রাজা-বাদশাহ নয়, কাবার চাবি সংরক্ষণ করেন বনি শাইবা



মুফতি মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
শায়খ সালেহ আল শাইবা কাবার দরজা খুলছেন, ছবি: সংগৃহীত

শায়খ সালেহ আল শাইবা কাবার দরজা খুলছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা। মসজিদে হারামে মাগরিবের নামাজ শেষ করে একজন বয়স্ক মানুষ ধীরে ধীরে এগিয়ে যান পবিত্র কাবার দিকে। হাতে সোনালী কারুকাজ করা একটি সবুজ ব্যাগ। মক্কার ইমাম, নিরাপত্তা কর্মীসহ অন্যরাও আছেন। কিন্তু তিনি একাই কাবার গায়ে লাগানো বিশেষ কাঠের সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে উঠে পবিত্র কাবার দরজাটা খুললেন।

অথচ আমাদের কাছে পরিচিত দৃশ্য হলো, কোনো উপলক্ষে পবিত্র কাবার দরজা খোলা হলে সেখানে প্রচুর ভীড় থাকে। কিন্তু অনেকেরই এটা অজানা, কাবার দরজা খোলার সময় ওই বয়স্ক লোকটি থাকেন একেবারে একা। এভাবে একা কাবার দরজা খোলার রীতি চলে আসছে চৌদ্দশ’ বছর ধরে। বংশ পরম্পরায় তারা এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

কাবার দরজার তালা খোলার অধিকার শুধু তার। তার কাছে রক্ষিত থাকে পবিত্র কাবার দরজার চাবি। সৌদি আরবের বাদশাহ, মক্কার গর্ভনর, মসজিদে হারামের প্রধান খতিব, সরকারি কোনো কর্মকর্তা কিংবা অফিসে নয়- পবিত্র কাবার চাবি বহন ও সংরক্ষণ করেন তিনি।

হারামাইন প্রেসিডেন্সির চেয়ারম্যান ও মক্কার গভর্নর শায়খ সালেহের কাছে চাবি রাখার নতুন ব্যাগ হস্তান্তর করছেন, ছবি: সংগৃহীত

কে তিনি?
আর কেনইবা তার কাছে চাবি থাকে?
কী এমন রহস্য?

এই সৌভাগ্যবান মানুষটির নাম শায়খ সালেহ আল শাইবা। তিনি সাহাবি হজরত উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর ১০৮তম উত্তরসূরি। মক্কা বিজয়ের দিন হজরত মুহাম্মদ (সা.) হজরত উসমান ইবনে তালহার হাতে কাবার চাবি দেন এবং অনাগতকালে তার বংশেই কাবার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। চৌদ্দশ’ বছর পরেও নবী করিম (সা.)-এর সেই ওয়াদা বহাল আছে। এখনও ওই বংশের কাছেই কাবার চাবি থাকে। শায়খ সালেহ আল শাইবা ওই বংশের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, তাই তিনিই এখন পালন করছেন কাবার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব।

মক্কা বিজয়ের পর থেকে বিগত চৌদ্দশ’ বছরে অনেক শাসক, সুলতান, রাজা-বাদশাহ মক্কা-মদিনায় কর্তৃত্ব করেছেন। কিন্তু কাবার দরজা খোলার কর্তৃত্ব হজরত উসমান ইবনে তালহার বংশধররা করে আসছেন।

কীভাবে এ দায়িত্ব পেলেন?
মক্কা বিজয়ের দিন। মক্কার সবকিছুই সেদিন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধীন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমানের কাছে কাবার চাবি চাইলেন। বরকতময় সে চাবি সঙ্গে সঙ্গে নবীর (সা.) হাতে তুলে দিলেন উসমান। চাবি নিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে বায়তুল্লাহর দরজা খুললেন। ভেতরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।

কাবার চাবি দেখাচ্ছেন শায়খ সালেহ, ছবি: সংগৃহীত

বাইরে তখন অপেক্ষমান জনতা। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার পর সবাই সীমাহীন কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। কাকে দেওয়া হবে কাবার চাবি, কে পাবে এই মোবারক দায়িত্ব?

হজরত আব্বাস (রা.) এবং হজরত আলী (রা.) উপস্থিত ছিলেন সেখানে। দু’জনই চাবি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছিলেন। এমনকি তারা এ ব্যাপারে আবেদনও করেছিলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে।

কিন্তু না, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নবী করিম (সা.) দরাজ গলায় ডাকলেন উসমান ইবনে তালহাকে। তার হাতেই দিলেন কাবার চাবি। বললেন, ‘এখন থেকে এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে, একেবারে কেয়ামত পর্যন্ত। তোমাদের হাত থেকে এ চাবি কেউ নিতে চাইলে সে হবে জালিম।’

উসমানের মনে পড়ে গেলো হিজরতের আগের ঘটনা। হিজরতের আগে প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার কাবার দরজা খোলা হতো। এ দু’দিন লোকেরা আল্লাহর ঘরে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করতো। একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবাকে নিয়ে বায়তুল্লায় প্রবেশ করতে চাইলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন উসমান ইবনে তালহা, তিনি তখনও মুসলমান হননি।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধৈর্যের সঙ্গে উসমানের বাধা মেনে নিলেন। সেই সঙ্গে বললেন, ‘উসমান! একদিন তুমি এই চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে। আমি তখন যাকে ইচ্ছে চাবিটা দেব।’

বিভিন্ন সময় কাবায় ব্যবহৃত তালার চাবি, ছবি: সংগৃহীত

এর পর উসমান ইবনে তালহা ইসলাম কবুল করেন। ৪২ হিজরিতে তার মৃত্যু হয়। ইসলাম পূর্ব জাহিলী যুগ ও ইসলাম পরবর্তী যুগে কাবার চাবির রক্ষক বংশধররা। সেই ধারা এখনও চলমান। তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন। তারাই কাবার দরজা খুলে দেন।

সাহাবি উসমান ইবনে তালহার ‘বনি শাইবা’ গোত্রের কাছে কাবার চাবি থাকা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বিতর্ক হয়নি। ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত এই গোত্রের বংশধরদের কাছেই কাবার চাবি রক্ষিত থাকবে।

৫৮ বার কাবার তালা-চাবি বদলানো হয়েছে
এ পর্যন্ত অসংখ্যবার কাবার তালা-চাবি পরিবর্তন করা হয়েছে। কাবা ঘরের চাবি একটি বিশেষ ব্যাগে রাখা হয়। এই ব্যাগটি পবিত্র কাবা ঘরের গিলাফ নির্মাণ কারখানায় বানানো হয়। কাবা ঘরের চাবি কখনও হারায়নি। তবে বহু বছর পূর্বে এক ব্যক্তি এই চাবি চুরি করেছিল। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার নিকট হতে কাবা ঘরের চাবি ফেরত নেওয়া হয়।

আব্বাসী, আইয়ুবী, মামলুক ও অটোম্যান যুগে কয়েকবার কাবা ঘর মেরামত করা হয়েছে। তখন প্রয়োজন মতে নতুন তালা-চাবিও বানানো হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর সর্বশেষ কাবা ঘরের চাবি পরিবর্তন করা হয়। এখনও ওই তালা-চাবি ব্যবহার করা হচ্ছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালে সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ সিটি সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে কাবা ঘরের পুরাতন তালাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

পবিত্র কাবার দরজা তালা, ছবি: সংগৃহীত

এর প্রেক্ষিতে একটি বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০১৩ সালের শেষের দিকে ৩০ বছরের পুরনো মরচে ধরা তালা পরিবর্তন করে। তারা ১৮ ক্যারট সোনা দিয়ে তৈরি একটি নতুন তালা বানিয়ে দেন। বর্তমানে ব্যবহৃত তালার চাবির দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার। এই তালার আগের তালাটি অটোম্যান বাদশাহ আবদুল হামিদ খানের নির্দেশে ১৩০৯ হিজরিতে বানানো হয়েছিল।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বর্তমানে ব্যবহৃত তালা-চাবি বাদে বাকি ৫৭টি তালা ও চাবি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে ৫৪টি চাবি রয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে ঐতিহাসিক তোপকাপি জাদুঘরে, ২টি চাবি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিশ্বখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে এবং আরেকটি মিসরের কায়রোর ইসলামিক আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

ইসলামপূর্ব যুগেও কাবা ঘরের যেকোনো ধরনের সেবাকে সৌভাগ্যের কারণ মনে করা হতো। এ কাজে যারা নির্বাচিত হতেন সমাজে তারা পরিচিত হতেন সম্মানিত ও মর্যাদাবান হিসেবে। তখন কাবা ঘরের বিভিন্ন সেবা ভাগ করে দেওয়া হতো বিভিন্ন গোত্রের বিভিন্ন মানুষের মাঝে। যেমন, হাজিদের জমজমের পানি পান করাতেন হজরত আব্বাস (রা.)। কাবায় আলো জ্বালানোসহ আরও কিছু দায়িত্ব ছিলো নবীজীর চাচা আবু তালেবের ওপর। এরই ধারাবাহিকতায় কাবা ঘরের চাবির দায়িত্বে ছিলেন উসমান ইবনে তালহা।

করোনাভাইরাসের কারণে এখনও মসজিদে হারামের জামাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সীমিত মানুষের অংশগ্রহণে মসজিদে হারামে জামাত ও জুমা চালু রয়েছে। তবে রীতি অনুযায়ী সবকাজ সম্পন্ন করা হয় নিয়ম মেনে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ সেপ্টেম্বর, রাতে কাবা ধোয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ ওই দিন খোলা হয় কাবার দরজা। আর দরজা খুলে দেন শায়খ সালেহ আল শাইবা।

   

১২ হাজার ৬৪৯ হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ থেকে চলতি মৌসুমে হজ পালন করতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৬৪৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনসের ৩২টি ফ্লাইটে করে তারা সৌদি আরবে গেছেন।

হজ সম্পর্কিত সর্বশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ সম্পর্কিত পোর্টাল।

পোর্টালের তথ্যমতে, ৩২টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১১টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ৭টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনা হজ করতে যাবেন ৪ হাজার ৫৬২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৮০ হাজার ৬৯৫ জন।

সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী হজ এজেন্সির সংখ্যা ২৫৯টি। হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে ৯ মে। শেষ হজ ফ্লাইট ১০ জুন। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ২০ জুন আর শেষ ফিরতি ফ্লাইট ২২ জুলাই।

;

১১ হাজার ১৬৭ হজযাত্রী ভিসার অপেক্ষায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজযাত্রায় বাংলাদেশি হজযাত্রীরা, ছবি: সংগৃহীত

হজযাত্রায় বাংলাদেশি হজযাত্রীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজযাত্রীদের ভিসার জন্য আবেদনের শেষ হয়েছে ১১ মে (শনিবার)। তবে এখনও ১১ হাজার ১৬৭ জনের ভিসা হয়নি। সৌদি সরকার যদি সময় না বাড়ায় তবে এসব হজযাত্রীদের চলতি বছর হজে যাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়বে।

হজ অফিসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, রোববার (১২ মে) দুপুর পর্যন্ত মোট ভিসা পেয়েছেন ৭২ হাজার ১৩৮ জন। ২৫৯ জনের ভিসা প্রিন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। সে হিসেবে এখনও ভিসা পাননি ১১ হাজার ১৬৭ জন।

জানা গেছে, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভিসা পায়নি, তাদের জন্য নতুন করে ভিসার আবেদন করা হয়েছে। এখনও ভিসা অনলাইন সিস্টেম চালু আছে। বাকিদের ভিসা দুয়েক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।

ভিসার জন্য আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সময় বাড়ানো হবে কি না তা রোববার বা সোমবারই জানা যাবে। তবে হজ ভিসা সিস্টেম চালু আছে এবং ভিসা ইস্যু চলমান আছে।

এদিকে তৃতীয় দফায় ভিসা আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য সৌদি সরকারকে চিঠি দিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু: আ: হামিদ জমাদ্দার জানান, হজযাত্রীদের ভিসা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সব হজযাত্রীর ভিসা হওয়ার বিষয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা সৌদি সরকারের উমরা ও হজ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, ভিসা আবেদনের সময় বাড়বে।

মু: আ: হামিদ জমাদ্দার জানান, বেশিরভাগ হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করতে যায়। এজেন্সিগুলো বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা সৌদিতে বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তা মন্ত্রণালয়ের ওপর এসে বর্তায়।

এর আগে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে ভিসা আবেদন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। এরপর তা ৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তারপরও প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ভিসা আবেদনের সময় বাড়িয়ে ১১ মে করা হয়।

১১ মের মধ্যে ভিসা কার্যক্রম শেষ করতে না পারলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে বলে আগেই সতর্ক করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তারপরও ভিসা আবেদনের সময় বাড়াতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও হজ এজেন্সিগুলো সৌদি আরবের মক্কা মদিনায় বাড়ি ভাড়া করতে গাফিলতি করেছে। কম রেটে বাড়ি ভাড়া করার জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে।

এছাড়া এজেন্সিগুলোর বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্ধারিত প্রতিনিধি মোনাজ্জেমদের ভিসা আটকে দেয় সৌদি সরকার। সেই ভিসার জট খুলতে দেরি হওয়ায় অনেক ইচ্ছা থাকার পরও বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। এতে হজযাত্রীদের ভিসা আবেদন করতে পারেনি এজেন্সিগুলো। কারণ হজ ভিসা আবেদনের পূবশর্ত হলো, সৌদিতে হজযাত্রীর বিপরীতে বাড়ি বাড়ার চুক্তি থাকতে হবে। বাড়ি ভাড়া না করলে ভিসার জন্য আবেদন করা যায় না।

এদিকে হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকাল পর্যন্ত ১৪ হাজার ২১২ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৫৬২ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৯৫ জনসহ মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ করতে যাবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুমোদিত হজ এজেন্সির সংখ্যা ২৫৯টি।

হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার প্রথম ফ্লাইট ৯ মে শুরু হয়। ১০ জুন পর্যন্ত যাওয়ার ফ্লাইট চলবে। হজ শেষে ২০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই।

;

অমুসলিমরাও হালাল খাদ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে হালাল ফুড বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা, ছবি: সংগৃহীত

এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে হালাল ফুড বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হালাল খাদ্যের বৈশ্বিক বাজারে বড় সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। তবে সেজন্য খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে কমপ্লায়েন্স ইকো-সিস্টেম গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্যের বাজারে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে ইকো-সিস্টেম উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রোববার (১২ মে) এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে হালাল ফুড বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি সভায় এ বিষয় উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ইউসুফ। কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআইর পরিচালক মুনতাকিম আশরাফ টিটু।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মানবস্বাস্থ্যের জন্য হালাল খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি অনুধাবন করে মুসলিমদের পাশাপাশি সারা বিশ্বে অমুসলিমরাও হালাল খাদ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু দেশ হালাল খাদ্যের বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। এই বাজারে বাংলাদেশেরও অপার সম্ভাবনা রয়েছে। খাদ্যসহ হালাল শিল্পের উন্নয়নে দেশে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা হওয়া জরুরি বলেন জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

বিএসটিআই এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই দুটি প্রতিষ্ঠান দেশে বর্তমানে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করছে। সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ করা, গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে হালাল সনদ প্রদানের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী। এ সময় হালাল শিল্পের উন্নয়নে কমিটির সদস্যদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ লিখিত আকারে জমা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এফবিসিসিআই সেসব পরামর্শ বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন ও তা বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সবার আগে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে নিরাপদ এবং গুণগত খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, সরকারসহ এই খাতের বড় অংশীজনদের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় বিএসটিআই এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে হালাল সার্টিফিকেট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করাসহ সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং হালাল শিল্পের জন্য নীতি সুবিধা আহ্বান করেন কমিটির সদস্যরা। পাশাপাশি হালাল শিল্পের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, অর্থায়ন সুবিধা, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন-অর-রশিদ, মো. নিয়াজ আলী চিশতি, সৈয়দ মো. বখতিয়ার, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রমুখ।

;

৭৯ বছর পর জুমার নামাজ হলো যে মসজিদে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কারিয়া মসজিদে ৭৯ বছর পর জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হলো, ছবি: সংগৃহীত

কারিয়া মসজিদে ৭৯ বছর পর জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হলো, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৭৯ বছর পর পবিত্র জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হলো তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক কারিয়া মসজিদে। গত শুক্রবার (১৯ মে) মসজিদটিতে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে অসংখ্য মুসল্লি অংশ নেন। এর আগে ৬ মে পুনঃনির্মাণের পর মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান।

২০২০ সালের আগস্টে দীর্ঘ দিন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক মসজিদটিকে পুরনো রূপে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন এরদোগান। এরপর শুরু হয় এর পুনঃনির্মাণের কাজ। অবশেষে চার বছর পর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় ফের এটি মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হলো।

চতুর্থ শতাব্দীর শুরুর দিকে কারিয়া স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয় একটি চার্চ হিসেবে। পরে উসমানিয়া শাসক সুলতান দ্বিতীয় বায়জিদের শাসনামলে প্রধান উজির আতিক আলি পাশার নির্দেশে এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।

এরপর চার শতাব্দীরও অধিক সময় এটি মসজিদ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পর আয়া সোফিয়ার মতো এটিকেও ১৯৪৮ সালে জাদুঘর বানিয়ে ফেলে তৎকালীন ইসলামবিরোধী তুর্কি সরকার।

দীর্ঘ দিন পর গত শুক্রবার মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরে বেশ উল্লসিত মুসল্লিরা। এদিন তারা তাকবির ধ্বনিতে মসজিদ ও এর প্রাঙ্গণ আন্দোলিত করে তোলেন। মসজিদের অভ্যন্তর, সামনের চত্বর ও আশপাশের সড়কগুলোও মুসল্লিদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে।

শুধু এই মসজিদ নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকে এরদোগান বন্ধ থাকা ও জাদুঘরে রূপান্তর করা অনেক মসজিদ পুনরায় চালু করেন। এর মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম। এরদোগানের উপস্থিতিতে সেখানে ৮৬ বছর পর নামাজ শুরু হয়।

পুরনো মসজিদ উদ্ধার ছাড়া তিন বেশ কিছু নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। তুরস্কের তাশামালিজা মসজিদ এর অন্যতম। আয়তনগত দিক বিবেচনায় এশীয় ও ইউরোপ অঞ্চলে এটিকে বলা হচ্ছে- সর্ববৃহৎ মসজিদ। বিগত প্রায় এক শতাব্দীতে আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠার পর এটিই তুরস্ক নির্মিত সর্ববৃহৎ মসজিদ।

;