কোরবানির পশুকে কষ্ট দেবেন না



মুফতি জাওয়াদ তাহের, অতিথি লেখক, ইসলাম
শুধু কোরবানির পশু নয়, কোনো পশুকেই কষ্ট দেওয়া যাবে না, ছবি: সংগৃহীত

শুধু কোরবানির পশু নয়, কোনো পশুকেই কষ্ট দেওয়া যাবে না, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামের বিধি-বিধান সব কিছু সুবিন্যস্ত, বিস্তৃত। শাশ্বত ও চিরন্তন এ ধর্মে মানবজীবনের সব দিক আলোচিত হয়েছে। অন্যান্য প্রাণীদের প্রসঙ্গও এ ধর্মে অবহেলিত হয়নি। এগুলোর ব্যাপারেও রয়েছে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান। তাদেরও রয়েছে আমাদের মতো অধিকার।

পবিত্র কোরআনে পশুপাখির মর্যাদা এবং মানবসমাজে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর চতুষ্পদ জন্তুগুলো তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাতে রয়েছে উষ্ণতার উপকরণ ও বিবিধ উপকার। তা থেকে তোমরা আহার গ্রহণ করো। তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে সৌন্দর্য, যখন সন্ধ্যায় তা ফিরিয়ে আনো এবং সকালে চারণে নিয়ে যাও। এগুলো তোমাদের বোঝা বহন করে এমন দেশে নিয়ে যায়, ভীষণ কষ্ট ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছাতে সক্ষম হতে না। তোমাদের পালনকর্তা অনুগ্রহশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা নাহল: ৫-৭

সামনে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কোরবারির ঈদ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করে। একে ঘিরে তৈরি হয় পুরো মুসলিম বিশ্বময় এক ধরণের আমেজ ও আবহ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এ মহান কাজটি করতে গিয়ে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কিছু অন্যায় করে ফেলি। কোরবানির পশু পরিবহন থেকে নিয়ে জবেহ পর্যন্ত অমানবিক কিছু আচরণ করি যার কারণে অর্থহীন হয়ে যেতে পারে আমাদের কোরবানি। এই প্রাণীগুলো আমাদের মতই একটি জাতি। এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা প্রাণী সম্পর্কে বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল প্রত্যেকটি জীব এবং (বায়ুমন্ডলে) নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রত্যেকটি পাখি তোমাদের মতোই একেকটি জাতি।’ –সূরা আনআম: ৩৮

আমাদের দেশে কোরবানির পূর্বে সচরাচর একটি চিত্র দেখা যায়, অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাকে করে গরু বহন করে নিয়ে আসা হয়। বিশ থেকে বাইশ ঘন্টা পর্যন্ত একনাগারে নিরীহ পশুগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। অল্প জায়গায় অধিক পশু নেওয়ার জন্য তারা এমনভাবে পশুকে দাঁড় করিয়ে রাখে যেন পশুগুলো বসতে না পারে, মাঝখানে বাঁশ দিয়ে দেয় যাতে কোনোক্রমেই বসতে না পারে। এ চিত্র আমাদের সমাজে সচরাচর। পশুগুলো কষ্টের তাড়নায় তাদের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে, কিন্তু আমরা মানুষ হয়েও তাদের এই কষ্টগুলো বুঝি না। অথচ ইসলামে পশুপাখির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো- তাদের কোনো ধরনের কষ্ট না দেওয়া। হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, দয়ার নবী (সা.) একবার মুখে আঘাতের চিহ্ন আছে এমন এক গাধার পিঠে চড়ে কোথায় যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘গাধাটিকে আঘাত করে যে চিহ্নিত করেছে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ –সহিহ মুসলিম: ৭১১২

অন্য হাদিসে এসেছে সাহল ইবনুল হানজালিয়াহ বলেন, চলার পথে একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত একটি উট দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, ‘এসব ভাষাহীন পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। উত্তমভাবে এতে আরোহণ করো। উত্তমভাবেই মাংস ভক্ষণ করো।’ –সুনানে আবু দাউদ: ২৫৪৮

ইসলাম আমাদের প্রতিটি বিষয় এত সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যা অন্য কেউ দিতে পারেনি। মানুষকে অমানবিকভাবে কেউ কষ্ট দিলে মানুষটার যে কষ্ট হয়, একটা পশুরও তাই হয়। মৃত্যু বা ব্যথা পাওয়ার ভয় যেমন মানুষের আছে, তেমন পশুরও আছে। যেমন আমরা গরু, ছাগল ও ঘোড়া ইত্যাদি পালন করতে গিয়ে লাঠি, বেত কিংবা চাবুক ব্যবহার করে থাকি। এতে বুঝা যায়, ব্যথা বা আঘাতের অনুভূতিটা একটা মানুষ আর পশুর মধ্যে সমান। আল্লাহ আপনাকে এর মালিক বানিয়েছে তাই তার সঙ্গে যাচ্ছে-তাই করবেন এই অনুমোদন শরিয়ত প্রদান করে না।

এক ধরণের প্রতারক ব্যবসায়ী পশুকে মোটাতাজা করার জন্য বিভিন্ন ধরণের ওষুধ সেবন করায়। অবার পশুকে বাজারে নেওয়ার পূর্বে জোর করে পানি ও অন্যান্য খাবার খাওয়ায়। এই বেশি লাভের মোহে নিরীহ ‘বোবা প্রাণী’কে কষ্ট দেওয়া বা মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া নৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে বর্জনীয়, যা সম্পূর্ণ হারাম। পাশাপাশি এটা এক ধরণের প্রতারণা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং অন্যকে ক্ষতি করা কোনোটাই উচিত নয়। ধোঁকা, প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি, ইসলামে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত। কোনো মুসলমান সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ করতে পারে না। কোরআন শরিফে উল্লেখ রয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সত্যের সঙ্গে অসত্যের মিশ্রণ ঘটাবে না। জেনেশুনে সত্য গোপন করো না।’ -সূরা বাকারা: ৪২

ব্যবসায়-বাণিজ্য তথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা রক্ষা করে চলা ফরজ। মন্দ জিনিস ভালো বলে চালিয়ে দেওয়া, ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে ধোঁকা দেওয়া প্রতারণা। এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে হাদিস শরিফে পরিষ্কার ঘোষণা, ‘যে ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতারণা করে, পণ্যে ভেজাল মেশায় সে আমার দলভুক্ত নয়।’ –সহিহ মুসলিম: ১০২

তেমনি জবাই করার সময় কষ্ট দেওয়া যাবে না। পশুপাখির প্রতি ইসলাম সর্বোচ্চ দয়া প্রদর্শন করেছে। এগুলোর প্রতি সদাচার করা এবং কষ্টানুভূতিকে সম্মান জানানো আবশ্যক। এ আদর্শের বাস্তবায়নে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পশুপাখি জবাই করার সময় কষ্ট দিতে নিষেধ করেন। জবাই করার জন্য টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে শারীরিক কষ্ট দেওয়া যাবে না। জবাইয়ের দা-ছুরি ভোঁতা থাকলে হবে না। ছুরি-চাকু দেখিয়ে মানসিক কষ্ট দেওয়া যাবে না। এসবের কারণে তারা মৃত্যুর চেয়ে বেশি কষ্ট পায়।

শাদ্দাদ ইবনে আউস বলেন, হজর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে আমি দু’টি কথা শিখেছি। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা আল্লাহতায়ালা আবশ্যক করেছেন। তাই কোনো জন্তু হত্যা করতে হলে উত্তমপন্থা গ্রহণ করো। জবাই করতে হলে উত্তমভাবে জবাই করো। ছুরি-চাকু ধারালো করো। জবাই করা পশুর জন্য সহজ করো।’ –সহিহ মুসলিম: ১৯৫৫

আরেক হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, এক লোক একটি ভেড়া জবাই করার জন্য মাটিতে শোয়ায়। এরপর সে চাকুতে ধার দিতে শুরু করে। তা দেখে নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তুমি কি তাকে কয়েকবার মারতে চাও? শোয়ানোর আগে কেন চাকু ধারাতে পারলে না? –আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ২২৬৫

চমড়া ছাড়ানোর জন্য পশু জবাইয়ের পর তার প্রাণ বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। প্রাণ থাকতে তার চামড়া ছাড়িয়ে কষ্ট না দেওয়া। জবাইয়ের পর পশুর শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। পশুর দেহের প্রাণস্পন্দন একেবারে থেমে যাওয়ার পর চামড়া ছাড়ানো শুরু করা। নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -আল ইখতেয়ার: ৫/১২

মুফতি জাওয়াদ তাহের: সিনিয়র মুদাররিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর, ঢাকা- ১২৩০

   

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো তার মহান হুকমগুলো পালন করা। তার হুকুমগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম হুকুম হলো নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নফল নামাজ বান্দাকে আল্লাহর এতটা প্রিয় করে তোলে যে, সে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই তখন মহান আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। বরং তার চাওয়াকে পাওয়াতে রুপান্তরিত করে দেন ।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।

আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চাই, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।

আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

তাই যেকোনো সংকটপূর্ণ অবস্থায় কিংবা যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারই কাছে ফেরা। তাতে মহান রবের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ ।

খুব গুরুত্ব সহকারে ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করা। আর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ (নফল) নামাজ আদায় করাকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী রা. সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হুকুমগুলো আদায়ের মাধ্যমে, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

;

হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট আগামী ৯ মে থেকে শুরু হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইট শিডিউল।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। দ্রুতই যাত্রীদের ফ্লাইট শিডিউল জানানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ৩৩৫ হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার। এবারও এই তিন এয়ারলাইনস হজযাত্রীদের বহন করবে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

এদিকে, পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

;

দারিদ্র্য বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন: তোমার কি ঐ তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়। যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবীহ ১০০ বার পাঠ কর:

তাসবিহটি হলো : সুবহানাল্লাহি অ-বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম, অ-বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

যদি তুমি এই তাসবিহটি ১০০ বার পড়, তাহলে দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে আসবে। ঐ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে, আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়া আমার নিকট এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় যাব, কোথায় রাখব! (সূত্র: আল খাছায়িছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এই তাসবিহটি যথাসম্ভব সুবহে সাদিক (শুরু) হওয়ার সাথে সাথে পাঠ করা নতুবা ফজরের, জামাআত যদি শুরু হয়ে যায় তবে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং পরে সংখ্যা পূর্ণ করে নিবে। আর যদি নামাযের পূর্বে কোনো কারনে তা পাঠ করতে না পারে বা পাঠ করতে ভুলে যায়,তাহলে সূর্য উদিত হওয়ার আগে আগেই তা পাঠ করে নিতে হবে। (সুত্র: মলফুজাতে আ’লা হযরত, ১২৮ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাসবীহ পাঠ করার সাথে সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই আয়াতটিও পাঠ করতে পারেন।

উচ্চারণ: ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াল প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন। (সূরা-ত্বালাক, আয়াত - ১, ২)

দারিদ্রতা দূর করার আরো একটি আমলের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।([বাইহাকি : শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

তবে একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বোকামি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দারিদ্রতা বা অভাব দূর করে, সচ্ছলতাকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে দিন আমিন।

;

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;