মহররম, আশুরা ও কারবালার শিক্ষা



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
কারবালার ঘটনা মুসলিম বিশ্বের কাছে চিরভাস্বর হয়ে আছে, ছবি: সংগৃহীত

কারবালার ঘটনা মুসলিম বিশ্বের কাছে চিরভাস্বর হয়ে আছে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামে ‘মহররম’ কোনো উৎসবের নাম নয়, এটা আরবি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। যার অর্থ সন্মানিত বা পবিত্র। মহররম মাসের দশ তারিখকে বলা হয়- আশুরা। অর্থ ‘দশ’। ইসলামের ইতিহাসে আশুরার গুরুত্ব অপরিসীম বলে বিবেচিত হয়। এই কারণে মহররম মাসের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। এমাসে মানবজাতির প্রতি নিজেদের অবিচারমূলক কাজ-কর্মের ব্যাপারে সতর্কতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পৃথিবী সৃষ্টিসহ সভ্যতার আদি পর্ব থেকে মহররম মাসের দশ তারিখে ইসলামের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ আছে। জাহিলিয়াতের যুগে অসভ্য আরববাসীরাও এই দিনে ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকতো। একইভাবে ইহুদি, খৃস্টানদের নিকটও দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

তবে ঐতিহাসিকভাবে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারবালার প্রান্তরে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, এবং ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর পুত্র হজরত হুসাইন (রা.) তথা নবী বংশ ও পরিবারের মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ড।

মহররম মাস স্মরণ করিয়ে দেয় কারবালার ময়দানে ইমাম হুসাইনের (রা.) শহীদ হওয়ার কথা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা শিক্ষা দেয়। হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনী নির্দয়ভাবে ইমাম হুসাইন (রা.) ও তার শিশুপুত্রসহ ৭২ জন সাথীকে হত্যা করে। তবে ইমাম হুসাইন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাসে গৌরবজনক অধ্যায়ের রচনা করে অমর হয়ে বিশ্ববাসীর জন্য রেখে গেছেন আত্মত্যাগের অনুপম শিক্ষা ।

ইতিহাসে দেখা যায়, ইসলামের চারজন খলিফার মধ্যে শেষ খলিফা হজরত আলী (রা.) নবী করিম (সা.)-এর জামাতাও বটে। তার মৃত্যুর পর খলিফা নির্বাচিত হন তার পুত্র হজরত হাসান (রা.)। কিন্তু রাজনীতি ও সমর নীতিতে তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে রাজনৈতিকভাবে তিনি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর কাছে পরাজয় বরণ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তখন হজরত হাসান (রা.) ও হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বলা হয়, হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করনে। কিন্তু ৬৭৯ সালে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) মৃত্যুর আগেই হজরত হাসান (রা.)-এর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত লংঘন করে ছেলে ইয়াজিদকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। এ ঘটনাই কারবালার যুদ্ধের সূত্রপাত।

ইয়াজিদের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে জনগণের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিশিষ্টদের মধ্যে অনেকেই তার খলিফা প্রাপ্তির ঘটনাকে মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। তদুপরি, জনগণের কাছে হজরত হুসাইন (রা.) ছিলেন খলিফার হিসেবে বেশি পছন্দনীয়।

এমন পরিস্থিতির মাঝে ইয়াজিদের শাসনে কুফার নাগরিকরা অত্যাচারিত হয়ে হজরত হুসাইন (রা.)-এর সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি কষ্টে থাকা কুফাবাসীর ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি। তাদের সাহায্যে একদল সৈন্য ও পরিবারে লোকজকে সঙ্গে নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এর আগে কুফাবাসীর ঘটনা সরজমিনে সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্য মুসলিম বিন আকিল নামে তার এক নিকটাত্মীয়কে কুফা পাঠান। কিন্তু ইয়াজিদের নির্দেশে আকিলকে হত্যা করা হয়। কুফা পৌঁছানোর আগে হজরত হুসাইন (রা.) এই হত্যকাণ্ডের খবর পেয়ে চিন্তিত হন ও মদিনায় ফিরে যাওয়া তাদের জন্য সমীচীন হবে বলে মনে করেন। কিন্তু হজরত হুসাইন (রা.)-এর সঙ্গে অবস্থানকারী আকিলের পরিবার তার হত্যকাণ্ডের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

অন্যদিকে হজরত হাসান (রা.)-এর পথ অবরুদ্ধ করতে ইয়াজিদের সেনা অফিসার ওবায়দুল্লাহর নির্দেশে ওমর বিন সাদ চার হাজার সৈন্য দ্বারা ঘিরে ফেলে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হজরত হাসান (রা.) ইরাকের ফোরাত নদীর পশ্চিম তীর বেয়ে পঁচিশ মাইল পথ হেঁটে কারবালার প্রান্তরে তাঁবু গাড়লেন। ওবায়দুল্লাহ হুসাইনকে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার জন্য ফোরাত নদীর তীর অবরোধের নির্দেশ দেন। ইমাম শত্রুতা ও রক্তক্ষয় এড়াতে ইয়াজিদের সেনাপতিকে আপোষ প্রস্তাব দিয়ে বললেন, ‘হয় আমাদের দেশে ফিরে যেতে দাও, অথবা ইয়াজিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা কর, আর এই প্রস্তাবে রাজী না হলে দূরে কোথাও যুদ্ধের ময়দানে যেতে দাও। যেখানে আমি অত্যাচারী শাসক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি।’

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার এই শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সময় গড়াতে থাকে। পরিণতি অসম এক যুদ্ধ।

যুদ্ধে হজরত হুসাইন (রা.) শাহাদত বরণ করেন। যুদ্ধের ঘটনা ও পরিস্থিতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। যা নিষ্ঠুর হৃদয়ের মানুষকেও বিগলিত করে।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে হজরত হুসাইন (রা.)-এর লড়াই ও আত্মত্যাগ বিশ্ববাসীর কাছে অনন্ত শিক্ষার উৎস। ন্যায় ও সত্যের জন্য জীবন দান করে তিনি মহৎ শিক্ষা রেখে গেছেন। অথচ ইয়াজিদের কাছে আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি অনায়াসে নিজের ও পরিবারবর্গের জীবন রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করার শিক্ষা তার হৃদয়ে বিন্দুমাত্র স্থান পায়নি। কারবালার ঘটনা মানবজাতির কাছে সত্য ও ন্যায়ের জন্য এক উজ্জ্বল ত্যাগের নমুনা হয়ে আছে। কারবালার যুদ্ধে হজরত হুসাইন (রা.)-এর আপাত পরাজয় ঘটলেও তা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শবাদের জয়। যা মুসলিম বিশ্বকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। কারবালার ঘটনা মুসলিম বিশ্বের কাছে চিরভাস্বর হয়ে আছে।

কারবালার এই করুন কাহিনী সমগ্র মানব জাতির জন্য একটা অনন্ত শিক্ষা। কারণ, হজরত হুসাইন (রা.) জীবন, পরিজন উৎসর্গ করে আমাদের জন্য অফুরন্ত ভাবনা ও শিক্ষার খোরাক রেখে গেছেন। অন্যদিকে সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে নির্বাচিত খেলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করে গেছেন। অন্যায়ের প্রতি ইমামের প্রতিবাদ ছিল জলন্ত অগ্নিশিখার মতো, যে অগ্নিশিখা সমগ্র মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিতাস্বরূপ।

কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মতাদর্শের লোকজন ত্যাগ ও আদর্শের ছাপহীন নানা কর্মসূচি পালন করেন। যদিও এসব উৎসব কোনও অর্থ বহন করে না এবং ইসলামের মতাদর্শকে প্রতিফলিত করে না।

বস্তুত কারবালাকে মাহাত্ম্যশোভিত করার জন্য চাই উপযুক্ত জ্ঞান ও শিক্ষা। মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সততার সাধনার মধ্যেই এ দিবসের তাৎপর্য নিহিত। এক কথায়, অসত্যের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম কারবালার নিরন্তর শিক্ষার উৎস হিসেবে বিবেচিত। কারণ, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন, ‘উত্তম জিহাদ হলো- নিষ্ঠুর, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়ক ও সরকারের বিরুদ্ধে সত্য তথা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।’

সুতরাং আত্মস্বার্থ ও লোভের বশবর্তী হয়ে বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত, নির্যাতনের প্রতিবাদে যদি চুপ থাকা হয়, তাহলে মহররম, আশুরা ও কারবালার প্রতি অবমাননা করা হয়। তাই শুধু আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আশুরা ও কারবালার চেতনা জাগ্রত হবে না, জাগ্রত হবে মানুষের সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠিার মাধ্যমে।

   

ইন্দোনেশিয়ান নারীর ২২ বার হজ-উমরার অবিস্মরণীয় স্মৃতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৬৪ সালে ছয় বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো হজপালন করতে সৌদি আরব যান। তারপর থেকে তিনি উমরা এবং হজপালনের জন্য আরও ২২ বার মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করেছেন।

সুরাবায়া বিমানবন্দরের মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ হলে মরিয়ম মুনির তার ২২ বার সৌদি আরব ভ্রমণের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে আলাপ করছিলেন সৌদি প্রেস এজেন্সির এক প্রতিনিধির সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর আগে, তার পরিবার হজ করার জন্য প্রথম ভ্রমণ করেন, ভ্রমণটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। একটি পুরোনো জাহাজে করে সৌদি আরব আসতে পাঁচ থেকে আট মাস সময় লেগেছিল।

জাহাজগুলো প্রথমে জাকার্তা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে ভারত, আরব সাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছায়। তিনি বলেন, যাত্রাটি বিপদ, চ্যালেঞ্জ এবং ভয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তবে, ফরজ ইবাদতপালনের বাধ্যবাধকতার জন্য তার পরিবারের ইচ্ছা ও সাধনা পথের কষ্ট সেভাবে দাগ কাটেনি। বরং এ সময়টা আমাদের আরও শক্তি জুগিয়েছে। কাবা দেখার ইচ্ছাকে প্রবল করেছে। মসজিদে নববিতে যাওয়ার এবং রাসুলের রওজা জিয়ারতের ভালোবাসা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মক্কা নগরিতে পৌঁছার পর আমাদের শরীর পুরোপুরি সতেজ হয়ে উঠে। আর মসজিদে নববিতে যেয়ে মনে হতো, আত্মা যেন সতেজ হয়ে উঠছে।

মুনির অতীতে হজকে ঘিরে ইন্দোনেশিয়ানদের বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কেও কথা বলেন।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজপালনে সৌদি আরব যান

মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বলেন, হজযাত্রীরা সবাই জাকার্তায় জড়ো হবেন এবং যাত্রার আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানাবেন- এটাই আমাদের রীতি। হজ শেষ করে দেশে ফেরার পর হজযাত্রীদের পরিবার তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন এবং তাদের ধর্মীয় যাত্রার পরিপূর্ণতা উদযাপন করে বিভিন্ন উপহার দিয়ে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়।

মরিয়মের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মক্কায় ভ্রমণ এখন অনেক সহজ হয়েছে, যার ফলে পবিত্র নগরীতে উমার ও হজপালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের হজযাত্রাকে বর্তমান যাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ভিন্নতার জগৎ।

তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে তারা এখানে (ইন্দোনেশিয়া) বসে মক্কায় পৌঁছেছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সৌদি সরকারের একটি অনুকরণীয় অর্জন। এ সময় মুনির সৌদি সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জনসংখ্যার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া হলো, সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী প্রতিবছর হজপালনে সৌদি আরব যান। চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। ১২ মে থেকে দেশটির হজফ্লাইট শুরু হয়েছে।

;

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া তথা কালো গিলাফ নিচ থেকে ওপরে তিন মিটার তুলে তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। কেউ বলেন, কাবাকে ইহরাম পড়ানো হয়েছে, এর মাধ্যমে হজের প্রস্তুতির স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার ২২ মে (১৫ জিলকদ) প্রতিবছরের মতো এবারের হজের প্রস্তুতি হিসেবে তা করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এভাবে কাবার গিলাফের নিচের অংশ ওপরের তোলার কারণ কী, তা অনেকের অজানা।

মূলত হজের সময় পবিত্র মসজিদে হারামে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। কাবা ঘরের কালো গিলাফের কিছু অংশ ওপরে উঠিয়ে রাখা এর অন্যতম। এর বদলে একটি সাদা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কাপড়টি আড়াই মিটার চওড়া এবং চার দিকে ৫৪ মিটার দীর্ঘ।

কিসওয়াটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে উত্তোলন করা হয়। প্রথমে চারদিক থেকে কভারের নীচের অংশটি খুলে দেওয়া হয়, ফলে কোণগুলো আলাদা হয়ে যায়। তার পর নীচের দড়ি খুলে ফিক্সিং রিং থেকে সরিয়ে ওপরের দিকে টেনে তোলা হয়।

ইসলামের সূচনাকাল থেকে হজের সময় কাবার গিলাফ সুরক্ষায় এই রীতি চলে আসছে। অতীতে গিলাফের কিছু অংশ হাতের কাছে পেয়ে কিছু অংশ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে।

অনেকে গিলাফকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক বস্তু বলে মনে করে। অনেকে সেই কাপড়ে নিজের নাম লিখে স্বস্তিবোধ করে। অথচ এসব কাজের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাই হাজিদের ভিড়ের মধ্যেও গিলাফ সুরক্ষিত রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কাবার গিলাফ ওপরে তোলা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আর খালি স্থানে সাদা কাপড় দিয়ে কাবাঘর মোড়ানো হয়। মূলত এর মাধ্যমে হজের সময় ঘনিয়ে আসার কথা স্মরণ করানো হয়। কাবার দেয়ালের সাদা কাপড় হজের পূর্বপ্রস্তুতির জানান দেয়। হজের শেষ সময় পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকে। এরপর আগের মতো পুনরায় কালো গিলাফ নামিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবছর ১৫ জিলকদ বা এর এক দিন আগে-পরে কাবার গিলাফের অংশ ওপরে তোলা হয়। এরপর থেকেই হাজিদের ভিড় ও তাওয়াফ শুরু হয়। প্রচণ্ড ভিড়েরর কারণে তখন আর গিলাফ ওপরে তোলা সম্ভব হয় না।

কাবার গিলাফ ওপরে তুলতে বুধবার রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা পবিত্র কাবাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। এ সময় বিশেষ প্রযুক্তিগত দল কিসওয়া ওপরে উঠানোর কাজ করে। ১০টি ক্রেনের সাহায্যে ৩৬ জন কর্মী কাজটি সম্পন্ন করেন।

রীতি অনুযায়ী ৯ জিলহজ পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকবে। এরপর হজের দিন নতুন গিলাফ লাগানো হয়।

;

মোগল আভিজাত্যের প্রতীক যে মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মোগল আভিজাত্যের প্রতীক যে মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

মোগল আভিজাত্যের প্রতীক যে মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলার ইতিহাসে মোগল অধ্যায়ের এক উজ্জ্বল নাম শাহ সুজা। সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভাই শাহজাদা শাহ সুজা ছিলেন বাংলার সুবাদার। শাহ সুজা ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় রাজত্ব করেন। তার শাসনামলের শেষ দিকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন জনপদ কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে তারই নামে নির্মিত হয় ইতিহাসখ্যাত শাহ সুজা মসজিদ।

মসজিদটি পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম। আয়তনের দিক থেকে মসজিদটি খুব বেশি বড় না হলেও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। এর বাহ্যিক কারুকাজ সে সময় এর প্রতিষ্ঠাতাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার প্রতি ব্যাপক আনুগত্য ও রুচির পরিচায়ক। মোগল আমলের ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক কুমিল্লার (মোগলটুলী) শাহ সুজা মসজিদ যেন ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রদীপ।

মসজিদটি কুমিল্লার অন্যতম স্থাপত্যশৈলী

ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘রাজমালা’য় ইতিহাসবিদ কৈলাস চন্দ্র সিংহ উল্লেখ করেন, ‘গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লা নগরীর শাহ সুজা মসজিদ নামক একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ দৃষ্ট হয়ে থাকে। এ মসজিদ সম্পর্কে দু’ধরনের জনশ্রুতি আছে- প্রথমত, শাহ সুজা ত্রিপুরা রাজ্য জয় করে চিরস্মরণীয় হওয়ার জন্য এটি নির্মাণ করেন। দ্বিতীয়ত, ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য বাংলার সুবাদারের নাম স্মরণীয় রাখার জন্য নিমচা তরবারি ও হিরকাঙ্গরীয়র বিনিময়ে বহু অর্থকড়ি ব্যয় করে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।’

যেভাবেই নির্মিত হোক না কেন, এটি কুমিল্লার অন্যতম স্থাপত্যশৈলী। মসজিদটি পড়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয়রা জানায়, মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ও স্থাপত্যকর্ম দর্শনার্থী ও মুসল্লিদের মুগ্ধ করে। বিশেষ করে জুমাবার, শবেবরাত, শবেকদরসহ বিশেষ দিনগুলোতে এখানে মুসল্লি ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নতুন নতুন মুসল্লি যুক্ত হয়। এই মসজিদ মোগলটুলী এলাকাকে ভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

মসজিদটিতে ছয়টি মিনার আছে

মসজিদটিতে ছয়টি মিনার আছে। দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট, প্রস্থ ২৮ ফুট। মসজিদের চার কোণে চারটি অষ্টকোণাকার বুরুজ আছে। এগুলো কার্নিসের বেশ ওপরে উঠে গেছে। এর শীর্ষে আছে ছোট গম্বুজ। মসজিদের পূর্ব প্রাচীরে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ প্রাচীরে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে। প্রধান প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত বড়। প্রবেশপথগুলোর উভয় পাশে ও ওপরে প্যানেল নকশা অলংকৃত। কিবলা প্রাচীরের পুরুত্ব ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি আর পূর্ব প্রাচীরের পুরুত্ব ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। বারান্দার প্রস্থ ২৪ ফুট। এতে তিনটি মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয়টি অপেক্ষাকৃত বড় এবং অধিক আকর্ষণীয়। একটি ফুল, খোদাই করা লতাপাতার নকশা ও জ্যামিতিক নকশায় সে যুগের মননশীলতা প্রকাশ পায়।

দুই পাশে খিলান দিয়ে মসজিদের অভ্যন্তর তিন ভাগে বিভক্ত। মাঝের অংশটি বাইরের দিকে পূর্ব ও পশ্চিমে কিছুটা উদ্গত করে নির্মিত। এ অংশের চার কোণে চারটি সরু মিনার কার্নিসের ওপরে উত্থিত। অষ্টকোণাকার ড্রাম আকৃতির ওপর নির্মিত তিনটি গোলাকার গম্বুজ দিয়ে মসজিদের ছাদ ঢাকা। মাঝের গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড়। মসজিদের শীর্ষেও একটি বড় গম্বুজ রয়েছে, যা একটি বিশাল ড্রাম আকৃতির কাঠামোর ওপর স্থাপিত। গম্বুজের ওপরে আছে পদ্ম ফুল ও কলসির নকশা। মসজিদের চার কোণে চারটি অষ্টভুজাকৃতির মিনারও আছে।

শাহ সুজা মসজিদ একটি প্রাচীন স্থাপত্য। শুধু কুমিল্লা নয়, এটি সারা দেশের মধ্যে নান্দনিক একটি মসজিদ। কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ।

;

হজ না করার পরিণাম



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম খুব ভয়াবহ, ছবি: সংগৃহীত

সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম খুব ভয়াবহ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ শারীরিক ও আর্থিক ফরজ ইবাদত। হজ আদায়ে সক্ষম ব্যক্তির ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা বায়তুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর জন্য এই গৃহের হজ করা ফরজ।’ -সুরা আলে ইমরান : ৯৭

হজ সব গোনাহ মুছে দেয়
বিভিন্ন হাদিসে হজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- হজ পূর্ববর্তী সব গোনাহ মুছে দেয়। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না, তার পূর্ববর্তী গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। -জামে তিরমিজি : ৮১১

অন্য বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গোনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। -সহিহ বোখারি : ১৫২১

হজের প্রতিদান জান্নাত
হজে মাবরুরের প্রতিদান হলো জান্নাত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজে মাবরুরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। -সনহিহ বোখারি : ১৭৭৩

সামর্থ্য থাকার পরও হজ আদায়ে বিলম্ব করা
যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যেকোনো বছর হজ আদায় করে, তবে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজের মৌলিক তাৎপর্য, যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা।

কারণ যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখবিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।’ -মুসনাদ আহমদ : ২৮৬৭

হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিজিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহে হজের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।’ -ইবনে হিব্বান : ৩৬৯৫

হজ না করার পরিণাম
সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম খুব ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ আদায়ে সামর্থ্য থাকার পরও তা আদায় না করে সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করুক বা খ্রিস্টান হয়ে- তার কোনো পরোয়া নেই।’ -জামে তিরমিজি : ৮১২

তাই শেষ জীবনের ভরসায় না থেকে হজ ফরজ হওয়া মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব তা আদায় করা উচিত।

;