মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনে মুসলিমদের গুরুত্ব বাড়ছে



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
মার্কিন নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন এক মুসলিম নারী, ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন এক মুসলিম নারী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিসাবে মুসলিমরা তৃতীয় বৃহত্তম। দেশটির ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ইতিহাস বলছে, আড়াই শ’ বছর আগেই মার্কিন ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ইসলাম। মার্কিন সংবিধানের আর্টিকেল ৬-এ স্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘ধর্ম কোনো ধরনের সরকারি রাষ্ট্রীয় বা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না।’ তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনসহ আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতারা ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছিলেন বলেই সংবিধানে এমন ধারা স্থান পেয়েছে।

এখানে একটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো, দেশটির স্বাধীনতার অনেক আগে ১৭৬৫ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করা একটি কোরআনে কারিমের কপি কিনেছিলেন জেফারসন। ১১ বছর পর তিনিই রচনা করেন আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। জেফারসনের কেনা পবিত্র কোরআনের ওই কপিটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে।

আমেরিকার প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয় ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে। আর দ্বিতীয় মসজিদটি নির্মিত হয় প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠার প্রায় তিন দশক পর ১৯২১ সালে। মিশিগান রাজ্যের হাইল্যান্ড পার্কে ওই মসজিদটি স্থাপন করেন কিছু মুসলিম অভিবাসী।

১৭৬৫ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করা কোরআনে কারিমের এই কপি কিনেছিলেন জেফারসন, ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন সমাজে কালো মানুষদের তখন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো। কিন্তু ইসলাম তাদের দিয়েছিল এমন একটি প্ল্যাটফরম, যেখানে সব মানুষ সমান। এর ফলে দেখা যায় দেশটিতে মুসলিম অভিবাসী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে বিংশ শতকের শুরুর দিকে দলে দলে মানুষ মুসলমান হতে থাকেন। অন্য দিকে বিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই অন্তত ১১ লাখ মুসলিম আমেরিকায় প্রবেশ করেন। দীর্ঘদিন বসবাসের ও অভিবাসনের কারণে মুসলিমরা ধীরে ধীরে মার্কিন সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে।

তবে এই পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর। কথিত মুসলিম জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে ওই হামলায়। এ ঘটনা আমেরিকায় অবস্থানকারী মুসলিমদের ওপর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এক ধরনের বিপদের মুখোমুখি হন তারা।

টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেই আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মসজিদ এবং ইসলামিক কেন্দ্রগুলোতে মার্কিন পতাকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং সবার জন্য দুয়ার উন্মুক্ত করে অমুসলিমদের আহ্বান জানানো হয় সাধারণ মুসল্লিদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের জন্য। এ সময় তারা ইসলাম ধর্মের শান্তির বার্তা সম্পর্কে অমুসলিমদের জানাতে শুরু করে এবং সদর্পে জানান দেয়, আমেরিকায় বসবাসকারী মুসলিমরা শান্তিপ্রিয় এবং দেশপ্রেমিক।

আমেরিকার প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে, ছবি: সংগৃহীত

এরই মধ্যে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের সূচনা হয়। ঠিক এ সময়টিতে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিমদের সম্পর্কে আমেরিকানদের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। মুসলমান, ইসলাম এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন, তথ্যচিত্র এবং বিভিন্ন বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সগুলোতে যুক্ত করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কয়েক মিলিয়ন অমুসলিম আমেরিকান ইসলাম ধর্ম এবং এর অনুসারী, ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়।

২০১৭ সালে মার্কিন পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক শুমারিতে দেখা যায়, দেশটিতে প্রায় ৩৫ লাখ মুসলিম বসবাস করছেন। যা মোট আমেরিকান জনগোষ্ঠীর ১ দশমিক ১ শতাংশ। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর) নামে ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি অ্যাডভোকেসি সংগঠনের দাবি, আমেরিকায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ মুসলিম বসবাস করছেন।

পিউ রিসার্চের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে আমেরিকায় মুসলিমের সংখ্যা ৮১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এমনটি হলে ইসলাম হবে আমেরিকার দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম। পিউ রিসার্চের মতে, মুসলিম নারীরা অধিকহারে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে যত শিশুর জন্ম হয়েছে, তার ৩৫ শতাংশই মুসলিম শিশু। ১৯৯২ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ মুসলিম বৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করেন। ২০১২ সালেই প্রায় এক লাখ মুসলিম দেশটিতে অভিবাসিত হন। গত শতকের ৯০ দশকে আমেরিকায় প্রবেশ করা বেশিরভাগ মুসলিম মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার। তবে, ২০১২ সালের পর পাকিস্তান, ইরান, বাংলাদেশ ও ইরাক থেকে সবচেয়ে বেশি মুসলিম দেশটিতে বৈধভাবে প্রবেশ করেন।

আমেরিকার প্রথম মুসলিম কংগ্রেসম্যান কিথ এলিসন, ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকায় মুসলিম সংখ্যাধিক্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতিতেও তাদের অবস্থান ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডেমোক্রেটিক পার্টির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান প্রথম মুসলিম কংগ্রেসম্যান কিথ এলিসন। ২০০৭ সালে মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের প্রথম মুসলিম সদস্য কিথ এলিসন তার উদারনৈতিক মনোভাবের কারণে মার্কিন সমাজে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। পরবর্তীতে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে আরও বেশ কয়েকজন মুসলিম প্রার্থী নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনে ৯ মুসলিম প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এটাই সর্বাধিক সংখ্যক মুসলিম প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। মুসলিম প্রার্থীদের বিজয় লাভ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মুসলিমদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। বিজয়ী ৯ মুসলিম প্রার্থীর অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি স্থাপন করেছেন।

বিভিন্ন রাজ্য থেকে এবারের ভোটে নির্বাচিত পাঁচ নারী ও চার পুরুষ সদস্য হলেন- রাশিদা তালিব, ইলহান ওমর, আইমান জাদেহ, মৌরি তার্নার, মাদিনা উইলসন অন্তন, সামবা বালদেহ, ক্রিস্টোফার বেনজামিন, আবুল বি খান ও শেখ রহমান। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে মুসলিমদের ৭০ শতাংশ ভোটই বাইডেন পেয়েছেন। মার্কিন সমাজে মুসলিমদের প্রভাব বাড়ার বিষয়টি আন্দাজ করা যায় নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের দিকে তাকালে। এ পর্যন্ত ১৫ জন আমেরিকান মুসলিমকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে মার্কিন প্রশাসনে এত বেশি মুসলিম মুখ দেখা যায়নি।

পবিত্র কোরআন হাতে শপথ নিচ্ছেন রাশিদা তালিব, ছবি: সংগৃহীত

বাইডেনের প্রশাসনে নিযুক্ত আমেরিকান মুসলিমরা হলেন- ১. আয়েশা শাহ, হোয়াইট হাউসের ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি অফিসের অংশীদার বিষয়ক পরিচালক। ২. সামিরা ফাজিলি, মার্কিন জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের (এনইসি) উপ-পরিচালক। ৩. উজরা জিয়া, নাগরিক সুরক্ষা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি। ৪. আলী জায়েদি, জাতীয় জলবায়ু বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা। ৫. জায়েন সিদ্দিক, হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ। ৬. রীমা ডোডিন, হোয়াইট হাউসের আইন বিষয়ক অফিসের উপ-পরিচালক। ৭. আলী জাফরি, হোয়াইট হাউসের জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা। ৮. মাহের বিতার, হোয়াইট হাউস জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিলে গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর। ৯. সামিয়া আলী, হোয়াইট হাউসের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট কাউন্সেল। ১০. সালমান আহমেদ, স্টেট ডিপার্টমেন্টের নীতি পরিকল্পনা পরিচালক। ১১. ফারুক মিঠা, উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব। ১২. ডানা শানাত, হোয়াইট হাউসের আইন বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা। ১৩. ব্রেন্ডা আবদেলাল, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের উপদেষ্টা। ১৪. ইসরা ভাটি, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র উপদেষ্টা ও ১৫. সায়মা মহসিন, পূর্বঞ্চলীয় জেলায় নিযুক্ত মার্কিন অ্যাটর্নি।

এদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর পর মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের ওপর ট্রাম্পের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছেন জো বাইডেন। তার এই পদক্ষেপও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। সবমিলিয়ে ধীরে ধীরে এটা স্পষ্ট হচ্ছে, মার্কিন মুলুকে মুসলিমরা শুধু উপার্জন কিংবা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় যায়নি এবং এ জন্যই ব্যতিব্যস্ত থাকে না। তারাও মানবতা, রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণী কাজে দক্ষ এবং কাজ করার অধিকার রাখে।

   

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;

পরনিন্দার পাপ থেকে বাঁচতে যা করবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গিবত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা।

শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। হাদিসের বর্ণনা, ‘যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।’ -সহিহ মুসলিম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।’ -সুরা হুজুরাত : ১২

‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।...অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয় বেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।’ -সুরা হুমাজা : ১-৯

গিবত এমনই ভয়াবহ পাপ। এটা থেকে বেঁচে থাকা মুমিন-মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। গিবত থেকে বাঁচার কিছু উপায় হলো-

১. কারও বিষয়ে হুটহাট করে কিছু না বলা। ভেবে-চিন্তে কথা বলা। যতটুকু সম্ভব কম কথা বলাই ভালো, কারণ- চুপ থাকাও একটা ইবাদত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ -সহিহ বোখারি : ৬০১৮

২. যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। সুতরাং বন্ধু-বান্ধব কিংবা কাছের কোনো আত্মীয়ের অনুপস্থিতিতে তাদের নামে ভালো কথাও না বলা। কারণ ভালো কথা বলা ফাঁকে শয়তান আপনাকে দিয়ে কখন যে গিবত করিয়ে নেবে; সেটা আপনি টেরই পাবেন না।

৩. অতি প্রয়োজন ছাড়া লোকসমাগম এড়িয়ে চলা। কেননা যেখানে মানুষ বেশি থাকে সেখানে গিবতও বেশি হয়।

৪. আপনার কাছে কেউ গিবত করলে তাকে থামিয়ে দেবেন। সম্ভব হলে বুঝিয়ে বলবেন। কারণ গিবত করা ও গিবত শোনা উভয়টাই হারাম।

নিজেও যখন কথা বলতে বলতে গিবত করে ফেলবেন এবং খেয়াল হবে যে, আরে আমি তো গিবত করে ফেলেছি; সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবেন এবং তওবা করবেন।

৫. অমুক কেমন জানি পোশাক পরে, অমুকের রান্না ভালো না, অমুক মোটা, অমুক কালো, দেখতে একদম ভালো না ইত্যাদি- এ ধরনের কথাও গিবত। তাই এ জাতীয় কথা বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।

৬. অমুক এই এই কাজগুলো ভালো করেনি। অমুকের এই-এই স্বভাব ভালো না। অমুকের নামে এই-এই বদনাম আছে। ওমুক আমার এই-এই ক্ষতি করছে। এগুলো বলার অর্থ হলো যে, মানুষের দোষ নিয়ে কথা বলা; যেটা গিবতের অন্তর্ভুক্ত।

৭. এর পরও যদি গিবত হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আস্তাগফিরুল্লাহ অথবা দুই রাকাত নফল নামাজ পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেওয়া।

কাউকে নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা আল্লাহর কাছে বলা। পারলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। মানুষের কাছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে উল্টো নিজের গোনাহ কামানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। অন্যের দোষ ঢেকে রাখলে আল্লাহতায়ালাও এ কারণে আমার-আপনার দোষ ঢেকে রাখবেন- ইনশাআল্লাহ!

মনে রাখবেন, গিবত আমাদের নেক আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

;

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান তীব্র দাবদাহে রাজধানীর পিপাসার্ত মানুষের মাঝে টানা চার দিন ধরে সুপেয় ঠাণ্ডা শরবত (লাল চিনি, বিট লবণ, লেবু এবং এসএমসির ম্যাংগো ও অরেঞ্জ ফ্লেবার মিশ্রিত) বিতরণ করছে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার।

রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যাণ্ড, মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে এবং মিরপুর ১ ও ১০-এর বিভিন্ন পয়েণ্টে শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পর ধারাবাহিকভাবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ১ হাজার ৫ শ’ লিটার শরবত বিতরণ করা হচ্ছে।

মে দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার বুধবার (১ মে) মিরপুর ঈদগাঁহ ময়দান ও টিএসসির মোড়ে শরবত বিতরণ করবে।

পথচারীদের মাঝে ঠাণ্ডা শরবত বিতরণের বিষয়ে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবারের সভাপতি ও মানবসেবায় সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠান তাকওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গাজী ইয়াকুব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঢাকাসহ সমগ্র দেশবাসী এখন প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে অবস্থান করছেন। এমন সময় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তীব্র গরমে আমাদের আশপাশে অবস্থান করা শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের ভুলে গেলে চলবে না। তাই তাদের উদ্দেশ্যেই মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘গরমের তীব্রতা বেশি থাকলে সামনে আরও বেশ কিছুদিন এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

হিট স্ট্রোকের মারাত্মক এই অবস্থায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্পটে ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত পথচারীদের বিনামূল্যে এমন উদ্যোগে ভীষণ খুশি সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় বেরিয়ে সবার প্রাণ যখন উষ্ঠাগত, তখন পথচারীদের ডেকে ডেকে শরবত করাচ্ছেন আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্ররা। এর চেয়ে বড় মানবিক কাজ আর হতে পারে না।

;