রোজা সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও মাসয়ালা



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
রোজা সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও মাসয়ালা

রোজা সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও মাসয়ালা

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতিটি কাজের একটি নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে। বিশেষ করে, ইসলামের প্রতিটি কাজের জন্য শরিয়ত অনুযায়ী সুস্পষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। ইসলামের আওতায় যে কোনো আমল করার একমাত্র পন্থা হলো পবিত্র কোরআনের নিদের্শ এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখিয়ে দেওয়া পথ বা সুন্নাহ। কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশের বাইরে যেমন কোনো আমল নেই, তেমনি কোরআন-সুন্নাহর নিদের্শিত পথ ও পন্থার বাইরে আমল করার কোনো পদ্ধতিও নেই। মনগড়া বা ইচ্ছা মতে বা নতুনা কিছু করাকে ইসলামে ‘বিদয়াত’ বলে, যা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য। কারণ পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহের বাইরে ইচ্চামতো বা নতুন কিছু বা বিদয়াত পালন বা চর্চা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ ইসলামে নেই। ইসলামে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অনুগত বান্দার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট পথ-নিদের্শনা, যার প্রতি আনুগত্য করেই ধর্ম পালন করতে হবে।

ইসলামের অপরাপর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি আমলের মতোই রোজা পালনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিধি-বিধান রয়েছে। সেগুলো ইসলামী শরিয়তের অংশ ও মাসয়ালা আকারে বর্ণিত রয়েছে। যেমন:

রোজার নিয়ত:

যেকোনো কাজের সুস্পষ্ট নিয়ত বা উদ্দেশ্য থাকতে হবে। উদ্দেশ্যহীন কোনো কিছু করা আমল নয়। বরং জেনে, বুঝে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ও উদ্দেশ্য ঠিক করে কাজ করা হলেই সে কাজ বা আমল স্বচ্ছ হয়। রোজার জন্যও নিয়ত করতে হবে। রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ অন্তরের ইচ্ছা, উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা, সংকল্প গ্রহণ করা। দ্বিধাহীন চিত্তে নিয়ত করতে হয়। দোদুল্যমানতার মাধ্যমে সহিহ-শুদ্ধ নিয়ত হয় না। নিয়ত মনে মনে করা যায়। নিয়তের সময় এ সংকল্প করতে হয় যে, আমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকাল রোজা  রাখছি। মুখে কাউকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিয়ত করার দরকার নেই। নিয়ত নিজে নিজে স্পষ্টভাবে ও দৃঢ়তার সঙ্গে করলেই হবে। হাদিম শরিফে আছে: ‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি শরিফ: ১/২)

রোজার নিয়ত রাতে করাই উত্তম:

রোজার নিয়ত রোজা শুরুর আগেই করার দরকার। সাবধানতা স্বরূপ রাতেই আগত দিনের রোজা সম্পর্কে মনে মনে নিয়ত করে রাখাই উত্তম। কারণ হাদিস শরিফে এ সম্পর্কে ইঙ্গিত রয়েছে। হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনতা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির ফজরের আগে রোজার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না’ (আবু দাউদ শরিফ: ১/৩৩৩)। তবে, রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। আর রাত্রে নিয়ত করলেও সুবেহ সাদেক বা ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মেলামেশার অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রমজানের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৭)

সাহরি খাওয়া:

রোজার উদ্দেশ্যে সাহরি খাওয়া সুন্নত। এক্ষেত্রে গলা পর্যন্ত বা পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়। অল্প খাওয়াই উত্তম। এতে হজম শক্তির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় না। প্রয়োজনে এক চুমুক পানি ও সামান্য কিছু খাবার গ্রহণ করলেও সাহরি খাওয়ার সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাািিহ ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে’ (বোখারি শরিফ: ১৯২৩)। অন্য আরেক হাদিসে বলা হয়েছে: ‘সাহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি কর। কারণ, যারা সাহরি খায়, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন’ (মুসনাদে আহমাদ: ১১০৮৬)। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন: ‘আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব (ইহুদি-খ্রিস্টান) সম্প্রদায়ের মানুষের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া’ (মুসলিম শরিফ: ১০৯৬)। সাহরি মুসলমানদের একটি বিশেষ আমল, যা পালন করা কল্যাণময়।

দেরী করে সাহরি খাওয়া:

সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। যাতে রোজা রাখা অধিকতর সহজ হয়। এতে ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কষ্ট স্বীকার করতে হয় না। তবে, এতো দেরী করা মাকরূহ যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। একটি হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ইফতার তাড়াতাড়ি করতে এবং সাহরি শেষ সময়ে খেতে আদেশ’ করেছেন। হযরত আমর ইবনে মায়মুন বলেছেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম দ্রুত ইফতার করতেন এবং দেরীতে সাহরি খেতেন।’ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: ‘আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাহরি খেয়েছি। অতঃপর তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। হযরত আনাস তখন জিজ্ঞাসা করলেন, আজান ও সাহরির মধ্যে কতটুকু সময়ের পার্থক্য ছিল? হযরত যায়েদ বললেন, পঞ্চাশটি আয়াত পরিমাণ’ (বোখারি শরিফ: ১৯২১)।           

তাড়াতাড়ি ইফতার খাওয়া:

রোজার সমাপ্তিতে দ্রুত ইফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিলম্ব না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা মুস্তাহাব। হযরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যতদিন মানুষ দেরী না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে’ (মুসলিম শরিফ: ১০৯৮)। আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যতদিন মানুষ সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন দ্বীন বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা ইফতারে দেরী করে’ (ইবনে মাজা শরিফ: ১৬৯৮)। তিরমিজি শরিফের একটি হাদিসে (৬৯৫) বলা হয়েছে: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পূর্বেই ইফতার করতেন।’

ইফতারের মুস্তাহাব খাদ্য:

খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগরিবের নামাজের আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দ্বারা। আর তা না পেলে এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন’ (তিরমিজি শরিফ: ৬৯৫)। তবে খেজুর না পেলে পানি দ্বারা শুরু করা উত্তম। স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও সারা দিনের রোজার পর প্রথমে কিছুটা পানি পান করা উচিত। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা, পানি হলো পবিত্র’ (আবু দাউদ শরিফ: ২৩৫৫)।

ইফতারের দোয়া:

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করা উচিত। ইফতার শুরু করার আগে এই দোয়া পাঠের জন্য হাদিসে বলা হয়েছে: ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার জন্যই রোজা রেখেছিলাম এবং তোমার দেওয়া রিজিক/খাদ্য দ্বারাই ইফতার করলাম’ (আবু দাউদ: ২৩৫৮)। ইফতারের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া পড়তেন: ‘পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সতেজ হলো আর আল্লাহ তায়ালা চাহেন তো রোজার সাওয়াব লিপিবদ্ধ হলো’ (আবু দাউদ শরিফ: ২৩৫৭)।

রোজাদারকে ইফতার করানো:

মেহমানদারি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কাউকে অর্থ-সম্পদ-খাদ্য দান করাও বিরাট সাওয়াবের বিষয়। এসব ইতিবাচক আমলের সাওয়াব রমজান মাসে বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে, কোনো রোজাদারকে ইফতার করানো খুবই লাভজনক একটি আমল। হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না (মুসনাদে আহমাদ: ১৭০৩৩)। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পানাহার করিয়ে ইফতার করাবে, সে তার অনুরূপ সাওয়াব লাভ করবে’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৯০৬)        

   

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো তার মহান হুকমগুলো পালন করা। তার হুকুমগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম হুকুম হলো নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নফল নামাজ বান্দাকে আল্লাহর এতটা প্রিয় করে তোলে যে, সে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই তখন মহান আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। বরং তার চাওয়াকে পাওয়াতে রুপান্তরিত করে দেন ।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।

আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চাই, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।

আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

তাই যেকোনো সংকটপূর্ণ অবস্থায় কিংবা যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারই কাছে ফেরা। তাতে মহান রবের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ ।

খুব গুরুত্ব সহকারে ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করা। আর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ (নফল) নামাজ আদায় করাকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী রা. সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হুকুমগুলো আদায়ের মাধ্যমে, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

;

হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট আগামী ৯ মে থেকে শুরু হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইট শিডিউল।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। দ্রুতই যাত্রীদের ফ্লাইট শিডিউল জানানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ৩৩৫ হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার। এবারও এই তিন এয়ারলাইনস হজযাত্রীদের বহন করবে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

এদিকে, পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

;

দারিদ্র্য বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন: তোমার কি ঐ তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়। যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবীহ ১০০ বার পাঠ কর:

তাসবিহটি হলো : সুবহানাল্লাহি অ-বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম, অ-বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

যদি তুমি এই তাসবিহটি ১০০ বার পড়, তাহলে দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে আসবে। ঐ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে, আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়া আমার নিকট এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় যাব, কোথায় রাখব! (সূত্র: আল খাছায়িছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এই তাসবিহটি যথাসম্ভব সুবহে সাদিক (শুরু) হওয়ার সাথে সাথে পাঠ করা নতুবা ফজরের, জামাআত যদি শুরু হয়ে যায় তবে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং পরে সংখ্যা পূর্ণ করে নিবে। আর যদি নামাযের পূর্বে কোনো কারনে তা পাঠ করতে না পারে বা পাঠ করতে ভুলে যায়,তাহলে সূর্য উদিত হওয়ার আগে আগেই তা পাঠ করে নিতে হবে। (সুত্র: মলফুজাতে আ’লা হযরত, ১২৮ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাসবীহ পাঠ করার সাথে সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই আয়াতটিও পাঠ করতে পারেন।

উচ্চারণ: ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াল প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন। (সূরা-ত্বালাক, আয়াত - ১, ২)

দারিদ্রতা দূর করার আরো একটি আমলের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।([বাইহাকি : শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

তবে একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বোকামি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দারিদ্রতা বা অভাব দূর করে, সচ্ছলতাকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে দিন আমিন।

;

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;