মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আদব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মির্জাপুর শাহী মসজিদ, আটোয়ারী, পঞ্চগড়, ছবি: সংগৃহীত

মির্জাপুর শাহী মসজিদ, আটোয়ারী, পঞ্চগড়, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে, যারা ঈমান আনে, আল্লাহ ও আখেরাতে এবং নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ -সূরা তওবা: ১৮

মুসলমান হিসেবে মসজিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতিদিন আমাদেরকে পাঁচ পাঁচবার মসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে যেতে হয়। তাই মসজিদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানা থাকা দরকার। প্রয়োজন একটু সচেতনতা। তাই এখানে কোরআন-হাদিসের আলোকে মসজিদের কিছু আদব উল্লেখ করা হলো।

মসজিদ নির্মাণের ফজিলত
ইসলাম মুসলমানদেরকে ব্যাপকভাবে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছে। তার জন্য বিশেষ সওয়াব ঘোষণা করেছে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশে মসজিদ তৈরি করলো; আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে মসজিদের মতো একটি ঘর তৈরি করে দেবেন।’ –তিরমিজি: ২৯২

যথাযথ নিয়তে মসজিদ নির্মাণ করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে- বর্ণিত হাদিসটি প্রকারান্তরে এই সুসংবাদই বহন করছে।

তবে ইসলাম মনে করে, বস্তুগতভাবে মসজিদ নির্মাণ ও আবাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে; অর্থগতভাবে তা আবাদ করা। মসজিদ আবাদের অর্থ হলো- মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়, জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াত করা। মসজিদ আবাদকারীর জন্য ইসলামে অনেক পুরস্কারের কথা এসেছে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে সকাল-বিকাল মসজিদে যায়, প্রত্যেকবার যাতায়াতের বিনিময়ে জান্নাতে তার জন্য এক একটি ঠিকানা তৈরি করা হয়।’

আজান শুনে নামাজ পড়ার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়
আজান হওয়ার পর বৈধ ওজর ব্যতীত মসজিদ থেকে বাইরে যাওয়া জায়েজ নয়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আজান শোনার পর যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে বিনা প্রয়োজনে বের হয় এবং পুনরায় মসজিদে ফিরে আসার তার ইচ্ছাও নাই সে মুনাফিক।’ -ইবনে মাজা

মসজিদ পরিষ্কার রাখা খুবই মর্যাদাপূর্ণ কাজ
ইসলামি শরিয়ত মসজিদকে পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা মসজিদে নববী পরিষ্কারের কাজ করত। কয়েক দিন থেকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মহিলাটির কি হয়েছে? বলা হলো- সে মারা গেছে। অতঃপর তাকে দাফন করা হয়েছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন? কোথায় তার কবর? অতঃপর তিনি তার কবরের কাছে গিয়ে তার জানাজা পড়লেন। -সহিহ বোখারি

উল্লেখ্য যে, কবরে গিয়ে মহিলার জন্য রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ পড়ার ব্যাপারটি শুধু তার (নবী) জন্যই খাস। অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য নয়।

মসজিদের ভেতর কফ-থুথু ও ময়লা ফেলা নাজায়েজ
একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদের সামনের দিকে এক লোককে কফ ফেলতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, কি ব্যাপার? তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো লোক তার প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে তার সামনে থুথু নিক্ষেপ করে। সে কি এটা পছন্দ করে যে তার সামনে এসে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করা হোক? যদি থুথু নিক্ষেপ করতেই হয় তবে বাম পায়ের নিচে ফেলবে অথবা এভাবে কাপড়ে তা নিক্ষেপ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি দেখলাম, (শিক্ষা দেওয়ার জন্য) তিনি কাপড়ের এক অংশে থুথু ফেলে অন্য অংশ দিয়ে তা ডলে দিলেন।) –সহিহ মুসলিম

মসজিদে বেচা-কেনা ও হারানো বস্তু খোঁজ কিংবা ঘোষণা দেওয়া বৈধ নয়

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমরা কোনো ব্যক্তিকে মসজিদে কেনা-বেচা করতে দেখবে তখন তার জন্য বদদোয়া করে বলবে; আল্লাহ তোমার ব্যবসায় লোকসান দিক। আর কাউকে যদি হারানো বস্তু মসজিদে এসে খুঁজতে দেখো বা সে সম্পর্কে ঘোষণা দিতে দেখো- তবে বলবে আল্লাহ করুন বস্তুটি তুমি যেন খুঁজে না পাও। -সুনানে তিরমিজি

মসজিদে বসে থাকার সময় এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করিয়ে বসা নিষেধ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ বাড়িতে অজু করে মসজিদে এলে বাড়ি ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে যেন নামাজরত থাকলো। তারপর তিনি বললেন, কেউ মসজিদে এসে যেন এরূপ করে না বসে। তারপর তিনি তার এক হাতের আঙ্গুলগুলো অন্য হাতের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।’ -ইবনে খুজাইমা

কাঁচা পিয়াজ-রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষেধ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কাঁচা পিয়াজ বা কাঁচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা বনী আদম যে বিষয়ে কষ্ট অনুভব করে ফেরেশতারা তা থেকে কষ্ট অনুভব করেন।

হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, দুর্গন্ধময় এই দু’টি সবজি (কাঁচা পেয়াজ ও কাঁচা রসূন) খেয়ে তোমরা মসজিদে প্রবেশ করা থেকে সাবধান। যদি খেতেই হয়, তবে আগুনের সাহায্যে এগুলোর দুর্গন্ধ ধ্বংস করে নেবে। -তাবারানি

   

বছরে একবার ১০ মিনিটের জন্য যাওয়া যাবে রিয়াজুল জান্নাতে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রিয়াজুল জান্নাত, ছবি: সংগৃহীত

রিয়াজুল জান্নাত, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান মসজিদে নববিতে অবস্থিত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরিফ ও রিয়াজুল জান্নাত জিয়ারতে নতুন নিয়ম চালু করেছে সৌদি আরব।

নতুন নিয়মে রিয়াজুল জান্নাতে বছরে মাত্র একবার যাওয়া যাবে, অবস্থান করা যাবে ১০ মিনিট। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়, কোনো মুসলিম শেষবার ভ্রমণের ৩৬৫ দিন পর আবার রিয়াজুল জান্নাতে যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন। নুসুক বা তাওয়াক্কলনা অ্যাপের মাধ্যমে জিয়ারত প্রত্যাশীদের আবেদন করতে হবে।

হারামাইন জেনারেল অথরিটি জানিয়েছে, জিয়ারতকারীদের নুসুক অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য দেওয়া নির্ধারিত সময়ের পনেরো মিনিট আগে রিয়াজুল জান্নাত জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে হবে।

নিয়ম অনুযায়ী পবিত্র হজ ও উমরা পালনে আসা যাত্রীরা মদিনায় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জিয়ারতে আসেন। তবে রওজা শরিফ জিয়ারত এবং রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায়ের জন্য আগে থেকে অনুমিত নিতে হয়। সেই অনুমতির ক্ষেত্রে এ নতুন বিধি জারি করল সৌদি আরব।

মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর রওজা এবং তার জামানার মূল মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানকে নবী করিম (সা.) বেহেশতের বাগানসমূহের একটি বাগান বলেছেন। এটাই রিয়াজুল জান্নাত। এর আয়তন প্রায় ২২ মিটার দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার প্রস্থ। স্থানটি সীমানা দিয়ে ঘিরে রাখা। এ স্থানে নামাজ পড়া উত্তম।

রিয়াজুল জান্নাত হলো- দুনিয়ায় অবস্থিত জান্নাতের বাগানসমূহের একটি। তাই জিয়ারতকারীরা এখানে নামাজ আদায় ও দোয়ার জন্য ব্যাকুল থাকেন।

;

হজের সফরে কোথায় কষ্ট হয়, কেন হয়?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজযাত্রীরা মক্কা যাচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

হজযাত্রীরা মক্কা যাচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

মঙ্গলবার (২৮ মে) পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৯৮৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এখনও হজের জন্য সৌদি গমনের অপেক্ষায় প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী।

চলতি হজ মৌসুমে শুরু থেকে হজযাত্রা অনেকটা সুন্দরভাবেই চলছে। অন্যান্য বারের মতো হজ গমনের অনিশ্চয়তা নিয়ে বিপন্ন চেহারার হজযাত্রীদের হজক্যাম্পে অপেক্ষার ছবি এখনও আমাদের দেখতে হয়নি। তবে বিড়ম্বনাহীন হজযাত্রার ক্ষেত্রে কিছু কিছু হজ এজেন্সির গাফিলতির কথা জানা গেছে। যা হজযাত্রীদের ভোগান্তির কারণ।

হজযাত্রীদের নানা ভোগান্তির খবরে মনে হয়, হজ একটি ভীষণ কঠিন আমলের নাম। হজ মানেই কষ্ট। হজ মানেই দুর্ভোগ। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বাংলাদেশের হজযাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় মূলতঃ ব্যবস্থাপনাজনিত ত্রুটির কারণে। হজব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা আন্তরিক হলে এ ভোগান্তি নিরসন কোনো বিষয়ই না। হজব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত করে এর সঙ্গে সৎ ও খোদভীরু লোকদের সম্পৃক্ত করলেই এ সমাধান সম্ভব।

এতো গেলো হজব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দুর্ভোগের কথা। কিন্তু বাস্তবিকই হজের সফরে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। এর জন্য দরকার সহনশীল মনোভাব ও ধৈর্য। তার পরও যেসব কারণে ও স্থানে হজের সফরে কষ্ট স্বীকার করতে হয়-

১. সারা দুনিয়া থেকে হজকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কয়েক দিন জেদ্দা অথবা মদিনা এয়ারপোর্টে হজযাত্রীরা অবতরণ করেন। তাই এয়ারপোর্টের সব কার্যক্রমে অস্বাভাবিক ভীড় হয়। তবে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের সুবিধা পাওয়ায় এই বিড়ম্বনা এখন নেই। এখন হাজিদের লাগেজ নিজ নিজ হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, হাজিরা বিমান থেকে নেমে বাসে করে মক্কা-মদিনার হোটেলে পৌঁছে যাচ্ছেন।

২. কাবা শরিফের চত্ত্বর (মাতাফ, তওয়াফের স্থান), মসজিদে হারাম, সাফা-মারওয়া, মদিনা শরিফ, মসজিদে নববি ও রওজা শরিফ নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গায় হওয়ার দরুণ- হজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মোস্তাহাব আমলগুলো একসঙ্গে করতে গিয়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে এসব স্থানে।

৩. মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় একই দিনে একই স্থানে ২০-২২ লাখ মানুষ জমা হওয়ার প্রেক্ষিতে এসব স্থানে আসা-যাওয়া করতে রাস্তায় ও গাড়ীতে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনও যান্ত্রিক গোলযোগ হয়, দুর্ঘটনা ঘটে। তাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রাস্তায় ৫-৬ গুণ সময় বেশি লাগে।

৪. সৌদি আরবের আবহাওয়া বিশেষ করে মক্কা শরিফ, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার তাপমাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এসব এলাকায় রোদের তাপ ও গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবারও হজের সময় আবহাওয়া গরম থাকবে বলে জানা গেছে।

৫. হজের সফরে মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফে সব কাজকর্মের জন্য সৌদি মোয়াল্লিমের দারস্থ হতে হয়। অনেক মোয়াল্লিমের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণেও অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়।

৬. ফাইভ স্টার হোটেলসহ বিলাসবহুল হোটেল মক্কা-মদিনায় আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্যস্থানের হোটেলের মতো এ সব হোটেলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ হজযাত্রী সাধারণ হোটেল বা বাড়ীতে থাকেন। কিছু কিছু হোটেল বা বাড়ী এত নিম্নমানের যে- এসি, বাথরুম বা অন্যান্য বিষয় হজযাত্রীদের ভীষণ কষ্ট পোহাতে হয়।

৭. মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফের সব হোটেলে রান্নার অনুমতি নেই। অনেক দূর থেকে কষ্ট করে খাবার পৌঁছানো হয়। নামাজের জামাতের আগে পরে ভীড় না কমা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা যায় না। ফলে খাবারের কষ্ট এ জন্য হয়ে থাকে। খাবারের জন্য কখনও আবার পুলিশের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এমনকি আইন ভঙের দরুণ পুলিশ অনেক সময় খাবারও ফেলে দেয়। তাই যথাসময় খাবার না পৌঁছানোর কারণে কষ্ট হয়।

তবে এটাও ঠিক যে, কিছু নিম্ন রুচিবোধসম্পন্ন, অতিলোভী এজেন্সি বা দায়িত্বশীলের পরিকল্পিত কৃত্রিম সঙ্কটেও খাবারের কষ্ট হয়।

;

সৌদির স্থানীয় ও প্রবাসীদের জন্য নতুন হজ প্যাকেজ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কিদানা আল-ওয়াদি টাওয়ার, ছবি: সংগৃহীত

কিদানা আল-ওয়াদি টাওয়ার, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের নাগরিক ও প্রবাসীদের জন্য হজের নতুন দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়। সোমবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সৌদি গেজেট।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা করা প্যাকেজ দুটির মধ্যে প্রথম প্যাকেজে মক্কায় সুসজ্জিত আবাসিক ভবনে কম খরচে থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই প্যাকেজের আওতায় হজযাত্রীদের আত-তারবিয়ার দিন (৮ জিলহজ) থেকে আরাফাত দিবস (৯ জিলহজ), আন নাহার (১০ জিলহজ) ও তাশরিকের দিনগুলোতে (১১ ও ১২ জিলহজ) মিনা, মুজদালিফা এবং আরাফাতের পবিত্র স্থানগুলোতে পরিবহনসহ অন্যান্য মৌলিক সেবা দেওয়া হবে।

প্যাকেজের আওতায় মিনায় হজযাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে হজের আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে হজের দিনগুলোতে হজযাত্রীদের মিনায় রাতের একটি অংশ থাকার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা করা হবে। প্যাকেজটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সৌদি আরবের মুদ্রায় ৪ হাজার রিয়াল।

অন্য আরেকটি প্যাকেজে মিনায় নবনির্মিত কিদানা আল ওয়াদি টাওয়ারে থাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই প্যাকেজের দাম শুরু ১৩ হাজার রিয়াল থেকে। এই প্যাকেজের আওতায় হজের দিনগুলোতে হজযাত্রীরা আরামদায়ক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া এতে বিভিন্ন ধরনের খাবার, ঠান্ডা এবং গরম পানীয় এবং আরাফাতে সুসজ্জিত তাঁবুর পাশাপাশি মুজদালিফাতে রাতযাপনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

কিদানা আল-ওয়াদি টাওয়ারটি নিউ মিনায় নির্মাণ করা হয়েছে। কঙ্কর নিক্ষেপের স্থান জামারাত থেকে এক কিলোমিটার দূরে ১২টি পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনে ৩টি করে লিফট বেশ কয়েকটি বাথরুম রয়েছে। এর রুমগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, প্রতিটি রুমে ২৫ থেকে ৩০ জন হজযাত্রী থাকতে পারবেন।

;

সুখী সমাজ গঠনে যা জরুরি



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
সুন্দর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন, ছবি: সংগৃহীত

সুন্দর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, প্রাচীনকাল থেকে যে যৌথ পরিবারে চিত্র সারাবাংলায় ছিল- তা এখন অনেকটাই ম্লান। শহুরে জীবনে অনেক আগেই বিলীন হয়েছে যৌথ পরিবার। আগে গ্রামে-গঞ্জে কিছু যৌথ পরিবার দেখা গেলেও এখন তা আর নেই। এমনকি ঐতিহ্যবাহী পরিবারেও বিলীন একত্রে বাস করার ইতিহাস। দিন যত যাচ্ছে, আমরা যেন তত এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছি। ক্রমেই ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ই সীমাবদ্ধ করে ফেলছি পরিবারকে। সেখানে মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদীর স্থান নেই। মা-বাবাকে হয় গ্রামের বাড়িতে কাটাতে হচ্ছে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হচ্ছে- ‘বৃদ্ধাশ্রম।’

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারে পারস্পরিক সম্প্রীতি গভীর হয়, অসুখ-বিসুখসহ নানা সমস্যায় একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এতে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান হয়ে যায় অতিসহজে।

রক্তের বন্ধন মানেই পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সব সদস্যের মাঝে অকৃত্রিম সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা অটুট রাখা সবার দায়িত্ব। সমাজ ব্যবস্থায় সুন্দর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন।

প্রত্যেক মানুষের জন্য পারিবারিক শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আয়ত্ব করতে পরিবারই সর্বোত্তম মাধ্যম। নানাবিধ চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করতে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। ভদ্রতা, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, কৃতজ্ঞতাবোধ, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন, কনিষ্ঠদের স্নেহ-আদর, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন, পরোপকারিতার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং উদার মানসিকতাবোধ জাগ্রত করার গুণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যতটা না অর্জন করা যায়- তার চেয়ে বেশি পরিবার থেকে অর্জন করা যায়।

পৃথিবীর প্রথম পরিবার গড়ে ওঠে হজরত আদম (আ.) ও তার স্ত্রী হজরত হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে। পরিবারের সদস্য প্রথমত তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জন ছিলেন। সৃষ্টির পর আল্লাহতায়ালা এ পরিবারকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম! তুমি আর তোমার স্ত্রী দু’জনেই জান্নাতে বসবাস করো।’ -সুরা আল বাকারা : ৩৫

এরপর তারা পৃথিবীতে আসেন। তাদের থেকে জন্ম নেয় সন্তান-সন্ততি। এভাবে পৃথিবীতে পরিবার ও পারিবারিক ব্যবস্থার সূচনা হয়। পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাদের দুই জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ -সুরা আন নিসা : ১

বর্ণিত আয়াত থেকে বুঝে আসে যে, পারিবারিক বন্ধন থেকেই মানববংশ সম্প্রসারিত হয়েছে। যদি সবজাতি ও গোত্রের লোকেরা বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তবে সে পরিবার সমাজে সর্বোত্তম আদর্শ পরিবার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। যেখানে বইতে থাকে শান্তির ফল্গুধারা। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বিচরণ হবে সুখকর ও আনন্দময়।

পরিবারের সদস্যরা যখন আল্লাহর দেওয়া দায়িত্বানুভূতি সম্পর্কে সজাগ থাকবে। স্ত্রী তার অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে লাভ করবে। স্বামী যখন স্ত্রীর নিকট তার অধিকার পাবে, সন্তান বাবা-মায়ের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য ও তাদের অধিকার লাভ করবে, আত্মীয়-স্বজন যখন পরস্পরের যথাযথ সম্মান মর্যাদা পাবে, তখন কোনো স্ত্রী আর তার অধিকারের দাবিতে প্রকাশ্য জনপথে আন্দোলনে বের হবে না, কোনো স্বামী ভালোবাসা ও সুন্দর জীবন-যাপনে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হবে না, কোনো সন্তানই বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করবে না এবং আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্কের দৃঢ়তায় আল্লাহর রহমত, বরকত ও অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকবে। শুধু তাই নয়- ইসলাম নির্দেশিত পারিবারিক জীবন হলো- আল্লাহর মহা অনুগ্রহ।

মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত পারিবারিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হলে সমাজ থেকে মহামারির আকার ধারণকারী পরকীয়া, মাদকাসক্তি, ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা, অবৈধ ভালোবাসায় ব্যর্থদের আত্মহত্যাসহ সবপ্রকার অপরাধ প্রবণতা এবং জীবনের শেষ সময়ে বৃদ্ধাশ্রমের মতো দুঃখী জীবন-যাপন চিরতরে নির্মূল হবে।

তাই একটি সুন্দর ও আদর্শ পরিবার গঠনের লক্ষ্যে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনাসমূহ মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের অপরিহার্য দাবি।

আদর্শ ও উত্তম পরিবার গঠনে পরিবারের দায়িত্বশীলদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আর প্রচণ্ড অস্থির একটা পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। আর এই অস্থির সময়ে সবচেয়ে অবহেলিত, উপেক্ষিত একটা টার্ম হচ্ছে- পরিবার। পরিবারগুলো এখন যখন তখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মনে রাখতে হবে, পরিবার হচ্ছে- সমাজ কাঠামোর মূল ভিত্তি, সুখী পরিবার একটি সুখী সমাজ বা রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত। আর একটি সুন্দর পরিবার গঠনের পূর্বশর্ত হচ্ছে- পরিবারকে ইসলামের আদলে গড়ে তোলা।

;