কোরআন তেলাওয়াতে প্রতি হরফে দশ নেকি
‘আল কোরআন’ মানব জাতির সর্বজনীন ‘পাঠ্যগ্রন্থ’, যা সবার জন্য পাঠ্য ও পঠিতব্য এবং অধিক পরিমাণে ও বারবার পঠনীয়। এই নামের মধ্যে মক্কার কাফের-মুশরিকদের রদ রয়েছে। যারা বলত, ‘তোমরা এই কোরআন শোনো না এবং তা পাঠকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা জয়ী হতে পারো।’ -সুরা হা-মিম সিজদা : ২৬
কাফেরদের এই অপচেষ্টা সত্ত্বেও কোরআন নামকরণের মাঝে এই ইশারা রয়েছে, কোরআনে কারিমের দাওয়াতকে কোনো অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দমানো যাবে না; বরং কোরআন নাজিল হয়েছে পড়ার জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা পড়া হবে। আর স্বীকৃত বাস্তবতা হলো, আজ পৃথিবীর বুকে কোরআনে কারিমই সর্বাধিক পঠিত আসমানি গ্রন্থ।
কোরআন মাজিদের তেলাওয়াত কোরআন নাজিলের গুরুত্বপূর্ণ মাকসাদ এবং স্বতন্ত্র একটি আমল ও পুণ্যের কাজ। তা অর্থ না বুঝেই তেলাওয়াত করা হোক না কেন। কেননা শব্দমালার পঠনকেই মূলত আরবিতে ‘কেরাত’ এবং ‘কোরআন’ বলা হয়। আর শব্দমালার উদ্দিষ্ট অর্থ অনুধাবন করা, তার শিক্ষা ও নির্দেশনা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা ও উপলব্ধি করাকে বলা হয় ‘তাদাব্বুর’ ও ‘তাজাক্কুর।’ আর আয়াতের শব্দমালায় বর্ণিত শিক্ষা ও নির্দেশনাকে বাস্তবে অনুসরণ করাকে বলা হয় ‘ইত্তেবা’, ‘ইতাআত’ ও আমল।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, ‘আল কোরআন’ নামটি একমাত্র আল্লাহতায়ালার কালামের জন্য বিশিষ্ট। অন্য কারও কালামকে কোরআন বলা হয় না। এমনকি কোরআন যার ওপর নাজিল হয়েছে তার কালামকে হাদিস বলা হয়; কোরআন বলা হয় না। অথচ কোরআন যেমন অহির মাধ্যমে অবতীর্ণ, সাহেবে কোরআন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কালামের ভিত্তিও অহি। স্বয়ং কোরআনের সাক্ষ্য, তিনি নিজের থেকে কিছু বলেন না, যা কিছু বলেন অহি দ্বারা প্রাপ্ত হয়েই বলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সে মনগড়া কথা বলে না। এটা তো অহি, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ -সুরা নাজম : ৩-৪
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এক হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘আমাকে দেওয়া হয়েছে কোরআন এবং কোরআনের অনুরূপ।’ -মুসনাদে আহমাদ : ১৭১৭৪
‘আল কোরআন’ নামের এই বিশেষত্বের কারণ এটাই যে, এর শব্দ ও মর্ম উভয়ই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং উভয়ের সঙ্গেই শরিয়তের বিধান জড়িত। এর শব্দমালার শুধু তেলাওয়াতও মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জিকির ও ইবাদত হিসেবে গণ্য। এর আয়াত ও সুরা তেলাওয়াত করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তথা নামাজের অপরিহার্য রোকন ও অংশ হওয়া ছাড়াও নামাজের বাইরেও কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
এর প্রতিটি হরফ তেলাওয়াতে দশটি করে সওয়াব দানের ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং কোরআনে কারিম তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত, অসিলা ও মাধ্যম নয়। পক্ষান্তরে হাদিসের শব্দমালার শুধু তেলাওয়াত স্বতন্ত্র ইবাদত নয় এবং এর প্রতি হরফ তেলাওয়াতে সওয়াব লাভের ঘোষণা নেই। যদিও হাদিসের শব্দমালার ভেতরেও রয়েছে নূর ও বরকত (কেননা তা নবীজীর বাণী এবং এর মর্ম অহির মাধ্যমে প্রাপ্ত)। তবে হাদিসের মূল মাকসাদ হলো- এর অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করা এবং সে অনুসারে আমল করা। এ কারণে আহলে ইলমদের পরিভাষায় ‘আল কোরআন’কে বলা হয় ‘নামাজে পঠিত অহি’ এবং হাদিসকে বলা হয় ‘নামাজে অপঠিত অহি।’
কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা বা পাঠ করা যে স্বতন্ত্র আমল এবং কোরআন নাজিলের গুরুত্বপূর্ণ মাকসাদ তা কোরআন মাজিদের একাধিক আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।