জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের সাথে সৃষ্ট তিক্ততায় টানা তিন দিনের আন্দোলনের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকার বারের আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এজলাসে বসে আইনজীবীদের সম্পর্কে কটূক্তি ও অশালীন আচরণ করেন। বহু আইনজীবীর সাথে এমন দুর্ব্যবহার, খারাপ আচরণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মিলে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, আগামীকাল বুধবার থেকে এই আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন করা হবে।
সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরিস্থিতিতে আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মিলে এক জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সাইবার আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আদালত সুত্রে জানা গেছে , মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টায় আদালতে আসেন বিচারক মো. নূরে আলম। পরে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে একজন আইনজীবী এসে বলেন 'আদালত যেন আজ না বসেন।' আইনজীবী এসে বলে যাওয়ার পর এদিন বিচারক আর এজলাসে উঠেননি।
রোববার বিক্ষোভের মুখে বিচারক বিচারকাজ থেকে বিরত ছিলেন। সোমবার তিনি এজলাসে উঠলে আইনজীবী খবর পেয়ে তার আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন। এত এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। আদালতের কার্যক্রম না চলায় সাইবার আদালতে বিচারকাজ স্থবির হয়ে গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৬ ফেব্রুয়ারি। এক আসামির জামিন নামঞ্জুর করায় উপস্থিত আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বিচারককে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভ ঝাড়েন। এসময় বিচারক এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান।
এরপর রোববার আইনজীবীরা বিচারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের মুখে ওইদিন এজলাসে ওঠেননি বিচারক। সেদিন বিচারক নূরে আলম আদালতে আসলেও বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। পরদিন সোমবার সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে এজলাসে উঠেন বিচারক। এসময় আদালত চত্ত্বরে নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। কয়েকজন আইনজীবী নিয়মিত মামলার শুনানি করেন। এরই মাঝে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান দীপুর নেতৃত্বে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিচারকাজ পরিচালনায় বাধা দেন।
তারা বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কি পুলিশ দিয়ে কোর্ট চালাবেন? আপনার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছি। আপনি চলে যান। হট্টগোলের এক পর্যায়ে বেলা ১২ টার দিকে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক। পরে আর এজলাসে ওঠেননি বিচারক। এরপর মঙ্গলবার আদালত বর্জনের ঘোষণা এলো।