স্বামীর মৃত্যু ও বিচ্ছেদের পর নারীর করণীয়



মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
স্বামীর মৃত্যু ও বিচ্ছেদের পর নারীর করণীয়, ছবি: প্রতীকী

স্বামীর মৃত্যু ও বিচ্ছেদের পর নারীর করণীয়, ছবি: প্রতীকী

  • Font increase
  • Font Decrease

ইদ্দত শব্দের আভিধানিক অর্থ সময় গণনা করা। পরিভাষায় ইদ্দত বলা হয়- স্বামীর মৃত্যুর পর বা তালাকের পর নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত পরবর্তী বিয়ে থেকে বাধ্যতামূলকভাবে নিজেকে বিরত রাখা।

নারীর অবস্থার ভিন্নতায় ইদ্দতের সময়সীমায় কিছুটা ভিন্নতা আছে। আবার ইদ্দতকালীন সময়ের জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু বিধি-বিধান।

প্রথমে আলোচনা করা যাক ইদ্দতের সময়সীমা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত ও তালাকের ইদ্দত কিছুটা ভিন্ন।

স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত
যে নারীর স্বামী মারা গেছে সে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত। কেননা, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘গর্ভবতীদের সময়কাল হলো- সন্তান প্রসব করা।’ -সূরা তালাক: ৪

আর সে যদি গর্ভবতী না হয়- তাহলে তার ইদ্দত চার মাস দশ দিন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা গেছে তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে।’ -সূরা বাকারা: ২৩৪

তালাকের ইদ্দত
যে নারীকে তার স্বামী তালাক দিয়েছে অথবা সে নিজেই তালাক গ্রহণ করেছে সে যদি গর্ভবতী হয়- তাহলে তার ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘গর্ভবতীদের সময়কাল হলো- সন্তান প্রসব করা।’ -সূরা তালাক: ৪

আর সে যদি গর্ভবতী না হয় এবং তার ঋতুস্রাব আসে তাহলে তার ইদ্দত পরিপূর্ণ তিন ঋতুস্রাব শেষ হওয়া পর্যন্ত। যদি ঋতুস্রাবকালে তালাক সংঘটিত হয় তাহলে ওই ঋতুস্রাব বাদ দিয়ে পরবর্তী ঋতুস্রাব থেকে তার ইদ্দত গণনা করতে হবে।

এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তালাকপ্রাপ্ত নারী তিন ঋতুস্রাব পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে।’ -সূরা বাকারা: ২২৮

আর সে যদি গর্ভবতীও না হয় এবং তার ঋতুস্রাবও না আসে তাহলে তার ইদ্দত তিন মাস। কেননা, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের যে সকল স্ত্রীর ঋতুবতী হওয়ার আশা নাই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমারা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস এবং যাদের এখনও ঋতুস্রাব শুরু হয়নি তাদেরও।’ -সূরা তালাক: ৪

ইদ্দত যাপনকালীন নারীর জন্য বিশেষ তিনটি বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো-

সাজগোজ না করা
এ প্রসঙ্গে হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য স্বামী ব্যতীত অন্য কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি সাজগোজ বর্জন করা জায়েজ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন সাজগোজ বর্জন করবে।’ –সহিহ বোখারি: ১২৮০ ও –সহিহ মুসলিম: ৩৮০৮

নারীর যে বাড়তি বেশ-ভূষা তার প্রতি পুরুষকে আকৃষ্ট করে তাকেই সাজগোজ বলে। এটা একটি আপেক্ষিক বিষয়। যুগ, অঞ্চল, পরিবেশ, পরিবার, সমাজ, শ্রেণি প্রভৃতির তারতম্যে তাতে ভিন্নতা থাকে। তাই যেখানে সাজগোজ বলতে যা বুঝায় সেখানে তাই ইদ্দত অবস্থায় হারাম।

লাল বা হলুদ রঙের পোশাক পরিধান করা, মেহেদি লাগানো, যেকোনো সুবাস দেওয়া; কাজল, আইব্রু, লিপিস্টিকসহ বিভিন্ন মেকাপ এবং সুবাসযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা ইদ্দত অবস্থায় না জায়েজ।

তবে সাজগোজের কোনো বস্তুর ব্যবহার যদি রোগের কারণে একান্তই জরুরি হয় এবং তার কোনো বিকল্প না থাকে, লাল বা হলুদ পোশাক ব্যতীত সতর ঢাকার মতো অন্য কোনেরা বস্ত্র না থাকে তাহলে এমন আবশ্যকীয় প্রয়োজনের সময় শুধুমাত্র প্রয়োজন পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে।

ইদ্দত অবস্থায় হালকা রঙের ছাপা কাপড় পড়া, নাকে-কানে-গলায়-হাতে সামান্য পরিমাণের হালকা গহনা ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়। কেননা, এগুলোকে সাধারণত সাজগোজের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয় না।

বিয়ে বর্জন করা
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইদ্দত পালনরত নারীদের কাছে ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব করলে অথবা মনের মধ্যে বিয়ের ইচ্ছা গোপন রাখলে তোমাদের কোনো পাপ নেই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ব্যতীত গোপনে তাদের নিকট কোনো অঙ্গীকার করো না, ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার আগে বিয়ে সম্পন্ন করার সঙ্কল্প করো না।’ -সূরা বাকারা: ২৩৫

এ আয়াত প্রমাণ করে ইদ্দতাধীন নারীকে বিয়ে করা হারাম, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা আশ্বাস দেওয়াও হারাম, বিয়ের স্পষ্ট প্রস্তাব পাঠানোও হারাম। তবে বিয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হারাম নয়।

নিজ ঘর থেকে বের না হওয়া
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ইদ্দতাধীন নারীদের ঘর থেকে বের করো না এবং তারাও যেন বের না হয়, যদি না তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। এটা আল্লাহর বিধান। যে আল্লাহর বিধান লংঘন করে সে নিজের ওপরই অত্যাচার করে।’ -সূরা তালাক: ১

তালাকের সময় বা স্বামীর মৃত্যুর সময় যে ঘরটি স্ত্রীর ঘর হিসেবে পরিচিত, যে ঘরকে তার ঘর বলা হয় সে ঘরেই ইদ্দত পালন করা স্ত্রীর ওপর ফরজ। সে ঘরের মালিক স্ত্রী হোক অথবা স্বামী। তা ভাড়ায় নেওয়া হোক অথবা ধারে নেওয়া হোক।

অতএব, স্ত্রী যদি বাপের বাড়ি বেড়াতে যায় আর সে সময় তালাক সংঘটিত হয় বা স্বামীর মৃত্যু ঘটে তাহলে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি থেকে তার ঘরে ফিরে আসতে হবে এবং নিজ ঘরেই তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে।

ঘরে ইদ্দত পালন করার অর্থ হলো- দিনরাত ঘরে থাকা। এটা ফরজ। কোনো গুরুতর সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলা ঘর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া অথবা অন্য কোথাও রাতযাপন করা ইদ্দতাধীন স্ত্রীর জন্য হারাম। তার ঘর যদি বসবাস অযোগ্য হয়ে যায়, ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, ঘরের ভাড়া পরিশোধে অসামর্থ্যবান হয়ে পড়ে, স্বামী বা তার স্বজনরা তার অবস্থানকে অনিরাপদ ও হুমকির সম্মুখীন করে ফেলে তাহলে সে সেই ঘর ত্যাগ করতে পারবে। যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় অথবা ব্যয় নির্বাহের কেউ না থাকায় উপার্জনের প্রয়োজন হয় তাহলে প্রয়োজন পরিমাণ বের হওয়া জায়েজ।

ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে স্ত্রীকে তার বসবাসের ঘর থেকে বের করে দেওয়া স্বামী ও তার স্বজনদের জন্য হারাম। তবে সে যদি ব্যভিচার ও অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় তাহলে তাকে বের করে দেওয়া জায়েজ হবে। তালাকের ইদ্দতকালীন স্ত্রীর নাফাকাহ্ অর্থাৎ খাদ্য ও বস্ত্র সরবরাহ করাও স্বামীর ওপর ফরজ।

যেহেতু আবশ্যিক প্রয়োজন ব্যতীত দিনে ইদ্দতের ঘর থেকে বের হওয়া স্ত্রীর জন্য জায়েজ নেই, সেহেতু স্বামীকে যদি গ্রামের বাড়িতে কবর দেওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে স্বামীর লাশের সাথে শহর থেকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া জায়েজ হবে না। যারা গ্রামের বাড়ি রেখে সপরিবারে শহরে বসবাস করে তাদের অনেকই না জানার কারণে বা গুরুত্যপূর্ণ মনে না করার কারণে বিধবা মহিলাকে এ হারামে লিপ্ত করে ফেলে।

ইদ্দতের বিধান আমাদের দেশে দু’ধরণের প্রান্তিকতার শিকার। কেউ কেউ না জানার করণে অথবা গুরুত্বপূর্ণ মনে না করার কারণে ইদ্দতের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। ইদ্দত অবস্থায় বিভিন্ন উপলক্ষে কড়া সাজগোজ করে, বেড়াতে চলে যায়। এমনকি বিয়ে পর্যন্ত সংগঠিত হতে শোনা যায়। আবার কেউ কেউ সাধারণ হালকা রঙের পোশাক পরিহার করে নিছক সাদা রঙের পোশাককে বাধ্যতামূলক মনে করে। নাক-কানের হালকা, সামান্য গহনা যা বাড়তি কোনো আকর্ষণ সৃষ্টি করে না সেগুলোকেও নিষিদ্ধ মনে করে। এ ধরণের বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি উভয় প্রান্তিকতাই বর্জনীয়।

   

হজযাত্রীদের জন্য ২ শতাধিক বিশেষ গাইড, সাড়ে ৩ হাজার বাস



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
শায়খ সুদাইস এক হজযাত্রীকে উপহার দিচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

শায়খ সুদাইস এক হজযাত্রীকে উপহার দিচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন হজে মসজিদ হারাম এবং মসজিদে নববিতে আগত বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং অসুস্থদের বিশেষ যত্ন ও সেবার লক্ষে বিশেষ দল নিয়োগ করা হয়েছে।

হারামাইন প্রেসিডেন্সির উদ্যোগে চলতি হজ মৌসুমে ‘ইনসানিয়্যুন’ মানবিক উদ্যোগ শিরোনামে এই কর্মসূচি পারিচালিত হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হবে। যারা অসুস্থ, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী- তারা নির্বিঘ্নে ও আরামের সঙ্গে গ্র্যান্ড মসজিদ এবং মসজিদে নববি পরিদর্শন, জিয়ারত ও ইবাদত-বন্দেগি পালন করতে পারবেন।

মসজিদে হারাম এবং নববির ধর্ম বিষয়ক প্রধান শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস এই কর্মসূচি উদ্বোধন করে বলেন, ‘মানবতাবাদী উদ্যোগের লক্ষ্য হলো- আচরণ উন্নত করা এবং প্রেসিডেন্সি কর্তৃক প্রদত্ত পরিষেবাগুলোকে বিভিন্ন সেক্টর এবং বিভাগজুড়ে বিস্তৃতি করা। আমরা সব ধরনের হজযাত্রীদের জন্য একটি উপযুক্ত উপাসনার পরিবেশ উপহার দিতে চাই। আমাদের উদ্দেশ্য, মুসলমানদের উদার মনোভাব বাড়ানো এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবার মান উন্নত করা।’

এই উদ্যোগের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২ শ গাইড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা এই শ্রেণির হজযাত্রীদের ধর্মীয় চাহিদা মেটাতে প্রযুক্তি, মেধা ব্যবহার করবে। তারা অসুস্থ, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হজযাত্রীদের ধর্মীয়ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি ও দিকনির্দেশনার জন্য নিবিঢ়ভাবে কাজ করবে।

এ সময় তিনি বলেন, হজপালনকারীদের সেবা দিতে ধর্মীয় বিষয়ক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো অবহেলা সহ্য করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, হারামাইনের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তর হজ মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ভাষায় বিষয়ভিত্তিক ধর্মীয় পুস্তিকা তৈরি করেছে, যা হজযাত্রীদের দেওয়া হবে।

মিনা-আরাফাতের জন্য সাড়ে ৩ হাজার বাস : সৌদি আরবে হজ ব্যবস্থাপনায় সেন্ট্রাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি চলতি হজের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ঘোষণায় বলা হয়, হাজিদের পরিবহনের জন্য ৩ হাজার ৫০০টি বাস প্রস্তুত। এসব বাস চলতি হজ মৌসুমে মসজিদে হারামের চারপাশে অবস্থিত ৯টি স্টেশন থেকে চলাচল করবে। বাসগুলো হজযাত্রীদের মিনা ও আরাফাতে আনা-নেওয়া করবে। এ জন্য ১২টি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।

;

হজের সফরে যেসব কাজ কখনও করবেন না



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি: সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর যারা হজপালনে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে হজে যাবেন- তাদের জন্য এই লেখা। কাউকে কষ্ট দেওয়া উদ্দেশ্য নয়, ব্যক্তিগত মতামত থেকে কিছু পরামর্শ। দয়াময় আল্লাহর ইচ্ছায় কয়েকবার মক্কা-মদিনা সফরের সুযোগ হয়েছে। সেই আলোকে কাছে থেকে দেখা বিষয়গুলো উত্থাপন করা হলো-

এক. উড়োজাহাজ থেকে নামার পর যে বাসে উঠিয়ে রানওয়ে পার করালো সেটাতে কেন বসার সিট নেই? আমরা কি টাকা কম দিছি? মুরগির খাঁচায় উঠাবে কেন? এয়ারলাইন্সগুলো এটার ব্যবস্থা করতে না পারলে হাঁটিয়ে নিতো! বাসে ৩-৪ মিনিটের পথ, তাতেই এই অবস্থা!

দুই. মক্কার হোটেলে উঠার পর থেকে শুনছি অনেক সমস্যা এই হোটেলে। ওয়াইফাই নেই, লিফটের সংখ্যা কম, বাথরুমে টিস্যু দেয় না, ফিল্টারে পানি নাই আরও কত কি! অনেক হাজি ১০ জন ক‍্যাপাসিটির লিফটে ৬-৭ জন উঠলে বাকীদের উঠতে দেয় না। একটু চেপে দাঁড়ালে অন্যরা উঠতে পারত, সেটা করে না। আবার নিজের লোক উঠানোর জন্য ৪-৫ মিনিট লিফট এক ফ্লোরে আটকে রাখে।

তিন. হোটেল ছেড়ে গেলাম মিনার তাঁবুতে। সাধারণত তাঁবুর ফোমের বেডগুলো হয় খুব ছোট। এবার শুরু হলো নানা কথা, ফোম না দিয়ে কার্পেট দিলে ভালো ছিল; আরামে শুতে পারতাম!

চার. সকালে খাবারের মেনুতে কেন ডিম সিদ্ধ দিল? তার চেয়ে দুপুরে ওইটা দিলে ভালো হতো। রাতে কি এই চর্বিওয়ালা গোশত খাওয়া যায়? খাবার দিতে এত দেরি কেন? খাবারের পরিমাণ এত বেশি কেন? অপচয় হচ্ছে। আল্লাহ জানেন, পরিমাণ কম দিলে কী যে হতো!

পাঁচ. ওয়াশরুম ও অজুখানার সংখ্যা এত কম কেন? সৌদি আরবের তো জায়গার অভাব নেই। তার ওপর আমরা এত এত টাকা দিচ্ছি হজে আসতে। মাটির নীচে ১ হাজার ওয়াশরুম বানায় না কেন? যদিও সেগুলো বছরে একবার লাগে। মিনায় ৩ দিন দিন, আরাফাতে ১ দিন ও মুজদালিফায় ১ রাত ব্যবহার করা হয়।

ছয়. অজুর জন্য ৩-৪ জনের পেছনে সবসময় লাইন ধরতে হয়। তাই কেউ কেউ লাইন ভেঙে অজু করে (অন্যের হক নষ্ট করে) দ্রুত আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে চায়। কেউ আবার নারীদের অজুখানায় ভিড় কম দেখে সেখানে যেয়ে অজু করে। এদিকে নারীরা নানা মন্দ কথা বলে, নিষেধ করে। তারা এসব গায়ে না মেখে, নারীদের কথার জবাব দিতে দিতে অজু করতে থাকেন।

সাত. মিনার তাঁবুতে ইবাদত-বন্দেগির বদলে চলে আড্ডা ও পরনিন্দার আসর। বাকি সময় ঘুম ও খাওয়া। মিনা ও আরাফাতে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে (সুন্নত/ওয়াজিব) মতানৈক্য, পরস্পরে ঝগড়া। এর কোনোটাই কাম্য নয়।

আট. মিনা-আরাফাতের টয়লেটের দরজায় ধুমধাম আওয়াজ করে। ভেতরে লোক থাকলে দরজায় যে একটা লাল সিগনাল দেখায়, সেটা জানা নেই। অনেকে আবার টয়লেট ব্যবহারের পর ফ্ল্যাশ করে না।

নয়. প্রত্যেকের হাতের বেল্টে তাবুর নম্বর দেওয়া আছে। তবুও এক তাঁবুর লোক অন্য তাঁবুতে এসে বিছানা দখল করে থাকে। ফলে ক্রাইসিস তৈরি হয়, তাদের চলে যেতে বললে শুরু হয় নয়া ঝামেলা।

দশ. অনেকে ৪-৫টা বেড একসঙ্গে করে ওপরে চাদর বিছিয়ে দেয়। ফলে সহজে বোঝা যায় না, এখানে কয়টা বেড আছে। এতে লোক ঘুমায় ২-৩ জন। এভাবে নিজেরা আরাম করে ঘুমায়, অন্যরা কষ্টে থাকে।

এগারো. তাঁবুর বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে বিনামূল্যে চা-কফি দেয়। এগুলো দেওয়া হয় সৌদি মোয়াল্লিমের ব্যবস্থাপনায়। একবার চা শেষ হয়ে যাওয়ায় বিশাল ঝগড়া শুরু হয়। পরে তাঁবুতে এসে দুই-তিন সিদ্ধান্ত নেয়- হজ অফিসে লিখিত অভিযোগ দেবে!

বারো. কিছু লোক এখানেও ধূমপান করেন। আবার অনেক হাজি ‘জামালের মা’কে (নিজের স্ত্রী) খুঁজতে নারীদের পর্দাঘেরা স্থানে অবাধে ঘুরতে থাকেন।

তেরো. হজের সময় যেখানেই হেঁটে পার হই, একটা বাক্য সবসময় শুনতে পাই, ‘আমরা এখানে টাকা দিয়ে এসেছি, কারও দয়ায় আসিনি; সার্ভিস পাবো না কেন?’ আরেকটা বিষয়, কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা হলে কুশল বিনিময়ের পরের প্রশ্নই থাকে, ‘কত টাকা দিয়ে এসেছেন?’

চৌদ্দ. তাঁবুতে এত এত লোক গাদাগাদি করে থাকতে গেলে অসুবিধা হবেই। যদিও মাত্র কয়েকটি রাতের ব্যাপার। কিন্তু কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। ন্যূনতম সহযোগিতা-সহমর্মিতার মানসিকতা নেই আল্লাহর ঘরের মেহমানদের।

পনেরো. মিনা ও আরাফাতের তাঁবুতে বেডগুলো চাপাচাপি করে রাখা, তাতে মানুষে চলাচলের রাস্তা নেই। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের বেড মারিয়ে নিজের বেডে যেতে হয়। যাদের বেড আপনার রাস্তায় ওপর হয়, তারা খুব বিরক্ত হন। বলেন, ‘আপনার বেডে কেমনে যাবেন, সেটা আমি জানি না। কিন্তু এখান দিয়ে যেতে পারবেন না।’

ষোলো. একজন বলে এসি বাড়ান, আরেকজন বলে কমান। কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি না। মজার বিষয় হলো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা তাঁবুতেই নেই। এটা অন্য জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সতেরো. মুজদালিফার খোলা ময়দানে কারও জায়গা নির্দিষ্ট করা নেই। যে যেখানে পারছে, চাদর বিছিয়ে শুয়ে পরছে। এই সুযোগে অনেকে বেশি জায়গা দখল করছে, অন্যপাশে লাগেজ রাখছে- যেন ধারেকাছে কেউ আসতে না পারে। আপনি বেশি জায়গা নিয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন, অথচ আরেকজনের বসার সুযোগ নেই।

আঠারো. বিয়ের অনুষ্ঠানে পাঁচশ-এক হাজার লোকের একবেলা খাবারের আয়োজন করতে আমাদের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে ২০-২২ লাখ লোকের ৫ দিনের আয়োজনে (থাকা, খাবার খাওয়া, যাতায়াত) একটু সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। একটু ধৈর্য ধরলেই হয়।

ঊনিশ. এক হাজি সাহেব ২০ রিয়ালের মোবাইল রিচার্জ কার্ড কিনেছেন। কিন্তু নিয়ম না জানায় রিচার্জ করতে পারছেন না। এক বাংলাদেশি হজকর্মী নিজ থেকে এগিয়ে গেল। সে অনেকদিন থেকে সৌদি থাকে। কিন্তু নেটওয়ার্কের সমস্যায় সেও পারল না। হাজি সাহেব চিৎকার ও গালাগাল শুরু করলেন। আশেপাশের লোকজন বলছেন, ‘দয়া করে শান্ত হোন। ২০ রিয়ালের জন্য হজ নষ্ট করবেন না।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা!

বিশ. তাঁবুর বাইরে ফ্রিজভর্তি পানির বোতল ও জুসের প্যাকেট দেওয়া থাকে। এখান থেকে অনেকে একাই এক কেইস্ (৪০-৪৫ টা) নিয়ে নেয়, ফলে অন্যরা আর পায় না। আর কোনো কিছু ফ্রি’তে বিতরণ করতে দেখলে অনেক হাজি সেখানে ভিড় করে, ধাক্কা-ধাক্কি করে- এগুলো কতটা ঠিক?

এখানে কিছু কথা লেখা হলো, এগুলো সাধারণ বিষয়। এমন আচরণ হাজিদের কাছ থেকে কাম্য নয়। কষ্ট সহ‍্য করা, ধৈর্যধারণ, ভদ্র আচরণ, পরস্পরে সহযোগিতা-সহমর্মিতা হজের সফরের প্রয়োজনীয় বিষয়। আর হজের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও কমবেশি সবারই জানা, তার পরও এমন আচরণ ও কাজ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমন মনোভাব থাকলে, কি দরকার কি ছিল এত কষ্ট করে হজ করার? এর চেয়ে অনেক কম টাকায় ফাইভ স্টার মানের হোটেলে আরাম করে এক-দেড় মাস থাকলেই তো ভালো হতো!

আল্লাহতায়ালা সবাইকে ভুল ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে সবার হজ কবুল করুক। আমিন।

;

মক্কায় বাংলাদেশি হজযাত্রীর ওপেন হার্ট সার্জারি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটি, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটির বিশেষজ্ঞরা ওপেন হার্ট সার্জারি করে এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর জীবন রক্ষা করেছেন।

সুবাক ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি হজযাত্রী হোটেলে অবস্থানকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

হোটেল কর্তৃপক্ষ রেড ক্রিসেন্টকে খবর দিলে বাংলাদেশি ওই হজযাত্রীকে দ্রুত আল নূর হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়- তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা তাকে তাৎক্ষণিক অপারেশনের জন্য কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটিতে নিয়ে যান, যেখানে আরও উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তার হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি শিরা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটির বিশেষজ্ঞরা তার ওপেন হার্ট সার্জারি করেন। অপারেশনের পর তাকে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।

উল্লেখ্য যে, হজের সময় হজযাত্রী সব ধরনের চিকিৎসা সৌদি সরকার বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। চলতি হজে হাজিদের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব।

দেশটি জানিয়েছে, চলতি বছর হজের মৌসুমে হাজিদের চিকিৎসায় ড্রোন ব্যবহার করা হবে। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজের মৌসুমে চিকিৎসার জন্য ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত হাজিদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজে এ ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ড্রোনগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা হবে। এগুলোর মাধ্যমে মিনা ও আরাফাতের ময়দানের আশপাশের হাসপাতালে রক্ত ও ল্যাবের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। চলতি বছরের আসন্ন বার্ষিক হজের মৌসুমে এগুলোকে ব্যবহার করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপের ফলে রক্ত ল্যাবে পৌঁছাতে মাত্র দুই মিনিটের মতো সময় লাগছে। যেখানে স্বাভাবিক ব্যবস্থায় এ জন্য অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যয় করতে হতো।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ উপলক্ষে মক্কা অঞ্চলে ১৬টি হাসপাতাল, ১২৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা দেওয়া হবে। এর বাইরে মক্কা ও মাশায়েরে হারাম এলাকায় ৫টি অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা হবে। এ ছাড়া আজইয়াদ ইমারজেন্সি হাসপাতাল, আল হারাম হাসপাতাল, মসজিদে হারামের ৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ মিসফালা রোডে দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাজিদের সেবার নিয়োজিত থাকবে। প্রস্তুত থাকবে ৮০টি ছোট অ্যাম্বুলেন্স, ৭৫টি বড় অ্যাম্বুলেন্স, ৩৩টি সহায়ক অ্যাম্বুলেন্স দল মসজিদে নামিরা ও জাবালে রহমত, মিনার তাঁবু, মুজদালিফা ও জামারাত এলাকায়।

উল্লেখ্য, চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। শনিবার (২৫ মে) দুপুর ১২টায় হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে, সৌদি আরবে হজপালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই পুরুষ। এর মধ্যে মক্কায় তিন জন এবং মদিনায় দুই জন।

;

সৌদি পৌঁছেছেন প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ৪৪৬ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

শনিবার (২৫ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ৩৭ হাজার ৬৯৯ জন।

বাংলাদেশ থেকে ১০৪টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৪৮টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ৩৪টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২২টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই পুরুষ।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যা শেষ হবে ১০ জুন।

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন। যা শেষ হবে ২২ জুলাই।

;