রমজানের রাসুলুল্লাহর আদর্শ



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান মাসে সব ধরনের ইবাদত অধিক পরিমাণে করাই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য। মাহে রমজানে হযরত জিবরাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে পবিত্র কোরআন পুনরাবৃত্তি করতেন। তদুপরি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বাবস্থায় সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন আর রমজানে তিনি আরো দানশীল হতেন। তিনি অধিক পরিমাণে দান, সাদাকা, জিকির, তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে রোজা পালনের পাশাপাশি বিশেষ ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতেন। তিনি রমজান মাসকে ইবাদত, জিকির ও তেলাওয়াতের মৌসুমে রূপান্তরিত করতেন। রমজানে দিনে রোজা রাখার পাশাপাশি সারা রাত আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার কাছে মোনাজাত, সাহায্য প্রার্থনা ও কাকুতি-মিনতিতে অতিবাহিত করতেন। রমজান মাসের নামাজগুলোতে তিনি লম্বা বা বড় আকারের সুরা তেলাওয়াত করতেন। দীর্ঘ রুকু ও সিজদা করতেন। হাবিবে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবাদতের দীর্ঘ ও কষ্টকর প্রচেষ্টা ছিল পবিত্র কোরআনের বাস্তব দৃষ্টান্ত। কারণ, আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

`হে বস্ত্র আবৃত, রাতে নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ ব্যতিত’ (সুরা মুজাম্মিল: আয়াত ১-২)।

`রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়–ন, এটা আপনার জন্য ফরজ নামাজের অতিরিক্ত একটা নামাজ। আশা করা যায়, আপনার মালিক আপনাকে প্রশংসিত মর্যাদায় মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন’ (সুরা বনি ইসরাঈল: আয়াত ৭৯)।

বস্তুতপক্ষে সমগ্র রমজান মাসকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমলে ভরপুর রাখতেন। দিনের বেলায় রোজা রাখার পাশাপাশি তিনি দাওয়াত, তালিম ও তরবিয়াতে ব্যস্ত থাকতেন আর রাতে অধিক সময় নামাজ, জিকির ও তেলাওয়াতে মশগুল থাকতেন।

রমজান মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল এই যে, তিনি নিজ চোখে চাঁদ না দেখে অথবা চাঁদ সম্পর্কে কোনো সাক্ষীর নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য না পেলে রোজা  রাখতেন না। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসকে মহাসমারোহে বরণ করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, যখন রমজানের নতুন চাঁদ দেখতেন, তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নের দোয়া পাঠ করতেন:

‘হে আল্লাহ, তুমি ঐ চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত কর নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। হে চাঁদ, আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। হেদায়েত ও কল্যাণময় চাঁদ।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫১)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহরি খাওয়ার জন্য বিশেষ তাগিদ বা উৎসাহ দিতেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

‘তোমরা সাহরি খাও, কেননা, সাহরিতে বরকত আছে’ ( বোখারি শরিফ: ১৮০১)।

‘আমাদের রোজা আর আহলে কিতাবদের (খ্রিস্টান-ইহুদি) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া আর না খাওয়া’ (মুসলিম শরিফ: ১৩১)।

অবশ্যই রাতের শেষ প্রহর অত্যন্ত মূল্যবান ও গুরুত্বপূণ। আমলের জন্য নিবিড় সময় তখন। একাগ্র চিত্তে নামাজেরও উপযুক্ত সময় তখন। তেমন একটি মোবারক সময় রোজার নিয়তে সাহরি খাওয়ার জন্য নির্ধারিত। সাহরি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা মুসলমানদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সামান্য পরিমাণে খাবার ও পানীয় দিয়ে সাহরি খাওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তদুপরি সেই সময়টি সম্পর্কে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

‘রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (সুরা জারিয়াত: আয়াত ১৮)।

‘তারা রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনাকারী’ (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৭)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যাস্তের পর পরই নিজে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং অন্যদেরকেও তাড়াতাড়ি ইফতার করতে আদেশ করতেন। ইফতারের সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার কাছে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ কামনা করে দোয়া করতেন। কারণ ‘ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না’। তিনি মাগরিবের নামাজের আগেই ইফতার করতেন।  খেজুর, খোরমা, পানি দ্বারা তিনি ইফতার করতেন। সারা দিন রোজার পর খালি পেটে উগ্র খাবারের বদলে মিষ্টিজাতীয় নরম খাবার স্বাস্থ্য ও হজমের জন্য উপযুক্ত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি কাজ ও খাদ্য প্রণালী স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অতি উত্তম ও যথোপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি রোজা অবস্থায় ভুলে পানাহার করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সেই রোজা কাজা করতে বলতেন না। এতে প্রমাণিত হয় যে, রোজায় একান্ত ভুলবশত পানাহার করে ফেললে সেই রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সনদের হাদিসে রোজা ভাঙ্গার কারণগুলো হলো, দিনের বেলা রোজা পালনের সময় ইচ্ছাকৃত পানাহার করা, শিঙ্গা লাগানো, বমি করা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, খাওয়া ও পান করার মতো যৌন সঙ্গমও রোজা ভঙ্গের কারণ। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে সফর করেছেন। সফর অবস্থায় কখনো তিনি রোজা রেখেছেন, আবার কখনো রোজা রাখেন নি। তিনি সাহাবায়ে কেরামকেও সফরাবস্থায় রোজা রাখা না রাখার এখতিয়ার দিয়েছেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে যুদ্ধের সময় রোজা না রাখার আদেশ করতেন। কারণ, এতে যুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় শক্তি থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক যুদ্ধ রমজান মাসে করেছেন। বদর যুদ্ধও রমজান মাসে সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা মুসলমানদের অকল্পনীয় সাহায্য করেন। ইসলামের সবচেয়ে বড় দুটি গাযওয়া বা যুদ্ধ রমজানে মাসে হয়। এ দুটি হলো বদর এবং ফতেহ মক্কা বা মক্কা বিজয়।  

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। ইতেকাফের সময় দুনিয়ার কাজ-কারবার, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার ধ্যানে মগ্ন হতেন তিনি। বস্তুতপক্ষে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসকে অধিকতর আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতেন। পুরো মাসটিকেই দ্বীনের কাজের ব্যয় করতেন। আমল ও দাওয়াতের মাধ্যমে রমজানের প্রতিটি মুর্হুত, দিন ও রাতকে যথোপযুক্তভাবে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার নির্দেশিত পথ ও পন্থায় ব্যয় করাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা নির্দেশিত পদ্ধতি, যা অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য একান্ত কল্যাণকর এবং বিশেষ জরুরি।

   

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো তার মহান হুকমগুলো পালন করা। তার হুকুমগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম হুকুম হলো নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নফল নামাজ বান্দাকে আল্লাহর এতটা প্রিয় করে তোলে যে, সে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই তখন মহান আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। বরং তার চাওয়াকে পাওয়াতে রুপান্তরিত করে দেন ।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।

আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চাই, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।

আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

তাই যেকোনো সংকটপূর্ণ অবস্থায় কিংবা যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারই কাছে ফেরা। তাতে মহান রবের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ ।

খুব গুরুত্ব সহকারে ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করা। আর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ (নফল) নামাজ আদায় করাকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী রা. সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হুকুমগুলো আদায়ের মাধ্যমে, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

;

হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট আগামী ৯ মে থেকে শুরু হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইট শিডিউল।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। দ্রুতই যাত্রীদের ফ্লাইট শিডিউল জানানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ৩৩৫ হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার। এবারও এই তিন এয়ারলাইনস হজযাত্রীদের বহন করবে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

এদিকে, পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

;

দারিদ্র্য বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন: তোমার কি ঐ তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়। যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবীহ ১০০ বার পাঠ কর:

তাসবিহটি হলো : সুবহানাল্লাহি অ-বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম, অ-বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

যদি তুমি এই তাসবিহটি ১০০ বার পড়, তাহলে দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে আসবে। ঐ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে, আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়া আমার নিকট এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় যাব, কোথায় রাখব! (সূত্র: আল খাছায়িছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এই তাসবিহটি যথাসম্ভব সুবহে সাদিক (শুরু) হওয়ার সাথে সাথে পাঠ করা নতুবা ফজরের, জামাআত যদি শুরু হয়ে যায় তবে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং পরে সংখ্যা পূর্ণ করে নিবে। আর যদি নামাযের পূর্বে কোনো কারনে তা পাঠ করতে না পারে বা পাঠ করতে ভুলে যায়,তাহলে সূর্য উদিত হওয়ার আগে আগেই তা পাঠ করে নিতে হবে। (সুত্র: মলফুজাতে আ’লা হযরত, ১২৮ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাসবীহ পাঠ করার সাথে সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই আয়াতটিও পাঠ করতে পারেন।

উচ্চারণ: ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াল প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন। (সূরা-ত্বালাক, আয়াত - ১, ২)

দারিদ্রতা দূর করার আরো একটি আমলের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।([বাইহাকি : শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

তবে একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বোকামি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দারিদ্রতা বা অভাব দূর করে, সচ্ছলতাকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে দিন আমিন।

;

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;