জুমার দিন যেসব আমল করতে হয়



শরিফ আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
জুমার দিন সপ্তাহের সেরা দিন

জুমার দিন সপ্তাহের সেরা দিন

  • Font increase
  • Font Decrease

জুমার দিন সপ্তাহের সেরা দিন। দিনটি আল্লাহতায়ালা এই উম্মতকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন, যা অন্যকোনো জাতিকে দেওয়া হয়নি। এই দিনের নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা রয়েছে। সেখানে জুমার দিনের প্রধান আমলের কথা বলা হয়েছে। অসংখ্য হাদিসে জুমার বিভিন্ন আমল ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে‌। এগুলো জানা এবং আমলে পরিণত করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে জুমার দিনের আমলগুলো উল্লেখ করা হলো-

জুমার রাতের আমল
জুমার রাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- ওই রাতে আল্লাহর কাছে বান্দাদের আমলনামা পেশ করা হয়, তাই ওই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। অন্তত তাহাজ্জুদ যেন ছুটে না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ জুমার রাতে আদম সন্তানের আমল (আল্লাহর সামনে) পেশ করা হয়। তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের আমল কবুল করা হয় না। -মুসনাদে আহমদ : ১০২৭২

জুমার আগের আমল
জুমার আগের আমল হলো- স্বীয় শরীর পরিপাটি করা। শরীর পরিপাটি করার জন্য প্রয়োজনে হাত-পায়ের নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বিশেষ অঙ্গের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি। তারপর গোসলের সুন্নত আদায় করা। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন যেন প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি গোসল করে, মেসওয়াক করে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করে। -সহিহ বোখারি : ৮৮৮

আরেক হাদিসে এ দিনের বিস্তারিত করণীয় এবং ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর যৌথ বর্ণনায় এসেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, তার কাছে থাকা সুন্দরতম জামাটি পরিধান করল এবং সংগ্রহে থাকলে সুগন্ধি ব্যবহার করল, এরপর জুমায় উপস্থিত হলো, কারো কাঁধ ডিঙিয়ে গেল না, তারপর আল্লাহর তওফিক অনুযায়ী সুন্নত-নফল নামাজ আদায় করল, অতঃপর খতিব (খুতবার জন্য) বের হওয়া থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নিশ্চুপ থাকল। তার এই নামাজ এ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত গোনাহের কাফফারা হবে। -সুনানে আবু দাউদ : ৩৪৩
অন্য হাদিসে আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গোনাহ মাফের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জুমার দিনের প্রধান দুই আমল
জুমার দিনের প্রধান দুটি আমল নামাজ আদায় করা এবং খুতবা শোনা। খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ -সুরা জুমা : ৯

জুমার ফরজের পূর্বে এবং পরে চার রাকাত করে সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। এটা কাবলাল জুমা ও বাদাল জুমা নামে প্রসিদ্ধ। হজরত আবু আবদুর রহমান সুলামি (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত নামাজ পড়ার নির্দেশ দিতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৫৫২৫

বাদাল জুমার পরে আরো দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। হজরত আবু আবদুর রহমান সুলামি (রহ.) বলেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) যখন আমাদের মাঝে (হুকুমতের পক্ষ থেকে) এলেন তখন তিনি জুমার পরে চার রাকাত পড়তেন। এরপর হজরত আলী (রা.) তার খেলাফতকালে এসে জুমার পরে দুই রাকাত ও চার রাকাত (মোট ৬ রাকাত) পড়তে লাগলেন। এটা আমাদের কাছে ভালো লাগল। ফলে আমরা এটা গ্রহণ করলাম। -তহাবি শরীফ : ১৯৮০
কিছু মানুষ শুধু জুমার দুই রাকাত ফরজ পড়ে চলে যায়। আবার কিছু মানুষ সুন্নত না পড়ে মোনাজাত করে চলে যায়। এই দুই শ্রেণির মানুষ নিঃসন্দেহে ভুলের মধ্যে রয়েছে।

বিশেষ মুহূর্তে দোয়ার আমল
দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জুমার দিনে দোয়া কবুলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তাতে এমন একটি মুহূর্ত আছে; তখন কোনো বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে অবশ্যই তিনি তাকে দান করেন। তিনি নিজ হাত দিয়ে ইশারা করলেন, সেই সময়টি অল্প। -সহিহ বোখারি : ৯৩৫

জুমার দিন বেশি বেশি দোয়া করা, এদিনের বিশেষ আমল

 

দোয়া কবুলের সেই বিশেষ মুহূর্ত কোনটি- তা নিয়ে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। এক. ইমামের মিম্বর বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়ার মাঝামাঝি সময়ে দোয়া করা। দুই. দুই খুতবার মাঝে যখন ইমাম সাহেব যখন বসে তখন অন্তরে দোয়া করা। তিন. আসরের পর এবং সূর্য হেলে যাওয়ার পর দোয়া করা। -সহিহ মুসলিম : ৮৫৩

সুরা কাহাফ তেলাওয়াত
জুমার দিনের একটি অন্যতম আমল হলো- জুমার আগে অথবা পরে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে আরাবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তাকে একটি আলোকিত নূর দেওয়া হবে। -মুসতাদরাকে হাকেম : ৩৩৯২
কোনো কোনো আলেম হাতে সময় কম থাকলে অন্তত সুরার প্রথম দশ আয়াত এবং শেষ দশ আয়াত পাঠ করার কথা বলেছেন।

দরুদ পাঠ
নবী কারিম (সা.)-এর শানে দরুদ পাঠ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। সাধারণত প্রত্যেক নবীপ্রেমিক বান্দা দৈনন্দিন আমলের মধ্যে দরুদ রাখেন। তবে জুমার দিনে দরুদ বেশি বেশি পাঠ করতে হয়। হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এদিনে হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিন তার ওফাত হয়; এদিন শিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে। এদিন সব সৃষ্টিজীব বেহুশ হয়ে যাবে। কাজেই এদিনে তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে? যখন আপনার দেহ মাটিতে মিশে যাবে! রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা আম্বিয়ায়ে কেরামের দেহগুলোকে মাটির জন্য (বিনষ্ট করা) হারাম করে দিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

আসরের পর আমল
দৈনিক আসরের নামাজের পর থেকে নিয়ে সূর্য ডোবার পূর্ব পর্যন্ত সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তাসবিহ পাঠ করা মুস্তাহাব। মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমার প্রতিপালকের তাসবিহ ও তাহমিদে মশগুল থাকো সূর্য উদয়ের পূর্বে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে। -সুরা ত্বহা : ১৩০
সপ্তাহের সব দিনে সম্ভব না হলে কমপক্ষে জুমার দিনে আসরের পর সময়টায় জিকির-আজকার, দোয়া ও ইস্তেগফারে কাটানো। এ বিষয়ে সবার সতর্ক হওয়া উচিত।

   

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান তীব্র দাবদাহে রাজধানীর পিপাসার্ত মানুষের মাঝে টানা চার দিন ধরে সুপেয় ঠাণ্ডা শরবত (লাল চিনি, বিট লবণ, লেবু এবং এসএমসির ম্যাংগো ও অরেঞ্জ ফ্লেবার মিশ্রিত) বিতরণ করছে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার।

রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যাণ্ড, মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে এবং মিরপুর ১ ও ১০-এর বিভিন্ন পয়েণ্টে শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পর ধারাবাহিকভাবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ১ হাজার ৫ শ’ লিটার শরবত বিতরণ করা হচ্ছে।

মে দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার বুধবার (১ মে) মিরপুর ঈদগাঁহ ময়দান ও টিএসসির মোড়ে শরবত বিতরণ করবে।

পথচারীদের মাঝে ঠাণ্ডা শরবত বিতরণের বিষয়ে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবারের সভাপতি ও মানবসেবায় সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠান তাকওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গাজী ইয়াকুব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঢাকাসহ সমগ্র দেশবাসী এখন প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে অবস্থান করছেন। এমন সময় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তীব্র গরমে আমাদের আশপাশে অবস্থান করা শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের ভুলে গেলে চলবে না। তাই তাদের উদ্দেশ্যেই মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘গরমের তীব্রতা বেশি থাকলে সামনে আরও বেশ কিছুদিন এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

হিট স্ট্রোকের মারাত্মক এই অবস্থায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্পটে ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত পথচারীদের বিনামূল্যে এমন উদ্যোগে ভীষণ খুশি সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় বেরিয়ে সবার প্রাণ যখন উষ্ঠাগত, তখন পথচারীদের ডেকে ডেকে শরবত করাচ্ছেন আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্ররা। এর চেয়ে বড় মানবিক কাজ আর হতে পারে না।

;

শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক হবে ভাই ভাই



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শ্রমজীবী মানুষের প্রেরণা ও আবেগের দিন পয়লা মে। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মাহুতি দান করেছিলেন শ্রমিকরা। তাদের রক্তাক্ত স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়। মে দিবস এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে ঘর্মাক্ত মেহনতি মানুষের প্রতিচ্ছবি। আর এই মেহনতি মানুষের অধিকারের প্রশ্নটিও সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসে এই ঐতিহাসিক দিনে।

সময়ের পরিবর্তনে মে দিবস এখন সারা দুনিয়ায় সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। মে দিবসের ঐতিহাসিক প্রেরণায় কল-কারখানা, অফিস-আদালতসহ সব কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকরা এখন উজ্জীবিত। যে উদ্দেশ্যে শ্রমিকেরা আন্দোলন করে জীবন দিয়েছিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত কাজের সময়সূচি এখন প্রায় কর্মক্ষেত্রে অনুসৃত হচ্ছে। তবে মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে নানা আপত্তি রয়েছে। তারপরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা যে নেই তা বলা যাবে না।

এমন কথাও বড় করে বলার উপায় নেই যে, ১৮৮৬ সালের পর দীর্ঘ একশত আটত্রিশ বছর পর শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি মিলেছে; শ্রমিক তার অধিকার সত্যিকারার্থে ফিরে পেয়েছে এবং তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত মজুরি নিশ্চিত করতে পেরেছে। কর্মক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা শ্রমের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কিন্তু এখনও শ্রমিক নিপীড়ন থামেনি এবং শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রমের মূল্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অহরহ শ্রমিক বিক্ষোভ থেকে সহজেই এটা অনুধাবন করা যায়।

সুতরাং অনেকটা জোড় গলায় বলা যায় যে, দুনিয়ার কোথাও শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি এবং তাদের বাঁচার উন্নত পরিবেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে একমাত্র ইসলামই শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এখন থেকে দেড় হাজার বছর আগে।

নবী মুহাম্মদ (সা.) শ্রমিকের মেহনতের কষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। সে জন্য তিনি যে ঐশ্বরিক বিধান চালু করেছিলেন, তাতে শ্রমিক ও শ্রমের মহিমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার অমোঘ বাণী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আজও সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে অতুলনীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ককে ভাই ভাই উল্লেখ করে তিনি তাদের অধিকার ও পাওনার ব্যাপারে যে উক্তি করেছিলেন তা অসাধারণ।

নবী কারিম (সা) বলেছেন, ‘মজুর-শ্রমিক ও ভৃত্যদের যথারীতি থাকা ও পোশাক দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যারা তোমাদের কাজ করছে তারা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন।’ -সহিহ বোখারি

রাসুলুল্লাহ (সা.) শ্রমিককে আপনজনের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করো, তাদের সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করবে।’ একই কথা নবী কারিম (সা.) আরেক হাদিসে উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘তোমরা অধীনস্থদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদেরকে কোনোরকম কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জানো না, তাদেরও তোমাদের মতো একটি হৃদয় আছে। ব্যথাদানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্টবোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন করো না।’ -সহিহ বোখারি

শ্রমিকরাও মানুষ। তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও মানবিক অধিকারের প্রতি লক্ষ রাখার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘মজুরদের সাধ্যের অতীত কোনো কাজ করতে তাদের বাধ্য করবে না। অগত্যা যদি তা করাতে হয় তবে নিজে সাহায্য করো।’ -সহিহ বোখারি

শ্রমিকের প্রতি মালিক যাতে সহনশীল থাকে এবং তার ভুলত্রুটি ক্ষমার মতো মহৎ মনের অধিকারী হয়, সেটা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহর নবী (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘মজুর চাকরদের অপরাধ অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্ত্বের লক্ষণ।’ নবী কারিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘অসদাচরণকারী মালিক বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’

শ্রমিকের মজুরি আদায়ের ব্যাপারে নবী কারিম (সা.)-এর অতি পরিচিত এবং বিখ্যাত একটি উক্তি সবার জানা। তিনি বলেছেন, ‘মজুরকে তার গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই মজুরি পরিশোধ করে দাও।’ শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নবী কারিম (সা.)-এর এই বাণী শ্রমিকের মর্যাদার বিষয়টিকে আরও বেশি মহীয়ান করেছে।

এভাবে ইসলাম শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার যে নিশ্চয়তা দিয়েছে, তা দুনিয়ার আর কোনো মতবাদ বা দর্শন দেয়নি। আধুনিক বিশ্বের পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী রাষ্ট্র দর্শনের কোনোটাই শ্রমিকের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদার ন্যূনতম সমাধান দিতে পারেনি। ফলে এখনও শ্রমিক-মজুররা নিষ্পেষিত হচ্ছে। মালিকের অসদাচরণ, কম শ্রমমূল্য প্রদান, অনপযুক্ত কর্ম পরিবেশ প্রদানসহ নানা বৈষম্য শ্রমিকের দুর্দশা ও মানবেতর জীবনযাপনের কারণ হয়ে আছে।

মে দিবসের প্রাক্কালে আমরা বলতে চাই, নানা আয়োজনে প্রতি বছর শ্রমিক দিবস পালন করার মধ্যে শ্রমিকের প্রকৃত মুক্তি নেই। যে অধিকারের জন্য শ্রমিকরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন শিকাগোর রাজপথে, তা বাস্তবে এখনও অর্জিত হয়নি। আজও শ্রমিকেরা পায়নি তাদের কাজের উন্নত পরিবেশ, পায়নি ভালোভাবে বেঁচে থাকার মতো মজুরি কাঠামো এবং স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিত জীবনের নিশ্চয়তা। মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শ্রমিকের প্রতি মালিকের সহনশীল মনোভাব থাকতে হবে। শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আলোকে তাকে কাজ দিতে হবে। শ্রমিককে মানুষের মতো বেঁচে থাকার জন্য তার মজুরি সেভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

মালিককে অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, তার নিজের স্বজনরা যে রকম জীবনযাপন করবে, তার অধীনস্থ শ্রমিকরাও সে রকম জীবনের নিশ্চয়তা পাবে। মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে ইসলাম যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, তাকে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা গেলে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা অবশ্যই সুরক্ষিত হবে- ইনশাআল্লাহ।

;

শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু



পারভীন আকতার, অতিথি লেখক, ইসলাম
শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বেই পারিশ্রমিক দিয়ে দিতে বলা হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বেই পারিশ্রমিক দিয়ে দিতে বলা হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শ্রমিকের ন্যায্য অধিকারের বিষয়ে যদি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাবো যে; ইসলামই শ্রমিকদের যথাযথ পাওনা পরিশোধপূর্বক তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছে। শ্রমিকদের মর্যাদা প্রসঙ্গে নবী কারিম (সা.) ঘোষণা করেন, ‘শ্রমিক হলো আল্লাহর বন্ধু।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তাকে ন্যায্য পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।

এ কথা হাদিসে স্পষ্টভাবে এসেছে যে, মানুষ হিসেবে আল্লাহর রাসুল (সা.) পারিবারিক কাজ কর্মসমূহ সম্পাদনে রত থাকতেন। যখন আজান হতো তখন তিনি নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেতেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা বিচার করি তাহলে দেখতে পাবো যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) কাজ করেছেন।

নবী কারিম (সা.)-এর সাহাবিরাও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতেন। নবী কারিম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম প্রশাসনের সর্বোচ্চ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থেকেও সাধারণ শ্রমিকের ন্যায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বিদায় হজের দিন আরাফাতের মাঠে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা যা খাবে ও পরবে তোমাদের অধীনস্থদেরকেও তা খেতে ও পরতে দেবে। তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজ তাদের ওপর চাপানো যাবে না।’

এ সম্পর্কিত একটি বিখ্যাত হাদিস হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন- কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফরিয়াদি হবো। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে দান করার ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করেছে, ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করেছে, ৩. আর যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে নিযুক্ত করে তার কাছ থেকে পুরোপুরি কাজ আদায় করেছে, আর তার মজুরি পরিশোধ করেনি।’ -সহিহ বোখারি : ২২২৭

নবী কারিম (সা.) শ্রমিক, খাদেম ও চাকর-চাকরানীদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সবাইকে কঠোরভাবে নির্দেশ দান করতেন। এ মর্মে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু আলী সুয়াইদ ইবনে মুকরিন (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বনি মুকরিন গোত্রের সাত ব্যক্তির মধ্যে সপ্তম ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে দেখেছি। আমাদের সবার একটিমাত্র খাদেম (সেবাকারী) ছিল। আমাদের মধ্যে ছোট ব্যক্তি যে ছিল সে খাদেমকে থাপ্পড় দিয়েছিল, তাই রাসুল (সা.) খাদেমটাকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন।’ -সহিহ মুসলিম

নবী কারিম (সা.)-এর আরেকটি হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু মাসউদ বদরি (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন- আমি আমার এক গোলামকে (দোষের কারণে) চাবুক দিয়ে মারছিলাম, হঠাৎ পেছন থেকে শব্দ শুনতে পেলাম- সাবধান; আবু মাসউদ! রাগে উত্তেজিত থাকার কারণে আমি শব্দটা বুঝতে পারলাম না। নিকটে আসতে আমি বুঝলাম তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)। তিনি বলছেন, তুমি তোমার ক্রীতদাসের ওপর যতটুকু ক্ষমতার অধিকারী, তোমার ওপর আল্লাহ তা অপেক্ষাও অধিক ক্ষমতার অধিকারী।

অন্য বর্ণনামতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভয়ে আমার হাত থেকে চাবুকটি পড়ে গেল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে আমি দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে দিলাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি তুমি এটা না করতে, জাহান্নামের আগুন তোমাকে বেষ্টন করে নিতো।’ -সহিহ মুসলিম : ১৬৫৯

নবী কারিম (সা.)-এর সঙ্গে যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সুমহান দায়িত্ব পালন করেছেন তারাও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিরামহীন চেষ্টার ত্রুটি করেননি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সব সাহাবি এ বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু যর গিফারি (রা.) নিজে যে ধরনের কাপড় পরিধান করতেন, তার চাকরকেও সে ধরনের কাপড় ব্যবহার করতে দিতেন। খাদ্য, পানীয়সহ যাবতীয় অন্ন-বস্ত্রের ক্ষেত্রে সাহাবিদের নিয়মনীতি ছিল অনন্য দৃষ্টান্ত।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) এশার নামাজের ইমামতির সময় সুরা বাকারার মতো দীর্ঘ সুরা তেলাওয়াত করতেন। এক্ষেত্রে একজন শ্রমিক সাহাবি জামাত থেকে আলাদা হয়ে একাকী নামাজ আদায় করলে তার বিরুদ্ধে নবী কারিম (সা.)-এর নিকট অভিযোগ দায়ের হলো। আল্লাহর রাসুল (সা.) ওই শ্রমিক সাহাবিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে শ্রমিক সাহাবি শারীরিক পরিশ্রমের কারণে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার অপারগতার কথা আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে অবহিত করেন। নবী কারিম (সা.) হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে ডেকে এ মর্মে সতর্ক করে দেন যে, জামাতে ইমামতির সময় দীর্ঘ সুরা তেলাওয়াত না করতে। কারণ জামাতে শ্রমিক, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও অন্যান্য অসুবিধায় জর্জরিত মুসল্লি থাকতে পারে। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে ইমামতি করতে হবে।

এ হাদিসের মর্মার্থটা উল্লেখ করার উদ্দেশ্যটা হলো- একজন শ্রমিক আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর নিকট কত প্রিয় সে বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করার জন্য।

;

হাফপ্যান্ট পরা বিষয়ে ইসলাম কী বলে?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাস্তাঘাটে নানা বয়সী হাফপ্যান্ট পরা মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না৷ অথচ হাঁটু ঢেকে কাপড় পরা ফরজ, হাঁটু খোলা রাখা হারাম৷ আর এটা এমন হারাম যা গোপনে নয়, প্রতিনিয়ত জনসম্মুখে পাপে লিপ্ত হতে হয়৷ সমাজের মুসলমানদের মাঝে সেই হারামে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা ও ঝোঁক বেড়েই চলেছে৷ যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কোনো গোনাহ প্রকাশ্য করতে করতে একসময় ভেতর থেকে অনুশোচনাবোধের অনুভূতিটুকু নষ্ট হয়ে যায়৷ হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে মাফ করে দেওয়া হবে, কেবল প্রকাশ্য গোনাহকারী ছাড়া৷’ -সহিহ বোখারি

হাফপ্যান্ট পরা কি জায়েজ?
ইসলাম একজন মুসলিমকে শালীন পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে, পুরুষকে আবশ্যকীয়ভাবে ঢাকতে হবে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর নারীর জন্য হাতের কব্জি মুখমণ্ডল পায়ের পাতা ছাড়া সব সতর (মানব শরীরের যেসব অংশ অপরের সামনে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক, সেটাকে সতর বলে)।

ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে। প্যান্ট, পায়জামা ইত্যাদি হাঁটুর নিচ অবধি থাকবে, তবে টাখনুর নিচে নয়। আবার পোশাক এতটা আঁটসাঁট হবে না যে, সতরের আকৃতি কাপড়ের ওপর প্রকাশ পায়। হ্যাঁ, পরিধানের প্যান্ট-শার্ট যদি উপর্যুক্ত খারাবি থেকে মুক্ত হয়, তাহলে পরিধান করা নাজায়েজ নয়। অবশ্য এরপরও তা পরিধান করা মাকরুহ। তা ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়। -দরসে তিরমিজি : ৫/৩৩২

জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক নির্বাচন ও অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয় রয়েছে। এর কয়েকটি হলো-

সতর আবৃত করা
পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো- সতর ঢাকা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ -সুরা আরাফ : ২৬

সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাক নয়। তা নাজায়েজ পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। নারীদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।

পোশাক অধিক পাতলা ও আঁটসাঁট না হওয়া
যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের ওপরে প্রকাশ পায়, তা সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েজ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান হারাম।

অহংকার প্রকাশ পায় এমন পোশাক না হওয়া
এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ, যেগুলোকে শরিয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করে। যেমন পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ব্যবহার। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর নারীদের জন্য এগুলো হালাল করা হয়েছে। -জামে তিরমিজি : ১/৩০২

হজরত আবু জুরাই (রা.)থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকো। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহতায়ালা অহংকারীকে ভালোবাসেন না। -সুনানে আবু দাউদ : ২/৫৬৪

হাফপ্যান্ট পরে অজুর বিধান
নামাজের মতো মৌলিক ইবাদত ছাড়াও সবসময় অজু করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছিলেন, ‘হে আমার বেটা! সম্ভব হলে সবসময় অজু অবস্থায় থাকবে। কেননা মৃত্যুর ফেরেশতা অজু অবস্থায় যার জান কবজ করেন তার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।’ -শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকি : ২৭৮৩

স্বাভাবিক শালিন পোশাকে অজু করা উচিত। কারণ, সতর ঢাকা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর আবশ্যক। অপরদিকে হাফপ্যান্ট পরলে সতর অনাবৃত থাকে। তাই হাফপ্যান্ট পরা এবং পরিধান করে অজু করা উচিত নয়।

হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা নগ্নতা থেকে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবীন) যারা পেশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্যকোনো সময় তোমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৮০০

তারপরও কেউ যদি হাফপ্যান্ট পরে করে অজু করে তাহলে তার অজু হয়ে যাবে। তবে কাজটি অনুচিত এবং এ ব্যাপারে কাউকে উৎসাহিত না করা।

;