হজ স্থগিত নাকি সীমিত পরিসরে?



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
মানুষশূন্য কাবা চত্বর, ছবি: সংগৃহীত

মানুষশূন্য কাবা চত্বর, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রথমেই বলে রাখি, এখন শাবান মাস, এরপর রমজান, শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ মা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১০ জিলহজ অর্থাৎ ৩০ জুলাই হজের সম্ভাব্য তারিখ মনে করা হচ্ছে।

সে হিসেবে হজের আরও চার মাস সময় বাকি। তবে হজপালনের জন্য বিভিন্ন দেশে থেকে মুসল্লিরা সাধারণত জিলকদ মাসের শুরু থেকেই সৌদি আরব আসতে শুরু করেন। কিন্তু হজের প্রস্তুতি নিতে হয় আরও আগে থেকেই। প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে ২০ লাখের বেশি মুসলমান হজপালন করতে সৌদি আরব যান।

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের হজ কী হবে- এটা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনার মাঝে সৌদি আরবের হজ ও উমরা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বেনতেন বুধবার (১ মার্চ) বলেছেন, ‘পরিস্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত হজের বিষয়ে কোনো চুক্তিতে না যেতে আমরা সব দেশের মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

সৌদি মন্ত্রীর দেওয়া এমন বক্তব্য পর্যালোচনা করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলছে, বাতিল হতে পারে এ বছরের হজ। কারণ, করোনা পরিস্থিতির কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে উমরা স্থগিত করা হয়। পরে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি কারফিউ জারি করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের কারণে এ বছরের হজ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বকে তটস্থ করে ফেলা করোনা খুব সহসা দূর হবে এমন আভাস দিতে পারছে না কেউ। সব মিলিয়ে একটি গুমোট পরিবেশ বিরাজমান।

হজ ফরজ ইবাদত
হজ ফরজ ইবাদত, অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম। মুসলমানমাত্রই বায়তুল্লাহ তথা আল্লাহর ঘর কাবা নিজ চোখে দেখা এবং সেই ঘর তাওয়াফের তীব্র বাসনা পোষণ করেন, হজপালনের আকাঙ্খা লালন করেন। ইসলামি বিধানমতে, হজ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এক. মুসলিম হওয়া, দুই. বিবেকবান হওয়া, তিন. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, চার. স্বাধীন হওয়া ও পাঁচ. হজ আদায় করার সামর্থ্য থাকা।

ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, এ সামর্থ্য তিনটি শর্তযুক্ত, এক দৈহিক সামর্থ্য অর্থাৎ কাবা শরিফ পর্যন্ত সফর করার শারিরীক যোগ্যতা, চলাফেরায় অক্ষম লোকের ওপর হজ ফরজ নয়। এমন ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্য থাকলে বদলি হজ করানো ওয়াজিব। দুই, আর্থিক সামর্থ্য অর্থাৎ পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোনো ব্যক্তির নিকট হজে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হবে। তিন, নিরাপত্তা অর্থাৎ যাতায়াতের পথ নিরাপদ থাকা এবং রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকা। কোনো ব্যক্তির জীবনের কোনো একটি বছরে উপরোক্ত শর্তগুলোর সমন্বয় ঘটলে তার ওপর পবিত্র হজ ফরজ।

ব্যাপকভাবে মসজিদে হারামে জামাত বন্ধ, তবে সীমিত আকারে এখনও জামাতে নামাজ চলছে, ছবি: সংগৃহীত

মহামারির মতো পরিস্থিতিতে হজপালন প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান
হজ ফরজের শেষ অংশ নিরাপত্তা অর্থাৎ যাতায়াতের পথ নিরাপদ থাকা এবং রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকার কথা উল্লেখ করে অনেকে বলতে চাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সৌদি আরব এবারের হজ স্থগিত রাখতে পারে। কিংবা যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে শুধুমাত্র সৌদি আরবের নাগরিকদের জন্য হজপালনের অনুমতি দিতে পারে।

আমাদের প্রত্যাশা হলো- হজের আগেই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাক। এখনও যেহেতু সময় আছে, হজ স্থগিত হবে এমন কথা না বলাই ভালো। হজের প্রস্তুতি চলতে থাকুক। তবে মহামারি আক্রান্ত এলাকা থেকে অন্য এলাকায় এবং আক্রান্ত এলাকায় না যাওয়ার ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে স্পষ্টভাবে বলেছেন। এই হাদিসের আলোকে করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারির কারণে সৌদি সরকার হজযাত্রীদের সৌদিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন। এমন অবকাশ আছে। তাছাড়া হজ জীবনে একবার ফরজ। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার পর ব্যক্তির ওপর ফরজ হয়। এবার যদি কেউ ফরজ ইবাদতটি পালন করতে না পারেন, পরের বছর আদায় করবেন। এর মধ্যে কারও মৃত্যু হয়ে গেলে- তিনি উত্তরাধিকারীদের কাছে হজের জন্য অসিয়ত করে যাবেন এবং সে অনুযায়ী পরবর্তীতে সেটি পালন করলে আদায় হয়ে যাবে। ইসলামি শরিয়ত এর অনুমোদন দেয়।

অন্যদিকে হজপালনের পথ ও স্থান নিরাপদ না হলে, জীবনহানি, রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কিংবা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকলে হজ বিলম্বিত করায় কেউ গোনাহগার হবেন না।

অতীতে হজ স্থগিতের নজির রয়েছে
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ইতোমধ্যে সৌদি সরকার তাদের গ্র্যান্ড ফতোয়াবোর্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন ফতোয়াবোর্ড ও ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে। কারণ মহামারি, যুদ্ধ পরিস্থিত ও সংঘাতে কারণে হজ স্থগিত রাখা কিংবা সীমিত আকারে পালনের নজির রয়েছে। লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজের লেকচারার সিরাজ মাহের গার্ডিয়ানকে বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- সৌদি কর্তৃপক্ষ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছে যে এবারের হজ বাতিল হতে পারে। চলতি মহামারির কারণ তো আরও প্রকট।

সম্প্রতি ‘দ্য নিউ আরব’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে উমরা বন্ধ করা এবং করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে হজের সময় কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমার কোনো লক্ষণ এখনও নেই। ফলে অনেকে হজ বাতিলের আশঙ্কা করছেন।

সৌদি কিং আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভস ইতিহাসে ৪০ বার হজ বাতিল করা হয়েছিল বা হজযাত্রীর সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল উল্লেখ করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমটির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসলামের ইতিহাসে এর আগেও বহুবার রোগ, যুদ্ধ, সংঘাত, দস্যু ও আক্রমণকারীদের তৎপরতাসহ নানাবিধ কারণে হজ বাতিল করা হয়েছে। সে হিসেবে চলমান পরিস্থিতিতে মানুষের আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়।

হিজরতের নবম বছরে হজ পালন ফরজ ইবাদত হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর থেকে এ যাবৎ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ৪০ বার হজ স্থগিত হয়েছিল। তন্মধ্যে ১২ বার স্থগিত করা হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে। তবে ১৯৩২ সালের পর পুরোপুরি হজ বন্ধ থাকার কোনো নজীর নেই।

আরাফার ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

সীমিত পরিসরে হজ আয়োজন হতে পারে
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ইতোমধ্যে সৌদি সরকার তাদের গ্র্যান্ড মুফতি, ফতোয়াবোর্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন ফতোয়াবোর্ড ও ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছেন। প্রয়োজনে তারা ওআইসিসহ প্রভাবশালী মুসলিম দেশ ও সংগঠনগুলোর কাছে পরামর্শ চাইতে পারে। মহামারি, যুদ্ধ পরিস্থিত ও সংঘাতের কারণে হজ স্থগিত রাখা কিংবা সীমিত আকারে পালনের নজির থাকলেও সৌদি আরব একক সিদ্ধান্তে হজ স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে সমালোচনার শিকার হতে চায় না। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতির বিষয়।

এ ছাড়া হজ বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার আগে সৌদি আরব চিন্তা করতে তাদের অর্থনৈতিক আয়ের বিষয়টিও। অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে সৌদি আরবের যা রোজগার হয়, তার থেকেও বেশি আয় করে তারা হজ থেকে। সৌদি সরকারের ভিশন-২০৩০ এর অন্যতম লক্ষ্য হলো- বছরে ১ কোটি উমরা ভিসা ও হজযাত্রীর সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করা। এ পথেই হাঁটছে দেশটি। যে কারণে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর উমরা ভিসা চালুর প্রথম চার মাসে দেশটি ২২ লাখ উমরা ভিসা ইস্যু করে। এমনিতে ১ মাসের বেশি সময় ধরে উমরা বন্ধ, কবে চালু হবে সেটা অনিশ্চিত। এমতবস্থায় হুট করে তারা হজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে হয় না। সব কিছুই অস্পষ্ট।

এই পরিস্থিতিতে সৌদি হজ মন্ত্রীর ‘হজ পালনেচ্ছুকদের করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা’ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এর সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত হজের অত্যাবশ্যকীয় সকল কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছে। এই চিঠি হজে অংশগ্রহণকারী সব দেশকেই দেওয়া হয়েছে।

তাই অনেকে মনে করছেন, হজের আগে সৌদি আরবের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও বিশ্ব পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণভাবে হজ কার্যক্রম চালু রাখা হতে পারে। আর সৌদিতে করোনা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে উমরার মতো এ বছরের হজকার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। তবে একথা এখনও জোর দিয়ে বলার সময় হয়নি।

বেশ কয়েকজন প্রবাসীর অভিমত- সৌদি সরকার এখন ভাইরাসে বিস্তার রোধে বেশি নজর দিচ্ছেন। সৌদিতে কারফিউ জারি, লকডাউন, মসজিদের জামাত, অফিস-আদালত, গাড়ি চলাচল ও উমরা বন্ধ করে দেওয়া তারই অংশ।

তাদের মতে, সময়ের হিসেবে এবার হজ মৌসুমে সৌদি আরবের তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। প্রচণ্ড গরমের কারণে তখন করোনা বিস্তারের আশঙ্কা কম। ততদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি সৌদি আরবে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে বহির্বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে বাইরের লোকদের সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি সৌদি সরকার কোনোভাবেই দেবে না। সেক্ষেত্রে বাইরের লোকদের জন্য হজ বন্ধ রেখে সৌদি আরবের বাসিন্দাদের জন্য সীমিত আকারে হজের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

তবে এটা বলা যায়, সৌদিতে করোনা যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে আসন্ন রমজানে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে ইতেকাফসহ উমরার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আর তারাবি জামাতও সীমিত করা হতে পারে।

   

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;

পরনিন্দার পাপ থেকে বাঁচতে যা করবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গিবত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা।

শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। হাদিসের বর্ণনা, ‘যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।’ -সহিহ মুসলিম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।’ -সুরা হুজুরাত : ১২

‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।...অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয় বেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।’ -সুরা হুমাজা : ১-৯

গিবত এমনই ভয়াবহ পাপ। এটা থেকে বেঁচে থাকা মুমিন-মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। গিবত থেকে বাঁচার কিছু উপায় হলো-

১. কারও বিষয়ে হুটহাট করে কিছু না বলা। ভেবে-চিন্তে কথা বলা। যতটুকু সম্ভব কম কথা বলাই ভালো, কারণ- চুপ থাকাও একটা ইবাদত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ -সহিহ বোখারি : ৬০১৮

২. যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। সুতরাং বন্ধু-বান্ধব কিংবা কাছের কোনো আত্মীয়ের অনুপস্থিতিতে তাদের নামে ভালো কথাও না বলা। কারণ ভালো কথা বলা ফাঁকে শয়তান আপনাকে দিয়ে কখন যে গিবত করিয়ে নেবে; সেটা আপনি টেরই পাবেন না।

৩. অতি প্রয়োজন ছাড়া লোকসমাগম এড়িয়ে চলা। কেননা যেখানে মানুষ বেশি থাকে সেখানে গিবতও বেশি হয়।

৪. আপনার কাছে কেউ গিবত করলে তাকে থামিয়ে দেবেন। সম্ভব হলে বুঝিয়ে বলবেন। কারণ গিবত করা ও গিবত শোনা উভয়টাই হারাম।

নিজেও যখন কথা বলতে বলতে গিবত করে ফেলবেন এবং খেয়াল হবে যে, আরে আমি তো গিবত করে ফেলেছি; সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবেন এবং তওবা করবেন।

৫. অমুক কেমন জানি পোশাক পরে, অমুকের রান্না ভালো না, অমুক মোটা, অমুক কালো, দেখতে একদম ভালো না ইত্যাদি- এ ধরনের কথাও গিবত। তাই এ জাতীয় কথা বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।

৬. অমুক এই এই কাজগুলো ভালো করেনি। অমুকের এই-এই স্বভাব ভালো না। অমুকের নামে এই-এই বদনাম আছে। ওমুক আমার এই-এই ক্ষতি করছে। এগুলো বলার অর্থ হলো যে, মানুষের দোষ নিয়ে কথা বলা; যেটা গিবতের অন্তর্ভুক্ত।

৭. এর পরও যদি গিবত হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আস্তাগফিরুল্লাহ অথবা দুই রাকাত নফল নামাজ পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেওয়া।

কাউকে নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা আল্লাহর কাছে বলা। পারলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। মানুষের কাছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে উল্টো নিজের গোনাহ কামানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। অন্যের দোষ ঢেকে রাখলে আল্লাহতায়ালাও এ কারণে আমার-আপনার দোষ ঢেকে রাখবেন- ইনশাআল্লাহ!

মনে রাখবেন, গিবত আমাদের নেক আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

;

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান তীব্র দাবদাহে রাজধানীর পিপাসার্ত মানুষের মাঝে টানা চার দিন ধরে সুপেয় ঠাণ্ডা শরবত (লাল চিনি, বিট লবণ, লেবু এবং এসএমসির ম্যাংগো ও অরেঞ্জ ফ্লেবার মিশ্রিত) বিতরণ করছে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার।

রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যাণ্ড, মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে এবং মিরপুর ১ ও ১০-এর বিভিন্ন পয়েণ্টে শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পর ধারাবাহিকভাবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ১ হাজার ৫ শ’ লিটার শরবত বিতরণ করা হচ্ছে।

মে দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার বুধবার (১ মে) মিরপুর ঈদগাঁহ ময়দান ও টিএসসির মোড়ে শরবত বিতরণ করবে।

পথচারীদের মাঝে ঠাণ্ডা শরবত বিতরণের বিষয়ে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবারের সভাপতি ও মানবসেবায় সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠান তাকওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গাজী ইয়াকুব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঢাকাসহ সমগ্র দেশবাসী এখন প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে অবস্থান করছেন। এমন সময় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তীব্র গরমে আমাদের আশপাশে অবস্থান করা শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের ভুলে গেলে চলবে না। তাই তাদের উদ্দেশ্যেই মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘গরমের তীব্রতা বেশি থাকলে সামনে আরও বেশ কিছুদিন এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

হিট স্ট্রোকের মারাত্মক এই অবস্থায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্পটে ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত পথচারীদের বিনামূল্যে এমন উদ্যোগে ভীষণ খুশি সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় বেরিয়ে সবার প্রাণ যখন উষ্ঠাগত, তখন পথচারীদের ডেকে ডেকে শরবত করাচ্ছেন আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্ররা। এর চেয়ে বড় মানবিক কাজ আর হতে পারে না।

;

শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক হবে ভাই ভাই



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শ্রমজীবী মানুষের প্রেরণা ও আবেগের দিন পয়লা মে। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মাহুতি দান করেছিলেন শ্রমিকরা। তাদের রক্তাক্ত স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়। মে দিবস এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে ঘর্মাক্ত মেহনতি মানুষের প্রতিচ্ছবি। আর এই মেহনতি মানুষের অধিকারের প্রশ্নটিও সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসে এই ঐতিহাসিক দিনে।

সময়ের পরিবর্তনে মে দিবস এখন সারা দুনিয়ায় সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। মে দিবসের ঐতিহাসিক প্রেরণায় কল-কারখানা, অফিস-আদালতসহ সব কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকরা এখন উজ্জীবিত। যে উদ্দেশ্যে শ্রমিকেরা আন্দোলন করে জীবন দিয়েছিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত কাজের সময়সূচি এখন প্রায় কর্মক্ষেত্রে অনুসৃত হচ্ছে। তবে মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে নানা আপত্তি রয়েছে। তারপরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা যে নেই তা বলা যাবে না।

এমন কথাও বড় করে বলার উপায় নেই যে, ১৮৮৬ সালের পর দীর্ঘ একশত আটত্রিশ বছর পর শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি মিলেছে; শ্রমিক তার অধিকার সত্যিকারার্থে ফিরে পেয়েছে এবং তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত মজুরি নিশ্চিত করতে পেরেছে। কর্মক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা শ্রমের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কিন্তু এখনও শ্রমিক নিপীড়ন থামেনি এবং শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রমের মূল্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অহরহ শ্রমিক বিক্ষোভ থেকে সহজেই এটা অনুধাবন করা যায়।

সুতরাং অনেকটা জোড় গলায় বলা যায় যে, দুনিয়ার কোথাও শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি এবং তাদের বাঁচার উন্নত পরিবেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে একমাত্র ইসলামই শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এখন থেকে দেড় হাজার বছর আগে।

নবী মুহাম্মদ (সা.) শ্রমিকের মেহনতের কষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। সে জন্য তিনি যে ঐশ্বরিক বিধান চালু করেছিলেন, তাতে শ্রমিক ও শ্রমের মহিমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার অমোঘ বাণী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আজও সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে অতুলনীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ককে ভাই ভাই উল্লেখ করে তিনি তাদের অধিকার ও পাওনার ব্যাপারে যে উক্তি করেছিলেন তা অসাধারণ।

নবী কারিম (সা) বলেছেন, ‘মজুর-শ্রমিক ও ভৃত্যদের যথারীতি থাকা ও পোশাক দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যারা তোমাদের কাজ করছে তারা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন।’ -সহিহ বোখারি

রাসুলুল্লাহ (সা.) শ্রমিককে আপনজনের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করো, তাদের সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করবে।’ একই কথা নবী কারিম (সা.) আরেক হাদিসে উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘তোমরা অধীনস্থদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদেরকে কোনোরকম কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জানো না, তাদেরও তোমাদের মতো একটি হৃদয় আছে। ব্যথাদানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্টবোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন করো না।’ -সহিহ বোখারি

শ্রমিকরাও মানুষ। তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও মানবিক অধিকারের প্রতি লক্ষ রাখার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘মজুরদের সাধ্যের অতীত কোনো কাজ করতে তাদের বাধ্য করবে না। অগত্যা যদি তা করাতে হয় তবে নিজে সাহায্য করো।’ -সহিহ বোখারি

শ্রমিকের প্রতি মালিক যাতে সহনশীল থাকে এবং তার ভুলত্রুটি ক্ষমার মতো মহৎ মনের অধিকারী হয়, সেটা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহর নবী (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘মজুর চাকরদের অপরাধ অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্ত্বের লক্ষণ।’ নবী কারিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘অসদাচরণকারী মালিক বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’

শ্রমিকের মজুরি আদায়ের ব্যাপারে নবী কারিম (সা.)-এর অতি পরিচিত এবং বিখ্যাত একটি উক্তি সবার জানা। তিনি বলেছেন, ‘মজুরকে তার গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই মজুরি পরিশোধ করে দাও।’ শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নবী কারিম (সা.)-এর এই বাণী শ্রমিকের মর্যাদার বিষয়টিকে আরও বেশি মহীয়ান করেছে।

এভাবে ইসলাম শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার যে নিশ্চয়তা দিয়েছে, তা দুনিয়ার আর কোনো মতবাদ বা দর্শন দেয়নি। আধুনিক বিশ্বের পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী রাষ্ট্র দর্শনের কোনোটাই শ্রমিকের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদার ন্যূনতম সমাধান দিতে পারেনি। ফলে এখনও শ্রমিক-মজুররা নিষ্পেষিত হচ্ছে। মালিকের অসদাচরণ, কম শ্রমমূল্য প্রদান, অনপযুক্ত কর্ম পরিবেশ প্রদানসহ নানা বৈষম্য শ্রমিকের দুর্দশা ও মানবেতর জীবনযাপনের কারণ হয়ে আছে।

মে দিবসের প্রাক্কালে আমরা বলতে চাই, নানা আয়োজনে প্রতি বছর শ্রমিক দিবস পালন করার মধ্যে শ্রমিকের প্রকৃত মুক্তি নেই। যে অধিকারের জন্য শ্রমিকরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন শিকাগোর রাজপথে, তা বাস্তবে এখনও অর্জিত হয়নি। আজও শ্রমিকেরা পায়নি তাদের কাজের উন্নত পরিবেশ, পায়নি ভালোভাবে বেঁচে থাকার মতো মজুরি কাঠামো এবং স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিত জীবনের নিশ্চয়তা। মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শ্রমিকের প্রতি মালিকের সহনশীল মনোভাব থাকতে হবে। শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আলোকে তাকে কাজ দিতে হবে। শ্রমিককে মানুষের মতো বেঁচে থাকার জন্য তার মজুরি সেভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

মালিককে অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, তার নিজের স্বজনরা যে রকম জীবনযাপন করবে, তার অধীনস্থ শ্রমিকরাও সে রকম জীবনের নিশ্চয়তা পাবে। মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে ইসলাম যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, তাকে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা গেলে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা অবশ্যই সুরক্ষিত হবে- ইনশাআল্লাহ।

;