জাকাত আদায়ের জন্য যা জানা জরুরি



মুফতি এহতেশামুল হক কাসিমী, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি, ছবি: সংগৃহীত

জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি। জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চায়। কোরআনে কারিমের সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘জাকাত পাবে ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী, যাদের ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করা দরকার, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, নিঃস্ব পথিক। আল্লাহর পথে সাধারণ জনকল্যাণমূলক কাজেও এ অর্থ খরচ করা যাবে।’

ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক জাকাত প্রদান ফরজ যা বাধ্যতামূলক এবং অবশ্য পালনীয়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজের কোনো স্থানে যেন ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত না হয়ে ওঠে। যারা প্রয়োজনাতিরিক্ত যথেষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হয়েছে তারা যেনো তা জমা না করে রাখে, ব্যয় করা বন্ধ না করে দেয়। বরং তা এমনভাবে ব্যয় করে যার ফলে সমাজের আবর্তিত সম্পদ থেকে যেন বঞ্চিতরা জীবিকা অর্জন করতে পারে। এ লক্ষ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ লোকদের কাছ থেকে নেওয়াই হচ্ছে জাকাত।

জাকাত কোনো প্রকার কর বা শুল্ক নয়। কর রাষ্ট্রের সাধারণ ব্যয় নির্বাহের জন্য আরোপ করা হয়। কাজেই জাকাতকে কর বলা যায় না। এটাকে বড়জোড় বাধ্যতামূলক সামাজিক কর হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে এবং এই কর প্রযোজ্য হবে উদ্ধৃত্ত বিবেচিত সম্পদের ওপর। একজন ব্যক্তি তার হালাল আয় ও সম্পদ হতে সামাজিক জীবনযাত্রার মান রক্ষার জন্য ন্যায্য চাহিদা মেটানোর পর তার উদ্বৃত্ত সম্পদের ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে।

কারা জাকাত দেবেন
প্রত্যেক মুসলিম যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাকে জাকাত দিতে হবে। নেসাব হচ্ছে ওই সঞ্চিত সম্পদ, যা মানসিকভাবে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের নিজের মালিকানায় পূর্ণ এক চন্দ্র বছর ছিলো- তাহলে তাকে জাকাত দিতে হবে। অবশ্য ক্ষেতের ফসল, খনিজ সম্পদ, সমুদ্র থেকে পাওয়া সম্পদ ও মাছের ক্ষেত্রে সারা বছর এ সম্পদ হাতে থাকার শর্ত নেই। ফসল আহরণের পরপরই এসবের জাকাত দিতে হয়।

জাকাতের বছর কিভাবে হিসাব করবেন
এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের মতামত হচ্ছে, শুধু বছরের দিনের হিসাবটা ধরতে হবে। অর্থাৎ যদি কারও জাকাত দেওয়ার বছর হয় ১ রমজান থেকে শাবানের শেষ দিন, তাহলে বছরের শেষের দিনের সম্পদের হিসাব করতে হবে এবং সেদিন নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হবে।

অবশ্য অন্য অনেক ইসলামি স্কলারদের অভিমত হচ্ছে, জাকাত নির্ধারণ করতে হবে বছরের শুরু ও শেষের দিনের হিসাব ধরে। অর্থাৎ ওপরে উল্লেখিত বছরে যদি কারও ১ রমজান ও শাবানের শেষ দিন নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে শাবানের শেষের দিনের সম্পদের হিসাবের ভিত্তিতে জাকাত দিতে হবে।

জাকাতের তাগাদা দেওয়া হয়েছে কোরআন-হাদিসে
জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। যেকোনো মুসলিম পুরুষ অথবা নারী যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন এবং সম্পদের ওপর বছর অতিক্রান্ত হয়, তবে ওই ব্যক্তির ওপর এই সম্পদের জাকাত আদায় করা ফরয। জাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ তা আদায় না করে, তবে সে কঠোর শাস্তির যোগ্য হবেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাকাত আদায় না করার ফলে ইহকালীন ও পরকালীন বিভিন্ন শাস্তির কথা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত রয়েছে।

যে ব্যক্তি জাকাত আদায় করে না সে একজন মহাপাপী, ফাসিক ও ফাজির। আর কেউ যদি জাকাতকে অস্বীকার করে এবং মনে করে বা বলে যে, জাকাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই; কে বলে জাকাত ফরয? এতে কোনো ফায়দা নেই অথবা যে বলে, জাকাত ফরজ করে আমাদের উপার্জিত ধনদৌলত কেড়ে নেওয়ার একটা কৌশল করা হয়েছে ইত্যাদি। মোটকথা যেসব কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, জাকাত ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করে কিংবা এর ওপর খুব অসন্তুষ্ট ভাব বুঝায়, তবে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।

যে সব সম্পদের জাকাত দিতে হবে
জাকাত নির্ণয়ের প্রক্রিয়া
১. নগদ বা ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ, শেয়ার সার্টিফিকেট, বন্ড বা ওই শ্রেণির ঋণপত্র (আপাতত মূল্য Face value জাকাত বছরের মধ্যে প্রাপ্ত জীবন বীমার অর্থ (পরিপক্কতা Maturity বা জীবিতকালীন সুবিধা Servival benefit বা স্বত্বত্যাগ Surrender করার কারণে), জাকাত বছরের মধ্যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি Final settlment বা অফেরতযোগ্য উত্তোলনের non-refundable withdrawal), কারণে প্রাপ্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ ৫২.৫ তোলা রৌপ্যের মূল্য ২.৫%
২. স্বর্ণ, রৌপ্য, মূল্যবান পাথর, স্বর্ণ বা রৌপ্যের অলংকার স্বর্ণের ক্ষেত্রে ৭.৫ তোলা, রৌপ্যের ক্ষেত্রে ৫২.৫ তোলা এবং স্বর্ণ-রৌপ্য একত্রে থাকলে ৫২.৫ তোলা রৌপ্যের মূল্য বাজার দামের (Market Value) ২.৫ %
৩. শিল্প বা ব্যবসা-বানিজ্যের মজুদ (তৈরি পণ্য, আধা তৈরি পণ্য ও কাঁচামাল) ৫২.৫ তোলা রৌপ্যের মূল্য লিখিত মূল্য (Book Value) বা বাজার মূল্যের (Market Value) ২.৫%

যার ওপর জাকাত ফরজ
প্রতিটি সম্পদশালী মুসলিম, বালেগ, সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন নর-নারীর ওপর জাকাত ফরজ

নেসাব
নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর জাকাত ফরজ। কোন জিনিসের নেসাব কি? তা উত্তমরূপে জেনে রাখা সবার জন্য একান্ত প্রয়োজন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ-
শুধু স্বর্ণের নেসাব: সাড়ে সাত ভরি (তোলা)।
শুধু রৌপ্যের নেসাব: সাড়ে বায়ান্ন ভরি (তোলা)।
স্বর্ণ-রূপার একত্রে নেসাব: স্বর্ণ ও রূপা উভয় জিনিসই যদি কারও নিকট থাকে এবং এর কোনোটাই নেসাব পরিমাণ নাও হয়; তবে উভয়টির মূল্য হিসাব করে দেখতে হবে। মূল্য যদি একত্রে রূপার নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, অর্থাৎ ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের সমান হয়ে যায়, তবেই জাকাত আদায় করতে হবে।

নগদ টাকা পয়সার নেসাব
বাজার দর হিসাবে অন্তত ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের পরিমাণ টাকা এক বছরকাল জমা থাকলে এর জাকাত আদায় করতে হবে।

ব্যবসায়ী পণ্যের নেসাব
কোনো জিনিস বিক্রি করার উদ্দেশ্যে রাখা হলেই তাকে ব্যবসার পণ্য মনে করা হবে। ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের সমান মূল্যমান সম্পন্ন ব্যবসার পণ্যের জাকাত দিতে হবে। বছরান্তে তখনকার বাজারদর হিসেবে মূল্য ধরতে হবে। খরিদ মূল্য ধরলে চলবে না।

জাকাত আদায় ফরয হওয়ার একটি মৌলিক শর্ত
স্বর্ণ, রূপা, টাকা-পয়সা বা ব্যবসার পণ্য নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর তৎক্ষনাৎ জাকাত আদায় করা ফরয হয় না; বরং এক বছরকাল নিজের মালিকানাধীন থাকলেই জাকাত আদায় করা ফরয হয়। অতএব নেসাব পরিমাণ হওয়ার সাথে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

বছরের শুরুতে যদি নেসাব পরিমাণ মাল বা টাকা-পয়সা থাকে আর বছরের মধ্যবর্তী সময় নেসাবের চেয়ে কম হয়, আবার বছরের শেষাংশে নেসাবের পরিমাণ হয়ে যায় অথবা বছরের মধ্যবর্তী সময় আরও বৃদ্ধি পায় উভয় অবস্থাতেই বছরান্তে যে পরিমাণ মাল বা টাকা থাকবে তার জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, বছরের শেষে কি পরিমাণ থাকে তাই ধর্তব্য। মধ্য বছরের হ্রাস-বৃদ্ধি ধর্তব্য নয়।

জাকাতের পরিমাণ
সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ জাকাত আদায় করতে হয়। জাকাত ফরজ হওয়া মালের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা জাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। সামান্য কম হলেও জাকাত আদায় হবে না।

বিশেষ কথা
১. অনেক লোককে দেখা যায়, নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ না থাকার কারণে জাকাত দেওয়ার বিষয়ে চুপ থাকেন। কিন্তু তার কাছে সামান্য রূপা রয়েছে, যার ফলে স্বর্ণ ও রূপার সমষ্টিগত মূল্য রূপার নিসাবের পরিমাণ হয়ে জাকাত ফরজ হয়ে রয়েছে- এদিকে খেয়ালই করছেন না। কাজেই বিষয়টির প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছি। স্বর্ণ ও রূপা একত্রে রাখবেন না, যদি রাখেন তবে জাকাতের ব্যাপারে সজাগ থাকবেন।

২. স্বর্ণ-রূপা, তা যে অবস্থাতেই থাকুক অর্থাৎ টুকরা আকারে অর্থবা অলংকার, বাসনপত্র, ঘড়ি, কলম, চশমার ফ্রেম, কাপড়ের আঁচলে জড়ানো আকারে এবং তা ব্যবহারে আসুক বা না আসুক সর্বাবস্থায় জাকাত আদায় করতে হবে।

৩. অনেকে মনে করেন, নিত্য ব্যবহার্য অলংকারের জাকাত দিতে হবে না, কেবল তুলে রাখা অলংকারের জাকাত দিতে হবে। এ ধারণা সম্পুর্ণ ভুল। এরূপ যারা করেছেন তাদেরকে বিগত বছরগুলোর অনাদায়ী জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে। অন্যথায় গোনাহগার হতে হবে।

ভাড়ায় প্রদত্ত জিনিস
ভাড়ায় খাটানো ঘর- বাড়ি, দোকান-গাড়ি, যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি বা অন্যকোনো জিনিসের ক্ষেত্রে বিধান হলো- মূল জিসিনটির জাকাত দিতে হবে না; বরং ভাড়ায় উপার্জিত টাকা বা মেশিন থেকে উৎপাদিত বস্তুর মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে তবে বছরান্তে জাকাত আদায় করতে হবে।

কর্জ প্রদত্ত টাকা
কাউকে টাকা কর্জ দিয়ে রাখলে সে টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত তার জাকাত দিতে হবে না। যখনই ফিরে পাওয়া যাবে, তখন বিগত বছরগুলোর জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে, অন্যথায় নয়।

প্রভিডেন্ট ফান্ড
প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা যাখন হাতে আসবে, তখন থেকে বছরান্তে জাকাত দিতে হবে। হাতে আসার পূর্ববর্তী বছরসমূহের জাকাত আদায় করা জরুরি নয়।

বিগত বেতন
চাকরির বেতন, যা কয়েক বছর যাবৎ বাকি রয়ে গিয়েছিল, তা উসূল হওয়ার পূর্ববর্তী বছরসমূহের জাকাত আদায় করা ফরজ হবে না।

বিমা কোম্পানিতে জমাকৃত টাকা
প্রিমিয়াম হিসেবে যে টাকা বিমা কোম্পানিতে জমা করা হয়েছে, প্রতি বছর হিসাব করে তার জাকাত দিতে হবে। ব্যাংকে জমাকৃত টাকারও অনুরূপ জাকাত দিতে হবে।

শরিকানা কারবার
শরিকানা কারবারে লাগানো টাকার জাকাত দিতে হবে। শরিকের অন্যরা যদি জাকাত নাও আদায় করে তবুও নিজের অংশের জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে।

জরুরি পরামর্শ
প্রত্যেক সম্পদশালী লোকের কর্তব্য হলো- চান্দ্রমাস হিসেবে কোনো একটা মাসকে বছরের শুরু বলে ধার্য করে নেওয়া এবং এই শুরু থেকে বার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার হিসাব রেখে নিজের জাকাত দেওয়ার উপযোগী মালের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব করে জাকাত আদায় করা। এ কাজের সুবিধার জন্য প্রতি রমজান মাসকে বছর শুরু ধার্য করাই উত্তম। রমজান মাস থেকে পরবর্তী শাবান মাসে এক বছর পূর্ণ হবে। এতে জাকাত আদায় করার কাজটা পবিত্র মাহে রমজানে সমাধা করা যায়। ফলে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়ার সুযোগ হয়।

একটি ভুল ধারণার অপনোদন
অনেকেই মনে করেন, প্রয়োজনাতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন টাকা হাতে থাকলেই জাকাত বা ফিতরা দিতে হবে; তা ঠিক নয়। আসল কথা হলো- সাড়ে বায়ান্ন (ভরি) রূপা বর্তমান বাজার দর অনুসারে মূল্যের সমান টাকা হাতে থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান বাজারে রূপার দর হলো ২০০ টাকা ভরি। এ হিসেবে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য ১০,৫০০ টাকা। অতএব, অন্ততপক্ষে এই পরিমাণ টাকা অথবা এই মূল্যের প্রয়োজনাতিরিক্ত কোনো সম্পদ হাতে থাকলে নেসাবের মালিক বলে ধরা হবে, অন্যথায় নয়।

জাকাত আদায়ে অবহেলা নয়
আমাদের দেশে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের অনেকে মনোযোগসহকারে যথাযথভাবে হিসাব করে জাকাত আদায় করেন না। সাধারণত দেখা যায়, রমজানের ২৭ তারিখে বেশ কিছু টাকা অথবা শাড়ি-কাপড় গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন, কিন্তু মালের পরিমাণের সঙ্গে মিলিয়ে জাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করেন না। এতে কিন্তু জাকাত আদায় হয় না। অতএব একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আদায় করার মনোভাব নিয়ে যথাযথ হিসাব নিকাশ করে সঠিক পরিমাণ জাকাত সহিশুদ্ধ নিয়তে আদায় করার প্রতি বিশেষ তৎপর হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া দারুল কোরআন, উত্তর দেওয়ানপুর, মেজরটিলা, সিলেট।

   

নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালনে বঞ্চিত হবেন না



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালনে বঞ্চিত হবেন না বলে আশাবাদী বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।

ভিসা না হওয়া হজযাত্রীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তবে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি হজ মৌসুমে নিবন্ধিত সবার ভিসা হবে বলে আমি আশাবাদী। কয়েকটি এজেন্সির হজযাত্রী নিয়ে জটিলতা হচ্ছে, তার অর্ধেকই ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। বাকি কাজ সমাধানের পথে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। ইতোমধ্যে ২৮ হাজার ৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। ৮২ হাজার ১০০ জনের ভিসা ভিসা হয়েছে। এখনও বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ৩ হাজার ৩৩৬ জনের ভিসা হয়নি।

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, পরিচালক, হজ অফিস, ছবি: বার্তা২৪.কম

জানা গেছে, যথাসময়ে ভিসার আবেদন না করায় ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ৫৭০, যাত্রী সংখ্যা ২৮৬), আনসারি ওভারসিস (লাইসেন্স ৬০১, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সি (লাইসেন্স ৬৭২, যাত্রী সংখ্যা ৪৪৪), মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ১০২৫, যাত্রী সংখ্যা ৩৭৫), নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (লাইসেন্স ১০৮৬, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস (লাইসেন্স ১৪৬২, যাত্রী সংখ্যা ২৫০) কে ধর্ম মন্ত্রণালয় শোকজ করে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে ১ হাজার ৮৭৫ জনের চলতি বছর হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

আর আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সির নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কারও ভিসা না করায় বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়ার দেশত্যাগ স্থগিত ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সিসহ অভিযুক্ত এজেন্সির মালিকদের নিয়ে আমরা বসে, পয়েন্ট পয়েন্ট ধরে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস, ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের হজযাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যদেরও হয়ে যাবে। নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালন থেকে বঞ্চিত হবেন না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এমন আশাবাদী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাব সভাপতি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব অংশে যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করা দরকার এজেন্সিগুলো তা পাঠিয়েছে। আর যতটুকু সমস্যা রয়েছে, আশা করি তা সমাধান করা যাবে।

এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি এবার হজে কোনো লোক পাঠাইনি। আকবর হজ গ্রুপের মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী তার লাইসেন্সে সমস্যা হওয়ায় আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে ৪৪৮ জন হজযাত্রী পাঠাচ্ছে। চলতি সমস্যা নিয়ে হাব সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে মুফতি লুৎফর রহমান সৌদি থেকে ফোনে কথা বলেছেন, তিনি আশ্বস্থ করেছেন; আজকালের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জনের ভিসা হয়ে যাবে। আর আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে সবার ভিসা হয়ে যাবে। তিনি মদিনার বাড়ি ভাড়া করেছেন, মক্কার বাড়িও ভাড়া হওয়ার পথে।’

;

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগমুহূর্তে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করলেন বাবা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল হুমাইদি আল হারবি, ছবি: সংগৃহীত

আল হুমাইদি আল হারবি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আগ মুহূর্তে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে দিলেন বাবা। শেষ সময়ে জন্মদাদা বাবার এমন উদারতা দেখে উপস্থিত কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে সৌদি আরবে। খবর গালফ নিউজের।

আল হুমাইদি আল হারবি নামের ওই বাবা হঠাৎ করে দণ্ড কার্যকরের স্থানে যান। সেখানে গিয়ে ঘোষণা দেন, ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তিনি। ওই হত্যাকারীর দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আল হুমাইদি আল হারবির কাছে একাধিকবার গিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা।

কিন্তু ওই সময় তিনি ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে চাননি। কিন্তু পরে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। নিজ ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করার একমাত্র অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন ওই বাবা। সে অনুযায়ী, বিনা শর্তে তিনি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন। এতে করে সেখানে থাকা সবাই বেশ অবাক হন।

আল হারবি জানিয়েছেন, ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও প্রথমে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে চাননি। কিন্তু পরে নিজের মন পরিবর্তন করেন। ছেলের হত্যারকারীকে ক্ষমা করা ওই বাবার এমন উদারতার প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা এটিকে ক্ষমার একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

খবরে প্রকাশ, নিজ গোত্রের প্রতিবেশীর বন্ধুর ছেলের হাতে তার ছেলে খুন হন। দেশটির আইন অনুযায়ী বিচার শেষে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। সৌদি আরবের আইনে রক্তপণ নিয়ে কিংবা অভিভাবক হিসেবে খুনিকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিধান রয়েছে।

সে হিসেবে তিনি ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক আজও আগের মতো।’

তার স্পষ্ট কথা, আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছি। এ বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমার কথা বললেও তার পরিবার ক্ষমা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর আমাদের সম্পর্ক গত ছয় দশকের মতোই আজও আছে। ছেলের খুনের পর যেমন ছিল, এখনও সম্পর্ক তেমনি আছে।

হত্যাকারীর বাবা আবদুল মাজিদ আল হারবি বলেন, আমি নিহতের বাবাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা করি এবং সম্মান করি, তিনি আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি।

;

সৌদিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ মৌসুমে সৌদি আরবে মো. আসাদুজ্জামান নামের এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এটিই এবারের হজে প্রথম কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু।

শনিবার (১৮ মে) হজ পোর্টালের আইটি হেল্পডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, ১৫ মে আসাদুজ্জামান মদিনায় মসজিদে নববীতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পরেন। পরে তাকে কিং সালমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার ৭ নম্বর মাসকা ইউনিয়নের সাতাশী গ্রামের বাসিন্দা মো. আসাদুজ্জামান।

এদিকে শুক্রবার (১৭ মে) রাত ৩টা পর্যন্ত ২৭ হাজার ১১১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। অন্যদিকে এখনো ৪ হাজার ২৫৬ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হয় গত ৯ মে। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত যাওয়ার ফ্লাইট চলবে। হজ শেষে ২০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই।

;

সৌদি পৌঁছেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ থেকে চলতি মৌসুমে হজ পালন করতে ২৪ হাজার ২৩৬ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ২০ হাজার ৪৮৯ জন। এখন পর্যন্ত ৭৯ হাজার ৯০১টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) হজ সম্পর্কিত সর্বশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

বুলেটিনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৬১টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২১টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২০টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

হেল্পডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্য মতে, হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার প্রথম ফ্লাইট শুরু হয় গত ৯ মে। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত যাওয়ার ফ্লাইট চলবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজ শেষে ২০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। এবার সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ করতে যাবেন।

দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এবার হজ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এজেন্সির সংখ্যা ২৫৯টি।

;