর কয়েক মিনিট রেখে দিন। আলতো হাতে বুলিয়েও নিতে পারেন।

৩) ঠান্ডা দুধ না থাকলে ঠান্ডা টক দইও মাখতে পারেন সানবার্নের উপর। দুধ ও দই দুটোই সানবার্নের চিকিৎসায় সেরা ফল। ত্বক থেকে ট্যান তুলতেও এই উপায় কাজে লাগাতে পারেন।

তথ্যসূত্র- টিভি৯ বাংলা

;