সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার পাপের কাজ



মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার পাপের কাজ, ছবি: সংগৃহীত

সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার পাপের কাজ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রমজানের ২৩তম তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ২৬তম পারা অর্থাৎ সূরা আহকাফের শুরু থেকে সূরা জারিয়াতের ৩০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। এ তারাবির অতিব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গগুলোর একটি হলো- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভদ্রতা।

সামাজিক যোগাযোগ পৃথিবীতে নতুন কিছু নয়। আদিকাল থেকেই মানুষের মাঝে সামাজিক সম্পর্ক আর সেই সম্পর্কের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ চর্চা হয়ে আসছে। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষ আবহমানকালের সামাজিক যোগাযোগে এনেছে নতুনমাত্রা। দিয়েছে নতুন মাধ্যম। প্রযুক্তির নতুন মাধ্যম অন্তর্জাল, আর সেই অন্তর্জালকে ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যমগুলো সামাজিক যোগাযোগকে করে দিয়েছে অনেক সহজ এবং অনেক অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন। সহজ ও গতি এ দুয়ের কারণে আধুনিক এ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেভাবে উপকারী ঠিক সেভাবে ক্ষতিকরও বটে। তবে এগুলোর উপকার ও ক্ষতি নির্ভর করে নিছক ব্যবহারকারী চরিত্র ও মানসিকতার ওপর। তাই আদিকালের সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে বর্তমানের সামাজিক যোগাযোগে ব্যক্তিকে আরও বেশি দায়িত্বশীল ও বিশ্বস্ত হতে হয়। অথচ বাস্তবে এর উল্টোটাই বেশি ঘটছে, সম্মুখ জীবনে ভদ্র বলে সুপরিচিত ব্যক্তিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভদ্র হয়ে উঠে। ফেসবুকের কমেন্টে এমন শব্দ সে ব্যবহার করে বসে যে শব্দ তার মুখ থেকে তার কাছের ব্যক্তিরা কোনোদিন শোনেনি।

আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যক্তির থেকে এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না। কেননা, অফলাইন আর অনলাইন সব লাইনের কাজের জবাব কিন্তু পরকালে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে দিতে হবে। তিনি প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সমানভাবে জানেন। ১ কিলোবাইট পরিমাণ কাজও কিন্তু বিচারের আওতার বাইরে থাকবে না। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি পোস্ট, প্রতিটি কমেন্ট, প্রতিটি রিয়েক্ট, প্রতিট রিচ, প্রতিটি শেয়ার, প্রতিটি লাইক তথা প্রতিটি বাইটের নিখুঁত তথ্য আমলনামাতে সংরক্ষিত হচ্ছে। আর প্রতিটি বাইটের জন্যই হয়তো সওয়াব পাবেন, না হয় গোনাহ পাবেন। হয়তো পুরস্কার পাবেন, না হয় শাস্তি পাবেন।

আজকের তারাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ার কয়েকটি ভদ্রতার কথা আলোচনা করা হবে। যেমন-

১. কোনো সংবাদ, ছবি পোস্ট করার আগে বা কোনো সংবাদ বা ছবির লিংক শেয়ার করা আগে সেই সংবাদ বা সেই ছবির সত্যতা যাচাই করা। যদি অসত্যতা প্রমাণিত হয় অথবা যাচাই করা সম্ভব না হয় তাহলে তা পোস্ট বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা।

কিছু অমানুষ পুরোনো ঘটনার ছবিকে নতুন ঘটনার ছবি বলে ছড়িয়ে দেয়, এক ঘটনার ছবিকে আরেক ঘটনার ছবি বলে ছড়িয়ে দেয়, খুব সূক্ষ্মভাবে ছবি এডিট করেও ছড়ায় অনেকে। চমৎকার শিরোনাম পেয়ে, নিজের পক্ষের শিরোনাম পেয়ে, বিপক্ষের জন্য ক্ষতিকর শিরোনাম পেয়ে অনেকেই ঠিকানাহীন, দায়িত্বহীন, অস্তিত্বহীন পোর্টালের লিংক শেয়ার করে বসে।

অথচ মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।’ -সূরা হুজরাত: ৬

২. ঠাট্টা ও বিদ্রুপাত্মক বা উপহাসমূলক কোনো পোস্ট না করা, অন্যের এ ধরণের পোস্ট লাইক ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা।

৩. দোষাদোষীমূলক পোস্ট নিজেও না করা, এ ধরণের পোস্টে লাইক ও শেয়ার না করা।

৪. পোস্টে কারও নাম বিকৃত না করা, মন্দ নাম না দেওয়া। ভিন্ন মতের, ভিন্ন মাসলাকের, ভিন্ন ফেরকার, ভিন্ন মাজহাবের, ভিন্ন আদর্শের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে এ ধরনের পোস্টের এতো বেশি ছড়াছড়ি যা রীতিমতো বিরক্তিকর ও ঘৃণাকর। আপনি যুক্তি, প্রমাণ ও তথ্য দিয়ে তার মত খণ্ডন করে পোস্ট দিতেই পারেন, এমনকি এ ক্ষেত্রে তার পোস্টের কাউন্টারও করতেই পারেন কিন্তু তাই বলে তো মতের ভিন্নতায় আপনি তাকে নিয়ে ট্রল করতে পারেন না। তার ছবি, তার নাম, তার পরিচয়, তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, তার বেশভূষা ইত্যাদি নিয়ে বিদ্রুপ করতে পারেন না, ব্যঙ্গ করতে পারেন না। অন্যরা তার দোষ নিয়ে হাসাহাসি করবে এমনভাবে তা বর্ণনা করতে পারেন না। তার ছবিকে বিকৃত করতে পারেন না। মানুষকে হাসানোর জন্য তার ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড বদলে মন্দ কিছু দিতে পারেন না।

চরম হতাশা ছেঁয়ে যায়, যখন দেখা যায় একজন আলেম ভিন্নমতের আরেকজন আলেমকে নিয়ে, দাঈকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট করে, তার মন্দ নাম দেয়, তার ব্যক্তিগত দোষ খোঁজে বের করে।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। ... তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না। একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করবে তারাই জালেম।’ -সূরা হুজরাত: ১১

   

নির্জনে পাপ নয়, আল্লাহর ভয়ে কাঁদুন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গোনাহ না করার চেষ্টা করা, ছবি: সংগৃহীত

গোনাহ না করার চেষ্টা করা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জীবন চলতে গিয়ে মানুষকে নানা রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নানা ধরনের কাজকর্ম করতে হয়। ভাবতে হয় নানা রকম বিষয় এবং সামলাতে হয় বিচিত্র রকমের পরিস্থিতি। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ যেমন হয়, তেমনি হয়ে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ভুল ও বিচ্যুতি।

মানুষের মানবিক ও প্রাকৃতিক নানা দুর্বলতাও প্রকাশ পায় সেখানে। প্রকাশ পায় তার আত্মশক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তির বিভিন্ন অবস্থা। কোনো সন্দেহ নেই- এসবকিছু সত্ত্বেও জীবনের বহুক্ষেত্রে মানুষ সফল হয়। তবে ব্যর্থতাও অধিকার করে নেয় বহুক্ষেত্র। জীবনের এই ধারা চলমান। জীবন যতদিন আছে হয়তো ততদিনই চলবে এই অবস্থা। এরই মাঝখান দিয়ে মানুষকে চেষ্টা করতে হবে, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার। আর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে এ বিষয়গুলো বেশ কার্যকর। সেগুলো হলো-

নির্জনে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা
গোনাহটা তো মানুষের চোখ দ্বারাই বেশি হয় এবং নির্জনে বেশি হয়। সুতরাং নির্জনে কিছু চোখের পানিও বিসর্জন দিতে হবে। এটা সাধারণ দোয়া থেকে স্পেশাল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব।’ -জামে তিরমিজি : ২৩১১

গোনাহর কারণে দয়াময় আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের নামই হলো- জাহান্নাম। আর সেই জাহান্নাম থেকে চোখের পানির উসিলায় বেঁচে যেতে পারেন। এর অর্থ হলো, আল্লাহতায়ালা আপনাকে হয় গোনাহটি থেকে বিশেষ রহমতে বাঁচিয়ে নেবেন কিংবা মৃত্যুর আগে হলেও এ থেকে তওবার তওফিক দিয়ে দেবেন।

গোনাহ না করার চেষ্টা করা
এক দিনে কিংবা এক রাতে আপনি গোনাহ ছেড়ে দিয়ে পবিত্র হয়ে উঠবেন, এ ধারণা ভুল। বরং এ জন্য কষ্ট করতে হবে, প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাতে হবে। আপনি গোনাহ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক, এটা তখনই বুঝা যাবে- যখন এ ব্যাপারে আপনার চেষ্টা অব্যাহতভাবে পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গেই আছেন।’ -সুরা আনকাবুত : ৬৯

মনে রাখুন, আমার ওপর পাহারাদার আছে
মাঝে-মধ্যে অন্তরে এই ভাবনা জাগিয়ে তুলুন যে, আমার ওপর পাহারাদার আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সব বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখেন।’ -সুরা আহজাব : ৫২

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) একজন কবির কাছে একটি কবিতা শুনে দরজা বন্ধ করে খুব কেঁদেছিলেন। কবিতাটি ছিলো এই, ‘যদি তুমি দিনের কিছু সময় একাকী কাটাও, তখন এ কথা বলো না যে, আমি নির্জনে একাকী সময় কাটিয়েছি; বরং বলো, আমার পেছনে সদা সর্বদা একজন পাহারাদার ছিলো।’

আল্লাহকে লজ্জা করতে শেখা
হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) কথাটা এভাবে বলেছেন, গোনাহ থেকে বাঁচার একটি কৌশল হলো, এ কথা চিন্তা করা- গোনাহটি আমি আমার শায়খের (পীর, শিক্ষক, ধর্মগুরু) সামনে মা-বাবার সামনে কিংবা যারা আমাকে ভালো মানুষ মনে করে তাদের সামনে করতে পারবো কিনা! তারপর চিন্তা করো, তারা তো এখানে নেই। কিন্তু আমার আল্লাহ তো আছেন। তিনি সবার চেয়েও বড়। সুতরাং তার সামনে গোনাহটি কীভাবে করবো!

হাদিস শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এটাই বলেন, ‘আল্লাহকে লজ্জা করো, যেমন তুমি তোমার কওমের (সম্প্রদায়ের) নেক মানুষকে লজ্জা করে থাকো।’ -বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান: ৭৭৩৮

ভাবুন, আল্লাহর সরাসরি প্রশ্নে কী উত্তর দেবেন
আজ আমি যে গোনাহগুলোতে লিপ্ত, কেয়ামতের দিন তো আল্লাহ আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন যে, বান্দা! এ গোনাহটা কেন করলে? দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমাকে কেউ দেখে নাই। আমিও কি দেখি নাই? তুমি কি মনে করেছ যে, আমার দেখা মাখলুকের চোখের চেয়ে দুর্বল? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মাঝে কোন দোভাষী এবং এমন কোনো পর্দা থাকবে না, যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৯৩৫

চিন্তা করুন, সেদিন তখন আমরা কী উত্তর দেবো? সেদিন যদি আল্লাহ সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, বান্দা! রাতের দুইটা বাজে কেন তুমি অশ্লীলতার ভেতরে ডুবে গিয়েছিলে? কেন তুমি এমন জিনিসের চর্চা করেছিলে যে, যেখানে পৌত্তলিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ প্রেম ও নগ্নতাসহ কত শত অপরাধের চর্চা ও শিক্ষা ছিল? তখন আমরা কী উত্তর দেবো?

;

তানযীমুল উম্মাহ‘র ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব অনুষ্ঠিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
তানযীমুল উম্মাহ‘র ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব অনুষ্ঠিত

তানযীমুল উম্মাহ‘র ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব।

১২ মে রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের পরিচালিত শাখাসমূহের ১২৩৪ জন হাফেয শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট, সনদ, পাগড়ি/স্কার্ফ, অ্যাওয়ার্ড ব্যাগ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সম্মাননা প্রদান করা হয় তাদের পিতা-মাতাকেও।

জাতীয় ও অন্তর্জাতিক পর্যায়ের ইসলামী চিন্তাবিদ, কুরআন গবেষক, হাজার-হাজার হাফেযদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে তানযীমুল উম্মাহর এই বর্ণিল আয়োজন। সকাল থেকেই অভিভাবকদের হাত ধরে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের বেশিরভাগই ছিল পবিত্র কুরআনের হাফেয।

সুবিশাল আয়তনের আইসিসিবি হলরুমের দৃষ্টি নন্দন শোভা বর্ধন করেছে কুরআন-হাদীসের বাণীতে রং-বেরঙের অত্যাধুনিক ডিজাইনের নানান ব্যানার-ফেস্টুন। শুরু থেকেই বিভিন্নু সুরে সুললিত কন্ঠে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের সুরের মূর্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল; শিক্ষার্থীদের কন্ঠে মনোমুগ্ধকর হামদ-নাত ও ইসলামী সংগীত, বক্তৃতা, আলোচনা, কবিতা আবৃত্তিসহ চমৎকার পরিবেশনায় সকলের মন কাড়ে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো: হাবিবুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হাফেয ড. এ. বি. এম হিযবুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফাদিলাতুশ শায়খ সাইয়েদ কামাল উদ্দীন জাফরী।

;

জিলকদ মাসে যেসব আমল করবেন



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
জিলকদ মাসের আমল, ছবি: সংগৃহীত

জিলকদ মাসের আমল, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুরু হয়েছে জিলকদ মাস। এ মাস সম্মানিত ও মহিমান্বিত মাসসমূহের একটি। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু বকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হতে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হলো- রজব-ই-মুযারা। যা জমাদিউল আউয়াল ও শাবান মাসের মাঝে অবস্থিত। -সহিহ বোখারি : ৩১৯৭

হাদিসে বর্ণিত মুযারা একটি সম্প্রদায়ের নাম। ‘আরবের অন্যান্য সম্প্রদায় হতে এ সম্প্রদায়টি রজব মাসের সম্মান প্রদর্শনে অতি কঠোর ছিল। তাই এ মাসটিকে তাদের দিকে সম্বন্ধ করে হাদিসে রাজাবু মুযারা বলা হয়েছে।

জিলকদ মাসে হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে অবস্থান করেন
বনী ইসরাইলকে তাদের নাফরমানির কারণে ‘তিহ’ উপত্যকায় চল্লিশ বছর পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। সে সময় তারা নবী হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে দাবি করে, আপনি আমাদেরকে আসমানি কিতাব এনে দিন, যে কিতাবে আমাদের জীবনযাপনের নীতিমালা লেখা থাকবে। তখন হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন, যার ফলে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে তুর পাহাড়ে এসে ত্রিশ দিন অবস্থান করতে বলেন। তবে বিশেষ কোনো কারণে এ সময়কে বাড়িয়ে চল্লিশ দিন করা হয়।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মুসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম (যে, এ রাতসমূহে তুর পাহাড়ে এসে অবস্থান করবে)। তারপর আরও দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ চল্লিশ রাত হয়ে গেল।’ -সুরা আরাফ : ১৪২

ইবনে কাসির (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, অধিকাংশ তাফসিরকারের মত হলো, ‘ত্রিশ দিন জিলকদ মাস আর বাকি দশ দিন হলো- জিলহজের দশ দিন।’

জিলকদ মাসেই নবী কারিম (সা.) উমরা পালন করেন
জিলকদ মাসের একটি ফজিলত হলো, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যত উমরা আদায় করেছেন, তার সবগুলোই ছিলো- জিলকদ মাসে। তবে একটা উমরা ব্যতীত। যা তিনি হজের সঙ্গে আদায় করেছিলেন।’

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জিলকদ ব্যতীত অন্যমাসে কোনো উমরা করেননি। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯৯৭

হাদিসটির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জিলকদ ব্যতীত অন্যকোনো মাসে উমরা করেননি। তিনি তিনবার উমরা করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ : ২৫৯১০

এ মাসের আমল
যখন কোনো সময়কে অন্য সময়ের তুলনায় কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়, এর উদ্দেশ্য হয় সময়টিতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে কাটানো এবং গোনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। যদিও সবসময়েরই আমল হলো, গোনাহের কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। তবুও ফজিলতপূর্ণ দিনগুলোকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং আমলের পরিধি বাড়িয়ে দেওয়া। কেননা আল্লাহতায়ালা জিলকদসহ চারটি সম্মানিত মাস সম্পর্কে বলেন, ‘বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সহজ-সরল দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ -সুরা তওবা : ৩৬

বর্ণিত আয়াতে সম্মানিত মাসে নিজের প্রতি জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে জুলুমের অর্থ কি? হজরত আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রহ.) বলেন, ‘জুলুম বলা হয়, আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হওয়া এবং তার হুকুম না মানা।’ -তাফসিরে তাবারি : ১১/৪৪৩

জুলুম তথা আল্লাহর আনুগত্য বর্জন এবং তার অবাধ্যতায় জড়িত হওয়া সবসময়ই নিষিদ্ধ। তবে জিলকদ মাসে জুলুম করা বেশি ভয়াবহ। সুতরাং মুমিন-মুসলমানের উচিৎ সর্বাত্মকভাবে এই মাসগুলোতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা।

জিলকদা মাসের আরও একটি গুরুত্বপুর্ণ আমল হলো, রোজা রাখা। এ বিষয়েও হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। বাহিলিয়্যাহ গোত্রীয় ‘মুজিবা’ নামের এক নারী থেকে তার পিতা অথবা চাচার সূত্রে বর্ণিত। একদা তিনি (পিতা অথবা চাচা) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করতে আসলে নবী কারিম (সা.) তার আমলের ব্যাপারে বেশ কিছু কথা বলেন। তখন তাকে নবী কারিম ( সা.) বলেন, ‘তুমি হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা বর্জনও করো। এ কথা বলে তিনি তিনটি আঙ্গুল একত্র করার পর তা ফাঁক করে দিলেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৪২৮

যেহেতু জিলকদ অতি সম্মানিত মাস। তাই এ মাসে অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সচেষ্ট হওয়া কাম্য। রাব্বে কারিম আমাদের তওফিক দিন। আমিন।

;

চলতি হজেই যাত্রীরা পাবেন উড়ন্ত ট্যাক্সি সেবা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
এয়ার ট্যাক্সি হজযাত্রাকে করবে আরও মসৃণ, ছবি: সংগৃহীত

এয়ার ট্যাক্সি হজযাত্রাকে করবে আরও মসৃণ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরব হজযাত্রীদের জন্য প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হজ ও উমরাকে করেছে অনেক সহজ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার জেদ্দা থেকে মক্কা পর্যন্ত হজ ও উমরা পালনকারীরা উড়ন্ত ট্যাক্সিযোগে (এয়ার ট্যাক্সি) যাতায়াত করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) মদিনায় অবতরণ করা চলতি হজ মৌসুমের প্রথম হজযাত্রীদের স্বাগত জানানোর সময় এ তথ্য জানান সৌদি আরবের পরিবহন ও লজিস্টিক বিষয়ক মন্ত্রী সালেহ আল জাসের।

তিনি বলেন, ‘পরিবহবন ব্যবস্থার চরম উন্নতির পর উড়ন্ত ট্যাক্সির এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীতে পরিবহন ব্যবস্থায় এ সেবা দিতে অনেক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এ ধরনের পরিবহন পরিচালনায় প্রযুক্তি ও উপযুক্ত পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। এবারের হজ মৌসুমে এমন পরিবহন পরীক্ষামূলক চলবে।’

গত বছর সৌদি আরবের পরিবহন মন্ত্রী আল জাসের হজ মৌসুমে উড়ন্ত ট্যাক্সি পরিচালনার কথা জানিয়েছিলেন।

তখন তিনি বলেছিলেন, উড়ন্ত ট্যাক্সি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা সামনে রেখে ১০০টি লিলিয়াম জেট কেনার চুক্তি করেছে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস সাউদিয়া। জার্মান ইলেকট্রিক ভার্টিক্যাল টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং (ইভিটিওএল) বিমান কিনবে সংস্থাটি।

সাউদিয়া গ্রুপের করপোরেট কমিউনিকেশনের পরিচালক আবদুল্লাহ আল শাহরানি বলেন, ‘জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ বিমানবন্দর থেকে মসজিদে হারামের কাছে মক্কা হোটেল ও অন্য পবিত্র স্থানগুলোর মধ্যে ওমরা পালনকারীদের যাতায়াত মসৃণ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

উড়ন্ত ট্যাক্সি মূলত ছোট বাণিজ্যিক বিমান, যা চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকায় ফ্লাই করে। ইভিটিওএল এয়ার ট্যাক্সি সর্বোচ্চ চার থেকে ছয়জন যাত্রী বহন করতে পারবে।

পরিবেশবান্ধব এসব বিমান সবোর্চ্চ ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে যাতায়াত করতে সক্ষম।

;