রাণী জুবাইদার বিস্ময়কর কীর্তি



উম্মে ইফফাত, অতিথি লেখক, ইসলাম
আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাদদেশে নহরে জুবাইদার অংশবিশেষ, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাদদেশে নহরে জুবাইদার অংশবিশেষ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লোকটি আজই প্রথম খলিফার প্রাসাদে এসেছেন। হেঁটে এসেছেন দজলার পাড় দিয়ে। প্রাসাদে ঢুকতে কোনো সমস্যা হয়নি, স্বয়ং রাণী তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। খাদেমরা তাকে মহলে বসিয়েছে যত্ন করেই। তিনি বসে আছেন। ওপাশের পর্দাটা মৃদু নড়ে উঠল। মৃদুস্বরে সালাম বিনিময় হলো। তারপর আলাপ-

সম্রাজ্ঞী : কেমন আছেন?
আগন্তুক : আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
সম্রাজ্ঞী : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। আপনার খবর বলুন।
আগন্তুক : কাজ সুন্দরভাবে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে ওয়াদি নোমান থেকে আরাফাত ময়দান পর্যন্ত খাল খনন করা হয়েছে। এখন আরেকটি শাখা হুনাইন থেকে মক্কা পর্যন্ত খনন করা হবে। সমস্যা হলো, এই এলাকায় কয়েকটি পাহাড় আছে। পাহাড় কেটেই নহরের কাজ করতে হবে। এতে প্রচুর খরচ হবে।
সম্রাজ্ঞী : আপনি কাজ চালিয়ে যান। খরচ আমি পাঠিয়ে দেব। যদি শ্রমিকদের হাঁতুড়ির প্রতিটি আঘাতের জন্য এক দিনার করে খরচ হয়, তবুও পরোয়া করবেন না। কাজ চালিয়ে যাবেন।
আগন্তুক : আপনি ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছেন না, ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লাখ দিনার খরচ হয়ে গেছে।
সম্রাজ্ঞী : আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আপনি কাজ চালিয়ে যান। আজ থেকে সব হিসাব বন্ধ। মহাহিসাবের দিনের জন্য আমি এই হিসাব ত্যাগ করলাম। সেই হিসাবের দিন আমি আল্লাহকে এই হিসাব দেবো।
এরপর আর কথা চলে না। আগন্তুক বিদায় নিলেন।

নহরে জুবাইদার অংশবিশেষ এখনও দেখা যায় মক্কায়, ছবি : সংগৃহীত

 

গল্পটি ‘নহরে জুবাইদা’ খননকালের। এটা খননে মোট ব্যয় হয়েছিল ১৭ লাখ দিনার। এতে হাজীদের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের পানির কষ্ট লাঘব হয়। আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা ও মিনার পাশ দিয়ে প্রবাহিত সেই নহরটি আজ প্রাণহীন। কিন্তু পড়ে আছে রাণী জুবাইদার মহান স্মৃতিচিহ্ন। আজও বিশ্ব মুসলিম শ্রদ্ধাভরে সেই স্মৃতি স্মরণ করেন।

রাণী জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। তিনি ১৪৯ হিজরিতে ইরাকের মসুলে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেন দাদা খলিফা আবু জাফর মানসুরের প্রাসাদে। দাদা আদর করে তাকে ডাকতেন ‘জুবাইদা’ নামে। পরে এই নামেই তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন। ১৬৫ হিজরিতে খলিফা হারুনুর রশীদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন নবী কারিম (সা.)-এর রক্তের ধারক।

বলা হয়, সম-সাময়িক দুনিয়ায় তার মতো বিদ্বান, ধর্মপরায়ণ, পরোপকারী এবং বুদ্ধিমতী নারী দ্বিতীয়জন ছিল না। কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস, ইতিহাস, ভূগোল, জ্যামিতি এবং ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে রাণীর পাণ্ডিত্যের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। রাণী জুবাইদা ছিলেন যেকোনো ভালো কাজে সর্বাধিক আগ্রহী এবং যেকোনো নেক ও পুণ্যের কাজে সবার চেয়ে অগ্রবর্তী।

রাজপ্রাসাদে তিনি ১০০ জন নারী হাফেজ রেখেছিলেন। তারা একজনের পর একজন কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করতে থাকতেন। ২৪ ঘণ্টা তার প্রাসাদে কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ শোনা যেত। তিনি প্রচুর দান করতেন।

মরুময় মক্কায় জমজম ছাড়া পানির তেমন উৎস ছিলো না। ফলে সেকালে হাজীরা খুব কষ্ট পেতেন। খলিফা হারুনুর রশিদের সময়ে পানির অভাব এতই তীব্র হয়েছিল যে, এক বালতি পানি ২০ দিরহামে বিক্রি করা হতো। খলিফা কর্তৃক পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনাও হাজীদেরকে পানির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি।

নহরে জুবাইদা এভাবেই পাথর কেটে বানানো হয়, ছবি : সংগৃহীত

 

১৯৩ হিজরিতে খলিফার মৃত্যুর পর রাণী জুবাইদা হজপালনে যান। নিজ চোখে পানির সমস্যা দেখে তিনি এতটাই ব্যথিত হন যে, পানির সমস্যা সমাধানে একটি খাল খননের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন। এ নহরের মাধ্যমে পানি সরবরাহের মধ্য দিয়ে হাজী ও মক্কা এলাকার খাবার পানির সমস্যা মুক্ত হয়।

আরব অঞ্চল কঙ্করময়, অনুর্বর, শুষ্ক এবং আবহাওয়া উষ্ণ। ভূপৃষ্ঠে খালের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন। তাই ভূগর্ভস্থ টানেল খনন করা হয়। জনগণ যেন খাল থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারে, এ জন্য কিছু দূর অন্তর অন্তর ভূপৃষ্ঠে পানির স্টেশন স্থাপন করা হয়। খেয়াল করুন, তখন সালটি ছিল ৮০৯। ‘নহরে জুবাইদা’ একটি প্রসিদ্ধ বাক্য। একে জুবাইদার নহরও বলা হয়। আরবি নহর অর্থ সরু, স্রোতস্বিনী, জলধারা, খাল, নালা ইত্যাদি। খালটি এমন সময়ে খনন করা হয়েছিল, যখন আধুনিক প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ছিলো না। হাজার বছরব্যাপী এ খালটি জনমানুষের সেবা করেছে।

নহরের এক শাখা ওয়াদি নোমান থেকে আরাফাত ময়দান ও অপর শাখা হুনাইন থেকে মক্কা পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। পানি যাতে সুপেয় হয়, তাই সমুদ্র বাদ দিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ি ঝর্ণা ও প্রাকৃতিক উৎস স্থায়ীভাবে ক্রয় করে সেই পানি নহরে প্রবাহিত করা হয়ে। এতে হাজী ও কৃষকদের কষ্ট স্থায়ীভাবে দূর হয়েছিল।

সেকালে মরুভূমিতে যাতায়াত ছিল দুঃসাধ্য। আধুনিক প্রকৌশল বিদ্যা ছাড়াই রাণী জুবাইদা কুফা থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত মরুভূমির ওপর ১৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেন। মানব কল্যাণে তিনি অগণিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বর্ণিত নহরটি ছাড়া তিনি মক্কায় আরও ৫টি জলাধার ও অনেক অজুখানা নির্মাণ করেছিলেন।

দাদার দেওয়া আদুরে ডাকনাম ‘জুবাইদা’ নিয়েই তিনি ইতিহাসে স্থান করে নেন। এতটাই খ্যাতি অর্জন করেন যে, অনেকে ভুলেই যান যে, তিনি হারুনুর রশিদের স্ত্রী। তার খ্যাতির সামনে হারুনুর রশিদও ম্লান। আজও অনেক মুসলিম দম্পতি শখ করে তাদের মেয়ের নাম জুবাইদা রাখেন।

এই মহীয়সী সম্রাজ্ঞী ২৬ জমাদিউল উলা ২১৬ হিজরি মোতাবেক ১০ জুলাই ৮৩১ সালে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে উচুঁ মাকাম দান করুন। আমিন।

   

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;