পবিত্র মেরাজ ও মসজিদে আকসা



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
পবিত্র কাবা ও বায়তুল মোকাদ্দাস, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র কাবা ও বায়তুল মোকাদ্দাস, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কোরআন-হাদিসের বর্ণনানুযায়ী জানা যায়, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সশরীরে বোরাকে আরোহণ করে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে মসজিদে হারাম থেকে প্রথমে বায়তুল মোকাদ্দাস (বায়তুল মাকদাস) পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। নবী করিম (সা.) সেখানে মসজিদের খুঁটির সঙ্গে বোরাক বেঁধে যাত্রাবিরতি করেন এবং সব নবীর ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করেন।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ১

পবিত্র হাদিসে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখতে পাই। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মেরাজ শেষে যখন আমি মক্কায় ফিরলাম, তখন আমার ধারণা হলো, এ ঘটনা বর্ণনা করলে মানুষ আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং তারা এটা অস্বীকার করবে। এরপর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) চিন্তিত হয়ে বসে থাকলেন। আল্লাহর দুশমন আবু জেহেল তার কাছ দিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখে তার কাছে গিয়ে বসল এবং বিদ্রূপের স্বরে সে তাকে জিজ্ঞেস করল- ওহে, তোমার নতুন কিছু হয়েছে কি? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, হ্যাঁ।

সে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, রাতে আমাকে ভ্রমণ করানো হয়েছে। সে জিজ্ঞেস করল, কোন পর্যন্ত? তিনি বললেন, বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত। আবু জেহেল বলল, বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করে আবার তুমি আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথা অস্বীকার করা সমীচীন মনে করল না, কারণ তার আশঙ্কা হলো, মানুষের সমাবেশে হয়তো তিনি এ কথা অস্বীকার করে ফেলবেন।

তখন সে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, আমি যদি তোমার কওমকে ডেকে একত্র করি, তবে তাদের সামনেও কি তুমি এ কথা বলবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে উচ্চস্বরে ডাক ছাড়ল, হে বনু কাব ইবনে লুওয়াই গোত্রের লোকেরা! তার এ চিৎকার শুনতেই সবাই সেখানে জড়ো হলো। আবু জেহেল বলল, তুমি আমাকে যে কথা বলেছ, এখন সবার সামনে তা বলো। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমাকে রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছে। তারা জিজ্ঞাসা করল, কোন পর্যন্ত? তিনি বললেন, বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত।

তারা বলল, বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করে আবার তুমি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এ কথা শুনে বিস্ময়াভিভূত হয়ে কেউ কেউ তালি বাজাতে লাগল, আর কেউ কেউ মিথ্যা কথা মনে করে মাথায় হাত দিয়ে বলল- আচ্ছা, তুমি কি বায়তুল মোকাদ্দাসের কিছু অবস্থা বলতে পারো? তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন ছিল, যারা বায়তুল মোকাদ্দাস ভ্রমণ করেছে এবং মসজিদও দেখেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি বায়তুল মোকাদ্দাসের বর্ণনা দিতে লাগলাম; কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আমার সন্দেহ হতে লাগল। আল্লাহতায়ালা নিজ কুদরতে বায়তুল মোকাদ্দাসকে আমার সামনে হাজির করে দিলেন এবং তাকে আকিলের ঘরের কাছে রেখে দিলেন আর আমি তা দেখে দেখে তার অবস্থা বর্ণনা করতে লাগলাম। এ ব্যবস্থা এ কারণে করা হয়েছিল যে মসজিদের কোনো কোনো অবস্থা আমার মনে ছিল না। তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম! মুহাম্মদ (সা.) তো বায়তুল মোকাদ্দাসের সব অবস্থা ঠিক ঠিক বর্ণনা করেছে। ইমাম নাসাই আওফ ইবনে আবু জামিলা থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

আকসা মসজিদের দরজা আটকে যাওয়ার ঘটনা
হাফিজ আবু নুয়াইম ইস্পাহানি দালায়েলুন নবুওয়ত গ্রন্থে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রোম সম্রাট হিরাকলের কাছে হজরত দাহ্ইয়া কালবি (রা.)-কে দূত হিসেবে প্রেরণ করলেন। তিনি হিরাকলের কাছে পৌঁছলেন। এরপর হিরাকলে সিরিয়ায় অবস্থানরত আরবের ব্যবসায়ীদের ডাকলেন। আবু সুফিয়ান দুখর ইবনে হারবকে ও সঙ্গীদের হাজির করা হলো। এরপর তিনি সেসব প্রশ্ন করলেন, যার উল্লেখ বোখারি ও মুসলিম শরিফে রয়েছে।

আবু সুফিয়ান হিরাকলের সামনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হেয়প্রতিপন্ন করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, আল্লাহর কসম! হিরাকলের সামনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হেয়প্রতিপন্নকারী কোনো কথা বলতে এই ভয় ছাড়া অন্য কোনো জিনিস আমাকে বাধা দেয়নি যে হয়তো তার সামনে আমার মিথ্যা ধরা পড়ে যাবে এবং তার কাছে আমার আর কোনো কথাই গ্রহণযোগ্য হবে না। এমন সময় হঠাৎ তার মেরাজের কথাটি আমার মনে পড়ল এবং বললাম, সম্রাট! আপনাকে আমি এমন একটি খবর কি দেব না, যা আপনার কাছে তার মিথ্যা প্রমাণিত হবে? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সেটা কি? তখন আমি বললাম, তিনি বলেছেন, তিনি আমাদের ভূখণ্ড মসজিদে হারাম থেকে আপনাদের মসজিদে ইলিয়া পর্যন্ত একই রাতে ভ্রমণ করে ভোর হওয়ার আগেই ফিরে গেছেন।

আবু সুফিয়ান বলেন, আমার কথা শোনামাত্রই বায়তুল মোকাদ্দাসের পাদরি বলে উঠলেন, এটা সম্পূর্ণ সত্য। তখন রোম সম্রাট কায়সার তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি এটা কিভাবে জানেন? তিনি বললেন, আমি মসজিদের দরজাগুলো বন্ধ করার আগে ঘুমাতে যাই না। কিন্তু সেই রাতে একটি দরজা ছাড়া সব দরজা আমি বন্ধ করে দিই। কিন্তু ওই দরজাটি আমি কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারিনি। তখন আমি আমার অন্যান্য কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনের সাহায্য নিলাম। কিন্তু সবাই জোর খাটিয়েও দরজা তার স্থান থেকে সরাতে পারল না। যেন কোনো পাহাড় সরাচ্ছি বলে মনে হলো। আমি মিস্ত্রি ডাকলাম, তারাও এটা খুব লক্ষ করে দেখল, কিন্তু কোনো উপায়েই তা সরাতে পারিনি এবং সকাল পর্যন্ত মুলতবি রইল।

পাদরি বলেন, আমি দরজাটি খোলাই রেখে দিলাম। ভোরে যখন দরজার কাছে এলাম, তখন মসজিদের পাশে পড়া পাথরটিতে ছিদ্র দেখলাম এবং এতে কোনো পশু বাঁধার চিহ্নও দেখতে পেলাম। তখন আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, আজ রাতে কোনো নবীর আগমনের জন্যই দরজাটি খোলা রাখা হয়েছিল এবং এই মসজিদে অবশ্যই তিনি নামাজ পড়েছেন। -সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির

   

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;

পরনিন্দার পাপ থেকে বাঁচতে যা করবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গিবত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা।

শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। হাদিসের বর্ণনা, ‘যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।’ -সহিহ মুসলিম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।’ -সুরা হুজুরাত : ১২

‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।...অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয় বেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।’ -সুরা হুমাজা : ১-৯

গিবত এমনই ভয়াবহ পাপ। এটা থেকে বেঁচে থাকা মুমিন-মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। গিবত থেকে বাঁচার কিছু উপায় হলো-

১. কারও বিষয়ে হুটহাট করে কিছু না বলা। ভেবে-চিন্তে কথা বলা। যতটুকু সম্ভব কম কথা বলাই ভালো, কারণ- চুপ থাকাও একটা ইবাদত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ -সহিহ বোখারি : ৬০১৮

২. যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। সুতরাং বন্ধু-বান্ধব কিংবা কাছের কোনো আত্মীয়ের অনুপস্থিতিতে তাদের নামে ভালো কথাও না বলা। কারণ ভালো কথা বলা ফাঁকে শয়তান আপনাকে দিয়ে কখন যে গিবত করিয়ে নেবে; সেটা আপনি টেরই পাবেন না।

৩. অতি প্রয়োজন ছাড়া লোকসমাগম এড়িয়ে চলা। কেননা যেখানে মানুষ বেশি থাকে সেখানে গিবতও বেশি হয়।

৪. আপনার কাছে কেউ গিবত করলে তাকে থামিয়ে দেবেন। সম্ভব হলে বুঝিয়ে বলবেন। কারণ গিবত করা ও গিবত শোনা উভয়টাই হারাম।

নিজেও যখন কথা বলতে বলতে গিবত করে ফেলবেন এবং খেয়াল হবে যে, আরে আমি তো গিবত করে ফেলেছি; সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবেন এবং তওবা করবেন।

৫. অমুক কেমন জানি পোশাক পরে, অমুকের রান্না ভালো না, অমুক মোটা, অমুক কালো, দেখতে একদম ভালো না ইত্যাদি- এ ধরনের কথাও গিবত। তাই এ জাতীয় কথা বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।

৬. অমুক এই এই কাজগুলো ভালো করেনি। অমুকের এই-এই স্বভাব ভালো না। অমুকের নামে এই-এই বদনাম আছে। ওমুক আমার এই-এই ক্ষতি করছে। এগুলো বলার অর্থ হলো যে, মানুষের দোষ নিয়ে কথা বলা; যেটা গিবতের অন্তর্ভুক্ত।

৭. এর পরও যদি গিবত হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আস্তাগফিরুল্লাহ অথবা দুই রাকাত নফল নামাজ পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেওয়া।

কাউকে নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা আল্লাহর কাছে বলা। পারলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। মানুষের কাছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে উল্টো নিজের গোনাহ কামানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। অন্যের দোষ ঢেকে রাখলে আল্লাহতায়ালাও এ কারণে আমার-আপনার দোষ ঢেকে রাখবেন- ইনশাআল্লাহ!

মনে রাখবেন, গিবত আমাদের নেক আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

;