বিচারকের মধ্যস্থতায় টিকে গেল ১৭ বছরের সংসার
গেল বছরের অক্টোবর মাসে দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী আকতারা বানুকে (৩৬) তালাক দিয়েছিলেন স্বামী শাহানুর ইসলাম ওরফে নয়ন (৪২)। স্বামীর একক তালাকের কারণে ভেঙে যায় এই দম্পতির ১৭ বছরের সংসার। বিপাকে পড়ে তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
আকতারা-শাহানুর দম্পতির বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের বারপাটিয়া এলাকায়।
এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেন স্ত্রী আকতারা বানু। মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারি করে আদালত। ওই মামলায় রোববার (২৪ এপ্রিল) আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহানুর। ইচ্ছে ছিল আদালতেই বিয়ের দেনমোহরের ১ লাখ ১ হাজার পরিশোধ করে দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে চিরস্থায়ী সম্পর্ক বিচ্ছেদ করবেন। এমনকি কারাগারে গেলেও ওই স্ত্রীর সঙ্গে আর সংসার করবেন না সিদ্ধান্ত ছিলো এমন।
তবে আদালতের এজলাসে উপস্থিত হলে ঘটে নাটকীয় ঘটনা। আদালতে অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের তিন সন্তানও। তিন সন্তানকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই। জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান তিন সন্তানের দিকে চেয়ে এই দম্পতিকে কলহ ভুলে সংসারে ফেরার পরামর্শ দেন। কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনার এক পর্যায়ে দুজনেই সংসারে ফিরতে সম্মতি জানায়। বিকেলে বিচারকের খাস কামরায় মৌলভী ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের লোকজনের সম্মুখে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক ১ হাজার টাকা নগদ দেন মহরানায় তাদের আবারও বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে পড়ান আদালত মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল খালেক। আপোষনামা দাখিল করার পর আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান এই দম্পতি।
আকতারা বানু বলেন, আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এখন আমরা আবারও একঙ্গে থাকবো। আমার সন্তানেরা একটা স্থায়ী ঠিকানা পেলো।
শাহানুর রহমান বলেন, আমরা সুখে শান্তিতেই ছিলাম। পারিবারিক কাজ কর্ম নিয়ে একটু তর্ক বিতর্ক হলেই আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে চলে যেতো। তাই রাগে ক্ষোভে আমি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। তালাকের পর আমার দিন খুব কষ্টে গেছে। স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করায় আমি আরও রেগে যাই। আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আমাকে তিন সন্তানের দিকে চেয়ে আপোষের কথা বলেন। তখন সব ভেবে চিন্তে আমি আপোষ করার সিদ্ধান্ত নেই। বিচারক আবার আমাদের বিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে আমার হাতে তুলে দেন। আমি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেন বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম তাদের সংসারটি টিকে থাকুক। বিচারক মহোদয় আমাদের সেই সুযোগটিই করে দিয়েছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী হাজিজুর রহমান বলেন, খুব সামান্য বিষয়েই তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। বিচারক মহোদয়ের সঙ্গে আমরাও তাদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। এই বিচারে একটি সংসার রক্ষা পেলো।