হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর সামাজিক ও মানবীয় চরিত্র



মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম
নবী মুহাম্মদ সা.-এর অনুসরণেই আমাদের মুক্তি নিহিত, ছবি: সংগৃহীত

নবী মুহাম্মদ সা.-এর অনুসরণেই আমাদের মুক্তি নিহিত, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হজরত স্ত্রী খাদিজা (রা.) কে হেরা পাহাড়ে ঘটে যাওয়া অহি ও জিবরাইল সংক্রান্ত ঘটনাগুলো উল্লেখপূর্বক ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি আমার জীবন সম্পর্কে আশঙ্কা করছি।’ হজর খাদিজা (রা.) সান্তনা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! তা কখনও হতে পারে না, তিনি (আল্লাহতায়ালা) আপনাকে অপদস্থ করবেন না। ১. আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সংরক্ষণ করেন, ২. আপনি দুস্থ মানুষের বোঝা হালকা করেন, ৩. নিঃস্বদের আহার করান, ৪. অতিথিদের সেবা করেন ও ৫. সত্যের পথে নির্যাতিতদের সাহায্য করেন।’ –সহিহ বোখারি

এগুলো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে হজরত খাদিজা (রা.)-এর উক্তি। তিনি নবী করিম (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। উম্মতের মধ্যে প্রথম ঈমান আনয়নকারী, জগতের শ্রেষ্ঠতম চার রমণীর অন্যতম। তিনি তার সব ধনসম্পদ রাসূলের কদমে উৎসর্গ করেছেন। রাসূলের সব ছেলেমেয়ে তার গর্ভে জন্মলাভ করেন। অহি লাভের পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অস্থিরতায় তিনি সান্তানা দিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

একজন স্ত্রীর মন্তব্য স্বামীর ব্যাপারে খুবই প্রণিধানযোগ্য। কারণ সুখে-দুঃখে, দিনে-রাতে, সকালে-বিকেলে, রাগ-বিরাগে সর্বাবস্থায় নিবিড়ভাবে স্বামীকে দেখার সুযোগ পান তিনি। আর যদি স্ত্রী হন অতীব বিচক্ষণ, সচেতন ও জ্ঞান ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন তবে তো কথাই নেই। যে মুহাম্মদকে মক্কাবাসী পূর্বেই আল আমিন বলে ঘোষণা দিয়েছে, নবুওয়তপূর্ব জীবনে বর্বতার মধ্যে সভ্য, অশ্লীতার মধ্যে পরিচ্ছন্ন, পুঁতিগন্ধময়ের মধ্যে সৌরভ, অন্ধকারের মধ্যে আলো হিসেবে দেখছেন। তারপরও সবার প্রশংসার চেয়ে খাদিজার উক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

হাদিসে হজরত খাদিজা (রা.) আরও বলেছেন, ‘আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সংরক্ষণ করেন।’ এর বাস্তবতা আমরা নবী জীবনের পরতে পরতে দেখতে পাই। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনাও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। নবুওয়তের ঘোষণা দেয়ার পরও তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। কোরআনে কারিমেও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে বহু আয়াত নাজিল হয়েছে।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা অধিকার দাবি করো আর সতর্ক থাকো আত্মীয়তার অধিকার ও সম্পর্কের বিষয়ে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।’ -সূরা নিসা: ০১

হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়তা ছিন্নকারীরা জান্নাতে যাবে না।’ –সহিহ বোখারি

আজকের সমাজে ভাইয়ে-ভাইয়ে, পিতা-পুত্রে, চাচা-জেঠাদের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক নেই বরং নিকটাত্মীয়রা যেন অন্যদের চেয়েও বেশি শত্রু। সামান্য কারণে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায় এবং তা চলতে থাকে বছরের পর বছর। এই সময়ে রক্তের সম্পর্ক রক্ষা ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য জরুরি।

হজরত খাদিজা (রা.) আরও বলেন, ‘আপনাকে দেখেছি সারাজীবন দুর্বল ও বঞ্চিতদের বোঝা বহন করতে।’ অথচ বাস্তবতা হলো- সমাজের বেশিরভাগ মানুষ দুর্বল ও অবহেলিত। তারা ন্যূনতম মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে না। এই শ্রেণির লোকেরা সবসময় স্বল্পসংখ্যক সুবিধাভোগীর হাতে নিপীড়িত হয়। স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সা.) তাদের অন্তর্ভুক্ত। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি সামান্য অর্থের বিনিময়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত মক্কাবাসীর বকরি চরিয়েছেন। ইমাম বোখারি (রহ.) এমন একটি হাদিসও উল্লেখ করেছেন। আর আল্লাহতায়ালা এমন কোনো নবী পাঠাননি, যিনি রাখাল ছিলেন না। আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি, বেশিরভাগ নবী শ্রমজীবী ছিলেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সারাজীবন এতিম, বেওয়ারিশ ও মিসকিনদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছিলেন। তিনি এতটুকু বলেছেন, আমার উম্মতের বেশিরভাগ মানুষ গোলাম, শ্রমজীবী ও এতিম হবে। তাদের বোঝা হালকা করার জন্য নিয়োজিতরা জান্নাতি।

কিন্তু আজকের সমাজে কী দেখি? মানুষ কিভাবে জালেমদের অত্যাচারে নির্বাক ও নিথর হয়ে অশ্রুবিসর্জন করছেন।

হজরত খাদিজা (রা.) হাদিসে আরও বলেন, ‘আপনি তো নিঃস্বদের আহারের ব্যবস্থা করেন, আপনি নিরন্ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেন, আপনি বিবস্ত্রদের কাপড় দেন, আল্লাহতায়ালা অবশ্যই আপনার কল্যাণ করবেন।

‘দরিদ্র, নিঃস্ব ও বুভুক্ষুরা আল্লাহর পরিবারের সদস্য’ বলে হাদিসে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে হাদিসে কুদসিতে, আল্লাহ বলবেন কিয়ামতে- ‘হে বনি আদম! আমি ক্ষুধার্ত হয়ে তোমার নিকট গিয়েছিলাম তোমরা আমাকে খাবার দাওনি, লোকেরা বলবে তুমিতো আহার করো না, কিভাবে তোমায় আহার করাবো? আল্লাহ বলবেন, ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা হলে আমাকে খাদ্য দেওয়া হতো।’ –সহিহ মুসলিম

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসূলের জবানে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘তারা মুমিন নয়, যারা প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে আহার করে।’ মিশকাত

নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রতিবেশীদের খবর না নিয়ে, আসহাবে সুফফার লোকদের আহারের ব্যবস্থা না করে খাবার মুখে দেননি।

এখন তো বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দু’বেলা আহার করতে পারে না, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। তাদের মুখে অন্ন ও পরিধানের বস্ত্র ও আর্তের চিকিৎসার জন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্মনীতি কী ছিল? আমরা কোথায়, কী করছি, কোন ইবাদাতের মধ্যে জান্নাত খুঁজছি- এসব চিন্তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানবতার সেবায়ই রয়েছে, আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি।

হজরত খাদিজা (রা.) আরও বলেন, ‘আপনি অতিথির সেবা করেন।’ কাবা শরীফ মক্কায় অবস্থিত বিধায় হাজার হাজার বছর থেকে কাবাকেন্দ্রিক বিভিন্ন এলাকা ও জনপদ থেকে তীর্থযাত্রীরা ভিড় জমাতো। কোরাইশ পৌত্তলিকেরা বিদেশিদের জীবন সম্পদ লুণ্ঠনের উৎসব করত বিশেষ করে হজ মৌসুমে। যদিও জাতিগতভাবে আরবিরা অতিথিপরায়ণ কিন্তু অসৎদের আর মূল্যবোধের বালাই থাকে না।

নবী মুহাম্মদ (সা.) বাল্যকাল থেকে অসহায় বিদেশি ও অতিথিদের সহায়-সম্পদ লুণ্ঠনের দৃশ্য দেখে আসছিলেন। হিলফুল ফুজুল সংগঠন সৃষ্টির উদ্দেশ্যও ছিল সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওযা।

নবী করিম (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ যদি আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান আনে, সে যেন অতিথির সেবা করে।’ –সহিহ বোখারি

‘সত্যের পথে নির্যাতিতদের আপনি সাহায্য করেন’ হজরত খাদিজা (রা.)-এর এই উক্তিটিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। হক ও ন্যায়ের পথে যারা যে যুগেই চলতে চেয়েছে, নিষ্ঠুর সমাজ তাদের চলার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। তাদেরকে জুলুম-নিপীড়ন নির্যাতনের বিষাক্ত কাঁটা মাড়িয়ে চলতে হয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদেরকে (মুমিনদের) ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব, তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও, যারা যেকোনো বিপদ-মুসিবতে বলে আমরা আল্লাহর কাছ হতে এসেছি এবং তারই নিকট ফিরে যাব।’ -সূরা বাকারা: ১৫৫

বস্তুত নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সামাজিক ও মানবীয় চরিত্র যা হজরত খাদিজা (রা.) বর্ণনা করেছেন, এগুলো উম্মতের জন্য শিক্ষা ও গ্রহণী বিষয়।

সুতরাং আমাদেরকে সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত মজলুমদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। দরিদ্র্য সীমার নিচে রয়েছে কোটি কোটি মানুষ। তাদেরকে সমাজের মূলস্রোতে আনতে চেষ্টা করতে হবে। নিরন্নদের মুখে অন্ন তুলে দিতে হেব। এগুলোকে ইবাদত মনে করতে সম্পাদন করতে হবে।

সেই সঙ্গে দেশি-বিদেশি অতিথি, পরিচিত-অপরিচিত সবার প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে। এটা মানবতার পরম শিক্ষা।

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;

মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারির সময় মৃতদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।

করোনা মহামারির সময় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

বুধবার (২৪ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপ দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। যদিও করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করাকে নিরাপদ বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।

করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সেসময় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে হবে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানরা মুসলিমদের লাশকে কেবলার দিকে মুখ করে দাফন করে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মরদেহ হিন্দুদের মতো সাধারণত দাহ করা হয়।

শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এই ঘটনার আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

;

ব্রিটিশ রাজনীতিতে মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথমবারের মতো দেশটির মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী। শাবানা মাহমুদ নামের ওই মন্ত্রী পবিত্র কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন।

এ ছাড়া আরও দুই মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। তিনি গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হয়েছেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ।

মুসলিম নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে ২০১৯ সালে ১৯ জন এমপি ছিলেন। এবারের নির্বাচনে ২৫ জন মুসলিম নির্বাচিত হয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম এমপি এবারই নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচিতদের মধ্যে ১৮ জন লেবার পার্টির, চারজন স্বতন্ত্র, দুজন কনজারভেটিভ পার্টির এবং একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের।

মুসলিম নেটওয়ার্কের দাবি, গাজার প্রতি মুসলিম ভোটারদের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। ফলে চারজন মুসলিমসহ পাঁচটি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

তারা মোট ৬৫০ এমপির প্রায় ৪ শতাংশ। তবে মুসলিমরা যেহেতু ব্রিটেনের জনসংখ্যার ৬.৫ শতাংশ, তাই হাউস অফ কমন্সে মুসলিমদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরও ১৭ জন এমপি দরকার।

নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ইসলামি মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মাসুদ শাজারেহ বলেছেন, ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলমানরা প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ব্রিটেনে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয় প্রায় এক শতাব্দী আগে। বর্তমানে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

মাসুদ শাজারেহ সম্প্রতি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা কার্যকর শক্তিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানরা। এটাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহারের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে মুসলমানদের অসন্তোষের কারণে ব্রিটিশ লেবার পার্টি কয়েকটি আসন হারিয়েছে। এই প্রভাব ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের মতো আরও সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি মুসলমানদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তা মানুষের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করে।

গত ৪ জুলাই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে লেবার পার্টি পাঁচ বছরের জন্য সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তবে গাজায় নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপারে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল মুসলমানেরা। তারা নির্বাচনে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

ব্রিটিশ জনগণ দেশটির খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দখলদার ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সরকারের সমর্থনের প্রতিবাদে ভোট দিয়েছে। এর অর্থ হলো, লেবার পার্টি বিজয় পেলেও সেটা তার নিজের নীতির কারণে পায়নি বরং বিরোধী দলের অপছন্দনীয় কিছু কাজ ও নীতির কারণে মানুষ বিদ্যমান বিকল্প ধারাটিকে বেছে নিয়েছে।

;