রংপুরে বিচারকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর নারী নির্যাতন মামলা
রংপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে স্ত্রী ডা. হৃদিতা সরকারের করা নারী নির্যাতন মামলা শুনানি শেষে গ্রহণ করেছেন আদালত।
রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিচারক মো. মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে মামলাটি গ্রহণ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খন্দকার রফিক হাসনাইন বলেন, মামলার বাদী হৃদিতা সরকার আদালতে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি নিয়েছেন। আমরা মামলা নেওয়ার আর্জি জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামানের আদালতে মামলার আবেদনটি করেন চিকিৎসক হৃদিতা সরকার।
দুদফা আবেদনের শুনানি পিছিয়ে আজ বিচারক দিন ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম তুহিন বলেন, মামলাটি রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর। ওই আদালতের বিচারক ছুটিতে থাকায় দুদফা আবেদন শুনানি পিছিয়েছিল।
মামলার আসামিরা হলেন- রংপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালত-২-এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকার চয়ন (৬০), ফুফাতো ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকার (৫০)। সকলের বাড়ি ময়মনসিংহরের হালুয়াঘাট উপজেলার পূর্ব বাজার এলাকায়।
মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ মে দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের নারায়ন সরকারের মেয়ে হৃদিতা সরকারের বিয়ে হয়। ওই দিন বিয়ের আসরে বর দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পরিবার নগদ কনেপক্ষের কাছে ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে বিয়ে ভেঙে যাবার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় হিন্দু আইনে বিবাহ সম্পন্ন হয়।
কনের বাবা বিয়ের অনুষ্ঠানে পঞ্চাশ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল (উপহার সামগ্রী) বরপক্ষকে দেন। বিবাহের কয়েক মাস পার না হতেই দেবাংশু কুমার সরকার নেশাগ্রস্ত হয়ে নতুন একটি প্রাইভেটকার ক্রয়ের জন্য তার স্ত্রী হৃদিতা সরকারের ওপর ৩০ লাখ টাকার চাপ সৃষ্টি করেন।
কিন্তু হৃদিতা সরকার তার বাবার অক্ষমতার কথা জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও থেকে নেত্রকোনা হয়ে রংপুর জজশিপে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করলেও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পরকীয়া ও মাদক সেবনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন দেবাংশু কুমার সরকার।
স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে সন্তানের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে আসামি দিন দিন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। অবশেষে প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাবি করা যৌতুকের টাকা না পেয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসামি দেবাংশু কুমার সরকার।
বিষয়টি জানাজানি হলে দেবাংশু ত্রিশ লাখ টাকা ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হৃদিতা সরকারের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানান। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৮ মার্চ হৃদিতা সরকার তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে রংপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্ত্বরে উপস্থিত হলে তার ওপর অজ্ঞাত কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালায়।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ২১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ১৭ এপ্রিল রংপুর কোতোয়ালি থানায় এজাহার করতে গেলে আসামি বিচারক হওয়ায় থানা থেকে মামলা নথিভুক্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। পরে আদালতের শরনাপন্ন হন হৃদিতা সরকার।