উদর বা পেটের রোজা



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

রোজার মূল দাবি হলো পানাহার ত্যাগ করা এবং রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করা। পানাহারের সঙ্গে উদর বা পেটের সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ রসনা তৃপ্ত করার জন্য উদর পূর্তি করে খাবার গ্রহণে ইচ্ছুক। রোজায় তা করা যায় না। চোখের সামনে এবং হাতের নাগালের মধ্যে মুখরোচক, স্বাদু খাবার থাকলেও সেগুলো রোজা পালনকালে গ্রহণ করা যায় না। তদুপরি প্রতিটি মুসলমানকে খাবারের হালাল ও হারাম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। কারণ, খাবার হালাল-হারামের বিষয়ে সতর্ক থাকা এজন্য জরুরি যে, তা মানুষের জীবন ও চরিত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। হালাল খাবারের যে পবিত্রতা ও ইতিবাচক শক্তি, তা হারাম খাবারে নেই। হারাম খাবার বলতে নিষিদ্ধ পশুর মাংস ও পানীয় যেমন আছে, তেমনি হারাম উপার্জনের মাধ্যমে আহরিত খাবারও তেমনি ভাবে রয়েছে। অর্থাৎ হারাম উপার্জনের মাধ্যমে হালাল খাবার কিনে খেলেও সেটা হালাল হয় না, হারাম হয়। মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন:

‘হে রাসুলগণ, তোমরা পাক পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো’ (সুরা মুমিনুন: আয়াত ৫১)।

ইসলামী শরিয়তে ও জীবন ব্যবস্থায় হালাল বা পাক-পবিত্র বস্তু গ্রহণে রয়েছে উৎসাহ। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা বলেছেন:

‘হে বিশ্বাসীগণ, আমি যেসব পাক জিনিস তোমাদের দান করেছি, তা তোমরা খাও এবং আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করো, যদি তোমরা আল্লাহর ইবাদত করে থাকো’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৭২)

পাক-পবিত্র জিনিস বলতে সেসব বস্তুকেই গণ্য করা হয়, যেগুলো আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনদের জন্য হালাল করেছেন। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা আরো বলেছেন:

‘তিনি তাদের জন্য যাবতীয় পাক জিনিসকে হালাল ও নাপাক জিনিসগুলোকে তাদের জন্য হারাম ঘোষণা করেন’ (সুরা আরাফ: আয়াত ১৫৭)।

ফলে মুসলমানদের খাবারের ব্যাপারে সদা-সর্বদা হালাল ও হারাম বিচার করতে হয়। পেটে বা উদরে কোন খাবার গ্রহণ করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে সর্বক্ষণ সতর্ক থাকতে হয় মুসলমান নর-নারীকে। আর রোজার সময় এ ব্যাপারে অধিকতর মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছণীয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পেটের রোজা হলো হারাম খাবার থেকে বেঁচে থাকা। পাশাপাশি রোজা পালনকালে দিনের বেলা সব ধরনের খাদ্য ও পানীয় থেকে বেঁচে থাকা, তা না হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে, হারাম খাবার থেকে শুধু দিনের বেলা বেঁচে থাকলেই চলবে না, রাতের বেলা ইফতার ও সাহরির সময়ও বেঁচে থাকতে হবে, যেমনভাবে জীবনের বাকী সময়ের দিন ও রাতে হারাম খাবার থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে:

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্তে সফর করে, যার দেহ ধূলি-মলিন, চুল উসকো-খুসকো। সে ব্যক্তি আসমানের দিকে দু’হাত তুলে কাতর স্বরে বলে, হে প্রভু, হে প্রভু। অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম এবং সে হারামই খেয়ে থাকে। তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে’ (মুসলিম শরিফ: ১০১৫)।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, একদিন তিনি খাদেমের দেয়া খাবার খেয়ে খাদেমকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এ খাবার কোথায় পেলে? খাদেম উত্তর দিল যে, সে বিধর্মী থাকা অবস্থায় একজনের ভাগ্য গণনা করেছিল। সে গণনার মজুরি বকেয়া ছিল। এ খাবার হলো সেই বকেয়া মজুরি। কথাাট শ্রবণ করে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিজের গলার মধ্যে আঙুল দিয়ে বমি করে পেটের সব খাবার বের করে দিলেন। হারাম খাবার সম্পর্কে এমন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন ইসলামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। কারণ, আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা কর্তৃক ঘোষিত হারাম জিনিস এবং হারাম অর্থে কেনা জিনিস খাওয়া ইসলামে সুস্পষ্টভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ জন্তু ও পানীয়ের মতোই সুদ, ঘুষ, জালিয়াতি, আত্মসাৎ, জুলুম, অবৈধ ও নিষিদ্ধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে সংগৃহীত খাবার খাওয়াও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতিমের মাল বা কারো হক বা সরকারি বা বেসরকারি সম্পদ চুরি করে সেসব অর্থে কেনা খাবার হারাম। সে অর্থে ভালো বা মন্দ, যা-ই করা হোক, তা আজাবের কারণ। ফলে  স্বাভাবিক অবস্থার মতো রোজার সময়েও এসব নিষিদ্ধ খাবার ও অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে সংগৃহীত খাবার পরিতাজ্য। মনে রাখা দরকার যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

‘কারো জন্য নিজ হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার নেই’ (বোখারি শরিফ: ১৫২)।

আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা আরো ইরশাদ করেছেন:

‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৭৫)।

‘তোমরা কখনো এতিমের মালের নিকটবর্তীও হবে না, তবে উদ্দেশ্য যদি নেক হয়’ (সুরা আনয়াম: আয়াত ১৫২)।

‘যারা অন্যায়ভাবে এতিমের মাল খায়, তারা যেন আগুন দিয়েই নিজেদের পেট ভর্তি করে। অচিরেই এ লোকগুলো জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে’ (সুরা নিসা: আয়াত ১০)।

‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করো না। আবার জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদের কোনো অংশ ভোগ করার জন্য বিচারকদের সামনে ঘুষ হিসেবেও উপস্থাপন করো না’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৮)।

‘যারা সুদ খায় তারা সে ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান নিজ পরশ দ্বারা মোহাচ্ছন্ন করে দিয়েছে’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৭৫)। 

‘তাদের অনেককেই তুমি দেখতে পাবে গোনাহ করা এবং বিদ্রোহ ও হারাম মাল ভোগ করার কাজে এরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে চলেছে, এরা যা করে তা বড়ই নিকৃষ্ট কাজ’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ৬২)।   

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

‘আল্লাহ তায়ালা সুদদাতা, সুদখোর, সুদের লেন-দেন-লেখক, সুদের সাক্ষীর উপর অভিসম্পাদ করেছেন। আল্লাহর রাসুল বলেন, তারা সবাই সমান’ (মুসলিম শরিফ: ১৫৯৮)।

‘ঘুষদাতা ও ঘুষ-গ্রহীতার উপর আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাদ করেছেন’ (আবু দাউদ শরিফ: ৩৫৮০)। 

অতএব, হারাম ও অবৈধ উপার্জন এবং তা দ্বারা ক্রয়কৃত খাদ্য সর্বাবস্থায় সম্পূর্ণ রূপে হারাম বা অবৈধ। যার মধ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্যও শামিল। এসব অবৈধ ও হারাম উপার্জনের কেনা বা সরাসরি হারাম খাবার রোজার সময়ে বা স্বাভাবিক-সাধারণ পরিস্থিতিতেও খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলেও তা হারামই এবং সেগুলো রোজাকে বরবাদ করে দেওয়ার কারণ হবে। একাধিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব হারাম, অবৈধ ও সন্দেহযুক্ত খাবারের বিষয়ে চরম সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। এমনও দেখা গেছে যে, নিয়মিতভাবে অবৈধ উপার্জন ও হারাম খাবার গ্রহণের ফলে বহু মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়েছে। নিজের দ্বীন বিনষ্ট হয়েছে। হৃদয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে এবং সন্তান-সন্ততি ধ্বংস হয়েছে।

বস্তুতপক্ষে, আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা যেসব খাবার হারাম করেছেন, সেগুলো বিজ্ঞানের পরীক্ষায় ক্ষতিকর করে প্রমাণিত হয়েছে। যার মধ্যে শুকরের মাংস ও মদ অন্যতম, যাতে খারাপ ছাড়া কিছুই নেই। তেমনিভাবে, আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত হারাম বা অবৈধ উপার্জনের দ্বারা খাবার গ্রহণ করা কেবল আখেরাতের শাস্তির কারণই নয়, দুনিয়াতেও লাঞ্ছনার কারণ এবং মানবজীবনকে ধ্বংসের জন্যে যথেষ্ট। ফলে বছরের অন্যসব সময়ের মতো মাহে রমজানের সময় পেট বা উদরকে সম্পূর্ণভাবে এসব অবৈধ ও হারাম উপার্জন ও খাদ্য থেকে সম্পূর্ণভাবে পবিত্র রাখা একান্ত অপরিহার্য্য।

   

হাতে ভর দিয়ে কাবা তাওয়াফ করলেন সেই ঘানিম



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঘানিম ফের বিশ্বকে মুগ্ধ করলেন দুই হাতে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করে

ঘানিম ফের বিশ্বকে মুগ্ধ করলেন দুই হাতে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করে

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব কাতারের নাগরিক ঘানিম মুহাম্মদ আল মুফতাহ। সবশেষ ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘানিম কোরআন তেলাওয়াত করে বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করেছিলেন। ২১ বছর বয়সী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক যুবকের শরীরের অর্ধেক অংশ নেই। তার পরও তার কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ বিশ্ববাসী। সেই ঘানিম ফের বিশ্বকে মুগ্ধ করলেন দুই হাতে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ঘানিম আল-মুফতাহ ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যান। ওমরাহ পালনের সময় মসজিদে হারামের প্রশাসন তাকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়। নিরাপত্তা কর্মীরাও তাকে সাহায্য করেন। তার জন্য ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হলেও তিনি হাতের সাহায্যেই স্বাচ্ছন্দ্যে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন।

ঘানিম আল-মুফতাহ বলেন, ‘আমার পা না থাকলে কী হবে, আমার আল্লাহ আমাকে শক্তিশালী হাত দিয়ে কৃতজ্ঞ করেছেন। এ হাতই আমার পায়ের বিকল্প। আমি আল্লাহর দেওয়া এ হাত দিয়েই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবো।’

এ সময় পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতও তিনি তেলাওয়াত করেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার শক্তির বেশি বোঝা দেন না।’ -সরা আল-বাকারা : ২৮৬

এর আগেও ২০১৭ জানুয়ারি মাসে ঘানিম পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। তথনও তিনি হাতে ভর দিয়ে পবিত্র কাবা তাওয়াফ করেন।

ঘানিম আল-মুফতাহ একজন ইউটিউবার এবং উদ্যোক্তা। ২০১৭ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে কাতারের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ঘানিম গত বিশ্বকাপে ফিফার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হন।

ঘানিম তার পরিবারের সাহায্যে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠন করেন। তার মতো যারা পায়ে চলাচল করতে পারেন না, সংস্থাটি থেকে তাদেরকে হুইলচেয়ার উপহার দেয়া হয়। তিনি একজন ‘মানবদরদি নায়ক’ হিসেবে গোটা পৃথিবীতে পরিচিত। ২০১৪ সালে কুয়েতের আমির শেখ শাবাহ আল আহমদে আল শাবাহ তাকে ‘শান্তির দূত’ নামে অভিহিত করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ ফলোয়ার রয়েছে তার।

;

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বাংলাদেশির ঈর্ষণীয় সাফল্য



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বাংলাদেশির ঈর্ষণীয় সাফল্য

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বাংলাদেশির ঈর্ষণীয় সাফল্য

  • Font increase
  • Font Decrease

মিসরের বিশ্ববিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদিস বিভাগের সকল বিদেশি স্নাতকদের মধ্যে চার বছরের সমষ্টিগত ফলাফলে শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশি তিন শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অফিসিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে স্নাতক মেধা তালিকা প্রকাশ করে তাদের অভিনন্দন জানায়৷ প্রকাশিত ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা যায়।

তথ্যমতে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক থিওলজি ফ্যাকাল্টির হাদিস ও উলুমুল হাদিস ডিপার্টমেন্টের স্নাতক চার বছরের সমষ্টিগত ফলাফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেরা দশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশি তিন শিক্ষার্থী।

এর আগেও আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় হাদিস ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এ সাফল্য এক গৌরবময় সংযোজন।

স্নাতক সেরা দশে জায়গা করে নেয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম দ্বিতীয় হয়েছেন। তার প্রাপ্ত গড় নম্বর ৯০ শতাংশ। তিনি পাবনা জেলার গোলাম মোস্তফার সন্তান।

মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন জাফর উল্লাহ, প্রাপ্ত নম্বর ৯০ শতাংশ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আব্দুল হামিদের সন্তান।

মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জনকারী মুহাম্মদ আব্দুস সালাম পেয়েছেন ৮৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ নম্বর। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার মাওলানা আবুল বাশারের সন্তান।

উল্লেখ্য, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অনুষদ ও ধর্মতত্ত্ব অনুষদের অন্য বর্ষগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গৌরবময় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন৷ এদিকে আল-আজহারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (সানুভি) পরীক্ষায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সেরা দশের সাতজনই ছিল বাংলাদেশের শিক্ষার্থী।

মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম তার সফলতার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, সর্বপ্রথম আমি শোকরিয়া আদায় করছি সেই মহান রবের, যার অশেষ কৃপায় এই অর্জন। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি বাবা-মা ও উস্তাদগণ এবং সেসব প্রিয়জনদের প্রতি যারা আমাকে আমার লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত পৌঁছতে সার্বিকভাবে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন। জীবনের এই অর্জন মোটেই কাঙ্খিত লক্ষ্যবস্তু নয়; তবে জীবনের পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য এটা অনুপ্রেরণা। আমার স্বপ্ন বিশ্বময় ইসলামের খেদমত এবং দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য কাজ করা৷

;

গফরগাঁওয়ের খানকায়ে মাদানিয়ায় ৩ দিনের ইসলাহি জোড় নভেম্বরে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
খানকায়ে মাদানিয়ার মুতাওয়াল্লি মুফতি আনোয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ পরামর্শ সভা

খানকায়ে মাদানিয়ার মুতাওয়াল্লি মুফতি আনোয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ পরামর্শ সভা

  • Font increase
  • Font Decrease

আলেম-উলামাদের প্রাণকেন্দ্ৰ ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী এলাকা গফরগাঁওয়ের খানকায়ে মাদানিয়ার ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক ইসলাহি জোড়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

রবিবার (১ অক্টোবর) বাদ মাগরিব খানকায়ে মাদানিয়ার মুতাওয়াল্লি মুফতি আনোয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ পরামর্শ সভায় বার্ষিক ইসলাহি ও তালিমি জোড়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পরামর্শ সভা সঞ্চালনা করেন মাওলানা কাউসার আহমদ।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ নভেম্বর (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) খানকায়ে মাদানিয়ার ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক ইসলাহি ও তালিমি জোড় অনুষ্ঠিত হবে এবং রবিবার বাদ ফজর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে জোড়ের সমাপ্তি হবে।

৩ দিনের এই ইসলাহি ও তালিমি জোড়ে দেশের বিখ্যাত আলেমরা উপস্থিত হয়ে কোরাআন-হাদিসের আলোকে বয়ান পেশ করবেন। ইসলাহি জোড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য সালেকিন জামাতবদ্ধভাবে তিন দিন থাকার জন্য আগমন করেন। জোড়ের ৩ দিন প্রত্যেক নামাজের পর মাসনুন সুরা পাঠসহ বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব শায়খের তত্বাবধানে ছয় তাসবিহর জিকিরের আমল হয়। মহতি এই আয়োজনে নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির ও তাসবিহ-তাহলিলের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে তালিম দেওয়া হয়।

পরামর্শ সভায় মাওলানা বেলাল হোসাইন, মুফতি ইউসুফ জামিল, মুফতি নোমান আহমদ, মাওলানা হাসিবুল ইসলাম, মুক্তাদির সাকী চৌধুরী, খলিলুর রহমান ও রাহাত হোসাইনসহ খানকার শুভাকাঙ্খী এবং মুফতি আনোয়ার মাহমুদের কয়েকজন মুরিদ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আসআদ মাদানি রহমাতুল্লাহি আলাইহির নেক তাওয়াজ্জুতে তার খাস খাদেম ও খলিফা মুফতি আনোয়ার মাহমুদ ফেদায়ে মিল্লাতের রেখে যাওয়া আমানত সংরক্ষণ এবং আত্মশুদ্ধি, তালিম, তাজকিয়া, খেদমতে খালকসহ সমাজের সর্বস্তরে ইসলামের শাশ্বত আহ্বানকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে গফরগাঁও উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে (হালিমাবাদ) খানকায়ে মাদানিয়া প্রতিষ্ঠা করে ইসলাহি কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে খানকায় বিশ্বখ্যাত বুজুর্গ আওলাদে রাসুল সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি, সাইয়্যিদ আসজাদ মাদানি ও সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানি ভারত থেকে একাধিকবার তাশরিফ এনেছেন। এছাড়া আরো বিশিষ্ট বুজুর্গানে দ্বীন নিয়মিত তাশরিফ আনছেন এবং জনসাধারণ ও সালিকদের উদ্দেশ্যে ইসলাহি বয়ান করছেন। মানুষ তাদের থেকে ফয়েজ হাসিল করে বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে।

গত ৬ বছর ধরে চলে আসা ৩ দিনব্যাপী এই ইসলাহি জোড় অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। আগত সালেকিনদের জন্য থাকা-খাওয়ার সু ব্যবস্থা করা হয়।

;

নবী কারিম (সা.)-এর অনন্য ১০ গুণ



মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
নবী কারিম (সা.)-এর অনন্য ১০ গুণ

নবী কারিম (সা.)-এর অনন্য ১০ গুণ

  • Font increase
  • Font Decrease

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব নবীর সেরা। আকাইদে নসফি গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘নবীদের মধ্যে সেরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কেননা, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে।’ -সুরা আলে ইমরান : ১১০

সর্বোত্তম উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে দ্বীনের ক্ষেত্রে পূর্ণতার কারণে। আর দ্বীনের ক্ষেত্রে পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে নবী কারিম (সা.)-এর পূর্ণতা তথা শ্রেষ্ঠত্বের কারণে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা সব নবীর ওপর আমাকে মর্যাদা দিয়েছেন এবং সব উম্মতের ওপর আমার উম্মতকে মর্যাদা দিয়েছেন।’ -সুনানে তিরমিজি

এ মর্যাদার কারণে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিজ্ঞ যারা রয়েছেন, তাদের ইজমা ও কিয়াস শরিয়তের উৎস হিসেবে গৃহীত হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি হব বিচার দিবসে সব মানুষের নেতা।’ -সহিহ্ মুসলিম

তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি আদম সন্তানদের নেতা, এতে আমার কোনো অহংকার নেই।’ -সহিহ্ মুসলিম : ৫৯৪০

এখানে আদম সন্তান বলতে সব মানুষ বোঝানো হয়েছে। এভাবেই আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় হাবিবকে নবী-রাসুলদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করার পর ব্যতিক্রমী ১০টি গুণ দান করেছেন। দুটি হাদিসে এ ১০টি গুণের বর্ণনা রয়েছে। আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, আমাকে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবী-রাসুলকে প্রদান করা হয়নি। আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন-

১. নবী কারিম (সা.)-এর চেহারা মোবারকে আল্লাহতায়ালা এমন এক আকর্ষণীয় রূপ দান করেছিলেন, যা দেখে শত্রুরা ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়ত। তাকে কিছু করার সাহস পেত না।

২. আমাকে সমগ্র দুনিয়ার চাবি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়া আমার করতলগত এবং আমার অধীন হবে। এ ক্ষমতা অন্য কোনো নবী-রাসুলকে দেওয়া হয়নি।

৩. আমার নাম রাখা হয়েছে আহমদ তথা অতি প্রশংসাকারী। এমন নাম আর কোনো নবী-রাসুলের রাখা হয়নি।

৪. আমার জন্য মাটিকে পবিত্র বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে পানির বিকল্প হিসেবে আমার উম্মতের জন্য মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ।

৫. আমার উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। -কুরতুবি

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতকে এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি। ১. সালাম, তা জান্নাতিদের অভিবাদন; ২. সারিবদ্ধ হয়ে ইবাদত করা তা ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য ও ৩. আমিন বলা। যা হজরত মুসা ও হজরত হারুন (আ.) ছাড়া কোনো নবীর সময় ছিল না। -ইবনে খুজাইমা

মুসলিম শরিফের অপর হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমাকে ছয়টি জিনিস দ্বারা অন্য নবীদের ওপর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু আগে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যতিক্রমগুলো হলো-

৬. আমাকে সংক্ষেপে বেশি অর্থবহ কথা বলার যোগ্যতা দান করা হয়েছে।

৭. আমার জন্য গণিমত তথা যুদ্ধলব্ধ মাল হালাল করা হয়েছে। যা অন্য নবী-রাসুলদের সময় হালাল ছিল না।

৮. সমস্ত জমিনকে আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্র স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে আমার উম্মতের জন্য যেকোনো স্থানে নামাজ পড়া জায়েজ। অন্য নবীদের সময় এ সুযোগ ছিল না, তাদের মসজিদে নামাজ আদায় করতে হতো।

৯. আমি সমগ্র সৃষ্টির প্রতি প্রেরিত হয়েছি। অর্থাৎ আমি হলাম বিশ্বনবী। আর কেউ বিশ্বনবী নয়। সবাই ছিলেন আঞ্চলিক এবং নির্দিষ্ট এলাকার নবী। একই সময়ে কয়েকজন নবী ছিলেন।

১০. আমার দ্বারা নবুওয়ত সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী-রাসুল আসবে না। -সহিহ্ মুসলিম

;