রমজান ও দ্বীনের আহ্বান বা দাওয়াত



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলাম ধর্ম সকল মানুষের জন্য আলো স্বরূপ আর মুসলমানগণ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদানকারী। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানগণ সমগ্র মানব জাতিকে কল্যাণ ও সরল-সুপথে আহ্বানকারী। বস্তুত পক্ষে, দ্বীনের পথে দাওয়াত দেওয়া বা আহ্বান করা সকল নবীর কাজ রূপে স্বীকৃত। সকল নবী-রাসুলই একজন দাঈ বা আহ্বানকারী তথা শিক্ষক রূপে এসেছিলেন। সকলেই নিজ নিজ আমলের মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে তৌহিদের এই অম্লান বাণী প্রচার করেছিলেন:

‘তোমরা সবাই আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য নেই’ (সুরা আরাফ: আয়াত ৫৯)।  

আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার  দ্বীনের প্রতি আহ্বান জানানোর জন্য কেউ কোনো প্রতিদান কামনা করেননি। পরিস্কার ভাষায় বলেছেন:

‘আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না’ (সুরা শোয়ারা: আয়াত ১০৯)।

এই আহ্বান ও দ্বীনের প্রতি দাওয়াতের গুরুত্বের পাশাপাশি তার পদ্ধতি ও নীতিমালা সম্পর্কে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

‘আপনি আপনার রব (প্রভু)-এর পথে প্রজ্ঞা এবং উত্তম উপদেশের সাথে মানুষকে ডাকুন এবং উত্তম পন্থায় বিতর্ক করুন’ (সুরা নাহল: আয়াত ১২৫)।

‘হে নবী, আপনি মানুষকে বলে দিন এ হচ্ছে আমার পথ, আমি মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করি। আমি এবং আমার অনুসারীরা পূর্ণাঙ্গ সচেতনতার সাথে এ পথে আহ্বান জানাই। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র এবং আমি কখনোই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সুরা ইউসুফ: আয়াত ১০৮)।

‘তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন্ ব্যক্তির হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে, নেক কাজ করে এবং বলে আমি মুসলমানদেরই একজন’ (সুরা হামিম সাজদাহ: আয়াত ৩৩)।

ফলে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হলো আল্লাহর পথে, দ্বীনের পথে, সৎ কাজের পথে এবং অসৎ কাজের বিরুদ্ধে আহ্বান করা বা দাওয়াত দেওয়া। রমজান মাসের পবিত্র পরিবেশে এ দাওয়াত বা আহ্বানের কাজ আরো বৃদ্ধি করাই ঈমানের দাবি এবং আমল হিসাবে অধিক সাওয়াবের মাধ্যম। ইসলামী স্কলারদের মতে দাওয়াতের পাঁচটি আদব, পাঁচটি পন্থা এবং পাঁচটি ফলাফল রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়ে সঠিক ও ইসলাম সম্মত ভাবে আহ্বান বা দাওয়াতের কাজ করা যেতে পারে। কুতর্ক বা চিৎকার করে নয়, মিষ্টভাষা, উত্তম উপদেশ ও হেকমতের সঙ্গেই দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করা ইসলামের নির্দেশিত বিধান। এ কারণে দাওয়াতের আদব, পন্থা ও ফলাফল সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

#দাওয়াতের আদব পাঁচটি

১. ইখলাস ও আন্তরিকতার মাধ্যমে দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন: ‘এদের এ ছাড়া আর কোন কিছুর আদেশ দেওয়া হয়নি, তারা আল্লাহর জন্য নিজেদের দ্বীন ও ইবাদত নিবেদিত করে নেবে’ (সুরা বায়্যিনাহ: আয়াত ৫)।

২. দাওয়াত ও আমলের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। অর্থাৎ দাওয়াত দেওয়ার আগে নিজেকে সেসব বিষয়ে আমল করতে হবে। কেননা, কথার সাথে কাজের মিল না থাকাটা অপমানকর, লজ্জাজনক এবং মোনাফেক বা প্রবঞ্চকের লক্ষণ। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন: ‘তোমরা কি অন্যদের সৎকাজের আদেশ দাও আর নিজেদের ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত করে থাকো। তোমরা কি বুঝবে না!’ (সুরা বাকারা: আয়াত ৪৪)।

৩. দাওয়াত ও তাবলিগের ক্ষেত্রে ন¤্রতা ও কোমলতা অবলম্বন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করা হয়েছে: ‘তোমরা তার সাথে নরম ভাষায় কথা বলো, যাতে করে সে উপদেশ গ্রহণ করে, অথবা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো’ (সুরা ত্বাহা: আয়াত ৪৪)। আরো ইরশাদ হয়েছে: ‘আল্লাহর অসীম দয়ায় আপনি তাদের জন্য ছিলেন কোমল প্রকৃতির মানুষ। এর বিপরীতে যদি আপনি নিষ্ঠুর ও পাষাণ হৃদয়ের মানুষ হতেন, তাহলে এসব লোক আপনার আশপাশ থেকে দূরে চলে যেতো’ (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৫৯)। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এই নির্দেশ দিয়েছেন যে: ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও, তাদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করো না’ (মুসলিম শরিফ: ১৭৩২)।

৪. দাওয়াত বা আহ্বানের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে শুরু করতে হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও দাওয়াতের ক্ষেত্রে এরূপ করতেন। যেমন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামানে প্রেরণ করার সময় এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছিলেন: ‘তুমি আহলে কিতাবের এক গোত্রের কাছে যাচ্ছো। তোমার সর্বপ্রথম দাওয়াত যেন হয় এ কথার সাক্ষ্য দেওয়ার দিকে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আর আমি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসুল। যদি তারা তোমার এ দাওয়াতে সাড়া দেয়, তাহলে তাদের এ সংবাদ দাও যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন’ (মুসলিম শরিফ: ১৯)।

৫. প্রত্যেককে তার মান ও প্রয়োজন অনুসারে দাওয়াত প্রদান করা। অর্থাৎ শহুরে লোকদের জন্য দাওয়াত বা আহ্বানের ভাষা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ আর গ্রামীণ জনতার জন্য তা একই রকম হলে বোধগম্য হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এজন্য স্থান, কাল, পাত্র অনুযায়ী দাওয়াতের ভাষা ও বক্তব্য নির্ধারণ করা অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন: ‘যাকে হিকমত ও প্রজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৬৯)।

#দাওয়াতের পন্থা পাঁচটি

১. যাকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে, এককভাবে তার প্রতি মনোযোগী হয়ে দাওয়াত দিতে হবে, যাতে পুরো আলোচনায় তিনি সম্পৃক্ত বোধ করেন। ব্যক্তিগত দাওয়াতের ক্ষেত্রে এ পন্থা উপযোগী।

২. পাবলিক লেকচার বা সমষ্টিকে দাওয়াত দেওয়ার সময় অবিতর্কিত মৌলিক বক্তব্য পেশের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

৩. দাওয়াতের আগে সঠিক প্রশিক্ষণ ও নোট নেওয়া, যাতে কোরআন ও হাদিসের সঠিক রেফারেন্স ও অর্থ প্রদান করা যায় এবং কোনোরূপ বিভ্রান্তির সৃষ্টি যাতে না হয়।

৪. শুধু বক্তব্যের উপর নির্ভর না করে লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমেও দাওয়াতের কাজকে অগ্রসর করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৫. আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রচারমাধ্যমকে বিশুদ্ধ ও সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে দাওয়াতের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। যুগের চাহিদা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নয়নকে দ্বীন, ইসলাম ও দাওয়াতের কাজে লাগানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

#দাওয়াতের পাঁচটি ফল

১. সকল নবী-রাসুলের দ্বীনী ও আদর্শিক উত্তরাধিকারী লাভ করা যায়। কারণ, তারাই ছিলেন প্রথম ও অগ্রণী দাঈ এবং দ্বীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র তুল্য ব্যক্তিত্ব।

২. দাঈ-এর জন্য সকল মাখলুক ইস্তেগফার করতে থাকে। যে ব্যক্তি মানুষের দ্বীনের জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করে, তার নিজের দ্বীন ও ঈমান সর্বাগ্রে মজবুত হয়। যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণের কথা বলে দাওয়াত দেয়, তার কল্যাণও সর্বাগ্রে সুনিশ্চিত হয়। মাখলুকের সকলের সঙ্গে সঙ্গে গভীর সমুদ্রের তলদেশের মাছও পর্যন্ত দাঈ বা আহ্বানকারীর জন্য দোয়া এবং মাগফেরাত কামনা করতে থাকে।

৩. যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে, তাদের সংখ্যার হিসাবে দাওয়াত দানকারী সাওয়াব লাভ করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথে ডাকবে, সে তার দাওয়াতের অনুসারীদের সাওয়াবের অনুরূপ সাওয়াব পাবে। এটা তাদের সাওয়াবের মধ্যে কোনো হ্রাস ঘটাবে না’ (মুসলিম শরিফ: ১০১৭)।

৪. যাকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে, এক সময় সে নিজেই দাঈ হয়ে যায়। ফলে দাওয়াত জারি থাকে এবং দাওয়াতের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে জড়িতরা অবিরাম সাওয়াব পেতে থাকে।

৫. যে মানুষকে দ্বীন, কল্যাণ, সৎকর্মের দাওয়াত দেয়, তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে এবং নেতৃত্বে আসীন করতে চায়। মহান আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নেককারদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, তারা দাওয়াত দেয় এবং বলে ‘আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন’ (সুরা ফোরকান: আয়াত ৭৪)।

রমজানে মাসে রোজা রেখে দ্বীন ও ইসলামের পক্ষে দাওয়াত দেওয়ার চেয়ে লাভজনক ও সাওয়াবের কাজ আর কিছুই হতে পারে না। কথা বলা ও লেখার মাধ্যমে, চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে দ্বীন, ইসলাম, ঈমান, আমল এবং যাবতীয় সুকর্মের পক্ষে আর কুকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া একজন আদর্শ দাঈ-এর দায়িত্ব। প্রতিটি মুসলমানই নিজের সাধ্যমতো এ দায়িত্ব সারা বছর তো বটেই, মাহে রমজানের সময় বিশেষভাবে পালন করতে পারেন এবং রহমত, বরকত, নাজাত ও মাগফেরাতের মাহে রমজানকে নিজের জীবনে সার্থক করতে পারেন।

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;