রমজান কোরআনের মাস



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান মাস প্রথমত ও প্রধানত রোজার মাস। তবে রমজান একই সঙ্গে তাকওয়া বা খোদাভীতির মাস। রহমত, বরকত, নাজাত, মাগফেরাতের মাস। এবং বিশেষভাবে পবিত্র কোরআনের মাস। বস্তুত রমজান বহুবিধ কল্যাণ ও নেয়ামতে পরিপূএকটি গুরুত্বপূর্ণ মাস।

কোরআনুল কারিম রমজান মাসকে ভালোবাসে। রমজান ভালোবাসে কোরআনকে। কোরআন ও রমজান হলো অভিন্ন, মাণিকজোড়। কেননা, স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নিজেই ঘোষণা করে দিয়েছেন যে,

রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

ইসলামী থিওলজি বা ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, এই রমজান মাসেই ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন ‘সংরক্ষিত ফলক’ বা ‘লাওহে মাহফুজ’ হতে নিকটবর্তী আসমানে নাজিল হয়েছিল। ফলে রমজান হলো পবিত্র কোরআন নাজিল বা অবতরণের সম্মানে সম্মানিত মাস। এ কারণেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে আল্লাহর বার্তাবাহক ফেরেশতা  হযরত জিবরাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোরআনের পুনরাবৃত্তি করতেন। অধিক পরিমাণে কোরআন শুনতেন। তেলাওয়াত করতেন। কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন। কোরআনের ছায়াতলে জীবন কাটাতেন। উম্মতকে কোরআনের দিকে আহ্বান জানাতেন ও কোরআনের প্রতি প্রণোদিত করতেন।

পবিত্র কোরআন সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নিজেই বলেছেন,

আমি এ মোবারক গ্রন্থটি আপনার উপর নাজিল করেছি। যাতে করে মানুষ এর আয়াতসমূহের ব্যাপারে চিন্তা-গবেষণা করতে পারে এবং জ্ঞানবান লোকেরা এর দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সুরা ছোয়াদ, আয়াত ২৯)

মানুষ ও বিশ্বমানবতার দিশা স্বরূপ রমজান মাসে নাজিল হওয়া পবিত্র ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন এবং রমজান মাসের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও গবেষণার একটি আলাদা মজা ও আলাদা স্বাদ আছে। রমজান মাস কোরআনের ভাবগাম্ভীর্যে এবং কোরআনের সুবাসে আমোদিত থাকে। ব্যক্তিগত তেলাওয়াত ও তাবাবিহ নামাজে তেলাওয়াতের মাধ্যমে রমজান মাসে ‘নুজুলে কোরআন’ বা ‘কোরআন নাজিল’-এর অম্লান স্মৃতিতে প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে উজ্জীবিত করে। মুসলিমের ঘরের জীবনে, বাইরের জীবনে, মসজিদে অবস্থানকালের সময়ে পবিত্র কোরআনের পরশ পুরো রমজান মাসেই থাকে তরতাজা।

মাহে রমজানে নাজিল হওয়া মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সার্বিক গুরুত্ব ও মর্যাদা এবং মানবজীবনে এর তাৎপর্য সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশ কিছু চিরকালীন উপদেশ উম্মতের জন্য রেখেছেন। যেমন:

১) তোমরা কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করো। কারণ, কোরআন শেষ বিচার দিবসে তার তেলাওয়াতকারী বা পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে।

২) তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষাদান করে।

৩) যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং কোরআন পাঠে দক্ষ হয়, সে সম্মানিত লিপিকার-ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কোরআন পাঠ করে এবং কোরআন পাঠ করতে আটকে যায় (কষ্ট করে করে কোরআন চর্চা ও পাঠ করে), তার জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান।

৪) তোমরা দুই উজ্জ্বল আলোকময় সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান তেলাওয়াত করো। কারণ, এ দুইটি সুরা শেষ বিচারের দিবসে দুইটি মেঘখ- অথবা দুইটি সামিয়ানা অথবা দুইটি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকের রূপে আসবে এবং তারা পাঠকারীকে ছায়া দেবে।

পবিত্র কোরআনের প্রতিটি সুরা ও আয়াতের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনার শেষ নেই। সারা জীবনের জন্য পবিত্র কোরআন পথপ্রদর্শক, শেফা, আলো ও হেদায়েতের উৎস। শুধু মুসলমানগণই নয়, পবিত্র কোরআন যেকোনো মানুষর জন্য কল্যাণের বার্তাবহ। ফলে পবিত্র ও বরকতময় রমজান মাসে সুমহান কোরআনের তেলাওয়াত ও চর্চার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া খুবই দরকার। কারণ, মাহে রমজানের পবিত্র পরিবেশে একাগ্রতার সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও গবেষণা করার বিশেষ সুযোগ ঘটে। এজন্য, সারা বিশ্বে মাহে রমজানে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে চলে কোরআনের আবাদ বা চর্চা। ঘরের প্রতিটি সদস্য প্রতিক্ষণ কোরআনের তেলাওয়াতে এমনভাবে মশগুল থাকে, যেন মনে হয় সুমিষ্ট মধু নিয়ে গুঞ্জরণ করছে মৌমাছি।

মুসলমানগণ ব্যক্তিগত ও জাতিগতভাবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও চর্চার মাধমে এই ঐশী গ্রন্থে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা প্রদত্ত বিধানসমূহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে খুঁজে পায় মুক্তি, শান্তি ও কল্যাণের সুনিশ্চিত পথ। কেননা, কোরআন ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ বা সরল/সোজা/কল্যাণের পথ দেখায়। কোরআন অন্তরের নূর বা আলোকরশ্মি স্বরূপ। মানসিক বিভ্রান্তি ও রোগের শেফা বা চিকিৎসা হলো আল কোরআন। কোরআনের অপর নাম হলো ফোরকান, যা সত্যের পথে চালিত করে। পবিত্র কোরআন হলো, মানুষের সৌভাগ্যের দিক-নির্দেশনা, মুক্তির সনদ, জীবন-যাপনের পথে পালনকর্তার বিধি-বিধানের ভাণ্ডার।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাভাষী মুসলমানদের কোরআন পাঠ ও অধ্যয়ন বিষয়ক কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই। কতজন কোরআন পড়তে পারেন কিংবা পড়লেও বছরে পাঠের পরিমাণ কত, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যান অজানা। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ পাঠের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হয় এবং পাঠের পরিমাণের হ্রাস বা বৃদ্ধি সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্লোবাল ইংলিশ এডিটিং’ নামের একটি সংস্থা প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের পাঠাভ্যাস নিয়ে গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা করে। সর্বশেষ পরিচালিত একটি জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, যেসব আমেরিকান নিয়মিত অধ্যয়ন করেন বা বই পড়েন, তারা বছরে গড়পড়তা চারটি বই পড়েন।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশি পড়েন বাইবেল। শতকরা ৪৮ জন আমেরিকান জানিয়েছেন, তারা প্রতি বছরে একবার হলেও বাইবেল পড়েন।

পশ্চিমা জগতকে দূর থেকে বস্তুবাদী ও ভোগবাদী বলে মনে হলেও ভেতরে ভেতরে তা ধর্মনিষ্ঠ। নিয়মিত গির্জায় গমন এবং বাইবেল পাঠ তাদের নিত্যদিনের কর্তব্য। ইহুদিরা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে খুবই নিষ্ঠাবান। ধর্মীয় বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে কোনোরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন করতে ইহুদিদের দেখা যায় না। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি ধর্মের অনুসারীরা অত্যন্ত নিবেদিতভাবে তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করে।

সত্যিকার অর্থে ধর্ম পালন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা ও নির্দেশনা পাওয়া যায় ধর্মগ্রন্থ থেকে। অতএব, যেকোনো ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্য নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থের জ্ঞান থাকা ও চর্চা করার কোনো বিকল্প নেই।

মুসলমানদের জন্য পবিত্র কোরআন পাঠ ও অনুসরণের অপরিহার্যতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব তাগিদ দিয়েছেন, সেগুলো সম্পর্কেও প্রতিটি মুসলমানের সচেতন ও ওয়াকিবহাল থাকা একান্দ দরকার।

বস্তুতপক্ষে, একজন মুসলমানের জন্য সঠিক, সরল ও সত্য পথ পাওয়ার উপায় হলো প্রধানত আল কোরআন এবং আল হাদিস। আরো স্পষ্টভাবে বললে, পবিত্র কোরআনের মূল নির্দেশনার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা হলো আল হাদিস। এজন্য, কেউ যদি কোরআন ও হাদিসকে শক্তভাবে ধারণ করেন ও মান্য করেন, তবে তিনি পথভ্রষ্ট হবেন না বলে আশা করা যায়। বরং কোরআনের আলোয় তার দুনিয়ার জীবন আলোকিত ও সফল হবে এবং আখেরাতের জীবন কল্যাণময় ও শান্তিপূর্ণ হবে।       

অতএব পবিত্র কোরআনের ছায়াতলে জীবন কাটানো একজন মুসলমান নারী বা পুরুষের জন্য একান্ত জরুরি। আর কোরআনের ছায়াতলে জীবন কাটানোর  মানে হলো, কোরআন তেলাওয়াত ও চর্চার মাধ্যমে কোরআনে বর্ণিত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার আদেশ ও নিষেধের অনুসরণ করা এবং এর ভিত্তিতে জীবনকে পরিচালিত করা। এতেই দুনিয়া ও আখেরাতে চিরকল্যাণের অধিকারী হওয়া সম্ভব।

পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেক বেশি তৈরি হয় রমজান মাসে। কারণ, রমজান মাসে পানাহারের ঝামেলা থাকে না এবং মানুষ বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে ইবাদত ও আমলে নিয়োজিত হওয়ার ফুসরত অনেক বেশি পায় রমজানে। তাই রমজানে সর্বক্ষণ কোরআনের সাথে সম্পর্কিত থেকে নিজেদেরকে জ্যোতির্ময় করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য। পবিত্র রমজান মাসের অতি মূল্যবান ও মোবারক সময়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের গুরুত্ব-আজমত বুঝে আমল-চর্চা করে মানবজীবনকে সাফল্য ও সৌভাগ্যমণ্ডিত করার কাজে সর্বশক্তি নিয়োজিত করতে আমরা যেন পিছপা না হই।

   

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো তার মহান হুকমগুলো পালন করা। তার হুকুমগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম হুকুম হলো নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নফল নামাজ বান্দাকে আল্লাহর এতটা প্রিয় করে তোলে যে, সে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই তখন মহান আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। বরং তার চাওয়াকে পাওয়াতে রুপান্তরিত করে দেন ।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।

আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চাই, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।

আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

তাই যেকোনো সংকটপূর্ণ অবস্থায় কিংবা যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারই কাছে ফেরা। তাতে মহান রবের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ ।

খুব গুরুত্ব সহকারে ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করা। আর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ (নফল) নামাজ আদায় করাকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী রা. সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হুকুমগুলো আদায়ের মাধ্যমে, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

;

হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট আগামী ৯ মে থেকে শুরু হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইট শিডিউল।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। দ্রুতই যাত্রীদের ফ্লাইট শিডিউল জানানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ৩৩৫ হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার। এবারও এই তিন এয়ারলাইনস হজযাত্রীদের বহন করবে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

এদিকে, পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

;

দারিদ্র্য বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন: তোমার কি ঐ তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়। যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবীহ ১০০ বার পাঠ কর:

তাসবিহটি হলো : সুবহানাল্লাহি অ-বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম, অ-বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

যদি তুমি এই তাসবিহটি ১০০ বার পড়, তাহলে দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে আসবে। ঐ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে, আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়া আমার নিকট এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় যাব, কোথায় রাখব! (সূত্র: আল খাছায়িছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এই তাসবিহটি যথাসম্ভব সুবহে সাদিক (শুরু) হওয়ার সাথে সাথে পাঠ করা নতুবা ফজরের, জামাআত যদি শুরু হয়ে যায় তবে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং পরে সংখ্যা পূর্ণ করে নিবে। আর যদি নামাযের পূর্বে কোনো কারনে তা পাঠ করতে না পারে বা পাঠ করতে ভুলে যায়,তাহলে সূর্য উদিত হওয়ার আগে আগেই তা পাঠ করে নিতে হবে। (সুত্র: মলফুজাতে আ’লা হযরত, ১২৮ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাসবীহ পাঠ করার সাথে সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই আয়াতটিও পাঠ করতে পারেন।

উচ্চারণ: ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াল প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন। (সূরা-ত্বালাক, আয়াত - ১, ২)

দারিদ্রতা দূর করার আরো একটি আমলের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।([বাইহাকি : শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

তবে একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বোকামি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দারিদ্রতা বা অভাব দূর করে, সচ্ছলতাকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে দিন আমিন।

;

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;