নবী করিম সা. যেসব কথা বলতে নিষেধ করেছেন

  • মাওলানা ইলিয়াস হাসান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মধ্যেই আমাদের মুক্তি নিহিত, ছবি: সংগৃহীত

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মধ্যেই আমাদের মুক্তি নিহিত, ছবি: সংগৃহীত

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মধ্যেই আমাদের মুক্তি নিহিত। এটা উভয় জাহানের কামিয়াবি পথ। আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা পেতে হলে নবী করিম (সা.)-এর অনুসরণ জরুরি যে যত বেশি রাসূলকে অনুসরণ করবে সে তত বেশি আল্লাহর ভালোবাসা প্রাপ্ত হবে।

সুতরাং জীবন চলার সর্বক্ষেত্রে রাসূলের অনুসরণ করা মুমিনের কর্তব্য। বিশেষ করে কথা-বার্তা, আচরণ-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে। নবী করিম (সা.) যে সব শব্দ ও বাক্য, কথা ও কাজ এবং আচার-আচরণ পছন্দ করতেন না, সেগুলো বর্জন করা। তেমনি কিছু বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা।

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যেসব কথা পছন্দ করতেন না তার অন্যতম হচ্ছে, ‘খাবুসাত নাফসি’ অর্থাৎ আমার চরিত্র নোংরা হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে তিনি ‘লাকিসাত নাফসি’ বলার উপদেশ দিয়েছেন। উভয় বাক্যের অর্থ কাছাকাছি। তা হচ্ছে, অভ্যাস ও চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। নবী করিম (সা.) খাবুম শব্দটি প্রয়োগ করা অপছন্দ করেছেন। কারণ তা কদর্যতা ও নোংরামীর মাত্রাতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে। তিনি আঙ্গুর ফলকে কারাম বলতেও নিষেধ করেছেন। কারণ কারাম হচ্ছে, মুমিনের গুণ। তিনি কাউকে এ কথা বলতে নিষেধ করেছেন যে, ‘মানুষেরা ধ্বংস হয়ে গেছে।’

নবী করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি এরূপ বলল, মূলতঃ সেই যেন লোকদের ধ্বংস করে দিল। এমনি ‘লোকেরা নষ্ট হয়ে গেছে, জামানা খারাপ হয়ে গেছে’ বলাও অপছন্দনীয়। তিনি অমুক অমুক তারকার কারণে বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি বলতেও নিষেধ করেছেন। আর তিনি ‘আল্লাহ যা চান’ এবং ‘তুমি যা চাও’ বলতেও নিষেধ করেছেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালা ছাড়া অন্যের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল সে শিরক করল। এমনি শপথের মধ্যে এ কথাও বলা নিষিদ্ধ যে, সে যদি এমন করে তাহলে ইহুদি হয়ে যাবে। তিনি বাদশাহকে মালিকুল মুলক তথা শাহানশাহ বা রাজাধিরাজ বলতে নিষেধ করেছেন। চাকর ও খাদেমকে আমার বান্দা বা আমার বান্দী বলাও নিষিদ্ধ। বাতাসকে গালি দেওয়া, জ্বরকে (অসুস্থতা) দোষারোপ করা এবং মোরগকে গালি দেওয়ার ব্যাপারেও নিষিদ্ধতা বর্ণিত হয়েছে।

অন্ধকার যুগের সকল আহবান ও স্লোগানকে তিনি বর্জন করার আদেশ দিয়েছেন। মুসলিমদেরকে গোত্র, বংশ এবং জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করতে এবং এর ভিত্তিতে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। এমনি মুসলিমকে গালি দেওয়া, তিনজন এক সঙ্গে থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দু’জন মিলে গোপনে আলাপ করা এবং কোনো নারীকে তার স্বামীর কাছে অন্য নারীর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন।

নবী করিম (সা.) ‘হে আল্লাহ! তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করো,’ বলে দোয়া করতে নিষেধ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে দৃঢ়তার সঙ্গে চাওয়ার আদেশ করেছেন। তিনি বেশি বেশি শপথ করা এবং আল্লাহর চেহারার উসিলায় কিছু চাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বিনা প্রয়োজনে কোনো লোককে এ কথা জিজ্ঞেস করতে নিষেধ করেছেন, কেন সে তার স্ত্রীকে প্রহার করেছে। তবে প্রয়োজনবশত জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। আমি পূর্ণ রমজান মাস রোজা রেখেছি এবং পূর্ণরাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছি- এ কথা বলতেও নিষেধ করেছেন নবী করিম (সা.)।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সমস্ত কাজ (সহবাস বা অন্যান্য বিষয়) হয় তা মানুষের মাঝে বলে বেড়ানো নিষিদ্ধ। যেমনটি করে থাকে নির্বোধ ও নিম্নশ্রেণির লোকেরা। আরও যে সমস্ত অপছন্দনীয় শব্দ লোকেরা উচ্চারণ করে থাকে তার মধ্যে এও রয়েছে যে, তারা ধারণা করে থাকে, তারা বলে থাকে, তারা আলোচনা করে থাকে ইত্যাদি।

আমি, আমার, আমার নিকট ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করা থেকে সতর্ক থাকা উচিৎ। কেননা এই তিনটি শব্দ বলার কারণেই ইবলিস, ফেরাউন এবং কারুন ধ্বংস হয়েছে। ইবলিস বলেছিল, ‘আমি তার (আদম) থেকে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে। আর তাকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে।’ -সূরা আরাফ: ১২

ফেরাউন বলেছিল, ‘মিসরের রাজত্ব কি একমাত্র আমার নয়?’ -সূরা যুখরুফ: ৫১

কারুন বলেছিল, ‘এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞানগরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি।’ -সূরা কাসাস: ৭৮

‘আমি’ শব্দটি সবচেয়ে অধিক সুন্দর হয়ে ফুটে উঠে ওই বান্দার কথার মধ্যে, যে বান্দা বলে, ‘আমি অপরাধী, পাপী, অপরাধ স্বীকারকারী ও ক্ষমাপ্রার্থী একজন বান্দা।’ ‘আমার’ শব্দটিও খুবই সুন্দররূপে ব্যবহৃত হয়েছে ওই বান্দার কথায়, যে বলে, ‘গোনাহ, অপরাধ, অভাব, দারিদ্র এবং হীনতা এ সবের সবই আমার মধ্যে রয়েছে।’ এমনিভাবে ‘আমার নিকট’ কথাটিও নিম্নের দোয়ায় অতি সুন্দরভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার অসতর্কতাবশতঃ কৃত গোনাহ, অজ্ঞতাবশতঃ অপরাধ, আমার কাজের ক্ষেত্রে সীমালংঘন এবং তুমি আমার ওই সমস্ত অপরাধও ক্ষমা করে দাও যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক অবগত আছ। হে আল্লাহ! তুমি আমার উদ্দেশ্যমূলক, হাসি-ঠাট্টাপ্রসূত, ভুলবশত এবং ইচ্ছাকৃত সকল গোনাহ মাফ করে দাও।