পোল্যান্ডের মানুষ ক্রমশ ইসলামের দিকে ঝুঁকছে



ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, অতিথি লেখক, ইসলাম
পোল্যান্ডের একটি মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

পোল্যান্ডের একটি মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৩,১২,৬৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট পোল্যান্ড ইউরোপের নবম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা একেবারে কম। চার কোটি জনঅধ্যুষিত পোল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ৫০ হাজার। তন্মধ্যে তাতার ও বিদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বেশি।

আমার কথা হলো দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাতার জনগোষ্ঠী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী। মিসর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, ইরাক, তিউনিসিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, সোমালিয়া, চেচনিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে মুসলমানরা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে দেশত্যাগ, উচ্চতর শিক্ষা, উন্নত জীবনের প্রত্যাশ, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতি কারণে পোল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে আসতে থাকেন। এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং ইসলাম সম্পর্কে তাদের ধারণা অস্পষ্ট।

২০১৮ সালে ডানপন্থী কট্টর ক্যাথলিসিজম ও সেক্যুলার লিডার ক্যাম্প পোল্যান্ডে কথিত ‘ইসলামোফোবিয়া’ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রচেষ্টা চালায়। ২০১০ সালে রাজধানী ওয়ারশর অচোটা জেলায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে গেলে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা বিরোধিতা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতদসত্ত্বেও মুসলমানরা মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন করেন। প্রথম প্রথম মুসলিম নারীরা হিজাব পরে চলাফেরা করতে কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে।

 পোল্যান্ডের একটি হালাল দোকান, ছবি: সংগৃহীত

বিগত সাত শ’ বছর ধরে মুসলমানরা পোল্যান্ডের জনগণ ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আসছেন। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সঙ্গে ইসলামের অনুসারীদের বাহ্যত কোনো বিবাদ নেই। চতুর্দশ শতাব্দীতে গ্র্যান্ড ডিউক উইহোল্ডের শাসনামলে তাতাররা পোল্যান্ডে থাকার অনুমতি পান এবং সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ডের অখণ্ডতা রক্ষার্থে মুসলমানরা জার্মানি ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। জোসেফ বেন (ইউসুফ পাশা) নামক এক জেনারেল পোলিশ সেনাবাহিনীর অধীনে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামতত্ত্ববিদ আগাটা নালবোরচিক জানান, সাতশ’ বছর আগে ইসলাম ধর্মাবলম্বী তাতার জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এশিয়া, বিশেষ করে তুরস্ক থেকে পোল্যান্ডে এসেছিলেন। তুরস্কের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পোল্যান্ডের রাজা ইওহানেস সোবিস্কিকে সাহায্য করেছিলেন যুদ্ধে পারদর্শী মুসলিম তাতাররা। রাজা তাদের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিপ্রবণ এবং তাদের দেখভালের দিকে লক্ষ রেখেছিলেন। সেই থেকে তারা সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতাররা পোল্যান্ডের সমাজে মিশে যান। তারা নিজেদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তারা পোলিশ ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু নিজেদের ধর্ম তারা হারাননি। তখন থেকে মুসলিম তাতাররা প্রতিবেশী ক্যাথলিকদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করছেন। ১৯৩৬ সালে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং স্কুলে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীরা আরবি ভাষা শেখারও সুযোগ পায় (রায়হানা বেগম, ডয়চে ভেলে, ৩০ ডিসেম্বর-২০০৯)।

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ
১২ বছর আগে ক্যাথলিক ও মুসলমানরা আন্তঃধর্মীয় সংলাপের লক্ষ্যে যৌথ এক পরিষদ গড়ে তোলেন। পোল্যান্ডের গির্জার বিশপ ও সৌদি আরবের বাদশাহ এই পরিষদকে সহযোগিতা করছেন। ইউরোপে এরকম আর দ্বিতীয়টি নেই। পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আগাটা নালবোরচিক জানান, ‘আমাদের লক্ষ্য খ্রিস্টানদের ইসলাম আর মুসলমানদের খ্রিস্টধর্মের কাছাকাছি নিয়ে আসা। প্রথমে আমাদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হচ্ছে। সব মুসলিমই সন্ত্রাসী ও কট্টরপন্থী নয়, সেটা সুস্পষ্ট করতে কাজ করে যাচ্ছি।’

দুই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সংলাপ জোরদার করতে পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজিত হচ্ছে সম্মেলন ও আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রকাশিত হয় বইপুস্তক এমনকি ক্যাথলিক ও মুসলিমদের এক সঙ্গে প্রার্থনারও আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে রয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান ও ইসলাম উভয় ধর্মের অনুসারীরা, যাতে দুই ধর্মেরই সমমর্যাদা প্রকাশ পায়। মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছেন আর্তুর কনোপাকি। তিনি বলেন, ‘আলোচনা অনুষ্ঠানে আমরা আমাদের ধর্মের নানা দিক তুলে ধরি। বাস্তবে খ্রিস্টধর্ম ও ইসলামের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। এ মিলগুলোই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, পার্থক্য নয় (রায়হানা বেগম, ডয়চে ভেলে, ৩০ ডিসেম্বর- ২০০৯)।

নামাজ আদায় করছেন মুসলিম কিশোর-কিশোরীরা, ছবি: সংগৃহীত

বুহুনিকি এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য রাজা তৃতীয় সোবিস্কি মুসলমানদের একখণ্ড জমি দান করেন। শিক্ষা গ্রহণ, ভূমি ক্রয়, মসজিদ নির্মাণ, বাসস্থান তৈরি, ব্যবসায় পরিচালনা ও স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য সুযোগ অবারিত হয়। বুহুনিকি ও কুরুসজিনিয়ানিতে মসজিদ দু’টি তুলনামূলকভাবে অতি প্রাচীন। বিয়ালিস্টকে রয়েছে ইসলামি কেন্দ্র, যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৮০০।

পোল্যান্ডে জন্ম নেওয়া বহু মুসলমান শিক্ষা, প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগে চাকরি করছেন। ড. আলী মিসকভজিস বিয়ালিস্টক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ড. সলিম চাসভিজেউক্স ওয়ারামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। মুসলিম তাতাররা ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে পোল্যান্ডের জীবনধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তারা মাতৃভাষা ত্যাগ করে স্লোভাকিয়ান বাকরীতি গ্রহণ করেছেন।

এ দেশে দাওয়াতি তৎপরতা চালাতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আধ্যাত্মিক শান্তির অন্বেষায় পোল যুবক, শিল্পী ও ছাত্ররা ইসলামের দিকে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছেন। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার ইসলামি সমাধান প্রাপ্তির লক্ষ্যে তাতারদের রয়েছেন থোমাস মিসকিউজ নামে একজন মুফতি।

রাজধানী ওয়ারশতে মুসলমানদের রয়েছে নিজস্ব মসজিদ, কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র, হালাল খাদ্যের স্টল ও কবরস্থান। ওয়ারশ কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার দিন তিন শতাধিক মুসলমান নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো হন। রাজধানীর পাঁচ হাজার মুসলমানের মধ্যে বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষিত। পোলিশ ভাষায় পবিত্র কোরআনের একটি অনুবাদ এবং ইমাম নববির ৪০ হাদিস নামক একটি হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা বেরিয়েছে। পোজনান এলাকায় কোনো মসজিদ না থাকলেও মুসলমানরা স্থানীয় ছাত্রাবাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন।

পোল্যান্ডে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের মধ্যে ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পোলিশ মুসলিম ইউনিয়ন ও ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম স্টুডেন্টস সোসাইটির কর্মতৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো। মুসলিম ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে কোরআন, হাদিস, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের লক্ষ্যে পোলিশ ও ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন ম্যাগাজিন বের হয় নিয়মিত। তন্মধ্যে ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিভিউ’, মাসিক ইসলামিক ম্যাগাজিন ‘আলিফ’ উল্লেখযোগ্য। মুসলিম স্টুডেন্টস সোসাইটি মুসলিম শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছে। সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর বিভিন্ন দিবসে মাহফিল, সেমিনার, সংলাপ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি গ্রন্থ ‘আল হাদারা’ নামক একটি আরবি ত্রৈমাসিক এবং ‘হিকসা’ নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। ‘হিকমা’ এ পর্যন্ত ৪২টি সংখ্যা বেরিয়েছে। মুসলিম ছাত্রদের মাদরাসা ও স্কুলে পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধকরণ ও ভর্তির ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া সোসাইটির অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। স্কলারদের মাধ্যমে পোলিশ ভাষায় পবিত্র কোরআনের তরজমাসহ নির্ভরযোগ্য একটি তাফসির প্রকাশ, রাজধানী ওয়ারশতে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন এবং ইসলামি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতারা সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

পোল্যান্ডের মুফতি থোমাস মিসকিউজ, ছবি: সংগৃহীত

পোল্যান্ডে ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিপালনে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির লক্ষ্যে মুসলমান নেতারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি আইনের খসড়া তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। এ আইন কার্যকর হলে ১৯৩৬ সালের আইন বাতিল হয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত হবে। খসড়া আইনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক. মসজিদে ইমাম ও খতিবদের তত্ত্বাবধানে মুসলমানদের যেসব বিয়ে সম্পন্ন হবে, তা সিভিল ম্যারেজ হিসেবে আইনি মর্যাদা পাবে, খ. উলামা-মাশায়েখ কর্তৃক যেকোনো খাদ্যদ্রব্যের জন্য প্রদত্ত ‘হালাল সার্টিফিকেট’ রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, গ. ধারালো ছুরি দিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, দুম্বা, হাঁস, মুরগি ও কবুতরের গলা দিয়ে জবাই করলে এবং জবাই করার সমং ‘আল্লাহু আকবার’ বললে কেবল মুসলমানরা সে গোশত খেতে পারবেন, ঘ. ঈদসহ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলো ছুটির দিন হিসেবে গণ্য হবে, ঙ. ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-বিধান পালনে প্রয়োজনে মুসলমানরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছুটি নিতে পারবেন। এ আইন পোল্যান্ডে ইসলামের বিকাশ এবং সে দেশে অবস্থানরত মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

পোল্যান্ডের এ প্রশংসনীয় পরিস্থিতি পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত মুসলমানদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে।

অন্যের জন্য দোয়া করার লাভ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইসলামের শিক্ষা হলো, ব্যাপকভাবে সবার জন্য দোয়া করা, ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের শিক্ষা হলো, ব্যাপকভাবে সবার জন্য দোয়া করা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেসবুক স্ক্রল করছেন, হঠাৎ দেখলেন আপনার কোনো বেকার বন্ধু ভালো একটি চাকরি পেয়ে গেছে। আপনি মনে মনে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহুম্মা বারিক! হে আল্লাহ, তার আয়-রোজগারে বরকত দিন এবং কর্মজীবনে অনেক উন্নতির তওফিক দান করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

কোনো বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার পর মন থেকে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! তার দাম্পত্য জীবন সুখ-শান্তিতে পরিপূর্ণ করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

পার্কে বা রাস্তায় হাঁটছেন, দেখলেন ফুটফুটে একটি বাচ্চা খেলা করছে। আপনি বাচ্চাটির উদ্দেশ্যে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! শিশুটিকে সুস্থ-সবল রেখে নেক হায়াত দান করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

বাসায় ফেরার সময় দেখলেন এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। আপনি তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার পর তার জন্য দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি লোকটিকে সুস্থতা দান করুন এবং তার জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

এগুলো কোনো কাল্পনিক কথা নয়, আমাদের সঙ্গে ঠিক এমনটাই করা হয়। এই মর্মে একটি হাদিস আছে, হজরত সাফওয়ান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা তার দোয়ার সময় আমিন বলতে থাকেন। যখনই সে তার কল্যাণ কামনা করে দোয়া করে, তখন ফেরেশতা বলেন, আমিন, তোমার জন্যও অনুরূপ কল্যাণ।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯৫

অপরের জন্য দোয়া করার মধ্যে শুধু ওই ব্যক্তিরই কল্যাণ নয়, বরং যে তার জন্য দোয়া করছেন তাকেও আল্লাহ সে রকম দান করবেন। বরং তার দোয়াটা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। কেননা সে যখন অপরের জন্য দোয়া করবে তখন একজন ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করবে। আর ফেরেশতার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আমাদের পূর্বসূরি পীর-বুজুর্গরা নিজেদের কোনো প্রয়োজন হলে তখন কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য সেই দোয়া করতেন এই আশায় যে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও এই আমল পাওয়া যায়।

কোরআন মাজিদের এই আয়াত থেকেও বোঝা যায় যে, অপরের জন্য দোয়া করার গুরুত্ব। জীবিত মৃত সবার জন্য দোয়া করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, ক্ষমা করো আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।’ -সুরা হাশর : ১০

এ জন্য বুদ্ধিমানরা নিজের একান্ত কোনো প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হলে ওই জিনিস অন্যের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকে। তখন আল্লাহ তার সেই প্রয়োজন পূরণ করে দেন।

দেখুন, বর্তমান সমাজ হিংসা-বিদ্বেষে ভরে গেছে। আমরা অন্যের ভালো সহ্য করতে পারি না। কারও ভালো দেখলে দোয়া করা তো দূরের কথা বরং অনেকে অন্যের সুখ নষ্ট করার জন্য নানা পন্থা এমনকি জাদু-টোনার আশ্রয়ও নেয় কেউ কেউ। অথচ আল্লাহর দেওয়া বিধান কতই না চমৎকার! অন্যের ভালো চাইলে, অন্যের জন্য ভালো দোয়া করলে, তাতে বরং নিজেরই উপকার হয়। কেননা, ফেরেশতাদের দোয়া কখনও বিফল হয় না।

আরেকটি কথা, আমাদের কাছে নানা সময় নানা ব্যক্তি দোয়া চেয়ে থাকেন। বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে একান্ত দোয়ার জন্য আবেদন করে অনেকে। তাত্ক্ষণিক অনেকে তার জন্য কিছু দোয়া করে দেয়। কিন্তু নীরবে নিভৃতে যখন আমরা আল্লাহর কাছে হাত তুলি, ব্যাপকভাবে আমরা সবার জন্য দোয়া করি সাধারণত; কারও জন্য বিশেষভাবে তার প্রয়োজনের জন্য দোয়া করার প্রবণতা, আমাদের খুব কমই রয়েছে।

আমরা শুধু নিজের জন্যই আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করি। অথচ একজন মুসলমানের অনন্যতা এখানেই যে, সে অন্যের জন্য ওই জিনিস পছন্দ করবে যারা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা পছন্দ করো, তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। আরও বর্ণনায় আছে, প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করবে।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৪

;

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;

মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারির সময় মৃতদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।

করোনা মহামারির সময় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

বুধবার (২৪ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপ দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। যদিও করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করাকে নিরাপদ বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।

করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সেসময় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে হবে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানরা মুসলিমদের লাশকে কেবলার দিকে মুখ করে দাফন করে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মরদেহ হিন্দুদের মতো সাধারণত দাহ করা হয়।

শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এই ঘটনার আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

;