৪ মামলায় দণ্ডিত তারেকের আজ পঞ্চম মামলার রায়
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের মামলার রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে। ইতিপূর্বে দেশের বিভিন্ন আদালত হতে ৪ মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন তারেক রহমান। এটি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পঞ্চম রায় হলেও ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলার প্রথম রায় এটি।
গত ২৭ জুলাই ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে যুক্তিতর্ক শুনে রায়ের জন্য আজ দিন ধার্য করেছেন।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বার্তা২৪.কম-কে জানান, রায় প্রস্তুত হলে দিনের দ্বিতীয় ভাগে রায় ঘোষিত হবে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ধারায় মামলা প্রমাণিত হলে ২৬ (২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
যুক্তিতর্ক শেষে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল গণমাধ্যমে দাবি করেন দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই তিনি আইনে বর্ণিত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
অপরদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া দাবি করেন, এটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা। তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। তাই তাকে এ মামলায় পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করার সুযোগ নাই।
রায় ঘোষণার একদিন আগে মঙ্গলবার দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ফরমায়েশি রায় তারেক-জোবাইদাকে সাজা দেওয়া হতে পারে।
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সরকারের নির্বাহী আদেশে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান তারেক রহমান। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় তিনি আর দেশে ফেরেননি। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।
রায়ের পর্যায়ে আসার আগে চার্জশিটের ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক।
এজাহারে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার জ্ঞাত বহির্ভূত আয় ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হলেও মামলার চার্জশিটে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, ৫৮ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তার অভিযোগ আনয়ন করা হয়।
তারেক যেসব মামলায় ইতিপূর্বে দণ্ডিত:
মানিলন্ডারিং মামলা: ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন মামুনের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা পাচারের অভিযোগে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করে দুদক।
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোতাহার হোসেন তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন মামুনকে ৭ বছরের সাজা দিলেও তারেক রহমানকে খালাস প্রদান করেন।
উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপীল করলে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে তারেকের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে ৭ বছর কারাদণ্ড প্রদান করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় মা খালেদা জিয়ার সাথে দ্বিতীয়বারের মতো দণ্ডিত হন তারেক রহমান।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানসহ পাঁচজনকে ১০ বছর ও খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।
এ মামলায় এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিন্যুয়ে আওয়ামীলীগ পার্টি অফিসের সামনে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় তৃতীয় বারের মতো দণ্ডিত হন তারেক রহমান।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলা: ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটুক্তির অভিযোগে নড়াইলে দায়ের করা মানহানি মামলায় চতুর্থবারের মতো দণ্ডিত হন তারেক রহমান।
২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২ এর বিচারক আমাতুল মোর্শেদা।