রমজানে পাপ ও অপচয়ের কুফল



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

রমজান মাসে ইবাদত ও ভালো কাজের জন্যে যেমন সুসংবাদ ও সুফল রয়েছে, রয়েছে বহুগুণ সাওয়াবে নিশ্চয়তা, তেমনি রমজানের মতো পবিত্র মাসে পাপ ও অপচয়ের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি ও বিপদ। বস্তুত পাপ ও অপচয় পরস্পর সম্পর্কিত। পাপ কাজে অর্থ, শরীর, স্বাস্থ্য, চাহিদা, সময় ব্যয় করা পাপ তো বটেই অপচয়ও বটে। অতএব যেকোনো পাপই সঠিক ব্যয়ে বদলে অপচয়কে চিহ্নিত করে। আবার যেকোনো অপচয়ই পাপের দিকে ধাবিত করে।

গভীরভাবে চিন্তা করলে অপচয় ও পাপের মধ্যে সম্পর্ক এবং অপচয়ের কারণে পাপের আধিক্য ও ধ্বংসের বিষয়গুলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও জাতির জীবনে পরিলক্ষিত হয়। অপচয়ের মাধ্যমে সংঘটিত পাপের কারণে অতীতে বহু মানুষ ও জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা অপচয়ের মতো ঘৃণিত পাপ থেকে বিরত থাকার জন্যে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

‘তোমরা অপব্যয় করো না, নিশ্চয় আল্লাহ অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (সুরা আনআম: আয়াত ১৪১)।

‘তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার পালনকর্তার অকৃতজ্ঞ’ (সুরা বনী ইসরাঈল: আয়াত ২৬-২৭)।

অপচয় মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। টাকা-পয়সা থাকলে সেটাকে কারণে-অকারণে খরচ করা মানুষের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। নিজের দম্ভ, আভিজাত্য, আর্থিক সাফল্য জাহির করার জন্য মানুষ অপচয়মূলক অনেক খরচ করে এবং যার মাধ্যমে নিজের প্রচার ও আমিত্বকে প্রদর্শন করতে চায়। নিঃসন্দেহে এই অপচয় একটি বড় পাপ, যা হিংসা, অহঙ্কার, গর্ব প্রভৃতি বড় বড় পাপের জন্ম দেয়। যে কারণে অপচয় ও অপব্যয় সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।

সারা বছরের অপচয়-অপব্যয় এবং আমিত্ব রমজান মাসেও বহু লোক বহাল রাখে। বরং রমজান যে কৃচ্ছ্বতার মাস, এই মূল সত্যটিকেই অনেকে ভুলে যায়। বেশি বেশি খাবার, বিভিন্ন ধরনের পোষাক রমজানে অনেকের স্টাইলে পরিণত হয়। বহু খাবার নষ্ট করে ডাস্টবিনে ফেলে দিতেও দেখা যায়। বিশেষত ইফতার ও সাহরিতে বহু আইটেম সাজিয়ে রাখা হয়, যার অধিকাংশ অর্ধ-ব্যবহৃত হয়। অভাবী, অসহায় মানুষকে না দিয়ে খাবার নষ্ট করা বা কিয়দাংশ খেয়ে খাবার অপচয়-অপব্যয় করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে যেমন বিরাট পাপ, তেমনি নৈতিক দিক থেকেও মহা অপরাধ। কারণ, মানুষকে অভুক্ত ও ক্ষুধার্ত রেখে অপচয়-অপব্যয় করার অধিকার কারোই থাকতে পারেনা। এহেন অপকর্ম দ্বীন, ধর্ম, আইন, কানুনের দিক থেকে শাস্তিযোগ্য হওয়াই উচিত।

অথচ আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার অনুগত ও নেক বান্দা অপচয়-অপব্যয়ের কাছ দিয়েও যাবে না, যেমনভাবে যাবে না পাপের কাছ দিয়েও। বরং তারা হবে এমন গুণে গুণান্বিত, যা আল্লাহ সোবহানহু তায়ালা পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করেছেন:

‘এরা শুধু আল্লাহর ভালোবাসায় মিসকিন, এতিম ও কয়েদিদের খাবার দেয়। (খাবার দেবার সময় এরা বলে) আমরা শুধু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য তোমাদের খাবার দিচ্ছি। আমরা তোমাদের কাছে কোনোরূপ প্রতিদান চাই না, না চাই কোনো রকম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আমরা তো সে দিনটির বিষয়ে আমাদের মালিককে ভয় করি, যেদিনটি হবে অতীব ভয়ঙ্কর’ (সুরা দাহর: ৮-১০)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

‘শেষ বিচারের দিবসে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছি, তুমি আমাকে খাবার দাওনি। মানুষ বলবে, আপনাকে কিভাবে খাবার খাওয়াবো? আপনি তো জগতের প্রতিপালক। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, তুমি তাকে খাবার দাওনি। যদি তুমি তাকে খাবার দিতে, তাহলে আমার কাছে তার সাওয়াব পেতে’ (মুসলিম শরিফ: ২৫৬৯)।

শুধু অর্থ-বিত্তের দিক থেকেই নয়, অন্যান্য দিক থেকেও রমজান মাসে রোজা রেখে অপচয়ে লিপ্ত হয় বহু মানুষ। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো অধিক ঘুমানোর মাধ্যমে মূল্যবান সময়ের অপচয়। অনেকেই রমজান মাসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘুমানো দ্বারা রোজাকে হাল্কা এবং সময়ের অপচয় করে। বিশেষ করে, দিনের বেলায়। অনেক রোজাদার তাদের দিনগুলোকে আলস্য ও অবহেলায় অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ, ঘুম ও বিশ্রামে কাটায়। আবার অনেকে অফিস-আদালতে বা কর্মক্ষেত্রে অযথা কথাবার্তা, আড্ডার মাধ্যমে রমজানের দামি সময়গুলোকে নষ্ট করে। বহুজন এমন আছে, যারা হাট-বাজারে মুখরোচক ও রসনা নিবৃত্তকারী খাবারের সন্ধানে রমজানের অধিকাংশ সময় নষ্ট করে ফেলে। আর মেয়েদের মধ্যে ঈদকে সামনে রেখে রমজানের বৃহদাংশ সময়ই মার্কেটিং-এর নামে অর্থ ও সময় অপচয় করার প্রবণতাও লক্ষণীয়।

বস্তুতপক্ষে, রমজানের সময় টাকা-পয়সা, সময় ইত্যাদি চার ধরনের পন্থায় অপচয় বা অপব্যয় হয়ে থাকে। যেগুলো হলো:

*   গোনাহের ক্ষেত্রে অপচয় হলো টিভি, মোবাইলে অশ্লীলতা দেখে বা পরচর্চা, পরনিন্দা ইত্যাদি গোনাহের মাধ্যমে রমজানের অতিমূল্যবান সময়কে অপব্যয়-অপচয় করে বোকার মতো সাওয়াবের বদলে পাপ কামানো এবং শাস্তির ভাগীদার হওয়া।

*   সরাসরি পাপ না করলেও আলস্য, অবহেলায় রমজানের মূল্যবান সময় নষ্টকারী, যারা রমজান পেয়েও আমল করতে না পারার জন্য আফসোসকারী হবে।

*   রমজানে ভোগ-বিলাসের জন্য কিংবা লোক দেখানোর জন্য খাবার, পোষাকে টাকা-পয়সা অপচয়কারী, যারা একই সঙ্গে শাস্তি ও আফসোসের শিকার হবে।

*   সামাজিকতা ও আনুষ্ঠানিকতার নামে নিজের সময়কে নষ্টকারীরা নিজের প্রয়োজনীয় আমল না করার জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

অতএব, যেভাবে বা যে পন্থায় হোক, অপচয় সর্বদা পরিতাজ্য এবং পাপের নামান্তর। বছরের সব সময় তো বটেই, রমজানে অবশ্যই সময়, অর্থ, কথা, কাজ ইত্যাদি যাবতীয় ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয়ের কবল থেকে মুক্ত থাকা প্রতিটি রোজাদার নর-নারীর অবশ্য কর্তব্য। জীবনের সর্বক্ষেত্রে অর্থ, সময়, সম্পদ, শক্তি ও চরিত্রের অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষত, তরুণ-যুবকগণ এই অপচয়ের কুফলের কারণে জীবনের সাফল্য লাভে বঞ্চিত হয় এবং অতি মূল্যবান স্বাস্থ্য-সম্পদ হারায়। ফলে অনেকের জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো কাটে অপচয় ও পাপের মাধ্যমে অর্জিত ক্ষতির জন্য কষ্টকর যন্ত্রণা ভোগ করে এবং হায়-আফসোস করার মাধ্যমে।

এসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে রমজানে অধিকতর সতর্ক হতে হবে। অপচয় ও পাপ যে জীবনে আসতে না পারে, সেজন্য হুশিয়ার থাকতে হবে। বিশেষত মাহে রমজানে অপচয় ও পাপ এসে যেন মূল্যবান ও দামি সময় আর আমলের সুযোগ নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য বিশেষভাবে তৎপর ও মনোযোগী থাকা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর একান্ত কর্তব্য হওয়া উচিত।   

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;