হাজার মাসের চেয়ে উত্তম যে রাত



মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফার্সি ‘শবেকদর’, আরবি ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ মহিমান্বিত রাত। এ রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে স্বতন্ত্র একটি সূরা রয়েছে। ৫ আয়াত বিশিষ্ট এ সূরায় লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে ইসলামি শরীয়তে এ রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।

আরবি মাসগুলোর মধ্যে রমজান যেমন শ্রেষ্ঠ মাস, তেমনি রমজানের একটি রাত লাইলাতুল কদর। কোরআন-হাদিসের প্রচুর বর্ণনা দ্বারা পবিত্র এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে জানা যায়।

হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ –সহিহ বোখারি: ১৯০১

হাদিসে ‘ঈমান সহকারে’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, এই রাতের মর্যাদা ও বিশেষ আমল শরিয়তসম্মত হওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ‘প্রতিদানের আশায়’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, নিয়তকে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা।

সূরা দুখানের ৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আমি এটা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।’ আর এ রাত হলো শবেকদর। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ফেরেশতারা এ রাতে রহমত, বরকত ও প্রশান্তি নিয়ে অবতরণ করেন।’ কারও কারও মতে, ‘আল্লাহতায়ালা এ বছর যেসব বিষয় নির্ধারণ ও ফয়সালা করেছেন, ফেরেশতারা তা নিয়ে অবতরণ করেন।’

লাইলাতুল কদর অতি মূল্যবান রাত হওয়ায় আল্লাহতায়ালা এর সুনির্দিষ্ট তারিখ গোপন রেখেছেন। মুমিনরা যেন এ রাতকে কষ্ট করে অন্বেষণ করে, যাতে তারা কেবল ওই নির্দিষ্ট তারিখ ইবাদত করে অন্য রাতে অলসভাবে না কাটায়; তাই রমজানের বেজোড় রাতগুলোকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে।

সাহাবায়ে কেরাম হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করে পুরো রমজান বিশেষত শেষ দশকের বেজোড় রাতে বেশি বেশি ইবাদত ও কোরআন তেলাওয়াত করতেন।

কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তা নিয়ে আলেমদের মাঝে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। ফাতহুল বারি গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ সংক্রান্ত অভিমত ৪০টির ওপরে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক মত হলো- লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশকের কোনো এক বেজোড় রাত।

হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ –সহিহ বোখারি: ২০১৭

রমজান মাসে নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুস্পষ্ট দলিল প্রয়োজন। তবে অন্যান্য রাতের চেয়ে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো একটিতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এর মধ্যে ২৭তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

বিভিন্ন হাদিস থেকে এ বিষয়ে ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। তবে একজন মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। কারণ এতে করে এমন বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়, আসলে যে বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভবপর নয় এবং এতে করে ব্যক্তি প্রভূত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। হতে পারে লাইলাতুল কদর ২১তম রাতে অথবা ২৩তম রাতে অথবা ২৯তম রাতে। তাই কেউ যদি শুধু ২৭তম রাতে নামাজ আদায় করে তবে তিনি অফুরন্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবেন এবং এই মোবারকময় রাতের ফজিলত হারাবেন।

ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কোরআনের সূরা কদরের গবেষণা করে করে ২৭ তারিখ লাইলাতুল কদর হওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তার গবেষণা সূত্র হচ্ছে, কোরআনে লাইলাতুল কদর শব্দটি তিনবার বলা হয়েছে। এ শব্দটিতে ৯টি অক্ষর আছে। সুতরাং ৩ গুন ৯ = ২৭ রমজানে লাইলাতুল কদর হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।

তাই বলে সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।

এ রাতে মহাগ্রন্থ কোরআন নাজিল হয়, মানবজাতির এই বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এই কোরআনকে ধারণ করলেই মানুষ সম্মানিত হবে, একটি দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে; গোটা জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এ রাতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। কোরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করতে হবে। বাছাইকৃত কিছু আয়াত এ রাতে মুখস্থ করা যেতে পারে। কোরআনের এমন গভীর অধ্যয়ন আমাদের সৌভাগ্যের দ্বার খুলে দেবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদের লাইলাতুল কদর সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য বের হয়ে এসেছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ –সহিহ বোখারি

সুতরাং দুই ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যকার ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেওয়াও এ রাতের অন্যতম ইবাদত।

তা ছাড়া হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি শবেকদর পেয়ে যাই, তবে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করবো? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ দোয়া পড়বে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে তুমি ভালোবাসো। তাই তুমি আমাকে ক্ষমা করো।

শেষ নবীর উম্মত হিসেবে আমরা এই মহিমান্বিত রাত পেয়েছি। আর কোনো উম্মতের ভাগ্যে তা জোটেনি। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহর মর্যাদা বৃদ্ধি এবং তার নৈকট্য অর্জনের সুযোগ হিসেবে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এ রাত দান করেছেন, যাতে তারা স্বল্প জীবনে এ রাতে ইবাদত করে মহাসাফল্য লাভ করতে পারে। তাই আমাদের দরকার এ সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।

রমজান ও শবেকদরে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের কাজে সর্বোচ্চ সাধনা চালানো। এটিই নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রমজানের শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তার পরিবারবর্গকে ইবাদত-বন্দেগির জন্য জাগিয়ে দিতেন।’ –সহিহ বোখারি: ২০২৪

   

মক্কা প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ, ১৩৮ ভাষার অনুবাদ ডিভাইস



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের স্থানীয় হিসাবে বৃহস্পতিবার জিলকদ মাসের ১৫ তারিখ। আজ থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ শুরু হয়েছে। পবিত্র হজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির জননিরাপত্তাবিষয়ক অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে, ১৫ জিলকদ) থেকে শুরু হওয়া এ বিধি-নিষেধ হজের পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে। এ সময়ে স্থানীয়দের মক্কায় প্রবেশে প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন হজের প্রস্তুতি এবং হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিনা অনুমতিতে মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে হজের স্থানগুলোতে কাজ করার অনুমোদন, মক্কায় বসবাসকারীর আইডি ও হজের অনুমোদন ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অনুমোদন ছাড়া যারা মক্কায় প্রবেশ করতে চাইবে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফিরিয়ে দেবে।

সব ধরনের ভিজিট ভিসায় মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র হজ ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারবেন। ভিজিট ভিসার ধরন যাই হোক না কেন, এটি হজ পারমিট নয় এবং এই ধরনের ভিসাধারী ব্যক্তিদের হজ করার অনুমতি নেই'। মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করে আরও বলেছে, কোনো ভিজিট ভিসাধারী যদি মক্কায় থাকে, তাদের অবিলম্বে চলে যেতে হবে। হজ ভিসা ব্যতীত অন্য যেকোনো ধরণের ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করলে বা মক্কার ভেতরে পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৩৮ ভাষায় তাত্ক্ষণিক অনুবাদ ডিভাইস
সৌদি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র মেজর নাসির আল ওতাইবি জানিয়েছেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করার জন্য, কর্মকর্তাদের ১৩৮ ভাষায় দ্রুত অনুবাদের ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হজযাত্রীদের সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

;

৬৫ বছর বয়সী ভ্যানচালকের উমরার স্বপ্নপূরণ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার ঘর তওয়াফ ও মদিনা শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবরক জিয়ারত করার, রাসুলের রওজায় সালাম পেশ করার। অবশেষে লালিত সেই স্বপ্ন ২০২৪ সালের ২ মে পূরণ করেছেন ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী। ৬৫ বছর বয়সী এই ভ্যানচালক বরিশালের মুলাদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বড়চর মাধবপুরের মো. আ. রব বেপারীর ছেলে।

পবিত্র উমরার স্বপ্নপূরণ প্রসঙ্গে ফরিদ বেপারী বলেন, ‘ভালো কাজের নিয়ত করলে আল্লাহতায়ালা তার ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতেই আমার উমরা পালন করা সম্ভব হয়েছে।’

জানা গেছে, ভ্যান চালিয়ে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করেন। সংসারের খরচ চালানোর পরে হাতে কিছুই থাকে না। তার পাঁচ ছেলে সন্তান রয়েছে। ছোট ছেলে তার সঙ্গে থাকে। বাকি ছেলেরা আলাদা সংসার করে। নিজের আয় দিয়েই উমরা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য তিনি দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন।

গত ৩০ বছর ধরে তিনি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রীর শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় উমরা পালনে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি বলে মনে অনেক দুঃখ তার। উমরা পালন করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। উমরা পালন করতে কোনো ঋণ করেননি তিনি। কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে টাকা উপার্জন করে উমরা পালন করেছেন তিনি।

ফরিদ বেপারী আবারও উমরা পালন করার আশা করছেন। এ জন্য সবার দোয়াও কামনা করেন তিনি।

;

ইন্দোনেশিয়ান নারীর ২২ বার হজ-উমরার অবিস্মরণীয় স্মৃতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৬৪ সালে ছয় বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো হজপালন করতে সৌদি আরব যান। তারপর থেকে তিনি উমরা এবং হজপালনের জন্য আরও ২২ বার মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করেছেন।

সুরাবায়া বিমানবন্দরের মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ হলে মরিয়ম মুনির তার ২২ বার সৌদি আরব ভ্রমণের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে আলাপ করছিলেন সৌদি প্রেস এজেন্সির এক প্রতিনিধির সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর আগে, তার পরিবার হজ করার জন্য প্রথম ভ্রমণ করেন, ভ্রমণটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। একটি পুরোনো জাহাজে করে সৌদি আরব আসতে পাঁচ থেকে আট মাস সময় লেগেছিল।

জাহাজগুলো প্রথমে জাকার্তা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে ভারত, আরব সাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছায়। তিনি বলেন, যাত্রাটি বিপদ, চ্যালেঞ্জ এবং ভয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তবে, ফরজ ইবাদতপালনের বাধ্যবাধকতার জন্য তার পরিবারের ইচ্ছা ও সাধনা পথের কষ্ট সেভাবে দাগ কাটেনি। বরং এ সময়টা আমাদের আরও শক্তি জুগিয়েছে। কাবা দেখার ইচ্ছাকে প্রবল করেছে। মসজিদে নববিতে যাওয়ার এবং রাসুলের রওজা জিয়ারতের ভালোবাসা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মক্কা নগরিতে পৌঁছার পর আমাদের শরীর পুরোপুরি সতেজ হয়ে উঠে। আর মসজিদে নববিতে যেয়ে মনে হতো, আত্মা যেন সতেজ হয়ে উঠছে।

মুনির অতীতে হজকে ঘিরে ইন্দোনেশিয়ানদের বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কেও কথা বলেন।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজপালনে সৌদি আরব যান

মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বলেন, হজযাত্রীরা সবাই জাকার্তায় জড়ো হবেন এবং যাত্রার আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানাবেন- এটাই আমাদের রীতি। হজ শেষ করে দেশে ফেরার পর হজযাত্রীদের পরিবার তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন এবং তাদের ধর্মীয় যাত্রার পরিপূর্ণতা উদযাপন করে বিভিন্ন উপহার দিয়ে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়।

মরিয়মের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মক্কায় ভ্রমণ এখন অনেক সহজ হয়েছে, যার ফলে পবিত্র নগরীতে উমার ও হজপালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের হজযাত্রাকে বর্তমান যাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ভিন্নতার জগৎ।

তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে তারা এখানে (ইন্দোনেশিয়া) বসে মক্কায় পৌঁছেছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সৌদি সরকারের একটি অনুকরণীয় অর্জন। এ সময় মুনির সৌদি সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জনসংখ্যার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া হলো, সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী প্রতিবছর হজপালনে সৌদি আরব যান। চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। ১২ মে থেকে দেশটির হজফ্লাইট শুরু হয়েছে।

;

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া তথা কালো গিলাফ নিচ থেকে ওপরে তিন মিটার তুলে তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। কেউ বলেন, কাবাকে ইহরাম পড়ানো হয়েছে, এর মাধ্যমে হজের প্রস্তুতির স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার ২২ মে (১৫ জিলকদ) প্রতিবছরের মতো এবারের হজের প্রস্তুতি হিসেবে তা করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এভাবে কাবার গিলাফের নিচের অংশ ওপরের তোলার কারণ কী, তা অনেকের অজানা।

মূলত হজের সময় পবিত্র মসজিদে হারামে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। কাবা ঘরের কালো গিলাফের কিছু অংশ ওপরে উঠিয়ে রাখা এর অন্যতম। এর বদলে একটি সাদা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কাপড়টি আড়াই মিটার চওড়া এবং চার দিকে ৫৪ মিটার দীর্ঘ।

কিসওয়াটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে উত্তোলন করা হয়। প্রথমে চারদিক থেকে কভারের নীচের অংশটি খুলে দেওয়া হয়, ফলে কোণগুলো আলাদা হয়ে যায়। তার পর নীচের দড়ি খুলে ফিক্সিং রিং থেকে সরিয়ে ওপরের দিকে টেনে তোলা হয়।

ইসলামের সূচনাকাল থেকে হজের সময় কাবার গিলাফ সুরক্ষায় এই রীতি চলে আসছে। অতীতে গিলাফের কিছু অংশ হাতের কাছে পেয়ে কিছু অংশ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে।

অনেকে গিলাফকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক বস্তু বলে মনে করে। অনেকে সেই কাপড়ে নিজের নাম লিখে স্বস্তিবোধ করে। অথচ এসব কাজের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাই হাজিদের ভিড়ের মধ্যেও গিলাফ সুরক্ষিত রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কাবার গিলাফ ওপরে তোলা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আর খালি স্থানে সাদা কাপড় দিয়ে কাবাঘর মোড়ানো হয়। মূলত এর মাধ্যমে হজের সময় ঘনিয়ে আসার কথা স্মরণ করানো হয়। কাবার দেয়ালের সাদা কাপড় হজের পূর্বপ্রস্তুতির জানান দেয়। হজের শেষ সময় পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকে। এরপর আগের মতো পুনরায় কালো গিলাফ নামিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবছর ১৫ জিলকদ বা এর এক দিন আগে-পরে কাবার গিলাফের অংশ ওপরে তোলা হয়। এরপর থেকেই হাজিদের ভিড় ও তাওয়াফ শুরু হয়। প্রচণ্ড ভিড়েরর কারণে তখন আর গিলাফ ওপরে তোলা সম্ভব হয় না।

কাবার গিলাফ ওপরে তুলতে বুধবার রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা পবিত্র কাবাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। এ সময় বিশেষ প্রযুক্তিগত দল কিসওয়া ওপরে উঠানোর কাজ করে। ১০টি ক্রেনের সাহায্যে ৩৬ জন কর্মী কাজটি সম্পন্ন করেন।

রীতি অনুযায়ী ৯ জিলহজ পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকবে। এরপর হজের দিন নতুন গিলাফ লাগানো হয়।

;