কোরবানি মহাবিশ্বের পালনকর্তার জন্য



ফয়সল আহমদ জালালী, অতিথি লেখক, ইসলাম
কোরবানির পশু হিসেবে বাংলাদেশে গরু বেশি জনপ্রিয়, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির পশু হিসেবে বাংলাদেশে গরু বেশি জনপ্রিয়, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অকারণে জীব হত্যা ইসলামে অন্যায়। ভালোবাসা দিয়ে প্রাণীর লালন-পালনের শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। প্রাণীর প্রতি কোনো নির্যাতন করা চলবে না। জগতের সকল জীবের প্রতি প্রীতি প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন, জগতের সব প্রাণীর প্রতি তোমরা করুণা প্রদর্শন করো আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি করুণা করবেন। -সুনানে তিরমিজি: ১৯৩০

সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ মানুষের প্রয়োজনের অধীন করেছেন সৃষ্টির সব কিছু। বলেছেন, তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। -সূরা বাকারা: ২৯

মানুষ প্রয়োজনে বিশ্ব জগতের সব কিছু ব্যবহার করবে। কারণ মানুষের জন্য বিশ্ব জগৎ আর মানুষ পালনকর্তার জন্য। স্রষ্টার বিধান মেনে মানুষ তার প্রয়োজন মেটাবে, এটিই নিয়ম। ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ এসব সস্তা বুলি। বিশ্ব সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় তা অচল। বৈরাগ্যবাদ লোকালয়ে চলে না। বন জঙ্গলের সীমানায় ও এরূপ মতবাদ অচল। নিরামিষ ভোজী! সেতো তরকারি শাক-সবজির সমাহার। এগুলো প্রাণহীন? না, এগুলোর ও প্রাণ আছে। তারাও আল্লাহর নাম জপ করে। তাতো সৃষ্টিকর্তার কথা। প্রাণ না থাকলে জপ করে কিভাবে। আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছে। বলছে, উদ্ভিদের ও প্রাণ আছে। রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা, হিংস্রজাত পশু ছাড়া তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জীবকে হালাল করা হয়েছে। -সূরা মায়িদা: ১

সৃষ্টি যার তিনিই যেখানে বৈধ করেছেন সেখানে অতি সন্ন্যাসী সাজার কি আছে?

জবাই হবে আল্লাহর নামে
পশু জবাই করতে হবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নামে। প্রাণীর প্রতি আমার যথেষ্ট প্রেম আছে। আছে ভালোবাসাও। আমার যেমন প্রাণ তারও সেরকম প্রাণ। প্রাণ আমার হোক আর পশুপাখির হোক, আল্লাহর নামের কাছে তা কিছুই নয়। কারণ আমাদের জীবন-মরণ সব আল্লাহর জন্য। ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। মানুষের নাড়ি বুঝে এর বিধান দেওয়া হয়েছে। এতে নেই কোনো প্রাণীপূজা আর নেই কোন প্রাণীর সাজা। আমার মালিক আর প্রাণীর মালিক একজনই। এক কথায় বিশ্ব জাহানের অধিপতি হলেন আল্লাহ। আমার জন্য তার গোশত হালাল করেছেন তিনিই। আমরা তারই হুকুমের অধীন। তার নামেই প্রাণীকে আমরা হালাল করি। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার হলো হালদারের মন্ত্র। এর ওপরে আর কোনো করুণা দেখানো হবে ভণ্ডামি। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশির মতো।

হজরত আদম আ.-এর ছেলেদের কোরবানি
যুগে যুগে আল্লাহর নামে প্রাণী উৎসর্গ করার প্রচলন ছিল। আমরা যাকে কোরবানি বলি। আদি মানব হজরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র কোরবানি করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, আদম দু’পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল....। -সূরা আল মায়েদা:২৭

হজরত ইবরাহিম আ.-এর কোরবানি
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস আলাইহিস সালামের কোরবানি ছিলো মহা এক পরীক্ষা। আল্লাহর পক্ষ হতে পুত্রকে কোরবানি করার আদিষ্ট হন তিনি। রবের পক্ষ হতে আদেশপ্রাপ্তির পর আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে আর হতে সামান্যতম ও কুন্ঠাবোধ করেননি পিতা ও পুত্র। মূর্তিমান সহনশীল এই পুত্র ছিলেন ইসমাঈল আ.। তখন তিনি ছিলেন পিতার একমাত্র সন্তান। সেই পরীক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে একটি দুম্বা কোরবানির মাধ্যমে। মুহাম্মাদ সা. তার ঊর্ধ্বতন পুরুষ ইবরাহিম আ.-এর অনুকরণে সেই কোরবানির বিধান চালু রাখেন। সাহাবায়ে কিরামের প্রশ্নের উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছিলেন, এটি তোমাদের পূর্ব পুরুষ ইবরাহিম প্রবর্তিত রীতি।

মিল্লাতে ইবরাহিম
তাওহিদ তথ্য এক আল্লাহর বিশ্বাসে বলীয়ান ছিলেন হজরত ইবরাহিম আ.। শিরক ও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে ছিল তার কঠোর অবস্থান। এ কারণে তাকে অগ্নিকুণ্ডেও নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছিল। হজরত ইবরাহিম আ.-এর পরবর্তী নবীগণ ছিলেন তারই বংশজাত। ইসমাঈলি ধারার একমাত্র নবী হলেন মুহাম্মাদ সা.। বাকী সবাই ইসরাঈলি ধারার। বর্তমান বিশ্বে হজরত মূসা আ., হজরত ঈসা আ. ও মুহাম্মাদ সা.-এর অজস্র অনুসারী রয়েছেন। পশ্চিমা ঐতিহাসিকগণ এই তিন নবীর ধর্মকে ইবরাহিমি ধর্ম বলে অভিহিত করেন। ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সা. তাদেরকে আল্লাহর রাসূল ছিলেন বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শুধু স্বীকৃতিই নয়, তাদেরকে আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত বলে বিশ্বাস করাকে ঈমানের অন্যতম অঙ্গ বলে ঘোষণা করেছেন। অথচ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা হজরত ইসমাঈল আ.-এর স্মৃতি বিজড়িত কোরবানির বিষয়টিও মানতে নারাজ। এখানে হজরত ইসহাক আ. কে তারা লক্ষ্য বানাতে চান। অথচ ঐতিহাসিক মক্কা-মোকাররামায় ইবরাহিম ও ইসমাঈল স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনাবলী এখনও অক্ষত। মিনা প্রান্তরে তাদের কোরবানিতে যাত্রাস্থলের পয়েন্টগুলো সুরক্ষিত। তা চোখে দেখার মতো বিশ্বাসযোগ্য। দুম্বা কোরবানির মাধ্যমে যার পরিসমাপ্তি ঘটে। পাহাড়ের টিলার ওপর তার স্মৃতিস্বরূপ একটি স্তম্ভও রয়েছে।

সূরা সাফফাতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। সে যখন পিতার সঙ্গে দৌঁড়ঝাপের বয়সে পৌঁছল, তিনি বললেন, খোকা! আমি স্বপ্ন দেখি তোমাকে জবেহ করছি। এতে তোমার অভিমত কি। ছেলে বলল, আব্বু! আপনি আদেশ পালন করুন। আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন- ইনশাআল্লাহ। দু'জন আনুগত্য প্রকাশ করল আর পুত্রকে কাত করে শোয়াল। আমি তখন ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি স্বপ্নাদেশ পালন করেছ। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটি ছিল এক মহাপরীক্ষা। আমি তাকে মুক্তি দিলাম এক কোরবানির বিনিময়ে। -সূরা আস সাফফাত: ১০১-১০৭

হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর কোরবানি
হজরত রাসূলুল্লাহ সা. ছাগল, ভেড়া ও গরু কোরবানি করেছেন। কোনো সময় নিজেই নিজের কোরবানি করেছেন। কোনো সময় সহধর্মিণীগণের পক্ষে এবং কোনো সময় উম্মাহর পক্ষ থেকে ছিল তার কোরবানি। প্রাণীকুলের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ ভালোবাসা। তবে আল্লাহর ভালোবাসার কাছে দুনিয়ার সব ভালোবাসা তার কাছে ছিল পরাজিত। তাই নিজ হাতে তিনি পশু কোরবানি করেছেন।

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি ঈদগাহে হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর সঙ্গে ছিলাম। খুৎবা শেষে তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করলে তার কাছে একটি ভেড়া নিয়ে আসা হল। তিনি তা নিজ হাতেই জবাই করলেন। -সুনানে তিরমিজি: ১৫২১

যারা গরুর অতিমাত্রায় ভক্ত, তারা বলতে চান- ইসলামের নবী গরুর গোশত খান নাই। অথচ হজরত রাসূলুল্লাহ সা. গরু জবাই করেছেন, এমনকি গরুর কোরবানিও দিয়েছেন। উম্মত জননী হজরত আয়েশা রা. বলেন, আমরা মিনায় অবস্থানকালে আমাদের কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এটি কী। লোকজন বলল, হজরত রাসূলুল্লাহ সা. একটি গরু তার সহধর্মিণীগণের পক্ষে কোরবানি দিয়েছেন। এটি ছিল বিদায় হজের ঘটনা। এরপর তিনি আর কোরবানি করার সুযোগ পাননি। -সহিহ বোখারি: ৫২২৮ৎ

আমরা পরিবেশবাদী হই আর পশুপাখি প্রেমিক হই কিংবা গোপূজারী হই, সবাইকে মনে রাখতে হবে; আমরা মহান আল্লাহর গোলাম। গোলামের কাজ মনিবের দাসত্ব করা। যিনি বিশ্বজগতের মালিক তিনি যেনতেন মনিব নয়। তিনি খাদ্য ও আলো বাতাস দিয়ে গোটা জগত পালন করেন। তার আদেশের সামনে মাথা নত করার মাঝে রয়েছে গোটা জগতের কল্যাণ। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো। -সূরা কাওসার

নিবেদিত মনে কোরবানি
আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত পথে, হজরত ইবরাহিম আ. প্রদর্শিত ও মুহাম্মাদ সা. সমর্থিত কোরবানি একান্ত নিবেদিত মনে হতে হবে। এতে কোরবানি নামের ত্যাগ আমাদের জীবনে স্বার্থকতা নিয়ে আসবে। কোরবানি প্রদর্শনীর মহড়া নয়। নয় মুখ রক্ষার কোনো অনুষ্ঠান। ভূরিভোজের কোনো আয়োজনও নয়। দেহ, মন ও অর্থকে সম্পূর্ণরূপে পালনকর্তা আল্লাহর নামে বিসর্জন দেওয়ার নাম কোরবানি। এমনটি হলে পশুর লোম লোমে অর্জিত হবে পুণ্য। আল্লাহ তার গোলামের মনের ভাব দেখতে চান। তার কাছে পশুর কোনো গোশত ও শোণিতের কোনো মূল্য নেই। বান্দা কি মনে ও কোন বিশ্বাস নিয়ে কোরবানি করছে সেটি মূল্যায়ন করেন আল্লাহ ।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানি করার সময় বলতেন ইন্নি ওয়াজ্জাহতু... আমি আমাকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার সামনে সোপর্দ করলাম। শেষে বলতেন, ওহে আল্লাহ্! ইবরাহিম খলিল হতে যেভাবে কবুল করেছো- সেভাবে আমাদের থেকে কবুল করো।

আল্লাহর মহব্বতে বিলীন হয়ে ইবরাহীম আ.-এর ঘোষণা ছিলো- আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ মহাবিশ্বের পালনকর্তার জন্য নিবেদিত। -সূরা আনআম: ১৬২

লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস ও গবেষক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ

   

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো তার মহান হুকমগুলো পালন করা। তার হুকুমগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম হুকুম হলো নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নফল নামাজ বান্দাকে আল্লাহর এতটা প্রিয় করে তোলে যে, সে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই তখন মহান আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। বরং তার চাওয়াকে পাওয়াতে রুপান্তরিত করে দেন ।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।

আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চাই, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।

আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

তাই যেকোনো সংকটপূর্ণ অবস্থায় কিংবা যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারই কাছে ফেরা। তাতে মহান রবের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ ।

খুব গুরুত্ব সহকারে ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করা। আর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ (নফল) নামাজ আদায় করাকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী রা. সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হুকুমগুলো আদায়ের মাধ্যমে, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

;

হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট আগামী ৯ মে থেকে শুরু হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইট শিডিউল।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। দ্রুতই যাত্রীদের ফ্লাইট শিডিউল জানানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ৩৩৫ হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার। এবারও এই তিন এয়ারলাইনস হজযাত্রীদের বহন করবে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

এদিকে, পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

;

দারিদ্র্য বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন: তোমার কি ঐ তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়। যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবীহ ১০০ বার পাঠ কর:

তাসবিহটি হলো : সুবহানাল্লাহি অ-বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম, অ-বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

যদি তুমি এই তাসবিহটি ১০০ বার পড়, তাহলে দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে আসবে। ঐ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে, আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়া আমার নিকট এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় যাব, কোথায় রাখব! (সূত্র: আল খাছায়িছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এই তাসবিহটি যথাসম্ভব সুবহে সাদিক (শুরু) হওয়ার সাথে সাথে পাঠ করা নতুবা ফজরের, জামাআত যদি শুরু হয়ে যায় তবে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং পরে সংখ্যা পূর্ণ করে নিবে। আর যদি নামাযের পূর্বে কোনো কারনে তা পাঠ করতে না পারে বা পাঠ করতে ভুলে যায়,তাহলে সূর্য উদিত হওয়ার আগে আগেই তা পাঠ করে নিতে হবে। (সুত্র: মলফুজাতে আ’লা হযরত, ১২৮ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাসবীহ পাঠ করার সাথে সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই আয়াতটিও পাঠ করতে পারেন।

উচ্চারণ: ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াল প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন। (সূরা-ত্বালাক, আয়াত - ১, ২)

দারিদ্রতা দূর করার আরো একটি আমলের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।([বাইহাকি : শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

তবে একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বোকামি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দারিদ্রতা বা অভাব দূর করে, সচ্ছলতাকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে দিন আমিন।

;

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;