নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?



ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ জুলাই শুরু হবে হজ ফ্লাইট। বাংলাদেশ থেকে এবার প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলামান হজপালনের জন্যে সৌদি আরব গমন করবেন। এবার যারা হজে যাচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। হজ পালনেচ্ছুদের সুবিধার্থে বার্তা২৪.কম ধারাবাহিকভাবে হজের নিয়ম-কানুন, মাসয়ালা, আমল ও প্রয়োজনীয় দোয়া প্রকাশ করবে। আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব

নারীদের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ইসলামি শরীয়ত বেশ কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছে। এর অন্যতম হলো- শরয়ী সফরের দূরত্বে যাতায়াত করতে হলে তার সঙ্গে স্বামী বা মাহরাম থাকতে হবে।

শরয়ী সফর হলো- ৪৮ শরয়ী মাইল বা ৫৪ মাইল বা ৮৭ কিলোমিটার পথ সফর করা। তা পায়ে হেঁটে হোক, রেল, বাস বা প্লেনে হোক। একদিন বা পাঁচদিন যত সময়ের জন্যই হোক নারীরা ৮৭ কিলোমিটার পথ মাহরাম ছাড়া একা চলবে না। পার্থিব প্রয়োজনেও একা যাবে না। হজ-উমরা ইত্যাদির মতো শরীয়তের প্রয়োজনেও একা চলাফেরা করবে না।

মনে রাখতে হবে, হজ-উমরা হলো আল্লাহর বিধান। তা আল্লাহর বিধান মতো পালন করলেই এতে সওয়াব ও মুক্তি আছে। মনগড়া নিয়মে তা পালন করলে উল্টো গোনাহগার হতে হবে।

মাহরাম কারা?
মাহরাম বলতে বুঝায় যাদের সঙ্গে শরীয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে বৈধ নয়। যেমন- ছেলে, পিতা, আপন চাচা, আপন মামা, ভাই, নাতী, শ্বশুর ও মেয়ের জামাই।

মাসয়ালা : খালাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, চাচাতো ভাই মাহরাম নয়। তাদের সঙ্গে বিয়ে জায়েজ। এমনিভাবে মুখে মুখে ডাকা বাপ, ছেলে বা ভাই, পালক পুত্র মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে না।

নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?
নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হলো- নারী নিজে ও তার সঙ্গের মাহরামের হজের খরচের ব্যবস্থা হতে হবে। তাহলেই তার ওপর হজ ফরজ হবে।

এক কথায়-
ক. যদি নারীর নিজের হজের খরচের ব্যবস্থা থাকে।
খ. তার সঙ্গে যাতায়াতের জন্য মাহরামের ব্যবস্থা হয়।
গ. মাহরামের হজের খরচের ব্যবস্থা তার কাছে থাকে।
ঘ. নারীদের ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যকোনো নিষেধ না থাকে (যেমন তালাকের ইদ্দত বা স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দতকালীন সময় না হয়)। তাহলে নারীদের ওপর হজ করা ফরজ হবে এবং তা আদায় করতে হবে।

মাসয়ালা : নারীদের ওপর হজ ফরজ হলে তা আদায়ের ক্ষেত্রে স্বামী বাধা দিলেও তা মানা যাবে না। তবে নফল হজের ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নেওয়া জরুরি।

মাসয়ালা : কোনো নারীর টাকার ব্যবস্থা আছে কিন্তু উপযুক্ত মাহরাম বা স্বামী না থাকায় হজ করতে না পারলে বদদি হজের অসিয়ত করে যাবে। তার মৃত্যুর পর তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা আদায় করা হবে।

মাসয়ালা : নারীরা অন্য নারীর সঙ্গে মিশে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারবে না। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত যেন হজ না করে।’ -সাঈদ আব্দুল কাদের, আল মুগনি ফি ফিকহিল হজ ওয়াল উমরা, পৃ. ২২ সূত্রে হজ উমরা ও যিয়ারত গাইড, শামসুল হক সিদ্দিক পৃ. ১৫২

নারী-পুরুষের হজে পার্থক্য
হজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের খুব বেশি পার্থক্য নেই। হজে পুরুষদের যে সব কাজ করতে হয়, নারীদেরও সেসব কাজ করতে হয়। অল্প কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে তা আলোচনা করা হলো-

১. পুরুষ সঙ্গী : পুরুষরা একা হজ করতে পারলেও নারীদের হজ-উমরার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে স্বামী বা মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে। মাহরাম পুরুষ না পাওয়া গেলে হজ স্থগিত রাখবে।

/uploads/files/f3lxZHMm5PSkTi7oHuMcdvOrBjvv2AtjcA3BJnE9.jpeg
২. পোশাক : হজের ইহরাম অবস্থায় পুরুষরা সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করেন। অপরদিকে নারীরা স্বাভাবিক পর্দা করবেন। নারীরা মুখের সঙ্গে কোনো কাপড় লাগিয়ে রাখবেন না। মুখের পর্দার জন্য মাথার সামনে ক্যাপ দিয়ে, ক্যাপের সামনে বাড়তি কাপড় ঝুলিয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া নারীরা সেলাইযুক্ত সাধারণ কাপড় পরিধান করার পাশাপাশি মাথা ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইহরাম ছাড়া অন্য সময়ে নারী-পুরুষ সবাই স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন।

৩. তালবিয়া পাঠ : ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক... পড়তে হয়। পুরুষরা উচ্চস্বরে তা পড়বে আর নারীরা হালকা আওয়াজে পড়বে। নারীদের উচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পড়া নিষেধ।

৪. ইদ্দত পালন : নারী যদি তালাক বা স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত পালন করতে থাকে তাহলে নারীরা হজ করতে পারবে না। হজ শুরুর পূর্বে ইদ্দত শেষ হলে হজের জন্য বের হতে পারবে। অন্যথা পরবর্তী বছর হজ করবে।

আরও পড়ুন: দানবাক্স থেকে পাগলা মসজিদের দৈনিক আয় লাখ টাকা!

৫. তাওয়াফ : তাওয়াফ করার ক্ষেত্রে নারীরা যথাসম্ভব পুরুষদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলবে। নারীদের জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। অদূর ভবিষ্যতে আলাদা লাইন বা সময় হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাওয়াফের ক্ষেত্রে পুরুষরা যখন ইজতিবা করবে তখন নারীদের ইজতিবা করার প্রয়োজন নেই। পুরুষরা যখন বীরের মতো হেলেদুলে রমল করে নারীরা তখন স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করবে।

কাবা শরীফের হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বনের জন্য পুরুষদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি জায়েজ নয়। ভিড় ছাড়া, পুরুষদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ছাড়া যদি হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া যায় তাহলে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নারীদের জন্য আলাদা সময় করার পরিকল্পনা করছে হারামাইন কর্তৃপক্ষ।

৬. সায়ী অবস্থায় : সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সায়ী বা দৌঁড়ানোর আমলটি একজন নারী থেকেই এসেছে। নারীরাও সায়ী করবে তবে দু’সবুজ বাতির এলাকায় দৌঁড়াতে হবে না নারীদের।

৭. হজ অবস্থায় ঋতুস্রাব হলে : নারীরা ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে তাওয়াফ ছাড়া সব কিছুই করতে পারবে। হজের ফরজ তাওয়াফ বা তাওয়াফে জিয়ারত করার পূর্বে মাসিক শুরু হলে স্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। স্রাব বন্ধ হবার পর তাওয়াফে জিয়ারত করে যথারীতি হজ শেষ করবে। স্রাব ১২ তারিখের পর বন্ধ হলেও এতে কোনো দম বা জরিমানা দিতে হবে না।

যদি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার কারণে কিংবা অন্যকোনো কারণে কিছুতেই স্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মক্কায় থাকা সম্ভব না হয়, তাহলে পরবর্তীতে আবার মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফ আদায় করতে হবে। তাওয়াফ আদায় না করা পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর মিলন বৈধ হবে না। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হলো- সেনেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে নেওয়া। সেক্ষেত্রে দম বা জরিমানা দিতে হবে।

মাসয়ালা : যদি তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করার পর স্রাব শুরু হয় তাহলে তার জন্য তাওয়াফে বিদা (বিদায়ী তাওয়াফ) মাফ। তাওয়াফে বিদা ছাড়াই হজ শেষ করতে পারবে। তবে অপেক্ষা করে সুস্থ হবার পর তাওয়াফে বিদা করতে চাইলে তাও করতে পারবে।

মাসয়ালা : হজ অবস্থায় স্রাবের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য ঔষধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করতে চাইলে এর অনুমতি আছে। -জাদিদ ফিকহি মাসায়েল: খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি, পৃ. ১৯১

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

   

মক্কা প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ, ১৩৮ ভাষার অনুবাদ ডিভাইস



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের স্থানীয় হিসাবে বৃহস্পতিবার জিলকদ মাসের ১৫ তারিখ। আজ থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ শুরু হয়েছে। পবিত্র হজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির জননিরাপত্তাবিষয়ক অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে, ১৫ জিলকদ) থেকে শুরু হওয়া এ বিধি-নিষেধ হজের পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে। এ সময়ে স্থানীয়দের মক্কায় প্রবেশে প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন হজের প্রস্তুতি এবং হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিনা অনুমতিতে মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে হজের স্থানগুলোতে কাজ করার অনুমোদন, মক্কায় বসবাসকারীর আইডি ও হজের অনুমোদন ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অনুমোদন ছাড়া যারা মক্কায় প্রবেশ করতে চাইবে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফিরিয়ে দেবে।

সব ধরনের ভিজিট ভিসায় মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র হজ ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারবেন। ভিজিট ভিসার ধরন যাই হোক না কেন, এটি হজ পারমিট নয় এবং এই ধরনের ভিসাধারী ব্যক্তিদের হজ করার অনুমতি নেই'। মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করে আরও বলেছে, কোনো ভিজিট ভিসাধারী যদি মক্কায় থাকে, তাদের অবিলম্বে চলে যেতে হবে। হজ ভিসা ব্যতীত অন্য যেকোনো ধরণের ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করলে বা মক্কার ভেতরে পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৩৮ ভাষায় তাত্ক্ষণিক অনুবাদ ডিভাইস
সৌদি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র মেজর নাসির আল ওতাইবি জানিয়েছেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করার জন্য, কর্মকর্তাদের ১৩৮ ভাষায় দ্রুত অনুবাদের ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হজযাত্রীদের সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

;

৬৫ বছর বয়সী ভ্যানচালকের উমরার স্বপ্নপূরণ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার ঘর তওয়াফ ও মদিনা শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবরক জিয়ারত করার, রাসুলের রওজায় সালাম পেশ করার। অবশেষে লালিত সেই স্বপ্ন ২০২৪ সালের ২ মে পূরণ করেছেন ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী। ৬৫ বছর বয়সী এই ভ্যানচালক বরিশালের মুলাদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বড়চর মাধবপুরের মো. আ. রব বেপারীর ছেলে।

পবিত্র উমরার স্বপ্নপূরণ প্রসঙ্গে ফরিদ বেপারী বলেন, ‘ভালো কাজের নিয়ত করলে আল্লাহতায়ালা তার ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতেই আমার উমরা পালন করা সম্ভব হয়েছে।’

জানা গেছে, ভ্যান চালিয়ে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করেন। সংসারের খরচ চালানোর পরে হাতে কিছুই থাকে না। তার পাঁচ ছেলে সন্তান রয়েছে। ছোট ছেলে তার সঙ্গে থাকে। বাকি ছেলেরা আলাদা সংসার করে। নিজের আয় দিয়েই উমরা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য তিনি দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন।

গত ৩০ বছর ধরে তিনি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রীর শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় উমরা পালনে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি বলে মনে অনেক দুঃখ তার। উমরা পালন করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। উমরা পালন করতে কোনো ঋণ করেননি তিনি। কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে টাকা উপার্জন করে উমরা পালন করেছেন তিনি।

ফরিদ বেপারী আবারও উমরা পালন করার আশা করছেন। এ জন্য সবার দোয়াও কামনা করেন তিনি।

;

ইন্দোনেশিয়ান নারীর ২২ বার হজ-উমরার অবিস্মরণীয় স্মৃতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৬৪ সালে ছয় বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো হজপালন করতে সৌদি আরব যান। তারপর থেকে তিনি উমরা এবং হজপালনের জন্য আরও ২২ বার মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করেছেন।

সুরাবায়া বিমানবন্দরের মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ হলে মরিয়ম মুনির তার ২২ বার সৌদি আরব ভ্রমণের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে আলাপ করছিলেন সৌদি প্রেস এজেন্সির এক প্রতিনিধির সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর আগে, তার পরিবার হজ করার জন্য প্রথম ভ্রমণ করেন, ভ্রমণটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। একটি পুরোনো জাহাজে করে সৌদি আরব আসতে পাঁচ থেকে আট মাস সময় লেগেছিল।

জাহাজগুলো প্রথমে জাকার্তা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে ভারত, আরব সাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছায়। তিনি বলেন, যাত্রাটি বিপদ, চ্যালেঞ্জ এবং ভয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তবে, ফরজ ইবাদতপালনের বাধ্যবাধকতার জন্য তার পরিবারের ইচ্ছা ও সাধনা পথের কষ্ট সেভাবে দাগ কাটেনি। বরং এ সময়টা আমাদের আরও শক্তি জুগিয়েছে। কাবা দেখার ইচ্ছাকে প্রবল করেছে। মসজিদে নববিতে যাওয়ার এবং রাসুলের রওজা জিয়ারতের ভালোবাসা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মক্কা নগরিতে পৌঁছার পর আমাদের শরীর পুরোপুরি সতেজ হয়ে উঠে। আর মসজিদে নববিতে যেয়ে মনে হতো, আত্মা যেন সতেজ হয়ে উঠছে।

মুনির অতীতে হজকে ঘিরে ইন্দোনেশিয়ানদের বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কেও কথা বলেন।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজপালনে সৌদি আরব যান

মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বলেন, হজযাত্রীরা সবাই জাকার্তায় জড়ো হবেন এবং যাত্রার আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানাবেন- এটাই আমাদের রীতি। হজ শেষ করে দেশে ফেরার পর হজযাত্রীদের পরিবার তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন এবং তাদের ধর্মীয় যাত্রার পরিপূর্ণতা উদযাপন করে বিভিন্ন উপহার দিয়ে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়।

মরিয়মের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মক্কায় ভ্রমণ এখন অনেক সহজ হয়েছে, যার ফলে পবিত্র নগরীতে উমার ও হজপালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের হজযাত্রাকে বর্তমান যাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ভিন্নতার জগৎ।

তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে তারা এখানে (ইন্দোনেশিয়া) বসে মক্কায় পৌঁছেছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সৌদি সরকারের একটি অনুকরণীয় অর্জন। এ সময় মুনির সৌদি সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জনসংখ্যার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া হলো, সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী প্রতিবছর হজপালনে সৌদি আরব যান। চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। ১২ মে থেকে দেশটির হজফ্লাইট শুরু হয়েছে।

;

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া তথা কালো গিলাফ নিচ থেকে ওপরে তিন মিটার তুলে তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। কেউ বলেন, কাবাকে ইহরাম পড়ানো হয়েছে, এর মাধ্যমে হজের প্রস্তুতির স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার ২২ মে (১৫ জিলকদ) প্রতিবছরের মতো এবারের হজের প্রস্তুতি হিসেবে তা করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এভাবে কাবার গিলাফের নিচের অংশ ওপরের তোলার কারণ কী, তা অনেকের অজানা।

মূলত হজের সময় পবিত্র মসজিদে হারামে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। কাবা ঘরের কালো গিলাফের কিছু অংশ ওপরে উঠিয়ে রাখা এর অন্যতম। এর বদলে একটি সাদা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কাপড়টি আড়াই মিটার চওড়া এবং চার দিকে ৫৪ মিটার দীর্ঘ।

কিসওয়াটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে উত্তোলন করা হয়। প্রথমে চারদিক থেকে কভারের নীচের অংশটি খুলে দেওয়া হয়, ফলে কোণগুলো আলাদা হয়ে যায়। তার পর নীচের দড়ি খুলে ফিক্সিং রিং থেকে সরিয়ে ওপরের দিকে টেনে তোলা হয়।

ইসলামের সূচনাকাল থেকে হজের সময় কাবার গিলাফ সুরক্ষায় এই রীতি চলে আসছে। অতীতে গিলাফের কিছু অংশ হাতের কাছে পেয়ে কিছু অংশ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে।

অনেকে গিলাফকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক বস্তু বলে মনে করে। অনেকে সেই কাপড়ে নিজের নাম লিখে স্বস্তিবোধ করে। অথচ এসব কাজের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাই হাজিদের ভিড়ের মধ্যেও গিলাফ সুরক্ষিত রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কাবার গিলাফ ওপরে তোলা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আর খালি স্থানে সাদা কাপড় দিয়ে কাবাঘর মোড়ানো হয়। মূলত এর মাধ্যমে হজের সময় ঘনিয়ে আসার কথা স্মরণ করানো হয়। কাবার দেয়ালের সাদা কাপড় হজের পূর্বপ্রস্তুতির জানান দেয়। হজের শেষ সময় পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকে। এরপর আগের মতো পুনরায় কালো গিলাফ নামিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবছর ১৫ জিলকদ বা এর এক দিন আগে-পরে কাবার গিলাফের অংশ ওপরে তোলা হয়। এরপর থেকেই হাজিদের ভিড় ও তাওয়াফ শুরু হয়। প্রচণ্ড ভিড়েরর কারণে তখন আর গিলাফ ওপরে তোলা সম্ভব হয় না।

কাবার গিলাফ ওপরে তুলতে বুধবার রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা পবিত্র কাবাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। এ সময় বিশেষ প্রযুক্তিগত দল কিসওয়া ওপরে উঠানোর কাজ করে। ১০টি ক্রেনের সাহায্যে ৩৬ জন কর্মী কাজটি সম্পন্ন করেন।

রীতি অনুযায়ী ৯ জিলহজ পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকবে। এরপর হজের দিন নতুন গিলাফ লাগানো হয়।

;