ইরানসমর্থিত লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ সংগঠনের অন্তত ১১ জন সিনিয়র কমান্ডার ইসরাইলের ‘টার্গেট কিলিং’-এর শিকার হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলের হামলার তালিকায় হিজবুল্লাহর অন্তত ২০ জন শীর্ষ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এর মধ্যে রোববার এক শীর্ষ কমান্ডারসহ মোট ১১ জন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ইরান ও হামাসের শীর্ষ নেতারাও ইসরায়েলের এই ‘টার্গেট কিলিং’-এর শিকার হয়েছেন।
এর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের ‘টার্গেট কিলিং’-এ লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল সায়ীদ হাসান নাসরুল্লাহসহ আরো কয়েক নেতা নিহত হন।
তার আগে ৩১ জুলাই ইরানের তেহরানে অতিথি ভবনে অবস্থানের সময় এক গুপ্ত হামলায় নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরান গিয়েছিলেন হামাসের এই নেতা। সেখানে গিয়ে হত্যার শিকার হন ইসমাইল হানিয়া।
ইরান, হিজবুল্লাহ এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে। তবে এ ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ)-এর কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অবশ্য তিনি বলেন, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হলে সে বিষয়ে জানানো হবে।
এদিকে, ইসমাইল হানিয়া হত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা ফুয়াদ শুকুরকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যা করে ইসরায়েল। ফুয়াদ শুকুর হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহর ‘ডানহাত’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এই দুটি ঘটনার পর ইরান এবং হিজবুল্লাহ পাল্টা হামলার হুমকি দেয়। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মসজিদের চূঁড়ায় লাল পতাকা উত্তোলন করে ইরান।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়োতুল্লাহ আলী খামেনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা মানে ইরানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা। ইরান তার আত্মরক্ষার অধিকার রাখে এবং সেনাবাহিনীকে ইসরায়েলে হামলার নির্দেশ দেন।
তারপরেও ইসায়েলের ‘টার্গেট কিলিং’ বন্ধ হয়নি।
এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল সায়ীদ হাসান নাসরুল্লাহসহ আরো কয়েক নেতা নিহত হন। নাসরুল্লাহ খামেনির বন্ধু ছিলেন।
তার নিহত হওয়ার পর পরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার ফের হুমকি প্রদান করেন।
তবে নাসরুল্লাহ হত্যার খবর জানা মাত্রই আলী খামেনি নিজে ইসরায়েলের গুপ্ত হামলার আশঙ্কায় আত্মগোপনে চলে যান এবং তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়।
তার নির্দেশে ১ অক্টোবর ইরানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি, এয়ার ফোর্স ঘাঁটি এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সদর দফতরে হামলা করে।
এ ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানের প্রতি পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, ইসরায়েলে হামলা করে বড় ভুল করেছে ইরান।
তার হুমকির পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হতে থাকে, ইসরায়েল কীভাবে ইরানে হামলা চালাতে পারে!
এ আলোচনায় উঠে আসে, ইরানের পারমাণিক প্ল্যান্টসহ তেল উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। এছাড়া ইরানের ভেতরে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ায়।
ইরানের পারমাণবিক প্ল্যান্টে হামলার বিষয়ে মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বীকৃতি দেননি।
দেখা যাচ্ছে, ১ অক্টোবরের পর ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ইরানে সরাসরি হামলা চালায়নি ইসরায়েল। সেইসঙ্গে প্রশ্ন এসেছে, ইসরায়েল কি তাহলে অন্য কোনো উপায়ে ইরানে হামলার পরিকল্পনা করছে! গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে হামাস নেতা ইসলাইল হানিয়া, হাসান
নাসরুল্লাহ এবং ৫ অক্টোবর হাসান নাসরুল্লাহর উত্তরসূরী হিসেবে যাকে ভাবা হতো সেই নেতা হাশেম সাফিয়েদ্দিনকেও ‘টার্গেট কিলিং’ করেছে ইসরায়েল।
এর আগে একইভাবে সুচিন্তিত পরিকল্পনা করে লেবাননে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। ইসরায়েল একেবারে চুপ!
তাহলে ইসরায়েল চুপ থাকার মানে কি আরো বড় কিছু গোপন পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল!
অন্য কাউকে গুপ্তহত্যা করতে চাইছে ইসরায়েল! হামাস ও হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের ‘টার্গেট কিলিং’ করে দুর্বল করতে পেরেছে ইসরায়েল।
তাহলে কি এবার ইরানের পালা! কে হতেন পারেন ইসরায়েলের গুপ্ত হত্যার ‘টার্গেট কিলিং’! এর একটি উত্তর এসে দাঁড়ায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি! আসলেই কি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সময় নিচ্ছে ইসরায়েল!
ইরানে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে ইসমাইল হানিয়া, হাসান নাসরুল্লাহ এবং হাশেম সাফিয়েদ্দিনের মতো ‘টার্গেট কিলিং’-এর শিকার হতে যাচ্ছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি!