প্রস্তাবিত হজ ও উমরা আইনের কয়েকটি ধারা বাতিলের দাবি



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট্রের সংবাদ সম্মেলন, ছবি: সংগৃহীত

হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট্রের সংবাদ সম্মেলন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রস্তাবিত হজ আইনের কয়েকটি ধারা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকরা। অন্যথায় মানববন্ধন ও সমাবেশসহ আরও বড় কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন তারা।

রোববার (১৪ মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে ‘হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট’র ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক সভাপতি আব্দুস সোবহান ভুইয়া হাসান বলেন, হজযাত্রীর ৯০ শতাংশ পরিচালনা করে হজ এজেন্সিগুলো। অথচ এজেন্সি মালিকদের অন্ধকারে রেখে প্রস্তাবিত হজ ও উমরা আইন ২০২০-এ সংবিধানবিরোধী একাধিক ধারা-উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এটি পাস হলে হজ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে এবং প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।

সোবহান বলেন, নতুন ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা সংবিধান বিরোধী ধারা উপধারা যুক্ত করে এ হজ ও উমরা আইন প্রস্তাব করেছেন। এটি এখন ভোটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।

আমরা এ আইনের বিতর্কিত ধারা ১৫ প্রশাসনিক ব্যবস্থা (১), ধারা-১৬ জরিমানার অর্থ আদায়, ধারা ১৭ এর আপিল আবেদন, ধারা-১৮ ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ, ধারা ২০ আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ ও ধারা ২৩ রহিতকরণ ও হেফাজতসহ একাধিক ধারা-উপধারা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

এজন্য আমরা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সদস্যসহ সবার সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে আলোচনার পাশাপাশি আমরা সংবাদ সম্মেলন করছি।

তাদের দাবি, একটি হজ বা উমরা এজেন্সিকে ধর্মীয় সেবা প্রদানের জন্য কাজ করতে হয়। যাত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা টিকেট, ভিসা, মোয়াল্লেম ফি ও বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে হয়। হজযাত্রীদের টিকেটের টাকা রিজার্ভফান্ডে জমা থাকে হজ এজেন্সির মালিকরা এ টাকা কেবলমাত্র সৌদি এয়ারলাইন্স ও বাংলাদেশ বিমানের নামে পে-অর্ডার করতে পারেন। মোয়াল্লেম ফি ও বাড়ি ভাড়ার টাকা মোয়াল্লেমকে সৌদি সরকারের (IBAN) এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। এজেন্টরা এ টাকা উঠাতে পারেন না। বাকি কেবল খাওয়ার টাকা হজ এজেন্সির কাছে থাকে। এ কারণে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান যুক্তিযুক্ত নয়। জরিমানার টাকা প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে প্রায় ১৭ গুন বেশি। এ কারণে এ ধারা ও উপধারাগুলো রহিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ধারা ১৬ জরিমানার টাকা আদায়, উপধারা (১) ও (২) জামানতের চেয়ে বেশি জরিমানা ধার্য করা ও আদায়ে Public Demands Recovery Act, 1913 কার্যকর করা হলে হজ ও উমরা এজেন্টরা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে অভিযোগের কারণে ব্যবসার মূলধনের বাইরে নিজস্ব জমি, বাড়ি, ভিটা ক্রোক করে ব্যবসা রক্ষা করা মোটেও সম্ভব নয়। বহু এজেন্সির মালিকের এত বেশি জরিমানা প্রদানের ক্ষমতা নেই। Public Demands Recovery Act, 1913 প্রয়োগ করে অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে সরকারি পাওনা হিসেবে জরিমানার অর্থ আদায়যোগ্য হবে। এ ধারাটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে।

তৃতীয়ত, ১৭ নম্বর ধারা আপিল আবেদন। আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কখনও বিচার বিভাগের ওপরে হতে পারে না। অতএব ১৭ (৩) কোনো ব্যক্তি বা এজেন্সির বিরুদ্ধে এই আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক জরিমানা বা শাস্তি আরোপিত হলে কোনো আদালতে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে না। এই ধারা সংবিধান পরিপন্থী। আমাদের দাবি এই ধারা ও উপধারাগুলো বাতিল করতে হবে।

চতুর্থত, ১৮ নম্বর ধারায় ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ। উপধারা (২) কোনো হজ বা উমরা এজেন্সির অংশীদার, পরিচালক বা অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হলে একই বিষয়ে এ আইনের অধীনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোনো বাধা থাকবে না। আমাদের দাবি একটি অপরাধের জন্য দু‘বার বিচার বা জরিমানা করা অযৌক্তিক। এই অযৌক্তিক ধারা ও উপধারা বাতিল করতে হবে।

পঞ্চমত, আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ, সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর হাজীদের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড, সেবার দায়িত্ব রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়, মুয়াসসাসা, সৌদি সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত মোয়াল্লেম অফিসের ওপর বর্তায়। কেবলমাত্র খাওয়া ও বাড়ি এজেন্টগণ দেখাশোনা করবেন। যদি কোনো এজেন্ট হাজীদের সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর বাড়ি না পান তাহলে রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় সাথে সাথেই ওই লাইসেন্স বাতিল করেন। সৌদি আরবে হাজীদের খাবার না পেলে বাংলাদেশের সরকারের কাউন্সিলর হজ সাথে সাথে ওই এজেন্সির বিচারের ব্যবস্থা করেন। তাহলে আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ এক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই। এই ধারাটি বাদ দিতে হবে। হজযাত্রীদের নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে যদি কোনো এজেন্ট হজযাত্রীর সাথে প্রতারণা বা অনিয়ম করে তাহলে বাংলাদেশে তার বিচার হবে।

এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও হজযাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের, সংগঠনটির নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তাজুল ইসলাম, আটাবের সাবেক সেক্রেটারি আসলাম খান, আব্দুস সালাম আরেফি ও মো. মানিক প্রমুখ।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, প্রস্তাবিত হজ আইন বাতিল করা না হলে বেসরকারি পর্যায়ে হজ ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে। তাছাড়া এসব ধারা-উপধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

স্টেকহোল্ডার হিসেবে হাবের ভূমিকা জানতে চাইলে আটাবের সাবেক সেক্রেটারি আসলাম খান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত হজ আইনটির বিতর্কিত ধারা সম্পর্কে হাব নেতারাও অন্ধকারে ছিল। আমরা তাদের বিষয়টি জানানোর পর এসব ধারা বাতিলের জন্য তারা সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

   

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;