আল আকসার ১০ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন



মুফতি উবাইদুল্লাহ তারানগরী, অতিথি লেখক, ইসলাম
আল আকসা কমপ্লেক্স

আল আকসা কমপ্লেক্স

  • Font increase
  • Font Decrease

আল আকসা, বায়তুল মোকাদ্দাস, আল কুদস, মসজিদুল হারাম কিংবা মসজিদুল আকসা- যে নামেই বলি না কেন, তা নিছক কোনো স্থাপনা নয়। বরকতময় একাধিক স্থাপনার মিলন মোহনা। অসংখ্য নবী-রাসুল এবং অলি-আউলিয়াদের ইবাদত-বন্দেগির স্থান। প্রিয় জায়গাটি মুসলমানদের হৃদয়ের খুব গভীরে জায়গা করে নিয়েছে। তাইতো সর্বদা উন্মুখ থাকে বিশ্ব মুসলিম বায়তুল মোকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনের বিজয় সংবাদ শোনার জন্য। নিরাপদ ভূমিতে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের জন্য। আল আকসার রয়েছে অগণিত ফজিলত, অসংখ্য গুণ-বৈশিষ্ট্য। সেখান থেকে অনন্য ১০টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হলো-

প্রথম কেবলা
সব নবী-রাসুলই বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করেছেন। নবী কারিম (সা.) মক্কায় থাকাবস্থায় বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন। মদিনায় হিজরতের পর ১৬ মাস নামাজ পড়েছেন। ২য় হিজরির শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে নবীজি সাহাবাদের নিয়ে বনু সালামা গোত্রের মসজিদে জোহর মতান্তরে আসরের নামাজের ২য় বা ৩য় রাকাতে আল্লাহর পক্ষ হতে আদেশ হলে নবীজি সাহাবাদের নিয়ে নামাজেই ঘুরে যান কাবা শরিফের দিকে।

পৃথিবীর দ্বিতীয় মসজিদ
পবিত্র কাবা হলো- পৃথিবীর প্রথম ঘর, প্রথম মসজিদ। এর ৪০ বছর পর নির্মিত হয় বায়তুল মোকাদ্দাস। যা পৃথিবীর ২য় মসজিদ। হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? তিনি বলেন, মসজিদে হারাম। অতপর আমি আরজ করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বলেন মসজিদে আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, উভয়ের নির্মাণের মধ্যে কত দিনের ব্যবধান রয়েছে? তিনি বলেন ৪০ বছরের। তিনি আরও বলেন, এই হলো মসজিদদ্বয়ের নির্মাণক্রম। কিন্তু আল্লাহতায়ালা পুরো ভূপৃষ্ঠকেই আমাদের জন্য মসজিদ বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যেখানেই নামাজের সময় হয় নামাজ পড়ে নাও।

দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না আকসায়
কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল দাপিয়ে বেড়াবে পুরো পৃথিবী। ফেতনা ছড়িয়ে ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করবে। কিন্তু চারটি মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না- ১. মদিনার মসজিদ ২. মক্কার মসজিদ ৩. মসজিদে আকসা ও ৪. মসজিদে তূর। -তাফসিরে মারেফুল কুরআন : ৭৬৬

বরকতময় ও মনোনীত ভূমি
আল্লাহতায়ালা বায়তুল মোকাদ্দাস ও তার আশেপাশের এলাকায় অসংখ্য বরকত রেখেছেন। সুরা বনি ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতের একাংশে বিবৃত হয়েছে, ‘বারাকনা হাওলাহু।’ অর্থাৎ আমি তার আশপাশ বরকতময় করেছি। এখানে হাওল দ্বারা পুরো সিরিয়া উদ্দেশ্য। বরকত দুই ধরনের- ১. ইহলৌকিক ও ২. পারলৌকিক।

ইহলৌকক বরকত হলো- জমি ঊর্বর, ফল-ফসলের সারি সারি উদ্যান, দিগন্তজুড়ে সবুজ বিস্তীর্ণ মাঠ, ঝর্ণা ইত্যাদি।

আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণের নীচে পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ানের ফিলিস্তিনি পাড়া 

 

পারলৌকিক হলো- সব নবী-রাসুলের কেবলা হওয়া, আগমন ঘটা, পদভারে ধন্য হওয়া, বাসস্থান হওয়া, কবরস্থান হওয়া, পবিত্র প্রাঙ্গণে ইবাদত করে প্রভূত কল্যাণ অর্জন করা ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করো, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং নিজেদের পেছনের দিকে ফিরে যেয়ো না, তা হলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’ -সুরা মায়েদা : ২১

সওয়াবের উদ্দেশে আকসা ভ্রমণ জায়েজ
পৃথিবীর কোনো মসজিদে শুধু সওয়াবের উদ্দেশে ভ্রমণ করা জায়েজ নেই তিনটি মসজিদ ব্যতীত। তার অন্যতম বায়তুল মোকাদ্দাস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শুধু তিনটি মসজিদ অভিমুখে ইবাদতের নিয়তে সফর করা যাবে। আল মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুন নববি ও মাসজিদুল আকসা। -সহিহ বোখারি : ১৮৬৪

আকসার মুসল্লিদের পাপমুক্তির আশ্বাস
বায়তুল মোকাদ্দাসে যারা নামাজ পড়বে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিষ্পাপ শিশুর মতো গোনাহমুক্ত হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ। নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা এমন আশ্বাসের কথাই বিবৃত হয়েছে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, হজরত সোলায়মান ইবনে দাঊদ (আ.) বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেন- আল্লাহর হুকুমমতো সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেওয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বায়তুল মাকদিসে কেবলমাত্র নামাজ পড়ার জন্য আসবে, তার গোনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায় তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, প্রথম দুটি তাকে দান করা হয়েছে এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাকে দান করা হবে। -ইবনে মাজাহ : ১৪০৮

কেয়ামতের আগে আকসা বিজয়
নবী কারিম (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন কেয়ামতের আগে আল আকসা (ফিলিস্তিন) বিজয়ের। হজরত উমর (রা.) জেরুজালেমসহ বায়তুল মোকাদ্দাস জয় করেছিলেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত শেষে সুলতান সালাহউদ্দিন উদ্দীন আইয়ুবি (রহ.) ১১৮৭ সালে তা আবার জয় করেন। পরে মুসলমানদের উদাসীনতায় আবার তা হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে মুসলিম উম্মাহ আবারো তা জয়ের দ্বারপ্রান্তে- ইনশাআল্লাহ। এত শহীদ ও নিষ্পাপ রক্ত তারই ইঙ্গিত বহন করছে।

নবী কারিম (সা.) বলেন, কেয়ামতের পূর্বে ছয়টি বস্তু গণনা করো। তার মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় অন্যতম। -সহিহ বোখারি

জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ডোম অফ দ্য রকের একটি দৃশ্য 

 

হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে হিজরি ১৬ সালে বায়তুল মাকদিস বিজয়ের মাধ্যমে নবী কারিম (সা.)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে।

আল আকসা ইসরা ও মিরাজের জ্বলন্ত সাক্ষী
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শ্রেষ্ঠ মুজেজা ইসরা ও মিরাজ। তিনি রাতের সামান্য অংশে মসজিদে হারাম (কাবা প্রান্তর) থেকে মসজিদে আকসায় ভ্রমণ করেছেন অতপর সেখান থেকে ঊর্ধ্বগগনে ভ্রমণ করেছেন। বায়তুল মোকাদ্দাস সেই ইসরা ও মিরাজের স্মৃতি ধারণকারী সাক্ষ্য বহনকারী। আল্লাহতায়ালা বলেন, পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তার বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। -সুরা বনী ইসরাইল : ১

আকসা হাশরের ময়দান হবে
আল আকসা ফিলিস্তিন এই দেশ ও আশপাশের শহর হবে হাশরের ময়দানের সূচনা। হজরত মাইমুনা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! বায়তুল মোকাদ্দাস সম্পর্কে কিছু বলুন, তিনি বলেন বায়তুল মোকাদ্দাস হলো- হাশরের ময়দান, পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা সেখানে নামাজ আদায় করো। কারণ, বায়তুল মাকদিসের এক রাকাতে অন্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার রাকাতের সওয়াব। -মুসনাদে আহমদ

আকসা দখল ও অধিকার গ্রহণ
তিন ধর্মের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত আল আকসার দখলবাজি যুগ যুগ ধরে চলছে। মুসলমানরা শক্তি সামর্থ্যের গুণ-বৈশিষ্ট্য অর্জন করে আল্লাহর তওফিকে দেরিতে হলেও তা মুক্ত করছে। এ নগরীর মতো রক্তস্নাত, হৃদয়বিদারক, ত্যাগের ইতিহাস আর কোনো ভূখণ্ডে নিয়ে নেই। পবিত্র এই নগরীর স্থাপনাগুলো দুইবার ধংস করা হয়। ৫২ বার আক্রমণ ৪৪ বার উদ্ধার এবং ২৩ বার অধিকৃত হয়। এখনও আল আকসা জায়নবাদি ইসরায়েলি ইহুদিদের দখলে। বিশ্ব মুসলিম অপেক্ষায় মুক্ত আল আকসার।

 

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;