ফি ফি আইল্যান্ডে মুসলিম স্ট্রিট ফুড জনপ্রিয় যে কারণে
ইসলাম
থাইল্যান্ডের ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণপিপাসুদের একটি পছন্দের গন্তব্য। নীল স্বচ্ছ জলরাশি, স্নরকেলিং এবং স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য দ্বীপটি বিখ্যাত। ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ ছয়টি ছোট ছোট দ্বীপে ফি ফি ডন, ব্যাম্বু দ্বীপ, বিদা নোক, ফি ফি লেই, ইয়াং দ্বীপ এবং বিদা নাই-এর সমন্বয়ে গঠিত। মানুষজন সাধারণত হাফ ডে, ডে ট্রিপ বা প্রাইভেট বোট ভাড়া করে এই দ্বীপগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকে।
ফি ফি দ্বীপপুঞ্জে সারা বছর গড় তাপমাত্রা থাকে ২৪ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যটন মৌসুম। দ্বীপটি ছোট হওয়ার কারণে কোনো গণপরিবহনের ব্যবস্থা নেই, তাছাড়া সবকিছুই হাঁটার দূরত্বে। এই দ্বীপে থাই মুসলিম জনগোষ্ঠী বেশি।
বিজ্ঞাপন
দ্বীপটির আয়তন ১২.২৫ কিলোমিটার। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক এই ছোট্ট দ্বীপ ভ্রমণ করেন। এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে মুসলিম পরিবারের লোকজন হরেক রকম খাবার পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এই দ্বীপে মুসলিম স্ট্রিট ফুড বেশ জনপ্রিয়।
স্থানীয় আইন এবং ফি ফি আইল্যান্ডে হালাল খাবার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হয়। সেই সঙ্গে খাদ্য প্রস্তুতকারীকে অবশ্যই খাবারের উপাদানগুলোর উত্স হালাল এবং হালাল সার্টিফিকেটপ্রাপ্তদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এমনকি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও এগুলো অ-হালাল পণ্য থেকে পৃথক করে বহন করতে হয়। এ ছাড়া খাদ্যপণ্য প্রস্তুত, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং ও পরিবহনের সময় পণ্যটি অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং যেকোনো অ-হালাল উপাদান থেকে মুক্ত হওয়া আবশ্যক।
বিজ্ঞাপন
ফি ফি আইল্যান্ডের দ্বীপে মুসলিম স্ট্রিট ফুড প্রস্তুতের ক্ষেত্রে যেহেতু খাদ্যপণ্যের কঠোর নৈতিক মান বিবেচনা করা হয়, তাই অনেক লোক নিজেরা মুসলিম না হওয়া সত্ত্বেও এসব হালাল খাদ্য গ্রহণ করেন। তাদের বিশ্বাস, হালাল খাদ্য অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা প্রদান করে। যেহেতু হালাল খাবারে, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই এসব খাবারে খাদ্য দূষণের হার কম।
ফি ফি দ্বীপে মুসলিম স্ট্রিট ফুড জনপ্রিয় হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে পশুদের ভালো যত্ন নেওয়া হয় এবং স্বাস্থ্যকর এবং পরিষ্কার ফিড দিতে হয়। কৃষকরা অ্যান্টিবায়োটিক এবং কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করতে পারেন না। যেসব মুসলিম খাবার তৈরি করেন, তারাও এই নিয়ম কঠোরভাবে পালন করেন।
দ্বীপে কোনো অসুস্থ প্রাণী জবাই করার অনুমতি নেই, তাই রোগমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রাণীর গোশত ব্যবহার করা হয় খাবার প্রস্তুতের ক্ষেত্রে। ইসলামিক জবাই পদ্ধতিতে, মৃতদেহ থেকে রক্ত সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায়। হালাল গোশত শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকরই নয়, এর স্বাদও ভালো। কারণ এটি রক্তের অনুপস্থিতির কারণে এটিকে দীর্ঘতর সতেজ রাখে, এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী করে তোলে।
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত একটি আরব দেশ। এটি পশ্চিম এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রতিবেশী দেশগুলো হলো- উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরাক, দক্ষিণে জর্দান, পশ্চিমে লেবানন ও ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ইসরায়েল (জোলান মালভূমি)।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক (Damascus) বিশ্বের প্রাচীনতম অব্যাহতভাবে বসবাসকৃত শহরগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির মোট আয়তন এক লাখ ৮৫ হাজার ১৮০ বর্গকিলোমিটার (৭১,৪৯৮ বর্গমাইল)। এটি বিশ্বব্যাপী আয়তনের দিক থেকে মাঝারি আয়তনের একটি দেশ।
সিরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস অনুসারে ২০১১ সাল থেকে যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। ১৩ বছর যুদ্ধে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।
আর জাতিসংঘের হিসাবে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে নারী, শিশুসহ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। তবে সংস্থাটি বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের হিসাবে, সিরিয়া যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
সিরিয়ায় খ্রিস্টান, ইহুদি ছাড়াও সুন্নি, কুর্দি, শিয়া, শিয়া ইসমাইলিসহ বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় বসবাস করেন।
সিরিয়ায় মুসলমানদের বিজয় পতাকা উড়েছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সময়কালে।
হাদিসে মুলকে শামের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আর সিরিয়া শামের একটি অংশ। সিরিয়া শামের প্রাচীন অংশ হওয়ায় ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়ভাবে এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। ইসলামে একে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শাম শব্দটি আরবি ভাষায় একটি বিস্তৃত অঞ্চলকে বোঝায়, যা প্রাচীনকালে লেভান্ট (Levant) নামে পরিচিত ছিল। এটি বর্তমানের বেশ কয়েকটি দেশ নিয়ে গঠিত। সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন (যার মধ্যে রয়েছে বর্তমান ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর)।
মুলকে শাম পবিত্র ও বরকতময় ভূমি, যা ইসলামের ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই অঞ্চলের প্রতি ভালোবাসা এবং এর শান্তিময় হওয়ায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসগুলোতে পাওয়া যায়। তিনি এসব অঞ্চলের জন্য দোয়া করেছেন। পবিত্র মক্কা-মদিনার পর যা অন্যকোনো দেশের ব্যাপারে বলা হয়নি। অনেক নবী-রাসুল, সাহাবায়ে কিরাম ও বুজুর্গদের ভূখণ্ড হিসেবে প্রসিদ্ধ এই দেশ।
শেষ যুগে শামকে ইসলামের পুনর্জাগরণ ও সংঘর্ষের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ওই ফেতনার সময় নবী কারিম (সা.) শামে অবস্থান করার কথা বলেছেন।
হজরত সালিম ইবনে আবদুল্লাহ তার পিতা আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের আগে হাজরামাওত (কিংবা হাজরামাওতের সমুদ্রের দিক থেকে) থেকে অবশ্যই একটি আগুন বের হবে এবং লোকদের একত্র করবে। সাহাবিরা বলেন, তখন আমাদের কি করার নির্দেশ দেন, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তখন তোমরা শাম অঞ্চলকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো। -জামে তিরমিজি : ২২১৭
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, শামে যদি দুর্যোগ হয়- তাহলে এটি পুরো বিশ্ববাসীর জন্য অশনিসংকেত এবং শামে সর্বদা আল্লাহতায়ালার একটি দল সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। হজরত মোয়াবিয়া ইবনে কুররা তার পিতা কুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শামবাসীরা যখন খারাপ হয়ে যাবে তখন আর তোমাদের কোনো মঙ্গল নেই। আমার উম্মতের মধ্যে একদল সব সময় বিজয়ী থাকবে, তাদের যারা লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করবে তারা কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। -জামে তিরমিজি : ২১৯২
আমাদের উচিত শামের বরকত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করা। শামের জন্য দোয়া করা, কারণ এটি একটি পবিত্র স্থান। শামের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা এবং তাদের সাহায্য করা।
সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বিজয় ভাষণে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি (এখন প্রকৃত নাম আহমেদ আল-শারা ব্যবহার করছেন) দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদ থেকে বক্তব্য দেন। তিনি সিরিয়ার জনগণকে বলেন, নতুন দেশ গড়তে হবে ‘কঠোর পরিশ্রমে।’
সিরিয়ার স্বাধীনতাকামী প্রধান সংগঠন হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) এর নেতা আল-জোলানি বলেন, বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সিরিয়ার জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক এবং এ বিজয়ের মাধ্যমে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নতুন ইতিহাস লেখা হয়েছে।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দামেস্ক দখলের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছে আল-জোলানি ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে বিজয় ভাষণ দেন। উমাইয়া মসজিদে তার ভাষণের আগে স্থানীয় জনতা তাকে মুক্তির প্রতীক হিসেবে স্বাগত জানায়।
যুদ্ধের আবহে ভোরে যখন সূর্যের আলো ফুটে উঠল, তখন সিরিয়ার জনগণ একটি নাটকীয় পরিবর্তিত দেশে ঘুম থেকে জাগে। মুক্তিকামী বাহিনী দ্রুত আক্রমণের মাধ্যমে দামেস্কে প্রবেশ করে এবং দুই যুগের বেশি সময় ধরে জগদ্দল পাথর হয়ে সিরিয়ার মসনদে বসে থাকা স্বৈরাচারী বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেয়। আসাদ ভোরের প্রথম প্রহরে সিরিয়া ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যায় বলে রাশিয়ান মিডিয়ার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
উমাইয়া মসজিদে জড়ো হওয়া জনতার উদ্দেশে আল-জোলানি বলেন, ‘আসাদ অন্যায়ভাবে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে কারাগারে আটকে রেখেছে। আমরা সিরিয়ার জনগণ এই দেশের প্রকৃত মালিক। আমরা লড়াই করেছি, আজ আমরা এই বিজয়ের পুরস্কার পেয়েছি। সিরিয়ার কত মানুষ বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে? কত মানুষ তাঁবুতে বসবাস করেছে? কত মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে? তার হিসাব নেই। আমার ভাইয়েরা! এই মহান বিজয়ের পর পুরো অঞ্চলে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে। একটি নতুন সিরিয়া গড়তে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে যা মুসলিম উম্মাহর জন্য আলোর বাতিঘর হবে।’
তিনি প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই বিজয়ের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। দয়াময় আল্লাহ আপনাদের ব্যর্থ করবেন না। এই বিজয় সব সিরিয়ানের, সবাই এই বিজয়ের অংশীদার।’
বক্তব্যে আল-জোলানি ঐক্যের ওপর জোর দেন। উমাইয়া মসজিদে দেওয়া ভাষণের ছত্রে ছত্রে এটা প্রতিফলিত হয়েছে।
লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জেইন বাসরাভি বলেন, এইচটিএস নেতার ভাষণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। তিনি এই ধারণার ওপর জোর দিয়েছেন যে, প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়। সিরিয়া সব সিরিয়ানের জন্য হওয়া উচিত, এটাই জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত।
রবিবার দামেস্কে পৌঁছে আল-জোলানি প্রথমে নামাজ আদায় করেন। পরে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পাঠ করা এক বিবৃতিতে আল-জোলানি বলেন, ‘আমরা বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় সংকল্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ২০১১ সালে শুরু করা পথ সম্পন্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সিরিয়ার জনগণের সমস্ত অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই বন্ধ করব না। ভবিষ্যৎ আমাদের এবং আমরা বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
রবিবারের এই জয় ১৩ বছরের নৃশংস যুদ্ধের পর আসে, যা আল-আসাদ পরিবারের অর্ধ শতাব্দীর শাসনেরও অবসান ঘটায়।
সিরিয়ার যুদ্ধ ২০১১ সালের মার্চ মাসে আল-আসাদের বিরুদ্ধে একটি মূলত নিরস্ত্র বিদ্রোহ হিসাবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হয়। এতে বিদেশি শক্তিগুলোর জড়িত হওয়া, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং শরণার্থী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এটা মোটেও আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, তিনি তার বার্তা প্রদানের জন্য দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদকে বেছে নেন। কোনো টিভি স্টুডিও বা সদ্য খালি হওয়া প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ নয়, বরং এক মহিমান্বিত ধর্মীয় স্থান। ১৩০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদ বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি এবং ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
তার ভাষণে সদ্য মুক্ত হওয়া সিরিয়ান জনগণের জন্যও একটি প্রতীকী বার্তা বহন করে। যাতে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা! এই বিজয় এসেছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কৃপায় এবং শহীদ, বিধবা ও এতিমদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। যারা কারাগারে দুর্বিষহ দিন কাটিয়েছে, তাদের কষ্টের মধ্য দিয়ে আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি।’
উমাইয়া মসজিদ থেকে আল-জোলানি একটি শক্তিশালী এবং সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি একজন সুন্নি মুসলিম, যারা সিরিয়ার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। কিন্তু সিরিয়ার এই মাটি খ্রিস্টান, দ্রুজ, শিয়াসহ ইসমাইলি সম্প্রদায়েরও আবাসস্থল। সবাই এই বিজয়ের অংশীদার
তবে এই ভাষণ শুধুমাত্র সিরিয়ানদের জন্য নয়, এটি ছিল আন্তর্জাতিক মহলের জন্যও। এটি এমন একটি বার্তা, যা ইরায়েলের তেলআবিব এবং ওয়াশিংটনে পৌঁছাবে। যেখানে জোলানি এখনও একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা হিসেবে চিহ্নিত এবং যার মাথার দাম ১০ মিলিয়ন ডলার।
উমাইয়া মসজিদের অবস্থান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে। এটি গ্রেট মস্ক অব দামাসকাস নামেও পরিচিত। এটি শুধুমাত্র একটি মসজিদ নয় বরং পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং অতি মূল্যবান একটি সম্পদ বা স্থাপনা।
বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্য আদি অবকাঠামোর ওপর এখনো টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম এটি। এর বয়স ১৩শ’ বছরের বেশি। এ মসজিদকে ইসলামি স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম পথিকৃত হিসেবে বিবেচনা করা হয় সারাবিশ্বে। এ মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে হজরত ইয়াহইয়া (আ.)-এর কবর।
এ ছাড়া ক্রুসেডের সময় জেরুজালেম বিজয়ী বীর সালাহউদ্দিন আইয়ুবীসহ তার বংশধরদেরও অনেকের কবর রয়েছে এ মসজিদের পাশে। বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এ মসজিদে বসে কোরআনে কারিমের ব্যাখ্যা করতেন মানুষের কাছে।
যে স্থানে উমাইয়া মসজিদ অবস্থিত, ওই স্থানটি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশেষ করে মূর্তি পূজারীদের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের হাজার বছর আগে থেকে বিভিন্ন দেবতার উপাসনা করা হতো এখানে। দীর্ঘকাল ধরে এখানে ছিল রোমনাদের জুপিটার মন্দির। পরে ৩৯১ সালে জুপিটার মন্দিরকে খ্রিস্টান চার্চে পরিণত করা হয়। পরে এ চার্চ হজরত ইয়াহইয়া (আ.)-এর নামে উৎসর্গ করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যামন উপাসনালয় এবং পরবর্তীতে মসজিদ নির্মাণের পরে এখানে থাকা অনেক মূল্যবান প্রত্ন নিদর্শন বর্তমানে সিরিয়ার জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
৬৩৪ সালে খালিদ ইবনে আল ওয়ালিদের নেতৃত্বে দামেস্ক জয় হয়। ৬৬১ সালে ইসলামি খেলাফত উমাইয়া বংশের অধীনে আসে। এরপর দামেস্ক হয় মুসলিম বিশ্বের প্রশাসনিক রাজধানী। ষষ্ঠ উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদ ৭০৫ সালে এখানে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।
এ মসজিদ যখন নির্মাণ করা হয় তখন এটি ছিল বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প। ভারত, ইরান, গ্রিস ও মরক্কো থেকে ১২ হাজার দক্ষ কারিগর সংগ্রহ করা হয় এর স্থাপত্যশৈলীর জন্য। এ ছাড়া বাইজানটাইন কারিগরদের নিয়োজিত করা হয় এর মোজাইকের কাজে। ৭১৫ সালে শেষ হয় মসজিদ নির্মাণ।
৭৫০ সালে উমাইয়াদের পতনের পর আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় আসে এবং ইসলামি খেলাফতের রাজধানী হয় বাগদাদ। আব্বাসীয়দের সময়ও এ মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মিসরের ফাতিমিদের দখলে আসে এ শহর। এরপর আবার তুরস্কের সেলজুক রাজার মাধ্যমে উদ্ধার হয় এ শহর। এরপর ক্রুসেডের সময়ও এ শহরের আধিপত্য নিয়ে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে লড়াই চলে এবং শেষ পর্যন্ত নুরউদ্দিন জঙ্গি দখল করেন এ নগরী। পরে সুলতান সালাহউদ্দিন আইউবী, তার কাছ থেকে মামলুক এবং মামলুকদের কাছ থেকে তুরস্কের উসমানীয়রা ১৫১৬ সালে দখলে নেয় এ নগরী।
দখল-পাল্টা দখলে বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ মসজিদ। বিশেষ করে ১৪০০ সালে তিমুর দামেস্ক নগরী পুড়িয়ে দেওয়ার আদেশ দিলে মসজিদের মূল গম্বুজসহ একটি মিনার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। বিভিন্ন সময় এ মসজিদ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি বিভিন্ন সময় মুসলিম শাসকরা এ মসজিদের সংস্কারও করেন। উসমানীয়দের পর সর্বশেষ বড় আকারে এ মসজিদ সংস্কার করেন সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদ।
১৩ শ’ বছর পার হলেও এখনো এ মসজিদের আদি অলঙ্করণ এবং সাজসজ্জা অমলীন যা মুগ্ধ করে দর্শকদের। এ মসজিদ সিরিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
এ মসজিদের পাশে অনেক বীরযোদ্ধার কবর রয়েছে। ২০০১ সালে দ্বিতীয় পোপ জন পল পরিদর্শন করেন এ মসজিদ। মসজিদের তিনটি মিনারের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু ঈসা মিনার ২৫৩ ফিট।
পারস্য ইতিহাসবিদ ইবনে আল ফকিহ লিখেছেন, ৭০৫ সালে মসজিদ নির্মাণ শুরুর পর খননের সময় এর নিচে একটি গোপন বাক্সে রক্ষিত একটি মস্তক পাওয়া যায়। এ মস্তক হজরত ইয়াহইয়া (আ.)-এর বলে বিশ্বাস। খলিফা প্রথম ওয়ালিদ এটি জানার পর তিনি মস্তকটি মসজিদের মধ্যে সমাহিত করে তার ওপর একটি বিশেষ পিলার নির্মাণের নির্দেশ দেন। পরে এ স্থানে মাজার ও গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। হজরত ইয়াহইয়া (আ:)-কে খ্রিস্টানরাও তাদের নবী দাবি করে। সে কারণে এ মসজিদ খ্রিস্টানদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া আগে থেকেই এখানে ছিল তাদের চার্চ।
বর্তমান সময়ের সিরিয়া, জর্দান, লেবানন ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে প্রাচীনকালে ‘মুলকে শাম’ বলা হতো। শাম মূলত নবী-রাসুলদের ভূখণ্ড। কোরআন-হাদিসের একাধিক জায়গায় এর ফজিলতের কথা এসেছে।
এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি, এই ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি।’ -সুরা আরাফ : ১৩৭
অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা এর বরকত সম্পর্কে বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনকারী।’ -সুরা বনি ইসরাঈল : ১
সব মোফাসসির এ বিষয়ে একমত যে, উল্লেখিত আয়াতে ‘পবিত্র ভূমি’ এবং ‘বরকতময় ভূমি’ দ্বারা শামের ভূমিই উদ্দেশ্য।
আর আয়াতে বরকত দ্বারা কেউ বেলেছেন, এখানে দুনিয়ার বরকত উদ্দেশ্য। যেমন- এই পবিত্র ভূখণ্ড সর্বদা অধিক পরিমাণে আহার্য, ফলমূল, নদী-নালা, খাদ্যশস্য ও রিজিকের প্রশস্ততায় পরিপূর্ণ থাকবে। আর কেউ বলেছেন, এখানে বরকত দ্বারা দ্বিনের বরকতে ধন্য হওয়া উদ্দেশ্য। কারণ এখানে বহুসংখ্যক নবী-রাসুল বসবাস করেছেন, এখানেই ফেরেশতারা তাদের কাছে আসমানি অহি নিয়ে অবতরণ করেছেন।
তবে বিশুদ্ধ মত হলো, এখানে দ্বিন-দুনিয়া উভয় দিকের বরকতই রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, নবী কারিম (সা.) শামের জন্য দোয়া করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের শাম দেশে ও ইয়েমেনে বরকত দান করুন।’ -সহিহ বোখারি : ১০৩৭
তা ছাড়া বরকতময় এই ভূমিকে আল্লাহতায়ালা অনেক মর্যাদা দান করেছেন। তার কয়েকটি হলো-
হাশরের ময়দান হবে শাম ইমাম কুরতুবি, ইবনে কাসির ও ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, শাম হলো হাশরের ভূমি। প্রথমবার ইহুদিদের শামে বহিষ্কার করার দ্বারা প্রথম হাশর সংঘটিত হয়েছে।
আর দ্বিতীয়বার সেখানেই সমগ্র মানবজাতির জন্য হাশরের ময়দান হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, হাকিম বিন মুয়াবিয়া (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে (তোমরা একত্র হবে)। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। তখন লোকেরা আরোহী, পদাতিক ও অধঃমুখী এই তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ইবনে বুকাইর (রহ.) বলেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে বলার সময় তিনি শাম দেশের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। -মুসনাদে আহমদ : ৩৩/২১৪)
যেখানে ফেরেশতারা নিজের ডানাকে ছড়িয়ে দেন ফেরেশতারা শামের ওপর নিজের ডানা দিয়ে আবৃত করে রাখেন, যা এই ভূখণ্ডের মাহাত্ম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। হজরত জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, শামের জন্য সৌভাগ্য, শামের জন্য মারহাবা! আমি বললাম, শামের জন্যই কেন? তিনি উত্তর দিলেন, ফেরেশতারা শামের ওপর নিজের ডানা ছড়িয়ে দেন। -জামে তিরমিজি : ৩৯৫৪
আল্লাহতায়ালা শাম ও তার অধিবাসীদের দায়িত্ব নিয়েছেন ইবনু হাওয়ালা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শিগগিরই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, যখন জেহাদের জন্য তিনটি সেনা দল গঠিত হবে- সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনু হাওয়ালা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙ্গী হওয়া মঙ্গলজনক মনে করেন? তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কেননা তখন এই এলাকাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম গণ্য হবে। আল্লাহ তার সত্কর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর তুমি সিরিয়া যেতে রাজি না হলে অবশ্যই ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর সঙ্গী হবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কূপগুলো থেকে পানি উত্তোলন করো। কেননা মহান আল্লাহ আমার অসিলায় সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ : ২৪৮৩
শাম হবে কোরআন ও ইসলামের ঘাঁটি হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি (দিব্যদৃষ্টি বা স্বপ্নে) দেখলাম যে কিতাবুল্লাহকে আমার বালিশের নিচ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। অতঃপর আমি স্পষ্টরূপে দেখলাম যে তা যেন এক উজ্জ্বল আলোতে রূপান্তরিত হলো, যার উৎস শাম থেকে। জেনে রেখো! যখন ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে তখন ঈমান শামেই অবস্থান করবে এবং কিতাবুল্লাহ এবং ইসলামের মজবুত ঘাঁটিও সেখানেই থাকবে। আর শামবাসীরা তার হেফাজতে অবিচল থাকবে। -মুসতাদরাকে হাকিম : ৫/৭১২-১১৩
আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত দল শামে অবস্থান করবে নবী কারিম (সা.)-এর বর্ণিত সাহায্যপ্রাপ্ত বিজয়ী দলটি শামেই অবস্থান করবে। হজরত মোয়াবিয়া ইবনু কুররা (রহ.) তার বাবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শামবাসীরা খারাপ হয়ে যাবে তখন তোমাদের আর কোনো কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সব সময়ই সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে। যেসব লোক তাদের অপমানিত করতে চায় তারা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। -জামে তিরমিজি : ২১৯২
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পশ্চিম দেশীয়রা বরাবর হকের ওপর বিজয়ী থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। -সহিহ মুসলিম : ৪৮৫২
ইমাম নববি পশ্চিম দেশীয়ের ব্যাখ্যা করেছেন, আরব বা শামবাসী। -মুখতাসারু শরহে মুসলিম : ৫/১৮৫
ইমাম আহমদ ও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এই মতটি সমর্থন করেছেন।
শামে অবস্থানের জন্য নবীর অসিয়ত নবী কারিম (সা.) তার উম্মতকে শামে অবস্থানের জন্য অসিয়ত করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের আগে হাজরামাউত সাগর বা এলাকা থেকে আগুন বের হয়ে মানুষকে এক জায়গায় একত্র করবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে তখন আমাদের প্রতি আপনার নির্দেশ কী? তিনি বললেন, তখন শামের ভূমিকে আঁকড়ে ধরবে। -মুসনাদে আহমদ : ৯/১৪৫
শাম সর্বোত্তম আবাসভূমি নবী কারিম (সা.) শামের প্রশংসা করেছেন এবং তাকে সর্বোত্তম আবাসভূমি বলে আখ্যা দিয়েছেন। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যুদ্ধের দিন মুসলিমদের শিবির স্থাপন করা হবে ‘গূতা’ নামক শহরে, যা সিরিয়ার সর্বোত্তম শহর দামেস্কের পাশে অবস্থিত। -সুনানে আবু দাউদ : ৪২৯৮
শাম হলো ঈসা নবীর অবতরণের স্থান হজরত ইসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর অবতরণের স্থান হলো- শাম। নাওয়াস বিন সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ঈসা ইবনে মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দুজন ফেরেশতার কাঁধের ওপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রঙের জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেস্ক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। -সহিহ মুসলিম : ৭২৬৩
শামেই আল্লাহর শত্রু দাজ্জালকে হত্যা করা হবে শামেই ঈসা (আ.)-এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। হাদিস শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করা মাত্র নামাজের সময় হবে। অতঃপর ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন এবং নামাজে তাদের ইমামতি করবেন। আল্লাহর শত্রু (দাজ্জাল) তাকে দেখামাত্রই বিচলিত হয়ে যাবে, যেমন- লবণ পানিতে মিশে যায়। যদি ঈসা (আ.) তাকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সে-ও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহতায়ালা হজরত ঈসা (আ.)-এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আ.)-এর বর্শায় তিনি তাদের দেখিয়ে দেবেন। -সহিহ মুসলিম : ৭১৭০
শাম খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান হলো শামের পবিত্র ভূমি। হজরত সালামা বিন নুফাইল (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, জেনে রেখো! মুমিনদের বাসভূমির উৎস হবে শাম। -মুসনাদে আহমদ : ২৮/১৬৫
কেয়ামতের আগে শাম হবে নিরাপদ ও ফেতনামুক্ত কেয়ামতের আগে শাম নিরাপদ ও ফেতনামুক্ত থাকবে। ইমাম ইবনে আসির (রহ.) বলেন, ইসলামের মূল উৎস হবে শাম। যেন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ফেতনার যুগের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ শাম তখনো নিরাপদ থাকবে এবং মুসলিমরা সেখানে ফেতনামুক্ত থাকবে। -আন নিহায়া ফি গরিবিল : ৩/২৭১