দুনিয়ায় যারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন



হাফেজ মাওলানা লোকমান হাকিম, অতিথি লেখক, ইসলাম
পবিত্র কাবার দরজা

পবিত্র কাবার দরজা

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের মধ্যে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তাদেরকে বলা হয় আশারায়ে মুবাশশারাহ। তারা হলেন নবীদের পর উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক। এই ১০ জন ছাড়াও হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো অনেক সাহাবির নাম উল্লেখ করেন, আবার কাউকে ইঙ্গিতে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া তিনি একটি পরিবার, সাহাবিদের কিছু জামাতকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জনের তালিকা বেশ কিছু হাদিসে এসেছে। তার মধ্যে একটি হাদিস হলো-

হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, ত্বালহা জান্নাতি, জুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনে আওফ জান্নাতি, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ জান্নাতি এবং আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ জান্নাতি। -জামে আত তিরমিজি : ৩৭৪৭

এই ১০ জন নবীদের পর সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি, উম্মতের অগ্রগামী ব্যক্তি। এই ১০ জন ছাড়া আরো যাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের অন্যতম হচ্ছেন-

হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) ও হজরত হুসাইন ইবনে আলী (রা.)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের উভয়ের সম্পর্কে বলেছেন, ‘হাসান ও হুসাইন দুই জন জান্নাতের যুবকদের নেতা।’ -ইবনে হিব্বান : ৬৯৫৯

হজরত হামজা (রা.)
মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাইয়িদুশ শুহাদা হলেন- হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব।’সুতরাং শহীদরা যদি জান্নাতি হন তবে তাদের নেতাও জান্নাতি হবেন।

হজরত জাফর ইবনে আবি তালেব (রা.)
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি জান্নাতে জাফর ইবনে আবি তালেবকে ফেরেশতাদের সঙ্গে পাখির মতো উড়তে দেখেছি।’-জামে সগির : ৪৩৬৭

হজরত বিলাল ইবনে রাবাহ (রা.)
হজরত বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন ভোরে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত বিলাল (রা.)-কে ডেকে বললেন, ‘হে বিলাল! তুমি জান্নাতে কী কারণে আমার আগে আগে থাকছ? যখনই আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি সে সময়ই আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। গত রাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। তারপর বিলাল (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কখনো আমি আজান দিলেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করি এবং কখনো আমার অজু ছুটে গেলেই আমি অজু করি এবং মনে করি আল্লাহর নামে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা আমার কর্তব্য। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ দুটি কারণেই (তোমার এ মর্যাদা)।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৬৮৯

জনৈক বেদুইন সাহাবি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক বেদুইন নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যদি আমি তা সম্পাদন করি তবে জান্নাতে প্রবেশ করব। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করবে আর তার সঙ্গে অপর কোনো কিছু শরিক করবে না। ফরজ নামাজ আদায় করবে, ফরজ জাকাত প্রদান করবে, রমজান মাসে রোজা পালন করবে। সে বলল, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ করে বলছি, আমি এর চেয়ে বেশি করব না। যখন সে ফিরে গেল, নবী কারিম (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি কোনো জান্নাতি ব্যক্তিকে দেখতে পছন্দ করে সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়।’-সহিহ বোখারি : ১৩৯৭

হজরত ইয়াসার (রা.)-এর পরিবার
হজরত সুমাইয়া (রা.), হজরত ইয়াসার (রা.), হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.)-এর ওপর কাফেরদের নির্যাতন দেখে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বলেছিলেন, ধৈর্য ধরো হে ইয়াসারের পরিবার! তোমাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে। -ইবনে আবিদ দুনিয়া, কিতাবুস সবর

এই স্থানে ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি অনুষ্ঠিত হয়


বদরি সাহাবি

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ বদরের প্রান্তরে ৩১৩ জন সাহাবি অংশগ্রহণ করেছেন। বদরি সাহাবিদের সম্পর্কে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস হলো, হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা বদর ও হুদায়বিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে তারা কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’-মুসনাদে আহমাদ

বায়াতে রিদওয়ানের শপথকারী সাহাবিরা
ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়। যেসব মুমিন হুদায়বিয়ার দিন গাছের নিচে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। তাদের সংখ্যা চৌদ্দ শ’ জন। হজরত জাবের (রা.) বলেন, হুদায়বিয়ার দিন আমাদের ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীদের মধ্যে উত্তম মানুষ।’-সহিহ বোখারি : ৪১৫৪

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যারা গাছের নিচে বায়াত করেছে তাদের কেউ জাহান্নামে যাবে না।’-সুনানে তিরমিজি : ৩৮৬০

তা ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে এরকম আরো কিছু সাহাবির ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হজরত সাবিত ইবনে কুয়াইস (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.), হজরত উক্কাসা ইবনে মুহসিন (রা.) সহ আরো অনেকে।

জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন যেসব নারী সাহাবি
নারীদের মধ্যে অনেক সাহাবিকে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- হজরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত খাদিজা (রা.)-কে জান্নাতে মণি-মুক্তাখচিত একটি প্রাসাদের খোশখবর দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-কে আদেশ করেন। -সহিহ বোখারি : ৩৮১৬

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ আরো যাদেরকে দিয়েছেন তারা হলেন- হজরত ফাতেমাতুজ জাহরা (রা.)। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন হজরত ফাতেমা (রা.) কে বলেন, তুমি মারইয়াম বিনতে ইমরান ছাড়া জান্নাতের নারীদের নেত্রী হবে। তখন তিনি আনন্দে হেঁসে উঠেছিলেন। -সুনানে তিরমিজি : ৩৮৯৩

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ আরো যাদেরকে দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন হজরত আয়েশা (রা.)। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জিবরাইল (আ.) একখানা সবুজ রঙের রেশমি কাপড়ে তার (আয়েশা) প্রতিচ্ছবি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার স্ত্রী। -সহিহ বোখারি : ৫১২৫

এ ছাড়া আরও বিভিন্ন হাদিস থেকে এমন আরো কিছু নারী সাহাবির ব্যাপারে রাসুল (সা.) কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন- একজন কালো নারী, যিনি মসজিদে নববির খাদেম ছিলেন। রাসুল (সা.) তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করা হলো- চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করা। আর যারা এমনটি পেয়েছেন তারা হলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;