বিদেশি উমরা যাত্রীদের জন্য প্রস্তুত সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কাবা শরীফ, মক্কা, সৌদি আরব, ছবি: সংগৃহীত

কাবা শরীফ, মক্কা, সৌদি আরব, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ধাপে ধাপে সবার জন্য উমরা পালনে পবিত্র কাবা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। ঘোষণা অনুযায়ী ৪ অক্টোবর থেকে প্রথম ধাপে উমরার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮ অক্টোবর থেকে চলছে দ্বিতীয় ধাপের উমরা। তৃতীয় ধাপে আগামী ১ নভেম্বর থেকে বিদেশি উমরা পালনকারীদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত সৌদি আরবের অনুমোদিত ৫৩১ উমরা কোম্পানি। খবর সৌদি গেজেটের।

বিদেশি উমরা যাত্রীদের জন্য একটি গাইডলাইনও প্রকাশ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে-
১. উমরা পালনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৫০ এর মধ্যে হতে হবে। ২. সৌদিতে যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা পূর্বে করোনা টেস্ট করতে হবে।
৩. উমরা আদায়, হারামাইনে নামাজ, মদিনা ও রওজা শরিফ জিয়ারতের ‘ইতামারনা’ অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে তাসরিয়া (অনুমতি) নিতে হবে।
৪. খাবারসহ হোটেল বুকিং করতে হবে।
৫. হোটেলে এসে প্রথম তিন দিন অবস্থান করতে হবে। এর পর উমরা করতে হবে।
৬. ভ্রমণের ২৪ ঘণ্টা পূর্বে ফ্লাইট নম্বরসহ যাত্রীর যাবতীয় তথ্য উমরার জন্য নির্দিষ্ট সাইটে জমা দিতে হবে।
৭. প্রত্যেক গ্রুপে ৫০ জন উমরার যাত্রী থাকবে এবং একজন গাইড থাকবে।

সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, পবিত্র উমরা পালনে বিদেশ থেকে আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করোনভাইরাস সংক্রান্ত সব ধরনের সাবধানতা এবং নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

সৌদি আরবের জাতীয় হজ ও উমরা কমিটির সদস্য এবং মক্কায় অবস্থিত হোটেল কর্তৃপক্ষ কমিটির সদস্য হানি আল-ওমাইরি বলেছেন, ‘উমরা পালনকারীদের যারা গ্রহণ করবেন, সেসব উমরা সংস্থা ও তাদের কর্মী বাহিনীকে উমরা পালন বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

প্রশিক্ষণে সংকট মোকাবিলার উপায়, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, উমরা পালনকারীদের বিমানবন্দর ও হোটেলে অভ্যর্থনা এবং সর্বোত্তম পরিষেবা নিশ্চিত করা, পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফ আঙিনায় প্রবেশ ও বাইরে তদারকি করা, ‘ইতামারনা’ অ্যাপের মাধ্যমে পবিত্র নগরী মক্কায় উমরা পালন এবং মদিনায় রওজা জেয়ারত ও রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ পড়ার সুযোগ লাভের কার্যক্রম সম্পাদনের সহায়তা করাসহ এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উমরা পালনকারীদের সুবিধার্থে উল্লেখিত বিষয়গুলো উমরা কোম্পানির সদস্যদের সরাসরি তদারকির মাধ্যমে সম্পাদন করা হবে। তা সম্পাদনে ৫৩১ উমরা সংস্থার সদস্যরা প্রশিক্ষণ গ্রহণপূর্বক প্রস্তুত রয়েছে।

আল ওমাইরি আরও বলেন, ‘বহির্বিশ্বের লোকদের উমরা সম্পাদনের সহায়তা অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার উমরা এজেন্সি রয়েছে। তাদের পাঠানো উমরা পালনকারীদের সহায়তায় সৌদি আরবের অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫৩১টি উমরা সংস্থা রয়েছে। যারা লাখ লাখ উমরা সম্পাদনকারীর সহায়তা দিতে এ উমরা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।’

বিদেশি উমরা পালনকারীদের জন্য উমরা সম্পাদনের সেবা পেতে ৩২টি সাইট ও প্লাটফর্ম প্রস্তুত রয়েছে।

বিদেশি উমরা পালনকারীদের সেবা দিতে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় ১ হাজার ২০০ হোটেল প্রস্তুত। এর মধ্যে পবিত্র নগরী মক্কায় রয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার রুম। মদিনায় ৭৫ হাজার রুম প্রস্তুত।

মসজিদে হারামে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা, ছবি: সংগৃহীত

এছাড়া বিদেশি উমরা পালনকারীদের সহায়তা দিতে ১৪ হাজার সৌদি যুবক ও নারী প্রস্তুত। এবারের উমরা মৌসুমের বাকি সময়ে হোটেল, পরিবহন ও বাণিজ্যিক খাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল উপার্জন হবে বলে আশা করছেন আল ওমাইরি।

উল্লেখ্য, হারামাইন ডটইনফোর তথ্যমতে, চার ধাপে উমরা পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। এখন চলছে দ্বিতীয় ধাপ। এ ধাপে প্রতিদিন ১৫ হাজার ব্যক্তি উমরা পালন করছেন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে তৃতীয় ধাপে প্রতিদিন ২০ হাজার ব্যক্তি উমরা পালন করবেন। সর্বশেষ ধাপে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় শতভাগ উমরা পালন করবে মুসলিম উম্মাহ।

এদিকে উমরা পালনকারী ও মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে কাবা এলাকায়া। প্রতিদিন ৪ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী এ কাজে নিয়োজিত। প্রতিদিন স্প্রে করা হয় ১ হাজার ২০০ লিটার জীবাণুনাশক।

এ বিষয়ে হারামাইন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মসজিদে হারামে উমরা আদায়ের লক্ষ্যে আগত মুসল্লিদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, মসজিদে হারামের অভ্যন্তর, বহিরাংশ ও মাতআফসহ পুরো এলাকা পরিচ্ছন্নতায় এবং সুগন্ধি ছিটানোর কাজে ৪ হাজার কর্মী নিয়োজিত। বিশাল এ বহরে পুরুষের পাশাপাশি নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীও রয়েছেন। বিশাল কর্মী বাহিনী পরিচালনায় ১৮০ জন সুপারভাইজার নিরলস তদারকির কাজ করে যাচ্ছেন। সুপারভাইজারদের দক্ষ পরিচালনায় তিন শিফটে ভাগ করে ২৪ ঘণ্টা এ সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

প্রতিদিন কাবা শরিফ তথা পুরো মসজিদে হারাম এলাকা রাত-দিন মিলিয়ে ১০ বার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এ কাজে ডিজিটাল মেশিনে পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত প্রযুক্তির ডিটারজেন্ট এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিদিন ১২ লিটার বিভিন্ন দামি ব্র্যান্ডের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি পবিত্র সুগন্ধি ছিটানো হয়।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পরিচালক জাবের ওদাআনি জানান, পুরো মসজিদে হারাম এলাকা ছাড়াও পবিত্র কাবা শরিফ, মাতাফ, রোকনে ইয়ামেনি, হাজরে আসওয়াদ, মুলতাজাম, হাতিমে কাবা, মাকামে ইবরাহিম, সাফা-মারওয়া পাহাড় সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিযেছে, ৪ অক্টোবর থেকে উমরা পালন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো উমরাকারীর কোভিডে আক্রান্ত হননি। তার পরও আমরা সতর্ক অবস্থান বজায় রেখেছি।

   

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;