রমজানের সওগাত ও ফজিলত



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফজিলত ও বরকতময় রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত সওয়াব ও কল্যাণে ভরপুর। রমজান প্রতিবছর মুসলিম নর-নারীকে আমলে ও আখলাকে সুন্দর হওয়ার এবং প্রতিটি দিন ও রাত সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে প্রতিপালন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ফলে আলস্য ও উদাসীনতা ত্যাগ করে সচল ও তৎপরভাবে নামাজ, রোজা, তেলাওয়াত, দান, সাদাকার মাধ্যমে মোবারক রমজান মাসের পরিপূর্ণ কল্যাণ ও সফলতা হাসিল করা সকলের কর্তব্য। ভালো কাজ, সুকর্ম, লাভজনক তৎপরতা, যেগুলো কল্যাণের পথ দেখায়, তেমন কাজ বা আমলের মাধ্যমেই মানবজীবনের পরম সার্থকতা নিহিত, মাহে রমজান তেমন সফলতার পথে অনুপ্রাণিত করে।

পবিত্র কোরআন বারবার ভালো কাজ/আমল বা সুকর্মের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে। জ্ঞানীদের/চিন্তাশীলদের জন্য বহু নিদর্শন ও দৃষ্টান্ত পবিত্র কোরআনে বহু বার বর্ণিত হয়েছে। বহু জাতির উত্থান-পতনের মাধ্যমে মানব জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরা ও আয়াতে। পবিত্র কোরআন হলো উপদেশ ও হেদায়েত। কিন্তু সেই কল্যাণকর উপদেশ, হেদায়েত, সঠিক পথের দিশা ইত্যাদি বিনা চেষ্টা, শ্রম ও উদ্যোগে পাওয়া যাবে না। গভীর চর্চা, মনোনিবেশ ও অধ্যয়নের মাধ্যমে শিখতে, জানতে ও আত্মস্থ করতে হয় পবিত্র কোরআনের আলোময় দিশাসমূহ। 

কিন্তু, পবিত্র কোরআনের শিক্ষাগুলো গ্রহণ করার জন্য মুসলিম নর-নারীগণ উদ্যোগী ও সচেষ্ট না হলে উপদেশ, হেদায়েত, সঠিক পথের দিশা তথা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কেমন করে পাওয়া সম্ভব হবে? পরিশ্রম ও চেষ্টা ছাড়া তো কিছুই শেখা বা পাওয়া যায় না। নিজেকে উন্নত, সুশিক্ষিত, সফল ও কল্যাণমণ্ডিত করতে হলে নিরন্তর চেষ্টা ও চর্চা করতে হয়। জীবনের বস্তুগত সফলতার জন্য মানুষ এমন চেষ্টা ও চর্চা অব্যাহতভাবে করে। কিন্তু যে চেষ্টায় দুনিয়া ও আখেরাতের চিরকল্যাণ নিশ্চিত হবে, তা না করা হলে এমনি এমনি সফলতা পাওয়া অসম্ভব। চেষ্টা, চর্চা ও উদ্যোগের মাধ্যমে কল্যাণ লাভ ও সফল হওয়ার প্রেরণাময় দিকনির্দেশনা পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে:

‘(মানুষ যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন), তার জন্যে আগে পেছনে একের পর এক (আগত ফেরেশতার) দল নিয়োজিত থাকে, তারা আল্লাহর আদেশে তাকে হেফাজত করে; আল্লাহ তায়ালা কখনো কোনো জাতির (ভাগ্য/অবস্থা) পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের (ভাগ্য/অবস্থা) পরিবর্তন করে; (সুরা রা: আয়াত ১১)

অতএব নিজের ভাগ্য/অবস্থা বদলের জন্য নিজেকে সর্বাগ্রে ইচ্ছুক, আগ্রহী ও সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে কাজে নেমে গেলেই সফলতা আসবে। অলস ও অকেজো বসে থাকলে সফলতা, কল্যাণ, সার্থতা কস্মিনকালেও আসবে না।

অতি কল্যাণময় ও অত্যন্ত মূল্যবান রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের পথ দেখায়। কিন্তু অলস-অকর্মণ্য হয়ে বসে থাকলে বা অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করলে রমজান মাসের ফজিলত বা ফায়দাসমূহ কেমন করে পাওয়া যাবে? আলস্য, হতাশা ও বিমর্ষতার কারণে অচল ও উদভ্রান্ত হয়ে থাকলে রমজানের সীমাহীন সওয়াবের সুযোগ ও পাপমুক্তির সুবিধা কেমন করে নিজের জীবনে আসবে?

ফলে রমজানের পবিত্র ও তাৎপর্যময় প্রতিটি মুহূর্তকে নিজের ইতিবাচক/কল্যাণকর পরিবর্তনের পথে কাজে লাগানো ও পরিচালিত করা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর একান্ত কর্তব্য। নিজের আত্মসমীক্ষা ও আত্মসমালোচনা করে রমজানের দিন ও রাত্রের আমলসমূহের প্রতি তৎপর হওয়ার মাধ্যমে ভাগ্য ও অবস্থাকে সাফল্যের দিকে পরিবর্তিত করাই কাম্য। রমজানে এমন সুযোগ হারানো যাবে না এজন্য যে, রমজান বিশেষ কয়েকটি কারণে শ্রেষ্ঠ মাসের একটি এবং মুসলিম নর-নারীর জন্য নানারূপ কল্যাণকর সুযোগে ভরপুর। নিজের দুরবস্থা কাটানো ও নিজেকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করতে রমজান একটি চমৎকার সুযোগ এনে দেয়।

কারণ:

*রমজানে ইসলামের অন্যতম রোকন বা স্তম্ভ সিয়াজ বা রোজা ফরজ করা হয়েছে। রমজান ছাড়া ফরজ রোজা পালনের সুযোগ সারা বছরে আর পাওয়া যাবে না।

*কোরআন নাজিলের কারণে কোরআনের মাস হিসেবে রমজান সম্মানিত।

*রমজানে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সহিহ মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে বলা হয়েছে: ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।

*রমজানে রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ‘লাইলাতুল কদর’। রমজানে এমন একটি রাত আছে, যাকে কোরআনের হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ রাতের প্রশংসায় আল্লাহ তায়ালা একটি স্বতন্ত্র সুরা পবিত্র কোরআনে নাজিল করেছেন। সেই সুরা কদর-এ বলা হয়েছে: ‘কদরের রাত হাজার মাস (তথা চুরাশি বছর চার মাস) থেকেও উত্তম।’

*রমজান মাসে রয়েছে সালাতুল তারাবিহ নামাজের আমল। অন্য কোনো মাসে এমন নামাজের সুযোগ পাওয়া যায় না। রমজানে দিনে রোজা আর রাতে নামাজ আদায়ের সুযোগ প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য এক মহা নেয়ামত। তদুপরি, কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে রমজান মাস নামাজ ও রোজার আমলে ভরপুর থাকে। এসব আমলের সাওয়াবও রোজার মাসের বরকতে বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যেসব সুযোগ রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে মানুষ পায় না।

*রমজানের বিশেষ আমল হলো শেষ দশ দিন মসজিদে ইতেকাফ করা, যার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা বা রুহানিয়্যাত বৃদ্ধি পায় এবং রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে যে মহিমন্বিত লাইলাতুল কদর রয়েছে, সুনিশ্চিতভাবে সেটা পাওয়াও সম্ভব হয়। আমলে-আখলাকে পবিত্র-উজ্জ্বলতা হাসিলের মহাসুযোগ রমজানে পাওয়া যায়, যা বছরের অন্য কোনো মাসে পাওয়া সম্ভব নয়।

*রমজানে রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। রমজানে দিনে বা রাতে যে কোনো সময় রোজাদারের ফরিয়াদ বা দোয়া বা আবেদন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কবুল করেন। বিশেষত ইফতার সামনে রেখে দোয়া কবুলের বিষয়ে বহু বিশ্বস্ত বর্ণনা রয়েছে। রমজানে আল্লাহ তায়ালা অধিক হারে বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। মুসনাদে আহমাদের একটি হাদিসে মাহে রমজানে দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

*রমজান দোয়া কবুলের মতোই গোনাহ মাফের মাস। এ মাসে আল্লাহ বান্দাহর গোনাহ মাফ করেন। রমজানে অধিক তাওবা করা ও নেক আমলের মাধ্যমে গোনাহ মাফ করিয়ে সাওয়াব হাসিলের চেষ্টা করা উচিত। রমজান পেয়েও গোনাহ মাফ করাতে না পারা ব্যক্তিকে ‘হতভাগ্য’ বা ‘বঞ্চিত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

*রমজান মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি আদায়ের মাস। রমজানের সঙ্গে নাজাত, মাগফেরাত সম্পর্কিত। আমল, রহমত, বরকতের সঙ্গে সঙ্গে মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার সুযোগ রমজান মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অন্যতম।

*সাধারণ আমলের মতোই দান, সাদাকা ইত্যাদির সাওয়াবও রমজান মাসে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। ফলে সাওয়াব, কল্যাণ, বরকত হাসিলের জন্য রমজানের চেয়ে দামি মাস আর নেই। গুণে, মানে, বৈশিষ্ট্য বছরের অন্য মাসগুলোর চেয়ে রমজানের গুরুত্ব, মর্যাদা ও তাৎপর্য অপরিসীম। ফলে বছরের অন্য সময়ের মতো পরিকল্পনায় রমজানকে বরণ ও পালন করা যাবে না। রমজানকে পালন ও বরণ করতে হবে বিশেষ পরিকল্পনা ও কর্মসূচির মাধ্যমে, যাতে একটি মুহুর্তও নষ্ট না হয়ে রমজানের প্রতিটি রাত ও দিন যেন আমলের মাধ্যমে সার্থক ও সফল হয়।

*রমজানে ছোট-বড় প্রতিটি আমলের সাওয়াব বা প্রতিদান বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নফল ইবাদতের সাওয়াব অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। আর এক ফরজের সাওয়াব সত্তর বা ততোধিক ফরজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। এমনকি, রমজানের ওমরাহের সাওয়াব হজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। আবু দাউদ শরিফের ১৯৯১ নম্বর হাদিসটি এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্বরূপ। এতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলআইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা আমার সাথে হজ করার সমতুল্য।’

অতএব পবিত্র মাহে রমজানের পুরোটা সময়কাল পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে কল্যাণের দ্বারা। জান্নাত প্রাপ্তি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ হাসিলের লক্ষ্যে পূর্ণ সচেতন ও সচেষ্ট হওয়া রমজান মাসে প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ফলে আলস্য ও উদাসীনতায় মূল্যবান রমজানকে নষ্ট না করে রমজানের নানাবিধ আমলের মাধ্যমে সব ধরনের কল্যাণ হাসিলের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই সকলের জন্য একান্ত কর্তব্য ও প্রচেষ্টা হওয়া দরকার।

   

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো তার মহান হুকমগুলো পালন করা। তার হুকুমগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম হুকুম হলো নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নফল নামাজ বান্দাকে আল্লাহর এতটা প্রিয় করে তোলে যে, সে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই তখন মহান আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। বরং তার চাওয়াকে পাওয়াতে রুপান্তরিত করে দেন ।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।

আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চাই, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।

আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

তাই যেকোনো সংকটপূর্ণ অবস্থায় কিংবা যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারই কাছে ফেরা। তাতে মহান রবের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ ।

খুব গুরুত্ব সহকারে ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করা। আর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ (নফল) নামাজ আদায় করাকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী রা. সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হুকুমগুলো আদায়ের মাধ্যমে, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

;

হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট আগামী ৯ মে থেকে শুরু হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইট শিডিউল।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। দ্রুতই যাত্রীদের ফ্লাইট শিডিউল জানানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ৩৩৫ হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার। এবারও এই তিন এয়ারলাইনস হজযাত্রীদের বহন করবে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

এদিকে, পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

;

দারিদ্র্য বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন: তোমার কি ঐ তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়। যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবীহ ১০০ বার পাঠ কর:

তাসবিহটি হলো : সুবহানাল্লাহি অ-বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম, অ-বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

যদি তুমি এই তাসবিহটি ১০০ বার পড়, তাহলে দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে আসবে। ঐ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে, আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়া আমার নিকট এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় যাব, কোথায় রাখব! (সূত্র: আল খাছায়িছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এই তাসবিহটি যথাসম্ভব সুবহে সাদিক (শুরু) হওয়ার সাথে সাথে পাঠ করা নতুবা ফজরের, জামাআত যদি শুরু হয়ে যায় তবে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং পরে সংখ্যা পূর্ণ করে নিবে। আর যদি নামাযের পূর্বে কোনো কারনে তা পাঠ করতে না পারে বা পাঠ করতে ভুলে যায়,তাহলে সূর্য উদিত হওয়ার আগে আগেই তা পাঠ করে নিতে হবে। (সুত্র: মলফুজাতে আ’লা হযরত, ১২৮ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাসবীহ পাঠ করার সাথে সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই আয়াতটিও পাঠ করতে পারেন।

উচ্চারণ: ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াল প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন। (সূরা-ত্বালাক, আয়াত - ১, ২)

দারিদ্রতা দূর করার আরো একটি আমলের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।([বাইহাকি : শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

তবে একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বোকামি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দারিদ্রতা বা অভাব দূর করে, সচ্ছলতাকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে দিন আমিন।

;

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;