পর্তুগালের জাতীয় নির্বাচন: ক্ষমতাসীনরা পেতে পারেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা



নাঈম হাসান, লিসবন, পর্তুগাল থেকে
পর্তুগালের রাজনৈতিক দলের নেতারা, ছবি: সংগৃহীত

পর্তুগালের রাজনৈতিক দলের নেতারা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আটলান্টিকের দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। আগামী ৬ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণায় রাজনৈতিক দলগুলো।

পর্তুগালের জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে থাকেন। আর বিভিন্ন জেলা থেকে ২৩০ আসনে এমপিরা নির্বাচনে অংশ নেন। মেয়াদ ৪ বছরের। পর্তুগালের সংসদের নাম এসাম্বলিয়া দ্যা রিপাবলিকা। সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর চূড়ান্ত হয় প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ বিপ্লবী ইতিহাসের সাক্ষী পর্তুগিজদের সংসদ ইউরোপের অন্যতম আলোচিত সংসদ।

১৯৭৪ সালের গণতান্ত্রিক বিজয়ের পর এবারের ১৬তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পর্তুগালে। এবারের নির্বাচনে পিএস সম্পাদক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিও কস্তা ও প্রধান বিরোধী দল পিএইচডির রুই রিয়োর দলের মাঝে চলছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

মাসব্যাপী বিভিন্ন ডিবেটে অংশ নিয়ে ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আমেজকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন সব রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। ইতোমধ্যেই ৪ অক্টোবর শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সব জনমত জরিপে এগিয়ে আছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সোশ্যালিস্ট পার্টি। বিগত চার বছরে অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এই সরকারের আমলে। এছাড়াও শহরগুলোতে এসেছে অবকাঠামোগত ব্যাপক পরিবর্তন। পুরনো ঐতিহ্যের বহু স্থাপনা সংস্কারের মাধ্যমে পর্যটন স্পটগুলোয় উন্নয়ন হয়েছে। তবে অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপে লিসবনসহ পর্তুগালের বড় শহরগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। স্থানীয় অনেক নাগরিকদের ছাড়তে হয়েছে নিজেদের আবাসন। তাই এবারের নির্বাচনে শহরকেন্দ্রিক আবাসন একটি বড় ইস্যু সব বড় দলের জন্য।

পর্তুগাল শান্তিপ্রিয় দেশ। এখানে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো কট্টরপন্থি কোনো এজেন্ডা নিয়ে আসেন না কোনো দল। পর্তুগিজরা জাতিগতভাবে কট্টরপন্থি সমর্থন করেন না। তবে কনজারভেটিভ পর্তুগিজ পিপলস পার্টি সিডিএস এর নির্বাচনী ইশতেহার ও রাজনৈতিক অবস্থানের সমালোচনা করে পর্তুগিজ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিও কস্তা সিডিএস প্রধান অ্যাসুন্সাও ক্রিস্টাকে লেডি ডোনাল্ড ট্রাম্প হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন ভোটে ভালো জয় পেয়েছিল পিএস। পিএসডিকে পেছনে ফেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পর্তুগালের নেতৃত্বের ম্যান্ডেড পায় দলটি।

পর্তুগালের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ মাদেইরাতে ইতোমধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বরাবরের মতো বিরোধী পিএইচডি জিতেছে সর্বোচ্চ ২১টি আসন। তবে ইতিহাস গড়ে পিএস এবার পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৯ আসন। গেল বছর সেখানে তারা মোট ৬টি আসন লাভ করেছিল। এবার তাই এটি অনন্য ইতিহাস তাদের জন্য।

বিগত দিনে পর্তুগিজ সোশ্যালিস্ট পার্টি অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করেছে, তাই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আবারও ক্ষমতায় আসতে ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছে দলটি। আগের সরকারে বামদল ব্লক দ্য স্কেরদার সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করলেও এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের আশা করছে দলটি। তাই মিত্র ব্লক দ্য স্কেরদার সাথে এখনো কোনো আলোচনায় যায়নি দলটি। ক্যাটারিনা মার্টিন্সের নেতৃত্বে নির্বাচনে ব্লক এবারও ১০ভাগ পর্তুগিজ ভোট পাওয়ার হিসেব উঠেছে এসেছে জরিপে।

এবারের নির্বাচনে পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে আন্দ্রে সিলভার দল উঠে এসেছে আলোচনায়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নির্বাচনে তারা প্রথমবারের মতো আসন লাভ করে এবার। অনেকেই মনে করছেন বৈশ্বিক পরিবেশ প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে দলটি ভালো করবে। প্যান এবার ভালো কিছু করতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তবে অনেক পর্তুগিজদের ধারণা প্যান এখনো একটি দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য নয়।

ইউরোপের সোশ্যালিস্টরা জনপ্রিয় না তবে পর্তুগালে ব্যতিক্রম। এখানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হচ্ছে সোশ্যালিস্ট রাজনীতি। বিগত দিনে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে পর্তুগিজ সোশ্যালিস্ট। যদিও নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় বিভিন্ন কর্ম পরিবেশে বৈষম্য ফেরাতে বিগত দিনে তেমন সফল হয়নি দলটি। অভিবাসন বিষয়ে বেশ নমনীয় দলটি।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল পিএসডি জলবায়ু, পাবলিক হেলথ, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বেশকিছু বিষয়কে সামনে রেখে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে। দলটির নির্বাচনী প্রচারের স্লোগান ছিল পাবলিক হেলথে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কথা। বর্তমান সরকারের আগে ক্ষমতায় ছিল পিএসডি।

পর্তুগালে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ আছে শুধুমাত্র ওই দেশের নাগরিকদের। অভিবাসীদের মাঝে নাগরিকত্ব প্রাপ্তরাই ভোট প্রদানের সুযোগ পেয়ে থাকেন। পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিরা বেশিরভাগই বসবাস করেন ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তাই সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে ভোটারদের উৎসাহী করতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা।

পর্তুগিজসহ ইউরোপিয়ান বেশিরভাগ নাগরিকরা ভোটদানে বিরত থাকেন, আগ্রহ নেই তরুণদের মাঝেও। তাই অভিবাসী কমিউনিটিগুলোর প্রতি বিশেষ নজর থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। তবে বিগত দিনে অভিবাসীদের জন্য সোশ্যালিস্ট পার্টির সহনশীল ও ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে অভিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে সোশ্যালিস্ট পার্টির গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। এখন ৬ অক্টোবর দেখার বিষয় সাও বেন্তোর এসাম্বলিয়া দ্যা রিপাবলিকার নেতৃত্ব কারা লাভ করে।

   

গাজায় সাহায্য কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে সমর্থন রাশিয়ার



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজা উপত্যকায় সকল সাহায্য কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া।

এ তথ্য রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া।

কেবলমাত্র রাফাহ শহরের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে নেবেনজিয়া বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বিধানগুলো কঠোরভাবে মেনে চলার দাবি জানাই এবং ওই এলাকায় কর্মরত জাতিসংঘের এবং সাহায্য কর্মীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় এগিয়ে আসা সকল সাহায্য কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার আন্তর্জাতিক ও স্বাধীন তদন্তের মহাসচিবের আহ্বানকে সমর্থন করি।’

ওই কূটনীতিক বলেন, ‘এই ছিটমহলে মানবিক সহায়তা প্রবেশের কোনো স্থিতিশীল চ্যানেল নেই। গত দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী রাফাহ এবং কেরেম শালোম চেকপয়েন্ট দিয়ে ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সাহায্য নিয়ে আসা ৩ হাজার ট্রাকের প্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণ এবং মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি আবারো ছিটমহলে ফিলিস্তিনিদের সাতটি গণকবর আবিষ্কারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছি। এই ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তাদের এক বিবৃতিতে এমন তদন্তের দাবি করেছিল।’

;

নাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৪০



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উত্তর-মধ্য নাইজেরিয়ার খনি শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়ে প্রায় ৪০ জনকে হত্যা করেছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।

নাইজেরিয়ার স্থানীয় সরকার মঙ্গলবার (২১ মে) জানিয়েছে, মোটরসাইকেলে চড়ে আসা বন্দুকধারীরা খনি শ্রমিকদের এলাকার বাসিন্দাদের উপর গুলি চালায় এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়।

প্লেটিউ রাজ্যের ওয়াসে জেলায় সোমবার (২০ মে) এই হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই সম্পদ নিয়ে বিরোধ এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য আলোচনায় রয়েছে।

প্লেটিউ রাজ্যের তথ্য কমিশনার মুসা ইব্রাহিম আশোমস টেলিফোনে এএফপিকে বলেছেন, ‘সশস্ত্র ব্যক্তিরা জুরাক সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করেছে। বন্দুকধারীরা বিক্ষিপ্তভাবে গুলি করেছে এবং বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তবে স্থানীয় যুবনেতা শাফি সাম্বোও বলেন, ‘হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে।’

ওয়েসে জিঙ্ক এবং সীসার খনি রয়েছে এবং এই প্লেটিউ রাজ্য টিনের খনি শিল্পের জন্য সুপরিচিত।

প্রসঙ্গত, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-মধ্য নাইজেরিয়ার অংশগুলোতে সশস্ত্র অপরাধী চক্র রয়েছে, যারা মুক্তিপণের জন্য ব্যাপক অপহরণ এবং লুটপাট করার জন্য গ্রামগুলোতে হামলা চালায়।

গত জানুয়ারিতে প্লেটিউ রাজ্যের মাঙ্গু শহরে মুসলিম এবং ক্রিস্টানদের মধ্যে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়। যার ফলে অনেক গির্জা ও মসজিদ পুড়ে যায়। ওই সংঘর্ষে ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

;

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।

কাতারের আল জাজিরা টিভির খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূ-খন্ডের উত্তরে জাবালিয়া এবং বেইত লাহিয়া শহরে বিমান হামলায় কমপক্ষে ২১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেক।

আল জাজিরা আরও জানিয়েছে, গাজা শহরের আবাসিক ভবনগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে ১২ বেসামরিক লোক মারা গেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

জেরুজালেমের ওল্ড সিটির টেম্পল মাউন্টে আল-আকসা মসজিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের আগ্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় হামাস সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস।

এরপর প্রতিশোধ মূলক হামলা শুরু ইসরায়েল। গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধ করে ভয়াবহ বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে তারা।

এতে পুরো গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। চলমান যুদ্ধে ৩৫ হাজারের বেশী নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশীর ভাগই নারী ও শিশু।

;

অবিশ্বাস্য বদলে বিশ্বসেরার পথে এয়ার ইন্ডিয়া



ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক দশক ধরে কম বিনিয়োগের পর ভারতের বেসরকারিকরণ করা ৯২ বছরের পতাকাবাহী এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের গড় বয়স ৫৪ বছর। এয়ারলাইন্সের ইমেইল সিস্টেম এত পুরাতন ছিল যে কর্মীরা জিমেইল ব্যবহার করতে শুরু করেন। এটিই এয়ার ইন্ডিয়া।

অথচ ৭০’র দশকে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা শাসক লি কুয়ান ইউ এয়ার ইন্ডিয়ার সেবা দেখে বলেছিলেন, তিনি তার দেশে এই ধরনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা করতে চান। সেই সেবার মান নিয়ে সেরার তালিকায় থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার মান কমে ক্ষয়িঞ্চু হতে হতে একটি রুগ্ন এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়। হাজার হাজার কোটি রুপির লোকসান নিয়ে পরবর্তীতে লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেয় ভারতীয় সরকার। ২০২১ সালের অক্টোবরে তা কিনে নেয় টাটা গ্রুপ। সম্পদশালী টাটা পরিবার পুনরায় এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টাটার চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরন স্পষ্ট করে বলেন, আমাদের লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বসেরা এয়ারলাইন্স হিসেবে গড়ে তোলা।

এরপর টাটা এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও নিয়োগ দেয় ক্যাম্পবেল উইলসনকে। এখানে যোগদানের আগে ক্যাম্পবেল সিঙ্গাপুরের লো-কস্ট এয়ারলাইন স্কটে কাজ করেছেন। ৫ বছরের টার্ন অ্য্যারাউন্ড প্রকল্পের অধীনে এয়ার ইন্ডিয়ার সেই হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৪৭০টি নতুন উড়োজাহাজ অর্ডার করেছে। নতুন করে ৫ হাজার কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের গড় বয়স ৫৪ থেকে ৩৫ এ নামিয়ে আনা হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়াকে ঢেলে সাজাতে গত কয়েক বছরে টাটা গ্রুপ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে ৪৭০টি নতুন উড়োজাহাজের কেনার অর্ডার ছাড়াও কেবিন আধুনিকায়ন, যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন করা হয়েছে।

৫ বছরের পরিকল্পনায় এয়ার ইন্ডিয়া দেশের অভ্যন্তরীণ মার্কেটে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির আশা করছে, যেখানে বছরে প্রায় ১৪৫ মিলিয়ন যাত্রী রয়েছে। টাটার প্রাথমিক অগ্রাধিকার হচ্ছে তাদের পুরাতন উড়োজাহাজগুলোকে বহর থেকে বিদায় করা। কারণ কয়েক দশক ধরে এসব উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ উপেক্ষিত ছিল। মালিকানা নেওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া লিজের মাধ্যমে ৩৬টি উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করে, এর মধ্যে ১১টি বোয়িং ৭৭৭ ও ২৫টি এয়ারবাস এ৩২০ ছিল। এসব উড়োজাহাজের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সটি নতুন ৬টি নতুন আন্তর্জাতিক রুট চালু করে। এছাড়া ২৪টি রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
এয়ার ইন্ডিয়া সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করেছে উড়োজাহজা কিনতে। ৪৭০টি উড়োজাহাজের জন্য এয়ারলাইন্সটি ৭০বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। এসব উড়োজাহাজের মধ্যে থাকছে এ৩২০নিওস ১৪০টি, এ৩২১নিওস ৭০টি এবং ১৯০টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাটার মতো এত বিশাল সম্পদশালী একটি কোম্পানি এটি কিনে নিয়েছে বলেই এত বিপুল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে এর ভবিষ্যৎ কি তা এখনই বলা কঠিন। তবে টাটা যেভাবে পরিকল্পনা মাফিক বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে এগিয়ে যাচ্ছে তার কোনো বিকল্প ছিল না। ডুবন্ত এই এয়ারলাইন্সকে টেনে তুলতে এটিই সেরা বিনিয়োগ।

এয়ার ইন্ডিয়ার সাবেক নির্বাহী পরিচালক জিতেন্দার ভার্গব বলছেন, টাটা এয়ার ইন্ডিয়া কেনার পর সত্যিকার অর্থে এর লক্ষ্যণীয় উন্নতি চোখে পড়বে ২০২৭ সালে। আর সত্যি বলতে এটি টি২০ ক্রিকেট নয়। ব্র্যান্ড ইমেজ পুনরুদ্ধার, প্রযুক্তি, সেবা এবং নতুন উড়োজাহাজ অধিগ্রহণ করতে সময় লাগবে।

হার্দি প্যাটেল নামে আরেক ট্রাভেল কিউরেটর বলছেন, ঋণ জর্জরিত, লোকসানি একটি এয়ারলাইন্সকে টেনে তুলতে সময় দিতে হবে। আর টাটা সমালোচনা ও কর্মীদের অস্থিরতা সত্বেও তাদের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও বলেন, অধিগ্রহণের মাধ্যমে এয়ার ইন্ডিয়া ৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী দক্ষ উড়োজাহাজ পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এয়ারলাইন্সটি কেবিনের অভ্যন্তরীণ সংস্কার করে বিদ্যমান বহরের শ্রীবৃদ্ধি করতে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। অনবোর্ড পরিষেবাও উন্নত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটে প্রিমিয়াম ইকোনমি আসন চালু এবং নতুন ফুড মেনু প্রবর্তন।

এয়ার ইন্ডিয়ার লক্ষ্যমাত্রা

ভারতই একমাত্র দেশ যাদের জনসংখ্যা আগামীতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। আর এদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে। যে কারণে উচ্চবিত্তই শুধু নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণির আকাশপথে ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে। গেল দশকে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স এই চাহিদার সদ্ব্যব্যবহার করে দেশের বৃহৎ এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক গন্তব্যেও তারা ভালো করছে। যখন টাটা এয়ার ইন্ডিয়াকে কিনে নেয় তখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের মার্কেট ২৫ শতাংশ মাত্র।

এরই মধ্যে টাটা শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে প্রযুক্তি খাতে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এয়ারবাস এ৩৫০-৯০০ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-মুম্বাই রুটে নতুন করে সূচি তৈরি করছে। একই সাথে ভিস্তারাকে এয়ার ইন্ডিয়ার সাথে একত্রীকরণ আরেকটি মাইলফলক হবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফলে এয়ার ইন্ডিয়া সত্যিকার অর্থে ওয়ার্ল্ড ক্লাস এয়ারলাইনে পরিণত হবে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার লক্ষ্য ৩০ শতাংশ মার্কেট দখল করার (অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক)।

এয়ার ইন্ডিয়া প্রতি ৬ দিনে একটি করে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হচ্ছে বহরে। সুতরাং এটি দেখেই যে কেউ বুঝতে পারবেন কত দ্রুততার সাথে এয়ারলাইন্সটির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের নতুন হাব নইডা বিমানবন্দর

ভারত যে শুধু বিশ্বমানের এয়ারলাইন্সের দিকে নজর দিচ্ছে তা-ই নয়। এর সাথে তাল মেলাতে প্রয়োজন বিশ্বমানের বিমানবন্দর। আর সেই লক্ষ্যে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিকল্প আরেকটি হাব তৈরি করা হচ্ছে। নইডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর থেকে তিন গুণের বেশি যাত্রী পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরের বিকল্প হিসেবে আভির্ভূত হবে। এটি উত্তর প্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগর জেলায় অবস্থিত। এটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে তৈরি হচ্ছে। ২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিমানবন্দরের পরিচালনায় যুক্ত ফ্লুগফেন নইডা নির্মাণের কাজ জিতে নেয়। তারা ৪০ বছর বিমানবন্দরটি পরিচালনা করবে। নতুন এই বিমানবন্দর নির্মাণ ও ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করতে ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ খরচ হচ্ছে।

বিমানবন্দরটিতে যেতে ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রিনফিল্ড হাইওয়ে নির্মাণ করছে। শুরুতে বিমানবন্দরে দুটি রানওয়ে হবে এবং এটি ৮টি রানওয়েতে উন্নীত করার মতো জায়গা রাখা হয়েছে। শুরুতে নইডাতে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে এবং তা ১২ কোটি যাত্রী সেবা পর্যন্ত উন্নীত করা হবে।

শঙ্কা যেখানে

তবে এতকিছুর পরেও এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। এতসব সুখবরের পরেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়াকে সফল করতে এসব বিনিয়োগ একটি ভিত্তি হিসেবে সাহায্য করবে, তবে এয়ারলাইন্সটি যাত্রীদের কাছে নির্ভরযোগ্য এবং সময়নিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হতে না পারলে পরিবর্তনগুলো খুব বেশি কাজে আসবে না। সর্বোপরি এয়ারলাইন্সটিকে অন টাইম ফ্লাইটের বিষয়ে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে, নতুবা একবার যদি যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন ও দুরূহ হবে।

;