মসজিদে হারামের সবচেয়ে কমবয়সী ইমাম শায়খ ড. ইয়াসির



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
শায়খ ডক্টর ইয়াসির বিন রশিদ বিন হুসাইন আল উদয়ানি আদ দাওসারি, ছবি: সংগৃহীত

শায়খ ডক্টর ইয়াসির বিন রশিদ বিন হুসাইন আল উদয়ানি আদ দাওসারি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাকে ঘিরে অবস্থিত মসজিদে হারাম। মসজিদের হারামে নামাজ আদায়ের স্বপ্ন প্রত্যেক মুসলমানের মনেই বিদ্যমান। আর সেখানে ইমামতির বিষয়তো রীতিমতো ঈর্ষণীয় বিষয়। সেখানে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত।

মসজিদে হারামের ইমামদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে কমবয়সী ইমাম হলেন- শায়খ ডক্টর ইয়াসির বিন রশিদ বিন হুসাইন আল উদয়ানি আদ দাওসারি। তিনি শায়খ ইয়াসির দাওসারি নামে বেশি প্রসিদ্ধ।

২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে বেশ কয়েকজনকে খতিব ও ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে শায়খ ড. ইয়াসির আদ দাওসারি অন্যতম। সৌদি বাদশাহর নির্দেশে মসজিদুল হারামাইন বিষয়ক অধিদফতরের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস তাদের নিয়োগ দেন।

আশা করা হচ্ছে, অচিরেই তিনি মসজিদে হারামের খতিব হিসেবেও নিয়োগ পাবেন। বর্তমানে মসজিদে হারামের ইমাম-খতিবদের মধ্যে তিনিই শুধু খতিব হিসেবে নিয়োগ পাননি। অন্যরা ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

মসজিদে হারামের নিয়োগের আগে তিনি বিগত ২০ বছর ধরে সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ একাধিক মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।

শায়খ দাওসারি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম কারিদের একজন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খ্যাতিমান কারিদের কাছে ইলমে কিরাত শিখেছেন এবং সনদ লাভ করেছেন। সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্বও পালন করে থাকেন।

শায়খ ইয়াসির আদ দাওসারি সৌদি আরব রেডিও-টেলিভিশনের অতি পরিচিত মুখ ও কণ্ঠ। তিনি নিয়মিত রেডিও-টেলিভিশনে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন।

১ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক শায়খ ইয়াসির কোরআন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন বিষয়ক একাধিক বই রচনা করেছেন।

শায়খ ড. ইয়াসির আদ দাওসারি ১৯৮০ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৫ বছর বয়সের আগেই শায়খ বাকরি তাবারাবিশি ও শায়খ ইবরাহিম আল আখদারের কাছে পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করেন।

পরে ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি তুলনামূলক আইনশাস্ত্রের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্র জীবনে তিনি প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন জিবরিন, সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আলে শেখ, ড. সালেহ বিন হুমাইদ (সিএসএম দেশভূক্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান), প্রবীণ ধর্ম প্রচারক শায়খ সাদ বিন নাসের আল শাটারির কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেন।

ড. ইয়াসির আদ দাওসারি বর্তমানে বাদশাহ সৌদি ইউনিভার্সিটির সদস্য। মুসলিম যুবকদের গ্লোবাল ইউরোপ সিম্পোজিয়ামের সদস্য।

মাঝখানে তিনি কিছুদিন দ্য জেনারেল সেক্রেটারি অফ প্রিন্স সুলতান ইউনিভার্সিটিতে কোরআনের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কোরআনে কারিম শিক্ষা দিয়েছেন।

সাধারণ রীতি অনুযায়ী, মসজিদে হারামে ইমাম-খতিব হিসেবে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়ার পর সবাই মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। শায়খ ড. ইয়াসির এতদিন রিয়াদের কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। সম্প্রতি তাকেও উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শায়খ ড. ইয়াসির এখন নিয়মিত মসজিদে হারামের ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দেশ-বিদেশের যুবকদের মাঝে তার প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে।

   

মাকে খুশি করলে জান্নাত, কষ্ট দিলে জাহান্নাম



মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম
প্রিয় এবং মূল্যবান একটি শব্দ মা, ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় এবং মূল্যবান একটি শব্দ মা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মা, মা, এবং মা। প্রিয় এবং মূল্যবান একটি শব্দ। শুধু প্রিয় শব্দ নয়, প্রিয় বচন- মা। প্রিয় অনুভূতি- মা। পৃথিবীর সব প্রিয় শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করে। কারণ মা-ই পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি, যে নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে যায় সন্তানকে কোনো বিনিময় ছাড়া। অথচ আমরা সেই প্রিয় মাকে সময়ের প্রেক্ষিতে ভুলে যাই, যে মা ছোটবেলা থেকে আদরযত্ন করে লেখাপড়া শিখিয়ে; মানুষের মতো মানুষ হয়ে মাথা উঁচু করে সমাজের মানুষের সামনে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন- তাকে অবহেলার পাত্র বানিয়ে ফেলি। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মাকে নিয়ে ইসলাম যত কথা বলেছে, অন্যকোনো ধর্ম তত কথা বলেছে কি-না জানি না। মাকে নিয়ে বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত মাকেই জান্নাত, মাকেই জাহান্নাম বলেছে ইসলাম। মাকে খুশি করলে জান্নাত, কষ্ট দিলে জাহান্নাম। এত সম্মান যে মানুষের, সে মানুষের প্রতি আমাদের কত না অবহেলা! অথচ যে বেহেশত মায়ের পায়ের নিচে, সেই বেহেশত মাকে খুশি করা ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।

মা ঘরে অসুস্থ হয়েছে, ওষুধটা পর্যন্ত এনে দিই না আমরা। বয়স হয়েছে বলে, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিই। অথচ এই আপন মানুষটা কী চান আমাদের কাছে? শুধু একটু আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে একটু খেলা করা, এ ছাড়া আর কিছুই না। মা অসুস্থ, হাসপাতালে নিতে চাইলে নিজেই যেতে চান না। কারণ, সন্তানের টাকা খরচ হবে বলে। সন্তানের ওপর কোনো রকম বোঝা চাপিয়ে দিতে চান না তিনি। শুধু একটু মায়া চান। যে মায়া তিনি সারাজীবন করে এসেছেন, তার কিঞ্চিৎ তাকে ফেরৎ দিলেই তিনি খুশি। তিনি প্রতিদান চান না, তিনি প্রাপ্য চান না, অধিকার নিয়ে কোনো কথা বলেন না। শুধু একটু মায়া চান। তাও কি আমরা দিতে পারি না?

কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে।’ -সুরা আনকাবুত : ৮

‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্যকারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ২৩

‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।’ -সুরা লোকমান : ১৪

‘আর উপাসনা করো আল্লাহর, শরিক করো না তার সঙ্গে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয়, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।’ -সুরা আন নিসা : ৩৬

মা সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যক্তি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার বেশি কোন মানুষের? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপর তোমার বাবা। -সহিহ বোখারি

এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিহাদের অনুমতি চাইল। নবী কারিম (সা.) বললেন, তোমার পিতা-মাতা কি বেঁচে আছেন? লোকটা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের জন্যই পরিশ্রম করো (এতেই তুমি জিহাদের সওয়াব পাবে)। -সহিহ বোখারি

পরিবারে মায়েরও রয়েছে অনেক অধিকার, ছবি: সংগৃহীত

একদা নবীজী (সা.) বললেন, ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক। পুনরায় ধ্বংস হোক। বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কার কথা বলছেন? তিনি বললেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, অথচ এরপরও সে (তাদের সেবা করে) জান্নাতে যেতে পারেনি। -সহিহ মুসলিম

নবী কারিম (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম কাজ হলো- পিতার সুহৃদদের (বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন) সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। -সহিহ বোখারি

নবীজী (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। -জামে তিরমিজি

হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (সা.) বলতে শুনেছি, পিতা-মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা সংরক্ষণও করতে পারো। –জামে তিরমিজি

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ কোনগুলো তা বলব না? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, এতটুকু বলে নবী কারিম (সা.) বসে পড়লেন, এতক্ষণ তিনি হেলান দিয়ে ছিলেন। এর পর নবীজী (সা.) বললেন, মিথা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এতবার বলতে থাকলেন যে, আমরা মনে মনে বললাম; আর যদি না বলতেন! -জামে তিরমিজি

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অন্যতম কবিরা গোনাহ হলো, ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালমন্দ করা। সাহাবারা বললেন, পিতা-মাতাকেও কি কেউ গালমন্দ করে? নবী কারিম (সা.) বললেন, হ্যাঁ। কেউ কারও পিতাকে গালি দিলে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। আবার কেউ কারও মাকে গালি দিলে, সেও তার মাকে গালি দিলে। (এভাবে অন্যের পিতা-মাতাকে গালমন্দ করলে প্রকারান্তরে নিজের পিতা-মাতাকেই গালমন্দ করা হয়।) -জামে তিরমিজি

;

নির্জনে পাপ নয়, আল্লাহর ভয়ে কাঁদুন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গোনাহ না করার চেষ্টা করা, ছবি: সংগৃহীত

গোনাহ না করার চেষ্টা করা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জীবন চলতে গিয়ে মানুষকে নানা রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নানা ধরনের কাজকর্ম করতে হয়। ভাবতে হয় নানা রকম বিষয় এবং সামলাতে হয় বিচিত্র রকমের পরিস্থিতি। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ যেমন হয়, তেমনি হয়ে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ভুল ও বিচ্যুতি।

মানুষের মানবিক ও প্রাকৃতিক নানা দুর্বলতাও প্রকাশ পায় সেখানে। প্রকাশ পায় তার আত্মশক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তির বিভিন্ন অবস্থা। কোনো সন্দেহ নেই- এসবকিছু সত্ত্বেও জীবনের বহুক্ষেত্রে মানুষ সফল হয়। তবে ব্যর্থতাও অধিকার করে নেয় বহুক্ষেত্র। জীবনের এই ধারা চলমান। জীবন যতদিন আছে হয়তো ততদিনই চলবে এই অবস্থা। এরই মাঝখান দিয়ে মানুষকে চেষ্টা করতে হবে, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার। আর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে এ বিষয়গুলো বেশ কার্যকর। সেগুলো হলো-

নির্জনে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা
গোনাহটা তো মানুষের চোখ দ্বারাই বেশি হয় এবং নির্জনে বেশি হয়। সুতরাং নির্জনে কিছু চোখের পানিও বিসর্জন দিতে হবে। এটা সাধারণ দোয়া থেকে স্পেশাল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব।’ -জামে তিরমিজি : ২৩১১

গোনাহর কারণে দয়াময় আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের নামই হলো- জাহান্নাম। আর সেই জাহান্নাম থেকে চোখের পানির উসিলায় বেঁচে যেতে পারেন। এর অর্থ হলো, আল্লাহতায়ালা আপনাকে হয় গোনাহটি থেকে বিশেষ রহমতে বাঁচিয়ে নেবেন কিংবা মৃত্যুর আগে হলেও এ থেকে তওবার তওফিক দিয়ে দেবেন।

গোনাহ না করার চেষ্টা করা
এক দিনে কিংবা এক রাতে আপনি গোনাহ ছেড়ে দিয়ে পবিত্র হয়ে উঠবেন, এ ধারণা ভুল। বরং এ জন্য কষ্ট করতে হবে, প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাতে হবে। আপনি গোনাহ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক, এটা তখনই বুঝা যাবে- যখন এ ব্যাপারে আপনার চেষ্টা অব্যাহতভাবে পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গেই আছেন।’ -সুরা আনকাবুত : ৬৯

মনে রাখুন, আমার ওপর পাহারাদার আছে
মাঝে-মধ্যে অন্তরে এই ভাবনা জাগিয়ে তুলুন যে, আমার ওপর পাহারাদার আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সব বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখেন।’ -সুরা আহজাব : ৫২

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) একজন কবির কাছে একটি কবিতা শুনে দরজা বন্ধ করে খুব কেঁদেছিলেন। কবিতাটি ছিলো এই, ‘যদি তুমি দিনের কিছু সময় একাকী কাটাও, তখন এ কথা বলো না যে, আমি নির্জনে একাকী সময় কাটিয়েছি; বরং বলো, আমার পেছনে সদা সর্বদা একজন পাহারাদার ছিলো।’

আল্লাহকে লজ্জা করতে শেখা
হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) কথাটা এভাবে বলেছেন, গোনাহ থেকে বাঁচার একটি কৌশল হলো, এ কথা চিন্তা করা- গোনাহটি আমি আমার শায়খের (পীর, শিক্ষক, ধর্মগুরু) সামনে মা-বাবার সামনে কিংবা যারা আমাকে ভালো মানুষ মনে করে তাদের সামনে করতে পারবো কিনা! তারপর চিন্তা করো, তারা তো এখানে নেই। কিন্তু আমার আল্লাহ তো আছেন। তিনি সবার চেয়েও বড়। সুতরাং তার সামনে গোনাহটি কীভাবে করবো!

হাদিস শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এটাই বলেন, ‘আল্লাহকে লজ্জা করো, যেমন তুমি তোমার কওমের (সম্প্রদায়ের) নেক মানুষকে লজ্জা করে থাকো।’ -বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান: ৭৭৩৮

ভাবুন, আল্লাহর সরাসরি প্রশ্নে কী উত্তর দেবেন
আজ আমি যে গোনাহগুলোতে লিপ্ত, কেয়ামতের দিন তো আল্লাহ আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন যে, বান্দা! এ গোনাহটা কেন করলে? দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমাকে কেউ দেখে নাই। আমিও কি দেখি নাই? তুমি কি মনে করেছ যে, আমার দেখা মাখলুকের চোখের চেয়ে দুর্বল? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মাঝে কোন দোভাষী এবং এমন কোনো পর্দা থাকবে না, যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৯৩৫

চিন্তা করুন, সেদিন তখন আমরা কী উত্তর দেবো? সেদিন যদি আল্লাহ সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, বান্দা! রাতের দুইটা বাজে কেন তুমি অশ্লীলতার ভেতরে ডুবে গিয়েছিলে? কেন তুমি এমন জিনিসের চর্চা করেছিলে যে, যেখানে পৌত্তলিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ প্রেম ও নগ্নতাসহ কত শত অপরাধের চর্চা ও শিক্ষা ছিল? তখন আমরা কী উত্তর দেবো?

;

তানযীমুল উম্মাহ‘র ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব অনুষ্ঠিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
তানযীমুল উম্মাহ‘র ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব অনুষ্ঠিত

তানযীমুল উম্মাহ‘র ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব।

১২ মে রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের পরিচালিত শাখাসমূহের ১২৩৪ জন হাফেয শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট, সনদ, পাগড়ি/স্কার্ফ, অ্যাওয়ার্ড ব্যাগ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সম্মাননা প্রদান করা হয় তাদের পিতা-মাতাকেও।

জাতীয় ও অন্তর্জাতিক পর্যায়ের ইসলামী চিন্তাবিদ, কুরআন গবেষক, হাজার-হাজার হাফেযদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে তানযীমুল উম্মাহর এই বর্ণিল আয়োজন। সকাল থেকেই অভিভাবকদের হাত ধরে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের বেশিরভাগই ছিল পবিত্র কুরআনের হাফেয।

সুবিশাল আয়তনের আইসিসিবি হলরুমের দৃষ্টি নন্দন শোভা বর্ধন করেছে কুরআন-হাদীসের বাণীতে রং-বেরঙের অত্যাধুনিক ডিজাইনের নানান ব্যানার-ফেস্টুন। শুরু থেকেই বিভিন্নু সুরে সুললিত কন্ঠে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের সুরের মূর্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল; শিক্ষার্থীদের কন্ঠে মনোমুগ্ধকর হামদ-নাত ও ইসলামী সংগীত, বক্তৃতা, আলোচনা, কবিতা আবৃত্তিসহ চমৎকার পরিবেশনায় সকলের মন কাড়ে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো: হাবিবুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হাফেয ড. এ. বি. এম হিযবুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফাদিলাতুশ শায়খ সাইয়েদ কামাল উদ্দীন জাফরী।

;

জিলকদ মাসে যেসব আমল করবেন



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
জিলকদ মাসের আমল, ছবি: সংগৃহীত

জিলকদ মাসের আমল, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুরু হয়েছে জিলকদ মাস। এ মাস সম্মানিত ও মহিমান্বিত মাসসমূহের একটি। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু বকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হতে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হলো- রজব-ই-মুযারা। যা জমাদিউল আউয়াল ও শাবান মাসের মাঝে অবস্থিত। -সহিহ বোখারি : ৩১৯৭

হাদিসে বর্ণিত মুযারা একটি সম্প্রদায়ের নাম। ‘আরবের অন্যান্য সম্প্রদায় হতে এ সম্প্রদায়টি রজব মাসের সম্মান প্রদর্শনে অতি কঠোর ছিল। তাই এ মাসটিকে তাদের দিকে সম্বন্ধ করে হাদিসে রাজাবু মুযারা বলা হয়েছে।

জিলকদ মাসে হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে অবস্থান করেন
বনী ইসরাইলকে তাদের নাফরমানির কারণে ‘তিহ’ উপত্যকায় চল্লিশ বছর পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। সে সময় তারা নবী হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে দাবি করে, আপনি আমাদেরকে আসমানি কিতাব এনে দিন, যে কিতাবে আমাদের জীবনযাপনের নীতিমালা লেখা থাকবে। তখন হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন, যার ফলে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে তুর পাহাড়ে এসে ত্রিশ দিন অবস্থান করতে বলেন। তবে বিশেষ কোনো কারণে এ সময়কে বাড়িয়ে চল্লিশ দিন করা হয়।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মুসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম (যে, এ রাতসমূহে তুর পাহাড়ে এসে অবস্থান করবে)। তারপর আরও দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ চল্লিশ রাত হয়ে গেল।’ -সুরা আরাফ : ১৪২

ইবনে কাসির (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, অধিকাংশ তাফসিরকারের মত হলো, ‘ত্রিশ দিন জিলকদ মাস আর বাকি দশ দিন হলো- জিলহজের দশ দিন।’

জিলকদ মাসেই নবী কারিম (সা.) উমরা পালন করেন
জিলকদ মাসের একটি ফজিলত হলো, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যত উমরা আদায় করেছেন, তার সবগুলোই ছিলো- জিলকদ মাসে। তবে একটা উমরা ব্যতীত। যা তিনি হজের সঙ্গে আদায় করেছিলেন।’

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জিলকদ ব্যতীত অন্যমাসে কোনো উমরা করেননি। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯৯৭

হাদিসটির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জিলকদ ব্যতীত অন্যকোনো মাসে উমরা করেননি। তিনি তিনবার উমরা করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ : ২৫৯১০

এ মাসের আমল
যখন কোনো সময়কে অন্য সময়ের তুলনায় কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়, এর উদ্দেশ্য হয় সময়টিতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে কাটানো এবং গোনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। যদিও সবসময়েরই আমল হলো, গোনাহের কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। তবুও ফজিলতপূর্ণ দিনগুলোকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং আমলের পরিধি বাড়িয়ে দেওয়া। কেননা আল্লাহতায়ালা জিলকদসহ চারটি সম্মানিত মাস সম্পর্কে বলেন, ‘বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সহজ-সরল দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ -সুরা তওবা : ৩৬

বর্ণিত আয়াতে সম্মানিত মাসে নিজের প্রতি জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে জুলুমের অর্থ কি? হজরত আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রহ.) বলেন, ‘জুলুম বলা হয়, আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হওয়া এবং তার হুকুম না মানা।’ -তাফসিরে তাবারি : ১১/৪৪৩

জুলুম তথা আল্লাহর আনুগত্য বর্জন এবং তার অবাধ্যতায় জড়িত হওয়া সবসময়ই নিষিদ্ধ। তবে জিলকদ মাসে জুলুম করা বেশি ভয়াবহ। সুতরাং মুমিন-মুসলমানের উচিৎ সর্বাত্মকভাবে এই মাসগুলোতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা।

জিলকদা মাসের আরও একটি গুরুত্বপুর্ণ আমল হলো, রোজা রাখা। এ বিষয়েও হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। বাহিলিয়্যাহ গোত্রীয় ‘মুজিবা’ নামের এক নারী থেকে তার পিতা অথবা চাচার সূত্রে বর্ণিত। একদা তিনি (পিতা অথবা চাচা) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করতে আসলে নবী কারিম (সা.) তার আমলের ব্যাপারে বেশ কিছু কথা বলেন। তখন তাকে নবী কারিম ( সা.) বলেন, ‘তুমি হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা বর্জনও করো। এ কথা বলে তিনি তিনটি আঙ্গুল একত্র করার পর তা ফাঁক করে দিলেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৪২৮

যেহেতু জিলকদ অতি সম্মানিত মাস। তাই এ মাসে অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সচেষ্ট হওয়া কাম্য। রাব্বে কারিম আমাদের তওফিক দিন। আমিন।

;