কোরআনে কারিমের শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআনে কারিমের শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য এখনও উদঘাটন করে শেষসকরতে পারেনি গবেষকরা

কোরআনে কারিমের শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য এখনও উদঘাটন করে শেষসকরতে পারেনি গবেষকরা

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআনে কারিমের অনেক জায়গায়ই একের সঙ্গে অন্যের তুলনা উপস্থিত করা হয়েছে। এ তুলনা উপস্থিত করার ব্যাপারে একটি অবিশ্বাস্য মিল লক্ষ্য করা গেছে এবং তা হচ্ছে, সে দু’টি নাম অথবা বস্তুকে আল্লাহতায়ালা তার কিতাবে সমান সংখ্যায় উল্লেখ করেছেন। এ তুলনার ক্ষেত্রে আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো, যেখানে তুলনাটি অসম সেখানে সংখ্যা দু’টিকেও অসম রাখা হয়েছে। যেমন, কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘সুদ’ এবং ‘বাণিজ্য’ এক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ শব্দ দু’টির একটি কোরআনে এসেছে ছয় বার এবং অন্যটি এসেছে সাত বার।

বলা হয়েছে, জান্নাতের অধিবাসী আর জাহান্নামের অধিবাসী সমান নয়।’ জান্নাতের সংখ্যা হচ্ছে- আট আর জাহান্নামের সংখ্যা সাত। কিন্তু ‘জান্নাত’ ও ’জাহান্নাম’ শব্দ দু’টো কিন্ত একই রকম এসেছে, মোট ৭৭ বার করে।

ঠিক তেমনিভাবে ‘কাজ’ এর পরিণাম হচ্ছে- ‘বিনিময়’, তাই দু’টো শব্দ এসেছে ১০৭ বার করে। কাউকে ভালোবাসলে তার আনুগত্য করা যায়, তাই এ দু’টো শব্দও কোরআনে সমান সংখ্যক অর্থাৎ ৮৩ বার করে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘নারী ও পুরুষ’- যে আল্লাহর কাছে সমান তা কোরআনে এই শব্দ দু’টোর সমান সংখ্যা থেকেই আমরা বুঝতে পারি। কোরআনে এ দু’টো শব্দ এসেছে ২৪ বার করে।

সুরা ‘আরাফ’-এর এক আয়াতে আছে ‘যারা আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে- কুকুরের মতো।’ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আমরা দেখি, ‘যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতকে অস্বীকার করে’ এ বাক্যটি কোরআনে সর্বমোট পাঁচবার এসেছে। যেহেতু তাদের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে কুকুরের সঙ্গে, তাই সমগ্র কোরআনে ‘আল কালব’ তথা কুকুর শব্দটাও এসেছে পাঁচবার।

‘সাবয়া সামাওয়াত’ কথটির অর্থ হলো- ‘সাত আসমান।’ আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোরআনে এ ‘সাত আসমান’ কথাটা ঠিক সাত বারই এসেছে। ‘খালকুস সামাওয়াত’ আসমানসমূহের সৃষ্টির কথাটাও সাত বার এসেছে, সম্ভবত আসমান সাতটি তাই। ‘সাবয়াতু আইয়াম’ মানে ৭ দিন। এ কথাটাও কোরআনে সাতবার এসেছে। ‘সালাওয়াত’ শব্দটি সালাত এর বহুবচন। কোরআনে সালাওয়াত শব্দটি ৫ বার এসেছে, সম্ভবত ৫ বার নামাজ ফরজ হওয়ার কারণে এটা এভাবে বলা হয়েছে।

‘দুনিয়া ও আখেরাত’ এ দু’টি কথাও কোরআনে সমান সংখ্যায় এসেছে সর্বমোট ১১৫ বার করে। ‘ঈমান ও কুফর’ শব্দ দু’টোও সমপরিমাণ বলা হয়েছে, অর্থাৎ ২৫ বার করে। ‘উপকার ও ক্ষতি’ সমভাবে এসেছে ৫০ বার করে। ঠিক একইভাবে ‘শান্তি’ ও ‘অশান্তি’ শব্দটি এসেছে ১৩ বার করে। ‘গরম ও ঠান্ডা’ যেহেতু দু’টো বিপরীতমুখী ঋতু তাই এ শব্দ দু’টো কোরআনে ৫ বার করে এসেছে। ‘সূর্য’ আলো দেয় বলে দু’টো শব্দই কোরআনে সমান সংখ্যায় এসেছে, ৩৩ বার করে।

কাজ করলে কাজের পুরস্কার দেওয়া হবে বলেই সম্ভবত ‘কাজ করা’ ও ‘পুরস্কার’ শব্দটি এসেছে ১০৮ বার করে। আরবি ভাষায় ‘কুল’ মানে ‘বলো’ তার জবাবে বলা হয় ‘কালু’ মানে ‘তারা বললো।’ সমগ্র কোরআনে এ দু’টো শব্দও সমান সংখ্যক, অর্থাৎ ৩৩২ বার করে এসেছে। ‘বক্তৃতা’ বা ‘ভাষণ’ ‘মুখ’ থেকে আসে তাই তাই উভয় শব্দ এসেছে ২৫ বার করে।

আর রাসুল শব্দটি এসেছে ৫০ বার, আর যাদের কাছে রাসুলদের পাঠানো হয়েছে সে মানুষের কথা এসেছে ৫০ বার। পুণরাবৃত্তিসহ কোরআনে সব নবীদের নাম এসেছে ৫১৩ বার। বিস্ময়ের ব্যাপার রাসুল শব্দের মূল ধাতু অর্থাৎ ‘রেসালাহ’ শব্দটিও কোরআনে ৫১৩ বার।

জিহবা দিয়ে মানুষ বক্তৃতা দেয় বলে, ‘জিহবা’ ও ‘বক্তৃতা’ শব্দটি সমান সংখ্যক ৫০ বার করে এসেছে। মানুষ যখন জনগণের নিকট থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই তাকে একটু জোরে কথা বলতে হয়, তাই কোরআনে ‘জোরে কথা বলা’ ও ‘জনগণের সামনে’ এ উভয়টাই এসেছে ১৬ বার করে।

আলোর সঙ্গে সম্পর্ক মানুষের মানুষের মনের। মনে আলো জ্বললেই তা দিয়ে দুনিয়ায় আলো ছড়ানো যায়। এ কারণেই সম্ভবত ‘মন’ ও ‘আলো’ শব্দ দু’টি কোরআনে একই সংখ্যায় এসেছে, মোট ৪৯ বার করে।

আল্লাহতায়ালা ‘বিপদে’ ‘শোকর’ আদায় করতে বলেছেন, তাই এই উভয় শব্দ এসেছে ৭৫ বার করে। আল্লাহর ‘রহমত’ হলে ‘হেদায়েত’ আসে তাই এই শব্দ দু’টো ও সমান সংখ্যায় এসেছে ৭৯ বার করে। কোরআনে ‘খেয়ানত’ শব্দটি এসেছে ১৬ বার, আর যে খেয়ানত করে সে একজন ‘খবিস’ কিংবা খারাপ লোক, তাই এ শব্দটিও এসেছে ১৬ বার। ‘মালাকুন’ কিংবা ‘মালায়েকা’ মানে ফেরেশতা কিংবা ফেরেশতারা। কোরআনে এটি এসেছে ৮৮ বার, একইভাবে ফেরেশতার চির শত্রু ‘শয়তান’ কিংবা ‘শায়াতীন’ এটিও এসেছে ৮৮ বার।

আবার ‘আল খাবিস’ মানে অপবিত্র, ‘আত তাইয়্যেব’ মানে পবিত্র, সমগ্র কোরআনে এ দু’টি শব্দমোট ৭ বার করে অর্থাৎ একই সংখ্যায় নাজিল হয়েছে। প্রশ্ন জাগতে পারে দুনিয়ায় ভালোর চাইতে মন্দ তো বেশি, এখানে দু’টো শব্দ সমান রাখা হলো কিভাবে? এ কথার জবাবের জন্য কোরআনের ‘সুরা আনফালের ৩৭ নম্বর আয়াতটির দিকে লক্ষ করা যাক। এখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘অপবিত্রকে পবিত্র থেকে আলাদা করার জন্য তিনি অপবিত্রকে একটার ওপর আরেকটা রেখে তাকে পুঞ্জীভূত করেন এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেনে।’ এতে বুঝা যায়, যদিও পাপ পুণ্য সমান সংখ্যায় এসেছে, কিন্তু পুঞ্জীভূত করা দিয়ে তার পরিমাণ যে বেশি তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

‘ইয়াওমুন’ মানে ‘দিন’ সমগ্র কোরআনে এ শব্দটি ৩৬৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। বছরে যে ৩৬৫ দিন এটা কে না জানে। ইয়াওমুন শব্দের বহুবচন ‘আইয়াম’ মানে দিনসমূহ, এ শব্দটি এসেছে ৩০ বার। আরবি ভাষায় চাঁদ হচ্ছে- মাসের সূত্র সুচক, গড়ে বছরের প্রতি মাসে ৩০ দিন, আর এটাই হচ্ছে চন্দ্র বছরের নিয়ম। হতবাক হতে হয় যখন দেখি, চাঁদের আরবি প্রতিশব্দ ‘কামার’ শব্দটি কোরআনে মোট ৩০ বারই এসেছে। ‘শাহরুন’ মানে মাস, কোরআন মাজিদে এ শব্দটি এসেছে মোট ১২ বার। ‘সানাতুন’ মানে বছর, কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ১৯ বার। কারণ হিসেবে আমরা সম্প্রতি আবিস্কৃত গ্রীক পন্ডিত মেতনের মেতনীয় বৃত্তের কথা উল্লেখ করতে পারি। তিনিই প্রথমে এ তত্ব আবিস্কার করেন যে, প্রতি ১৯ বছর পর সূর্য ও পৃথিবী একই বৃত্তে অবস্থান করে।

কোরআনের আরেকটি বিস্ময়কর শব্দ হচ্ছে- ‘রাত’ ও ‘রাতগুলো’, এ উভয় সংখ্যা কোরআনে এসেছে সর্বমোট ৯২ বার, ‘আল লাইল’ অর্থাৎ রাত নামের সুরাটির ক্রমিক সংখ্যাও হচ্ছে- ৯২।

কোরআনে চাঁদ শব্দটি সর্বমোট ২৭ স্থানে এসেছে। আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষীণ করতে সময় লাগে ঠিক ২৭.০৩ দিন অর্থাৎ ২৭ দিন ৭ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। কোরআনে ‘ফুজ্জার’ পাপী শব্দটি যতবার এসেছে, ‘আবরার’ পুণ্যবান শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ ‘ফুজ্জার’ ৩ বার আর ‘আবরার’ ৬ বার। এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ সবসময় শাস্তির তুলনায় পুরস্কারের পরিমাণ দ্বিগুণ করে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন।

কোরআনের সুরা সাবার ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘এ ধরণের লোকদের জন্য (কেয়ামতে) দ্বিগুণ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে। এটা হচ্ছে বিনিময় সে কাজের যা তারা দুনিয়ায় করে এসেছে।’ এ কারণেই দেখা যায়, গোটা কোরআনে ‘পাপী’ ও ‘পুণ্যবান’ শব্দের মতো, ‘আজাব’ শব্দটি যতবার এসেছে ‘সওয়াব’ শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে।

কোরআনে একাধিক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে তিনি তার বিনিময় বাড়িয়ে দেবেন। সম্ভবত এ কারণেই কোরআনে ‘গরীবী’ শব্দটি এসেছে ১৩ বার, এর বিপরীতে ‘প্রাচুর্য’ শব্দটি এসেছে ২৬ বার।

কোরআন কারিমের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে গাণিতিক সংখ্যার অদ্ভতু মিল দেখে যেকোনো কোরআন পাঠকই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এটা নিঃসন্দেহে কোনো মানুষের কথা নয়।

কোনো একটা কাজ করলে তার যে অবশ্যম্ভাবী ফল দাঁড়াবে তার উভয়টিকে আশ্চর্যজনকভাবে সমান সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। ‘গাছের চারা’ উৎপাদন করলে ‘গাছ’ হয়। তাই এ দু’টো শব্দই এসেছে ২৬ বার করে। কোনো মানুষ ‘হেদায়েত’ পেলে তার প্রতি ‘রহমত’ বর্ষিত হয়, তাই এ দু’টো শব্দ কোরআনে এসেছে ৭৯ বার করে। হেদায়েতের অপরিহার্য পরিণাম হচ্ছে- ‘মউত’ এ শব্দ দু’টোও এসেছে ১৬ বার বরে।

আল্লাহ বলেছেন, ‘জাকাত’ দিলে ‘বরকত’ আসে, তাই কোরআনে কারিমে ‘জাকাত’ শব্দ এসেছে ৩২ বার ‘বরকত’ শব্দও এসেছে ৩২ বার। ‘আবদ’ মানে গোলামি করা, আর ‘আবিদ’ মানে গোলাম। গোলামের কাজ গোলামি করা, তাই কোরআনে এই উভয় শব্দই এসেছে ১৫২ বার করে। মানুষ ‘সৃষ্টি’ কথাটা এসেছে ১৬ বার, আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে- ‘ইবাদত’ তাই এ শব্দটিও এসেছে ১৬ বার।

‘নেশা’ করলে মাতাল হয়, তাই এ দু’টো শব্দ এসেছে ৬ বার করে। প্রতিটি ‘দুঃখ কষ্টে’ আল্লাহ মানুষের ধৈর্য ধরতে বলেছেন- কোরআনে এই উভয় শব্দেই এসেছে ১০২ বার করে। ‘উপকার’ ও ‘ক্ষতি’ এসেছে ৫০ বার করে। আল্লাহ আমাদের শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন, সম্ভবত এই কারণে কোরআনে যতবার ‘শয়তানের’ নাম এসেছে ঠিক ততবারই ‘আশ্রয় চাওয়ার’ কথাও এসেছে, অর্থাৎ উভয়টাই ১১ বার করে এসেছে।

কোরআনে ‘ইনসান’ শব্দটি এসেছে ৬৫ বার। এবার ইনসান বানানোর উপকরণগুলোকে কোরআনের বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগ করে মিলিয়ে দেখা যাক। প্রথম উপাদান ‘তোরাব’ (মাটি) শব্দটি এসেছে ১৭ বার, দ্বিতীয় উপাদান ‘নুতফা’ (জীবনকণা) শব্দ এসেছে ১২ বার, তৃতীয় উপাদান ‘আলাক’ (রক্তপিন্ড) শব্দ এসেছে ৬ বার, চতুর্থ উপাদান ‘মোগদা’ (মাংসপিন্ড) এসেছে ৩ বার। পঞ্চম উপাদান হচ্ছে ‘লাহম’ (হাড়), এটি এসেছে ১৫ বার। সর্বশেষ উপাদান হচ্ছে- ‘লাহম’ (গোশত), এ শব্দটি এসেছে ১২ বার। কোরআনে উল্লিখিত (সুরা হজ ৫)- এ উপাদানগুলো যোগ করলে যোগফল হবে ঠিক ৬৫। আর এসব উপাদান দিয়ে যে ‘ইনসান’ বানানো হয়েছে তাও কোরআনে ঠিক ৬৫ বার উল্লেখে করা হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনের সুরা ‘আল ক্বামার’- এর প্রথম যে আয়াতটিতে চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার সঙ্গে কেয়ামতের আগমন অত্যাসন্ন কথাটি বলেছেন, আরবি বর্ণমালার আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় ১৩৯০, আর এ ১৩৯০ হিজরি (১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ) সালেই মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরণ করে, জানি না এটা কোরআনের কোন মোজেযা, না তা এমনিই এক ঘটনাচক্র, কিন্তু আল্লাহতায়ালার এ মহান সৃষ্টিতে তো ঘটনাচক্র বলতে কিছুই নেই। এ কারণেই হয়তো মানুষের চাঁদে অবতরণের সালের সঙ্গে কোরআনের আলোচ্য আয়াতটির সংখ্যামানের এ বিস্ময়কর মিল আমরা দেখতে পাই।

   

হাফপ্যান্ট পরা বিষয়ে ইসলাম কী বলে?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাস্তাঘাটে নানা বয়সী হাফপ্যান্ট পরা মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না৷ অথচ হাঁটু ঢেকে কাপড় পরা ফরজ, হাঁটু খোলা রাখা হারাম৷ আর এটা এমন হারাম যা গোপনে নয়, প্রতিনিয়ত জনসম্মুখে পাপে লিপ্ত হতে হয়৷ সমাজের মুসলমানদের মাঝে সেই হারামে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা ও ঝোঁক বেড়েই চলেছে৷ যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কোনো গোনাহ প্রকাশ্য করতে করতে একসময় ভেতর থেকে অনুশোচনাবোধের অনুভূতিটুকু নষ্ট হয়ে যায়৷ হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে মাফ করে দেওয়া হবে, কেবল প্রকাশ্য গোনাহকারী ছাড়া৷’ -সহিহ বোখারি

হাফপ্যান্ট পরা কি জায়েজ?
ইসলাম একজন মুসলিমকে শালীন পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে, পুরুষকে আবশ্যকীয়ভাবে ঢাকতে হবে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর নারীর জন্য হাতের কব্জি মুখমণ্ডল পায়ের পাতা ছাড়া সব সতর (মানব শরীরের যেসব অংশ অপরের সামনে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক, সেটাকে সতর বলে)।

ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে। প্যান্ট, পায়জামা ইত্যাদি হাঁটুর নিচ অবধি থাকবে, তবে টাখনুর নিচে নয়। আবার পোশাক এতটা আঁটসাঁট হবে না যে, সতরের আকৃতি কাপড়ের ওপর প্রকাশ পায়। হ্যাঁ, পরিধানের প্যান্ট-শার্ট যদি উপর্যুক্ত খারাবি থেকে মুক্ত হয়, তাহলে পরিধান করা নাজায়েজ নয়। অবশ্য এরপরও তা পরিধান করা মাকরুহ। তা ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়। -দরসে তিরমিজি : ৫/৩৩২

জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক নির্বাচন ও অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয় রয়েছে। এর কয়েকটি হলো-

সতর আবৃত করা
পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো- সতর ঢাকা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ -সুরা আরাফ : ২৬

সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাক নয়। তা নাজায়েজ পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। নারীদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।

পোশাক অধিক পাতলা ও আঁটসাঁট না হওয়া
যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের ওপরে প্রকাশ পায়, তা সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েজ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান হারাম।

অহংকার প্রকাশ পায় এমন পোশাক না হওয়া
এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ, যেগুলোকে শরিয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করে। যেমন পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ব্যবহার। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর নারীদের জন্য এগুলো হালাল করা হয়েছে। -জামে তিরমিজি : ১/৩০২

হজরত আবু জুরাই (রা.)থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকো। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহতায়ালা অহংকারীকে ভালোবাসেন না। -সুনানে আবু দাউদ : ২/৫৬৪

হাফপ্যান্ট পরে অজুর বিধান
নামাজের মতো মৌলিক ইবাদত ছাড়াও সবসময় অজু করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছিলেন, ‘হে আমার বেটা! সম্ভব হলে সবসময় অজু অবস্থায় থাকবে। কেননা মৃত্যুর ফেরেশতা অজু অবস্থায় যার জান কবজ করেন তার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।’ -শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকি : ২৭৮৩

স্বাভাবিক শালিন পোশাকে অজু করা উচিত। কারণ, সতর ঢাকা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর আবশ্যক। অপরদিকে হাফপ্যান্ট পরলে সতর অনাবৃত থাকে। তাই হাফপ্যান্ট পরা এবং পরিধান করে অজু করা উচিত নয়।

হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা নগ্নতা থেকে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবীন) যারা পেশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্যকোনো সময় তোমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৮০০

তারপরও কেউ যদি হাফপ্যান্ট পরে করে অজু করে তাহলে তার অজু হয়ে যাবে। তবে কাজটি অনুচিত এবং এ ব্যাপারে কাউকে উৎসাহিত না করা।

;

এক সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৬০ লাখ জিয়ারতকারী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববি, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতারের পর এবার সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এ দুই শহরে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন আশঙ্কার মাঝে এক সপ্তাহে মদিনার মসজিদে নববিতে প্রায় ৬০ লাখ জিয়ারতকারী নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত করেছেন।

সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ-এর বরাতে জানা যায়, রমজান পরবর্তী সময়ে গত এক সপ্তাহে মসজিদে নববিতে রেকর্ড সংখ্যক জিয়ারতকারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নবী কারিম (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করতে এসেছেন। তাদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৫৯ লাখ ৬০ হাজার ৭২৪ জন।

এসপিএ আরও জানায়, গত এক সপ্তাহে ১ লাখ ৮০ হাজার পবিত্র জমজমের পানির বোতল মসজিদে নববিতে আসা মুসল্লিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

রিয়াজুল জান্নাত তথা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিম্বর ও কামরার (নবী কারিম সা.-এর বাসস্থান) মধ্যবর্তী স্থানে ২ লাখ ৫৪ হাজার ২০৯ জন নামাজ আদায় করেছেন। যার মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজার পুরুষ ও ১ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জন নারী রয়েছে।

পবিত্র উমরা পালনকারীরা মক্কায় যাওয়ার আগে বা পরে মদিনা ভ্রমণ করেন। মদিনায় মসজিদে নববিতে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রাসুলে কারিম ( সা.)-এর রওজায় সালাম পেশ, রিয়াজুল জান্নাতে নামাজসহ অন্যান্য নফল ইবাদত পালন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখেন।

উল্লেখ্য, এ বছর এপ্রিল মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন আবহাওয়া বিপর্যয়। বিরল বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক মরুর দেশ।

সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তর রিয়াদ ও পূর্ব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার তালিকাভুক্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের এই সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

উর্দু নিউজ অবলম্বনে মুফতি উমর ফারুক আশিকী

;

বিপদাপদ কাটছেই না, কারণ জেনে নিন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ফজরের নামাজ আদায়কারী আল্লাহর জিম্মায় থাকে, ছবি : সংগৃহীত

ফজরের নামাজ আদায়কারী আল্লাহর জিম্মায় থাকে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নানাবিধ আমল, চিকিৎসা ও চেষ্টা-তদবির সত্ত্বেও অসুস্থতা থেকে সুস্থ হতে বিলম্ব হয় কিংবা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়- ফরজ নামাজ ঠিকমতো আদায় না করার কারণে। বিশেষ করে ফজরের নামাজ।

ফজরের নামাজ আদায়কারী দয়াময় আল্লাহর জিম্মায় থাকে। আল্লাহতায়ালা তাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখেন। সুতরাং তাকে যে অযথা কষ্ট দেবে, অন্যায়-অবিচার করবে, আল্লাহ তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। এ সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করল। আর আল্লাহতায়ালা যদি তার নিরাপত্তা প্রদানের হক কারও থেকে দাবি করে বসেন, তাহলে সে আর রক্ষা পাবে না। তাই তাকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৫৭

এর মানে হলো, যে ফজরের নামাজ আদায় করল না; সে আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে না। তো যে ব্যক্তি আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে না, তাকে পৃথিবীর কে নিরাপত্তা দেবে? তাকে কে সুস্থ করবে?

সমাজের অনেকেই আছেন, বাকি চার ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন। ফজরের নামাজ মাঝে-মধ্যে ছাড়েন কিংবা মাঝে-মধ্যে পড়েন। তাদের নিরাপত্তায় তো সমস্যা হবেই।

সারা বছরে একদিনও ফজরের নামাজ ছাড়া যাবে না। কখনও ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে উঠেই সর্বপ্রথম ফজরের নামাজ পড়তে হবে- যদি সেটা নিষিদ্ধ সময় না হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমল ও প্রচেষ্টার ফল দ্রুত পাওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।

আরেকটি কথা, আমল নিয়মিত করতে হবে এবং কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি চাইতে হবে। আমরা অনেকেই অনেক আমল করি, কিন্তু আমলের বিনিময়ে আমি কী চাচ্ছি; এটাই জানি না। প্রত্যেকটি আমলের বিনিময়ে আখেরাতের ফজিলত তো পাবেনই, দুনিয়ার কোনো নেক উদ্দেশ্যও হাসিল করতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, আমল, নিয়ত, ফজরের নামাজ ও দীর্ঘদিনের বদ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা সহজ ও সুন্দর জীবনের অন্যতম নিয়ামক।

;

সৌদি আলেমদের অভিমত

অনুমোদন ছাড়া হজ করা পাপ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র হজপালন করার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় অনুমতি নেওয়াকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। পবিত্র স্থানগুলোর পবিত্রতা নিশ্চিত করতে শরিয়া আইনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব।

সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সৌদির সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ মতামত দিয়েছে, যারা রাষ্ট্রীয় অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এর মাধ্যমে পাপ করবেন।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এবং দুই পবিত্র মসজিদের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে আলেমদের কাছে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এরপর আলেমরা ঘোষণা দেন, হজ করতে হলে অবশ্যই পূর্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ জানায়, হজ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, খাবার সরবরাহ এবং অন্যান্য সেবা। যারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করে হজ করবেন তারা আরও ভালো ও উন্নত সেবা পাবেন।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো- হজ। প্রতি বছর জিলহজ মাসে হজ করেন বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। যেসব মুসল্লির আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাদের জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ করার বিধান রয়েছে।

মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে হজ করতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। এবার তারা হজ করার জন্য অনুমতির বিষয়টি আবশ্যিক করে দিয়েছে।

;