গৃহকর্মীদের প্রতি আচরণ বিষয়ে ইসলাম যা বলে



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গৃহকর্মীদের প্রতি মন্দ আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না

গৃহকর্মীদের প্রতি মন্দ আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না

  • Font increase
  • Font Decrease

গৃহকর্ম পৃথিবীর প্রাচীন পেশাসমূহের একটি। বিশাল জনগোষ্ঠী গৃহাভ্যন্তরে তাদের শ্রম বিনিয়োগ করে। তাদের অনেকেই গৃহকর্তা কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়। পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গৃহশ্রমিক নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সরকারি উচ্চপর্যায়েরর কর্মকর্তা, পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মী, খেলোয়াড় এবং চিত্রনায়িকার বাড়িতেও ঘটেছে গৃহকর্মী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার পায় না ভুক্তভোগী দরিদ্র-অসহায় পরিবার।

অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গৃহশ্রমের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়- গৃহশ্রমিককে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন প্রকৃতির শ্রম দিতে হয়। ফলে শ্রমিককে কাজ করতে গৃহ মালিকের বাড়িতেই অবস্থান করতে হয়; গৃহকর্মীদের ঘুমানোর জন্য (গৃহ মালিকের বাড়িতে) কোনো নিরাপদ নির্ধারিত স্থান থাকে না। গৃহশ্রমিকের মালিকের ঘরের মেঝেতে বা পরিত্যক্ত কোনো অরক্ষিত ঘরে বা ঘরের অনিরাপদ বারান্দায় থাকার ব্যবস্থা হয়। এক্ষেত্রে তাদের মানবিক মর্যাদার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হয় না; গৃহ মালিক কর্তৃক পুরনো থালা বাসন গ্লাসে সর্বশেষ ও নিম্নমানের কম পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়; গৃহ শিশু শ্রমিককে শোয়ার বিছানা, চাদর, পরিধানের বস্ত্র পুরনো, অপরিচ্ছন্ন, পরিত্যক্ত ও অপরিষ্কার খাবার দেওয়া হয়। শ্রমে বা কাজে যোগ দেওয়ার অধিকার থাকলেও শ্রম থেকে অব্যাহতি পাওয়ার অধিকার থাকে না।

মালিকের বাড়িতে অসুবিধা হলে শ্রমিককে পালিয়ে গিয়ে অব্যাহতি নিতে হয়। গৃহ মালিকের পরিবারের সদস্যগণের নিকট থেকে গৃহকর্মীরা সাধারণত মানবিক আচরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়; কোনো অনুষ্ঠান, ধর্মীয় বা সামাজিক পর্বে নিম্নমানের নতুন কাপড় দেওয়া হয়; গৃহকর্মে শিশুদের নিয়োগে গৃহকর্তাদের বিশেষ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। কারণ শিশু শ্রমিকরা বাধ্য ও অনুগত থাকে এবং পরিবারের সকলের নির্দেশ নির্বিবাদে ও প্রতিবাদহীনভাবে পালন করে; বিশ্রাম, বিনোদন, অবসরযাপনের সুযোগের অভাব এবং গৃহ মালিকের শিশুসন্তানদের সঙ্গে মুক্তভাবে খেলাধুলা করার অনুমতি সীমিত; সবার পরে ঘুমাতে দেওয়া হয় এবং সবার আগে ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য করা হয়।

গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি নামে একটি নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকারের মন্ত্রিসভা। এর ফলে গৃহকর্ম শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং সবেতনে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছাড়া ও অন্যান্য ছুটি ভোগ করতে পারবেন গৃহকর্মীরা। এ নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ায় শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবেন। নীতিমালায় গৃহকর্মীদের বিশ্রামের পাশাপাশি বিনোদনের সময় দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গৃহকর্মীদের শ্রমঘণ্টা এবং বেতন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষ ঠিক করবে।

শ্রমঘণ্টা, বিশ্রাম ও বিনোদন সম্পর্কে নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭.৪ এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে, যাতে তিনি পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন ও প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ পান। গৃহকর্মীর ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্থান নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গৃহকর্মী সবেতনে ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গৃহকর্মীর মজুরি নির্ধারিত হবে। পূর্ণকালীন গৃহকর্মীর মজুরি যাতে তার পরিবারসহ সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের উপযোগী হয়, নিয়োগকারীকে তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে গৃহকর্মীর ভরণপোষণ, পোশাক-পরিচ্ছেদ দেওয়া হলে তা মজুরির অতিরিক্ত বলে গণ্য হবে। তবে ১২ বছর বয়সের কাউকে গৃহকর্মী রাখতে হলে তার আইনানুগ অভিভাবকের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষের উপস্থিতিতে নিয়োগকারীকে আলোচনা করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে এই আলোচনা, চুক্তি, সমঝোতা বা ঐকমত্যের সময় নিয়োগের ধরন, তারিখ, মজুরি, বিশ্রামের সময় ও ছুটি, কাজের ধরন, থাকা-খাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছেদ এবং গৃহকর্মীর বাধ্যবাধকতা এসব বিষয়ের উল্লেখ রাখতে বলা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, অসুস্থ অবস্থায় কোনো গৃহকর্মীকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। নিয়োগকারীকেই নিজের অর্থে গৃহকর্মীর চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়া গৃহকর্মীকে তার নিজের ধর্ম পালনের সুযোগ দিতে হবে। কর্মরত অবস্থায় কোনো গৃহকর্মী দুর্ঘটনার শিকার হলে চিকিৎসাসহ ক্ষয়ক্ষতির ধরণ অনুযায়ী নিয়োগকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ইসলামে গৃহকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা কতটুকু, তা আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের আগে দেওয়া শেষ উপদেশ থেকেই বুঝে আসে। নবীজি (সা.) যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন উম্মতকে সতর্ক করে বলে গিয়েছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহকর্মীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করো। কেননা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার দুর্ভাগ্যের কারণ।’ -সুনানে আবু দাউদ

ইসলামি শরিয়তের চাহিদা হলো, কাজ-কর্মে গৃহকর্মীদের সঙ্গে কঠোরতা প্রদর্শন না করে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা। হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর যাবৎ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবা করেছি। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আমার বেলায় ‘উহ’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি (অসন্তুষ্টির ভাব প্রকাশ করেননি)। অথবা কখনো আমাকে কোনো কাজের জন্য এতটুকুও বলেননি যে, কেন এমনটা করেছ? কেন এমন করনি?’ -সহিহ মুসলিম

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি আমার গৃহকর্মীকে কতবার ক্ষমা করব? নবী কারিম (সা.) তার প্রশ্নে চুপ থাকলে সে আবারও একই প্রশ্ন করে। তখনো তিনি চুপ থাকেন। লোকটি তৃতীয়বার একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তোমরা তাদের প্রতিদিন সত্তর বার ক্ষমা করবে।’ -সুনানে আবু দাউদ

শান্তির ধর্ম ইসলামে গৃহকর্মীর (চাকর ও কর্মচারী) অধিকার সংরক্ষিত। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। তাই গৃহকর্মী ও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;