‘মদিনা সনদ’ নাগরিক সমানাধিকারের এক অনন্য উদাহরণ



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুর মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ব সম্প্রদায় আইনগত ও সামরিক-বেসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানবতার আহাজারি থামাতে পারছে না। বরং ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকার পরেও মুসলিমরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার’ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা: পর্ব- ৫

সর্বসম্মত আইনের ঘোষণা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে সব সময়ই রাষ্ট্রপ্রধানদের ওপর শাসনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছে; সুশাসন বজায় রেখেছে; শাসকদেরকে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার বদলে জবাবদিহিতা-স্বচ্ছতা-দায়িত্বশীলতার অধীনস্থ করেছে সর্বপরি ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-সংস্কৃতি নির্বিশেষে তাবৎ জনসাধারণের অধিকার, শান্তি, নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছে।

বস্তুত পক্ষে, হেরা গুহার নির্জন সাধক মানবতার মহান শিক্ষক, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তির বাণী উচ্চারণ না করা পর্যন্ত, মানুষের মাঝে সাম্য ঘোষণা না করা পর্যন্ত, প্রত্যেক শ্রেণী সুবিধার উচ্ছেদ আর শ্রমিকের মুক্তি সাধন না করা পর্যন্ত- যে শৃঙ্খল পৃথিবীর জাতিগুলোকে দাসত্বের বন্ধনে বেঁধে রেখেছিল; তা ভাঙেনি। যে বাণী তার পূর্বসূরীরা নিয়ে এসেছিলেন, তিনিও সেই বাণী নিয়ে আসেন আর তা বাস্তবে রূপায়িত করেন তিনিই। সংখ্যালঘু বা অমুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ইসলামের রাজনৈতিক চরিত্রের চিত্র দেখা যাবে দু’টি জিনিসের মধ্যে-

১. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমনের পর ইহুদিদেরকে যে সনদ প্রদান করেছিলেন; এবং
২. ইসলাম আরব উপদ্বীপে পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নজরান ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় খিস্টানদের কাছে যে বাণী প্রেরণ করা হয়েছিল।

শেষোক্ত দলিলটির বেশিরভাগই মুসলিম শাসকদের জন্য অমুসলিম ও সংখ্যালঘু প্রজাদের প্রতি আচরণের পথনির্দেশক মূলনীতি হিসাবে কাজ করছে। যদি কেউ এই নীতি থেকে বিচ্যুৎ হয়ে থাকে তবে তার কারণ খুঁজতে হবে সেই শাসকের চরিত্রের মধ্যে। রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা অনেক সময় ধর্মের নামে কথা বলেছে, আর কাজ করেছে বলে যদি আমরা সেটাকে পৃথক করে ফেলি, তবে দেখা যাবে যে ইসলামের চেয়ে কোনো ধর্ম অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বেশি সহনশীল নয়। ‘রাষ্ট্রীয় কারণবশত’ এখানে-ওখানে দু’একজন শাসনকর্তা কিছু কিছু অসহিষ্ণুতার প্রকাশ করেছে কিংবা কিছুটা ধর্মীয় ঐক্যের প্রতি জোর দিয়েছে। কিন্তু ইসলামে অমুসলমান বা সংখ্যালঘুদের জন্য নির্দেশিত ব্যবস্থাপনা সর্বকালে পূর্ণ সহনশীলতা বজায় রেখে চলেছে।

ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে খ্রিস্টান আর ইহুদিদেরকে কখনো কোনো বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়নি বা ধর্ম পরিবর্তন করতে তাদেরকে কখননো চাপ দেওয়া হয়নি। তাদেরকে যদি কোনো বিশেষ কর (জিজিয়া) দিতে হয়ে থাকে, তবে সে সামরিক কার্যের পরিবর্তে, আর এটা খুবই ন্যায়সঙ্গত যে যারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা লাভ করে তারা কোনো না কোনো আকারে সাধারণ দায়িত্ব পালনে অংশগ্রহণ করবে। পৌত্তলিকদের প্রতি নীতিগতভাবে কঠোরতা একটু বেশি, কিন্তু কাজের বেলায় আইন তাদের বেলায়ও সমানই উদার।

অথচ অখ্রিস্টান, ইহুদি, ধর্মবিরোধী আর পৌত্তলিকরা খিস্টান শাসনাধীনে অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাত। সব সময়ই এক ধরনের ঝুঁকি লেগে থাকত যে তাদেরকে হত্যা করা হতে পারে বা দাসে পরিণত করা হতে পারে। অধিকার বলতে তাদের কিছু ছিল না, কেবল প্রাণে বেঁচে থাকতে দিলেই যেন যথেষ্ট। কোনো খিস্টান অখ্রিস্টানের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করলে, বৈধ সম্পর্কের তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না, তাকে পুড়িয়ে মারা হত। ইহুদিগণ পানাহারে বা এমনিই খ্রিস্টানের সঙ্গে একটেবিলে বসতে পারবে না বা তার মতো পোষাকও পরতে পারবে না। তাদের শিশু-সন্তানকে কোল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যেত, মালামাল লুট করা যেত, কোনো ব্যারন বা বিশপ বা ক্ষিপ্ত জনতার উগ্রকামনা অনুসারে। আর এই অবস্থা চলেছে ইসলামের আবির্ভাবের একদম পূর্বপর্যন্ত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/08/1533712712530.jpg

ইসলামের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যত্বের দুরবস্থা সম্পূর্ণ বদলে যায়। নবী করিম (সা.) মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের সময়ই নাগরিকগণের পারস্পরিক শান্তি, সৌহার্দ্য, সমানাধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেন। নগরী ও এর অধিবাসীদেরকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষার জন্য এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সামঞ্জস্য বিধানের ও পারস্পরিক শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে মুসলমান, ইহুদি ও পৌত্তলিক, এই তিন জাতির সমন্বয়ে একটি শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন, ইতিহাসে যার নাম ‘মদিনা সনদ।’ এতে সমানাধিকারের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ-

১. চুক্তিভূক্ত কোনো গোত্র বা সম্প্রদায় শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে সকলে সমবেতভাবে তা প্রতিহত করবে;
২. চুক্তিবদ্ধ এক সম্প্রদায় কোনো শত্রুপক্ষের সঙ্গে সন্ধি করলে অন্য সম্প্রদায় এই সন্ধিতে যোগ দেবে;
৩. সবাই নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে এবং কেউ কারও ধর্মীয় কাজে হস্তক্ষেপ করবে না;
৪. উৎপীড়িতকে সবাই রক্ষা করবে;
৫. অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তাকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে;
৬. নরহত্যা নিষিদ্ধ হবে;
৭. ওয়ারিশ বা আত্মীয়কে অর্থ প্রদান প্রথা চালু থাকবে;
৮. কেউ অপরাধ করলে তা তার ব্যক্তিগত অপরাধ বলে বিবেচিত হবে এবং তজ্জন্য তার জাতীয় স্বত্বাধিকার খর্ব করা চলবে না।

মদিনার সনদ মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে কার্যকরী ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিল এবং পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ-কলহের অবসান ঘটিয়েছিল। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মদিনাবাসীর মধ্যে নাগরিক সংহতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ সনদ ছিল গণতন্ত্র ও সমানাধিকারের উজ্জ্বল উদাহরণ, যাতে নাগরিকতা ও ধর্মের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়। মদিনার সনদ বিশ্বের ইতিহাসে বিভিন্ন ধর্মানুসারীদের শান্তির সঙ্গে সহাবস্থানের এবং সমানাধিকার সমুন্নত রাখার প্রকৃত নিদর্শনবহ। একই রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী এবং পারস্পরিক বিরোধিতাপূর্ণ রুচি ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হয়েও নিজ নিজ ধর্মীয় ও সামাজিক স্বাতন্ত্র বজায় রাখার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ ও মানবাধিকারের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে মদিনার সনদ আজও সকলের কাছে অনুসরণযোগ্য।

পরবর্তীকালে প্রণীত হুদায়বিয়ার সন্ধিতেও পরমতের প্রতি ইসলামের অনুপম সহিষ্ণুতার উজ্জ্বল প্রমাণ রয়েছে। অমুসলমান ও সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে খোলাফায়ে রাশেদীন বা প্রাথমিক বিশুদ্ধ নেতৃত্বের অনুসরণে পরবর্তীরাও নৈতিক অবস্থানে অবিচল ছিলেন। আব্বাসীয় আমলে অমুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের ভার দেওয়া হত একটি বিশেষ দফতরের ওপর।

সাত শতাব্দী ধরে স্পেনে মুসলমানরা শাসন করেছে এবং সেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বংশীয় দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও শাসনের হিতকারীরূপ সম্পর্কে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। স্পেন ছিল ইউরোপের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নিরাপদ ও সম্মানজনক আশ্রয়স্থল। অমুসলমান ও সংখ্যালঘুরা স্পেনের মতোই মুসলিম ভারতে গৌরবের সঙ্গে বসবাস করেছে।

অতএব, মুসলমান ও সংখ্যালঘু বা পরমতের প্রতি ইসলামের সমানাধিকারপূর্ণ, সম-মর্যাদাপূণ এবং সম্মানজনক আচরণ ইসলামের প্রাথমিক দিন থেকে বিরাজমান; ইসলামের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে চর্চ্চিত; এখনও পর্যন্ত তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিত আদর্শিক নীতি হিসাবে আইনগত বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে ইসলামের অনুসারীদের কাছে স্বীকৃত।

আরও পড়ুন: পর্ব- ৪: নির্যাতিত মানবগোষ্ঠী শান্তি ও নিরাপত্তা খুঁজে পায় ইসলামের ছায়াতলে

   

হজযাত্রীদের জন্য ২ শতাধিক বিশেষ গাইড, সাড়ে ৩ হাজার বাস



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
শায়খ সুদাইস এক হজযাত্রীকে উপহার দিচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

শায়খ সুদাইস এক হজযাত্রীকে উপহার দিচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন হজে মসজিদ হারাম এবং মসজিদে নববিতে আগত বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং অসুস্থদের বিশেষ যত্ন ও সেবার লক্ষে বিশেষ দল নিয়োগ করা হয়েছে।

হারামাইন প্রেসিডেন্সির উদ্যোগে চলতি হজ মৌসুমে ‘ইনসানিয়্যুন’ মানবিক উদ্যোগ শিরোনামে এই কর্মসূচি পারিচালিত হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হবে। যারা অসুস্থ, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী- তারা নির্বিঘ্নে ও আরামের সঙ্গে গ্র্যান্ড মসজিদ এবং মসজিদে নববি পরিদর্শন, জিয়ারত ও ইবাদত-বন্দেগি পালন করতে পারবেন।

মসজিদে হারাম এবং নববির ধর্ম বিষয়ক প্রধান শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস এই কর্মসূচি উদ্বোধন করে বলেন, ‘মানবতাবাদী উদ্যোগের লক্ষ্য হলো- আচরণ উন্নত করা এবং প্রেসিডেন্সি কর্তৃক প্রদত্ত পরিষেবাগুলোকে বিভিন্ন সেক্টর এবং বিভাগজুড়ে বিস্তৃতি করা। আমরা সব ধরনের হজযাত্রীদের জন্য একটি উপযুক্ত উপাসনার পরিবেশ উপহার দিতে চাই। আমাদের উদ্দেশ্য, মুসলমানদের উদার মনোভাব বাড়ানো এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবার মান উন্নত করা।’

এই উদ্যোগের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২ শ গাইড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা এই শ্রেণির হজযাত্রীদের ধর্মীয় চাহিদা মেটাতে প্রযুক্তি, মেধা ব্যবহার করবে। তারা অসুস্থ, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হজযাত্রীদের ধর্মীয়ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি ও দিকনির্দেশনার জন্য নিবিঢ়ভাবে কাজ করবে।

এ সময় তিনি বলেন, হজপালনকারীদের সেবা দিতে ধর্মীয় বিষয়ক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো অবহেলা সহ্য করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, হারামাইনের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তর হজ মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ভাষায় বিষয়ভিত্তিক ধর্মীয় পুস্তিকা তৈরি করেছে, যা হজযাত্রীদের দেওয়া হবে।

মিনা-আরাফাতের জন্য সাড়ে ৩ হাজার বাস : সৌদি আরবে হজ ব্যবস্থাপনায় সেন্ট্রাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি চলতি হজের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ঘোষণায় বলা হয়, হাজিদের পরিবহনের জন্য ৩ হাজার ৫০০টি বাস প্রস্তুত। এসব বাস চলতি হজ মৌসুমে মসজিদে হারামের চারপাশে অবস্থিত ৯টি স্টেশন থেকে চলাচল করবে। বাসগুলো হজযাত্রীদের মিনা ও আরাফাতে আনা-নেওয়া করবে। এ জন্য ১২টি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।

;

হজের সফরে যেসব কাজ কখনও করবেন না



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি: সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর যারা হজপালনে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে হজে যাবেন- তাদের জন্য এই লেখা। কাউকে কষ্ট দেওয়া উদ্দেশ্য নয়, ব্যক্তিগত মতামত থেকে কিছু পরামর্শ। দয়াময় আল্লাহর ইচ্ছায় কয়েকবার মক্কা-মদিনা সফরের সুযোগ হয়েছে। সেই আলোকে কাছে থেকে দেখা বিষয়গুলো উত্থাপন করা হলো-

এক. উড়োজাহাজ থেকে নামার পর যে বাসে উঠিয়ে রানওয়ে পার করালো সেটাতে কেন বসার সিট নেই? আমরা কি টাকা কম দিছি? মুরগির খাঁচায় উঠাবে কেন? এয়ারলাইন্সগুলো এটার ব্যবস্থা করতে না পারলে হাঁটিয়ে নিতো! বাসে ৩-৪ মিনিটের পথ, তাতেই এই অবস্থা!

দুই. মক্কার হোটেলে উঠার পর থেকে শুনছি অনেক সমস্যা এই হোটেলে। ওয়াইফাই নেই, লিফটের সংখ্যা কম, বাথরুমে টিস্যু দেয় না, ফিল্টারে পানি নাই আরও কত কি! অনেক হাজি ১০ জন ক‍্যাপাসিটির লিফটে ৬-৭ জন উঠলে বাকীদের উঠতে দেয় না। একটু চেপে দাঁড়ালে অন্যরা উঠতে পারত, সেটা করে না। আবার নিজের লোক উঠানোর জন্য ৪-৫ মিনিট লিফট এক ফ্লোরে আটকে রাখে।

তিন. হোটেল ছেড়ে গেলাম মিনার তাঁবুতে। সাধারণত তাঁবুর ফোমের বেডগুলো হয় খুব ছোট। এবার শুরু হলো নানা কথা, ফোম না দিয়ে কার্পেট দিলে ভালো ছিল; আরামে শুতে পারতাম!

চার. সকালে খাবারের মেনুতে কেন ডিম সিদ্ধ দিল? তার চেয়ে দুপুরে ওইটা দিলে ভালো হতো। রাতে কি এই চর্বিওয়ালা গোশত খাওয়া যায়? খাবার দিতে এত দেরি কেন? খাবারের পরিমাণ এত বেশি কেন? অপচয় হচ্ছে। আল্লাহ জানেন, পরিমাণ কম দিলে কী যে হতো!

পাঁচ. ওয়াশরুম ও অজুখানার সংখ্যা এত কম কেন? সৌদি আরবের তো জায়গার অভাব নেই। তার ওপর আমরা এত এত টাকা দিচ্ছি হজে আসতে। মাটির নীচে ১ হাজার ওয়াশরুম বানায় না কেন? যদিও সেগুলো বছরে একবার লাগে। মিনায় ৩ দিন দিন, আরাফাতে ১ দিন ও মুজদালিফায় ১ রাত ব্যবহার করা হয়।

ছয়. অজুর জন্য ৩-৪ জনের পেছনে সবসময় লাইন ধরতে হয়। তাই কেউ কেউ লাইন ভেঙে অজু করে (অন্যের হক নষ্ট করে) দ্রুত আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে চায়। কেউ আবার নারীদের অজুখানায় ভিড় কম দেখে সেখানে যেয়ে অজু করে। এদিকে নারীরা নানা মন্দ কথা বলে, নিষেধ করে। তারা এসব গায়ে না মেখে, নারীদের কথার জবাব দিতে দিতে অজু করতে থাকেন।

সাত. মিনার তাঁবুতে ইবাদত-বন্দেগির বদলে চলে আড্ডা ও পরনিন্দার আসর। বাকি সময় ঘুম ও খাওয়া। মিনা ও আরাফাতে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে (সুন্নত/ওয়াজিব) মতানৈক্য, পরস্পরে ঝগড়া। এর কোনোটাই কাম্য নয়।

আট. মিনা-আরাফাতের টয়লেটের দরজায় ধুমধাম আওয়াজ করে। ভেতরে লোক থাকলে দরজায় যে একটা লাল সিগনাল দেখায়, সেটা জানা নেই। অনেকে আবার টয়লেট ব্যবহারের পর ফ্ল্যাশ করে না।

নয়. প্রত্যেকের হাতের বেল্টে তাবুর নম্বর দেওয়া আছে। তবুও এক তাঁবুর লোক অন্য তাঁবুতে এসে বিছানা দখল করে থাকে। ফলে ক্রাইসিস তৈরি হয়, তাদের চলে যেতে বললে শুরু হয় নয়া ঝামেলা।

দশ. অনেকে ৪-৫টা বেড একসঙ্গে করে ওপরে চাদর বিছিয়ে দেয়। ফলে সহজে বোঝা যায় না, এখানে কয়টা বেড আছে। এতে লোক ঘুমায় ২-৩ জন। এভাবে নিজেরা আরাম করে ঘুমায়, অন্যরা কষ্টে থাকে।

এগারো. তাঁবুর বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে বিনামূল্যে চা-কফি দেয়। এগুলো দেওয়া হয় সৌদি মোয়াল্লিমের ব্যবস্থাপনায়। একবার চা শেষ হয়ে যাওয়ায় বিশাল ঝগড়া শুরু হয়। পরে তাঁবুতে এসে দুই-তিন সিদ্ধান্ত নেয়- হজ অফিসে লিখিত অভিযোগ দেবে!

বারো. কিছু লোক এখানেও ধূমপান করেন। আবার অনেক হাজি ‘জামালের মা’কে (নিজের স্ত্রী) খুঁজতে নারীদের পর্দাঘেরা স্থানে অবাধে ঘুরতে থাকেন।

তেরো. হজের সময় যেখানেই হেঁটে পার হই, একটা বাক্য সবসময় শুনতে পাই, ‘আমরা এখানে টাকা দিয়ে এসেছি, কারও দয়ায় আসিনি; সার্ভিস পাবো না কেন?’ আরেকটা বিষয়, কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা হলে কুশল বিনিময়ের পরের প্রশ্নই থাকে, ‘কত টাকা দিয়ে এসেছেন?’

চৌদ্দ. তাঁবুতে এত এত লোক গাদাগাদি করে থাকতে গেলে অসুবিধা হবেই। যদিও মাত্র কয়েকটি রাতের ব্যাপার। কিন্তু কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। ন্যূনতম সহযোগিতা-সহমর্মিতার মানসিকতা নেই আল্লাহর ঘরের মেহমানদের।

পনেরো. মিনা ও আরাফাতের তাঁবুতে বেডগুলো চাপাচাপি করে রাখা, তাতে মানুষে চলাচলের রাস্তা নেই। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের বেড মারিয়ে নিজের বেডে যেতে হয়। যাদের বেড আপনার রাস্তায় ওপর হয়, তারা খুব বিরক্ত হন। বলেন, ‘আপনার বেডে কেমনে যাবেন, সেটা আমি জানি না। কিন্তু এখান দিয়ে যেতে পারবেন না।’

ষোলো. একজন বলে এসি বাড়ান, আরেকজন বলে কমান। কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি না। মজার বিষয় হলো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা তাঁবুতেই নেই। এটা অন্য জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সতেরো. মুজদালিফার খোলা ময়দানে কারও জায়গা নির্দিষ্ট করা নেই। যে যেখানে পারছে, চাদর বিছিয়ে শুয়ে পরছে। এই সুযোগে অনেকে বেশি জায়গা দখল করছে, অন্যপাশে লাগেজ রাখছে- যেন ধারেকাছে কেউ আসতে না পারে। আপনি বেশি জায়গা নিয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন, অথচ আরেকজনের বসার সুযোগ নেই।

আঠারো. বিয়ের অনুষ্ঠানে পাঁচশ-এক হাজার লোকের একবেলা খাবারের আয়োজন করতে আমাদের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে ২০-২২ লাখ লোকের ৫ দিনের আয়োজনে (থাকা, খাবার খাওয়া, যাতায়াত) একটু সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। একটু ধৈর্য ধরলেই হয়।

ঊনিশ. এক হাজি সাহেব ২০ রিয়ালের মোবাইল রিচার্জ কার্ড কিনেছেন। কিন্তু নিয়ম না জানায় রিচার্জ করতে পারছেন না। এক বাংলাদেশি হজকর্মী নিজ থেকে এগিয়ে গেল। সে অনেকদিন থেকে সৌদি থাকে। কিন্তু নেটওয়ার্কের সমস্যায় সেও পারল না। হাজি সাহেব চিৎকার ও গালাগাল শুরু করলেন। আশেপাশের লোকজন বলছেন, ‘দয়া করে শান্ত হোন। ২০ রিয়ালের জন্য হজ নষ্ট করবেন না।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা!

বিশ. তাঁবুর বাইরে ফ্রিজভর্তি পানির বোতল ও জুসের প্যাকেট দেওয়া থাকে। এখান থেকে অনেকে একাই এক কেইস্ (৪০-৪৫ টা) নিয়ে নেয়, ফলে অন্যরা আর পায় না। আর কোনো কিছু ফ্রি’তে বিতরণ করতে দেখলে অনেক হাজি সেখানে ভিড় করে, ধাক্কা-ধাক্কি করে- এগুলো কতটা ঠিক?

এখানে কিছু কথা লেখা হলো, এগুলো সাধারণ বিষয়। এমন আচরণ হাজিদের কাছ থেকে কাম্য নয়। কষ্ট সহ‍্য করা, ধৈর্যধারণ, ভদ্র আচরণ, পরস্পরে সহযোগিতা-সহমর্মিতা হজের সফরের প্রয়োজনীয় বিষয়। আর হজের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও কমবেশি সবারই জানা, তার পরও এমন আচরণ ও কাজ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমন মনোভাব থাকলে, কি দরকার কি ছিল এত কষ্ট করে হজ করার? এর চেয়ে অনেক কম টাকায় ফাইভ স্টার মানের হোটেলে আরাম করে এক-দেড় মাস থাকলেই তো ভালো হতো!

আল্লাহতায়ালা সবাইকে ভুল ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে সবার হজ কবুল করুক। আমিন।

;

মক্কায় বাংলাদেশি হজযাত্রীর ওপেন হার্ট সার্জারি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটি, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটির বিশেষজ্ঞরা ওপেন হার্ট সার্জারি করে এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর জীবন রক্ষা করেছেন।

সুবাক ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি হজযাত্রী হোটেলে অবস্থানকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

হোটেল কর্তৃপক্ষ রেড ক্রিসেন্টকে খবর দিলে বাংলাদেশি ওই হজযাত্রীকে দ্রুত আল নূর হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়- তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা তাকে তাৎক্ষণিক অপারেশনের জন্য কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটিতে নিয়ে যান, যেখানে আরও উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তার হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি শিরা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটির বিশেষজ্ঞরা তার ওপেন হার্ট সার্জারি করেন। অপারেশনের পর তাকে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।

উল্লেখ্য যে, হজের সময় হজযাত্রী সব ধরনের চিকিৎসা সৌদি সরকার বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। চলতি হজে হাজিদের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব।

দেশটি জানিয়েছে, চলতি বছর হজের মৌসুমে হাজিদের চিকিৎসায় ড্রোন ব্যবহার করা হবে। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজের মৌসুমে চিকিৎসার জন্য ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত হাজিদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজে এ ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ড্রোনগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা হবে। এগুলোর মাধ্যমে মিনা ও আরাফাতের ময়দানের আশপাশের হাসপাতালে রক্ত ও ল্যাবের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। চলতি বছরের আসন্ন বার্ষিক হজের মৌসুমে এগুলোকে ব্যবহার করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপের ফলে রক্ত ল্যাবে পৌঁছাতে মাত্র দুই মিনিটের মতো সময় লাগছে। যেখানে স্বাভাবিক ব্যবস্থায় এ জন্য অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যয় করতে হতো।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ উপলক্ষে মক্কা অঞ্চলে ১৬টি হাসপাতাল, ১২৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা দেওয়া হবে। এর বাইরে মক্কা ও মাশায়েরে হারাম এলাকায় ৫টি অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা হবে। এ ছাড়া আজইয়াদ ইমারজেন্সি হাসপাতাল, আল হারাম হাসপাতাল, মসজিদে হারামের ৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ মিসফালা রোডে দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাজিদের সেবার নিয়োজিত থাকবে। প্রস্তুত থাকবে ৮০টি ছোট অ্যাম্বুলেন্স, ৭৫টি বড় অ্যাম্বুলেন্স, ৩৩টি সহায়ক অ্যাম্বুলেন্স দল মসজিদে নামিরা ও জাবালে রহমত, মিনার তাঁবু, মুজদালিফা ও জামারাত এলাকায়।

উল্লেখ্য, চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। শনিবার (২৫ মে) দুপুর ১২টায় হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে, সৌদি আরবে হজপালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই পুরুষ। এর মধ্যে মক্কায় তিন জন এবং মদিনায় দুই জন।

;

সৌদি পৌঁছেছেন প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ৪৪৬ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

শনিবার (২৫ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ৩৭ হাজার ৬৯৯ জন।

বাংলাদেশ থেকে ১০৪টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৪৮টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ৩৪টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২২টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই পুরুষ।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যা শেষ হবে ১০ জুন।

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন। যা শেষ হবে ২২ জুলাই।

;