সরকারি জাকাত ফান্ডে জাকাত প্রদানের আহ্বান



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোগো, ছবি: বার্তা গ্রাফিক্স

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোগো, ছবি: বার্তা গ্রাফিক্স

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘সরকারি জাকাত ফান্ডে’ জাকাত প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৭ মে) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আনিস মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছর সরকারি জাকাত ফান্ডের অর্থ ব্যয় হবে করোনা দুর্গতদের জন্য।

গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। মহামারির প্রাদুর্ভাব কমাতে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক সকল মানুষের ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন ও রোজগারবিহীন অবস্থায় পতিত হয়েছে। বিশেষ করে গরীব ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ইতোমধ্যে সরকার অসহায়, দুস্থদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ও তাদের জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ ও ত্রাণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও সরকারি জাকাত ফান্ডের অর্থ বর্তমান সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে যারা কর্মহীন হয়ে অসহায়, মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাদের কল্যাণে ব্যয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সরকারি জাকাত ফান্ডে প্রাপ্ত অর্থ সবসময় যথাযথভাবে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক ব্যয় করা হয়। এই অর্থ প্রতি বছর অসহায় দুস্থদের আত্মকর্মসংস্থান, শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা, বৃক্ষরোপন কার্যক্রম, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন, দুস্থ মহিলাদের সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। সরকারি জাকাত ফান্ডে জমাকৃত অর্থ আয়করমুক্ত।

জাকাত প্রদানে সক্ষম যে কেউ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হতে পারেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি জাকাত ফান্ডে জাকাতের অর্থ প্রদান করে দেশের এই সঙ্কটকালে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য দেশের বিত্তবান ও অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের সমন্বিত উদ্যোগেই এই সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

   

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;

বরকত নষ্ট হয় যে কাজে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়, ছবি : সংগৃহীত

কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়। ছোট ছোট কাজ বিশালাকার ধারণ করে। যে কাজের চেষ্টাই করুক না কেন সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাহ্যিকভাবে মনে হয় কাজ হয়ে যাবে, কিন্তু যথাসময়ে গিয়ে দেখা যায় যে, হতে হতেও কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। এর ফলে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি বাড়ে বৈ কমে না। অনেকে তো বলেই বসে, ‘একটা সময় ছিল, যখন স্পর্শ করলে মাটিও সোনায় পরিণত হতো। আর এখন সোনা স্পর্শ করলেও তা মাটি হয়ে যাচ্ছে।’ কিন্তু কেন? এর কারণ কী?

হজরত উমর (রা.) বলেন, দু’টি পুরাতন জীর্ণ হাড়ও যদি নির্জনে একত্রিত হয়, একে অন্যের প্রতি আসক্ত হবেই হবে। (দু’টি জীর্ণ হাড় দ্বারা বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে বোঝানো হয়েছে।)

হজরত মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) বলতেন, কুদৃষ্টি স্মৃতিশক্তির জন্য প্রাণনাশকারী বিষের ন্যায়।

হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানি (রহ.) স্বীয় চিঠিপত্র সংকলনে লিখেছেন, যার দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে নেই, তার অন্তরও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। আর যার অন্তর নিয়ন্ত্রণহীন হয় তার লজ্জাস্থানও তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

শায়খুল হাদিস যাকারিয়া (রহ.) বলেছেন, এক ব্যক্তির মৃত্যুর সময় লোকেরা তাকে কালেমার তালকিন (মুমূর্ষূ ব্যক্তিকে কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া) করতে লাগল। সে উত্তর দিল, (কালেমা পাঠের সময়) আমার জিহ্বা নড়ছে না। জিজ্ঞাসা করা হলো, কী কারণে এমন হচ্ছে? সে বলল, এক নারী আমার কাছে তোয়ালে ক্রয়ের জন্য এসেছিল। আমার তাকে ভালো লেগে গিয়েছিল, তাই লালসার দৃষ্টিতে তাকে দেখছিলাম। -আপবীতী : ৬/৪২০

শায়খুল হাদিস যাকারিয়া (রহ.) আরও বলেন, ‘কুদৃষ্টি বড়ই বিধ্বংসী রোগ। আমার অনেক পরিচিতজনদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। তাই একটি অভিজ্ঞতা আমারও আছে। জিকিরে মনোনিবেশের ফলে শুরুতে স্বাদ লাভ ও জোশের একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে ইবাদতের মিষ্টতা ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে তা ইবাদত ছুটতে থাকারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। -আপবীতী : ৬/৪১৮

কুদৃষ্টি দ্বারা স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় : হজরত মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) বলেন, পর নারী এবং নাবালেগ শিশুদের কুদৃষ্টির সঙ্গে দেখার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

কুদৃষ্টি দ্বারা কখনও তৃপ্তি লাভ হয় না : হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘কুদৃষ্টি যত বেশি পরিমাণেই করা হোক, এমনকি যদি হাজার হাজার নারী-পুরুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়েও দেখা হয়, তবুও তাতে তৃপ্তি লাভ হবে না।’

আলেমরা বলেন, কুদৃষ্টি এমন পিপাসার জন্ম দেয়, যা কখনও নিবারণ করা যায় না। পানি শূন্যতার রোগীকে যত পানিই পান করানো হোক, যদি তার পেট ফেঁটে যাবারও উপক্রম হয়, তবুও তার পিপাসা দূর হয় না। আল্লাহতায়ালা একজনকে অপরজনের তুলনায় অধিক সৌন্দর্য দান করেছেন। মানুষ যত সুন্দরিকেই দেখুক না কেন, একজনকে দেখবে তো আরেকজনকে দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এটি এমন এক সমুদ্র, সারাজীবন সাঁতার কেটেও যার তীরে পৌঁছা সম্ভব নয়। কেননা এটি হচ্ছে কূলহীন দরিয়া।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে চোখের হেফাজত করে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে চলার তওফিক দান করুন।

;

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;